প্রাণনাশের হুমকির কথা জানিয়েছিলেন হাদি, ছিল হামলার আগাম ‘সতর্কবার্তা’ও

প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম
ওসমান হাদি। ছবি: ওসমান হাদির ফেসবুক থেকে

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি। বেশ কিছুদিন ধরে জনসংযোগও চালিয়ে আসছিলেন। এ আসনে মির্জা আব্বাসকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। জামায়াত থেকে ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েমের প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন রয়েছে।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন তেমনই এক জনসংযোগের সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন হাদি। তার গত কয়েক মাসের ফেসবুক স্ট্যাটাসসহ বক্তব্য বলছে, এর আগেও তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। শুধু তাই নয়, তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা জানিয়েছেন, হামলার জন্য তৈরি করা তালিকায় পর্যন্ত নাম ছিল হাদির।

শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগর এলাকার কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন হাদি। সঙ্গে সঙ্গে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গুলি হাদির মাথার এক পাশ দিয়ে ঢুকে আরেক পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেছে। ঢামেক হাসপাতালে নেওয়ার পর তার অস্ত্রোপচার করা হয়। পোস্ট-অপারেটিভ তথা অস্ত্রোপচার-পরবর্তী পরিচর্যার জন্য তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে। তার অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন।

আগে থেকেই হুমকি পাচ্ছিলেন

গত মাস দেড়েক ধরে ওসমান হাদি ও তার শুভানুধ্যায়ীরা ক্রমাগত প্রাণনাশের হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়ে আসছিলেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে গত ১৪ নভেম্বর নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে একটি পোস্টও করেছিলেন হাদি। জানান, দেশি-বিদেশি নানা মোবাইল নম্বর থেকে তাকে ও তার পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

ওসমান হাদির নির্বাচনি জনসংযোগ। ছবি: ওসমান হাদির ফেসবুক প্রোফাইল
ওসমান হাদির নির্বাচনি জনসংযোগ। ছবি: ওসমান হাদির ফেসবুক প্রোফাইল

হাদি লিখেছিলেন, ‘গত তিন ঘণ্টায় আমার নম্বরে আওয়ামী লীগের খুনিরা অন্তত ৩০টা বিদেশি নম্বর থেকে কল ও টেক্সট করেছে। সারমর্ম হলো— আমাকে সর্বক্ষণ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। তারা আমার বাড়িতে আগুন দেবে। আমার মা, বোন ও স্ত্রীকে ধর্ষণ করবে। এবং আমাকে হত্যা করবে।’

এদিকে বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও বার্তা ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে নিজেকে র‍্যাব-১০ এর সাবেক কর্মকর্তা ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় তিন বছর চাকরিরত ছিলেন বলে পরিচয় দেন এক ব্যক্তি। হাদির ওপর সম্ভাব্য হামলার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট ও ভয়াবহ সতর্কবার্তাও দিয়েছিলেন তিনি।

‘সোর্সে’র বরাত দিয়ে সাবেক এই র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘মাইরের সিরিয়ালে এখন হাদি।’ শঙ্কা প্রকাশ করে ওই ব্যক্তি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বরিশালে ব্যারিস্টার ফুয়াদ ও নুরুল হক নুরের ওপর হামলার পর এখন হাদিই পরবর্তী টার্গেট। আওয়ামী লীগের ঘোষিত কর্মসূচির কারণে আগামী তিন দিন (শুক্র, শনি ও রবি) হাদির জীবনের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং এই সময় তার ওপর ‘থ্রেট’ থাকবে।

ভিডিও বার্তায় ওই ব্যক্তি আরও বলেন, হাদি খুব সাহসী ও ‘ঘাড়ত্যাড়া’ স্বভাবের, তাই তাকে সাধারণ হুমকিতে দমানো যাবে না জেনেই হামলাকারীরা সরাসরি তার গায়ে হাত তোলার পরিকল্পনা করেছে, যেন তাদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় এবং বিপ্লবীদের মনোবল ভেঙে দেওয়া যায়।

সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীও একাধিকবার ‘ভারতীয় নম্বর’ থেকে হাদিকে হত্যার হুমকি দেওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এই উপদেষ্টা অভিযোগ করেন, পতিত (ওয়মী লীগ) সরকার ও তাদের দোসররা বিদেশ থেকে এই কলকাঠি নাড়ছে।

হাদি তার আগের স্ট্যাটাসগুলোতে বলেছিলেন, ‘এক হাদিকে হত্যা করা হলে তাওহীদের এই জমিনে আল্লাহ লক্ষ হাদি তৈরি করে দিবেন,’, যা আজ তার অনুসারীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।

যেভাবে আলোচনায় হাদি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ওসমান হাদি পরিচিতির আলোয় আসেন মূলত জুলাই আন্দোলনের সময়। ওই সময় তিনি গড়ে তোলেন সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্ম ইনকিলাব মঞ্চ, যার লক্ষ্য— ‘সমস্ত আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও ইনসাফভিত্তিক একটি রাষ্ট্র বিনির্মাণ’।

শাহবাগে জুলাই অভ্যুত্থানে শহিদ ও আহত ব্যক্তিদের স্বীকৃতির দাবিতে সমাবেশের মাধ্যমে ইনকিলাব মঞ্চের যাত্রা শুরু হয়। হাদি পরে যোগ দেন জাতীয় নাগরিক কমিটিতে। এই কমিটির বেশির ভাগ নেতা পরে জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) যোগ দিলেও হাদি ইনকিলাব মঞ্চেই থেকে যান।

ভোটের মাঠে

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ যখন চূড়ান্ত হওয়ার পথে, ওসমান হাদি আবারও আলোচনায় উঠে আসেন প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে। নিজের সংগঠন সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্ম হওয়ায় সে ব্যানারে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ ছিল না তার। তাই ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি।

মতিঝিল, শাহবাগ, রমনা, পল্টন ও শাহজাহানপুর থানা নিয়ে গঠিত ঢাকার এই আসনটি বেশ আলোচিত। বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস দলের হয়ে প্রার্থী হতে যাচ্ছেন এ আসনে। জামায়াত থেকে প্রার্থী হিসেবে ড. মো. হেলাল উদ্দিনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি সাদিক কায়েম এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। এনসিপি এ আসনে প্রার্থীর নাম এখনো ঘোষণা করেনি।

ওসমান হাদির নির্বাচনি জনসংযোগ। ছবি: ওসমান হাদির ফেসবুক প্রোফাইল
ওসমান হাদির নির্বাচনি জনসংযোগ। ছবি: ওসমান হাদির ফেসবুক প্রোফাইল

মির্জা আব্বাস এ আসনের স্থানীয় বাসিন্দা। তিনি আগেও এখান থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী নির্বাচনেও তিনিই এ আসনে ‘ফেভারিট’। তবে ওসমান হাদি একাধিক বক্তৃতায় বলেছেন, ‘মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে আমি একা ওসমান হাদি যথেষ্ট!’

গত কয়েক দিনের নির্বাচনি প্রচারেও মনোযোগ কেড়েছেন ওসমান হাদি। বৃহস্পতিবারও তিনি ফজরের নামাজের পর পরিবাগ জামে মসজিদের সামনে ভোটার মধ্যে জনসংযোগ করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভীষণ সক্রিয় তিনি।

ad
ad

রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

গুলিবিদ্ধ হাদি ‘লাইফ সাপোর্টে’

ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, হাদির শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন। তার মাথার ভেতরে গুলি রয়েছে। অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। তাকে লাইফ সাপোর্টও দেওয়া হয়েছে।

৯ ঘণ্টা আগে

হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় বিএনপির নিন্দা, হামলাকারীদের গ্রেপ্তার দাবি

হাদির দ্রুত সুস্থতা কামনার পাশাপাশি হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবিও জানিয়েছে দলটি

৯ ঘণ্টা আগে

ধর্মের নামে রাজনীতি চায় না বিএনপি: সালাহউদ্দিন আহমেদ

১৬ ঘণ্টা আগে

অধ্যাপক গোলাম আযমের একটি সাংবাদিক সাক্ষাৎকার

শেখ মুজিবুর রহমান ২৫শে মার্চের আগে কখনো বিচ্ছিন্নতার কথা বলেননি, কিন্তু মওলানা ভাসানী স্বাধীনতার শ্লোগান দেন এবং পশ্চিম পাকিস্তানকে ওয়ালাইকুমুস সালাম জানান। অপরাধ যদি একই ধরনের ছিল তবে উভয়ের সঙ্গে ভিন্ন আচরণ করা হলো কেন? আমাকে জানানো হোক, এবং আমাকেই শুধু নয়— এ দেশের জনগণকে জানানো হোক কেন সামরিক পদক্

১৭ ঘণ্টা আগে