জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে তরুণদের অপরাধীকরণ আদালত পর্যন্ত গড়াবে

প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামো এখনো পুরনো ক্ষমতাকেন্দ্রিক গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়িত না হলে তরুণদের ‘ক্রিমিনালাইজেশন’ কেবল বক্তব্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, তা আদালত পর্যন্ত গড়াবে।

শনিবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘নারীর কণ্ঠে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন রূপরেখা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে এনসিপির সহযোগী সংগঠন জাতীয় নারী শক্তি।

সামান্তা শারমিন বলেন, 'এই পুরোনো ক্ষমতাকেন্দ্রিক গোষ্ঠী চায় না এমন কোনো শক্তি মাঠে, কমিশনে বা সংসদে আসু, যেই শক্তিটা আনপ্রেডিক্টেবল। আনপ্রেডিক্টেবল এই অর্থে যে, তাদের কন্ট্রোলের মধ্যে নয়।'

তাঁর মতে, এই শক্তির সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশের সুপার কর্পোরেট অলিগার্কস, প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, সিভিল ব্যুরোক্রেসি ও সামরিক শক্তির কিছু অংশ।

সামান্তা বলেন, এই পুরো সেটআপটাই বাংলাদেশের একটা অন্ধকূপ। এই অন্ধকূপ থেকে বের হওয়ার জন্য বাংলাদেশের মানুষের ৫৩ বছরের লড়াই চলছে। কখনো ভোটের জন্য, কখনো স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, কখনো মিলিটারি শাসনের, আবার কখনো ফ্যাসিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে— কিন্তু মূল লড়াইটা হলো এই গোলকধাঁধা থেকে বেরিয়ে আসা।'

তিনি অভিযোগ করেন, দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানগুলো আজও পরাধীন।

'বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন- কোনো প্রতিষ্ঠানই স্বাধীন নয়। এই পরাধীন অবস্থায় রাখাটাই বড় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রয়োজন, কারণ তাদের রাজনীতি এই ব্যবস্থার মধ্যেই নিরাপদ।'

তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা তুলে ধরে সামান্তা বলেন, 'আমরা একে (জুলাই গণঅভ্যুত্থান) বলি ‘জেন জি রেভ্যুলেশন। কারণ, মাঠে আমরা বুক চেপে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি জেস জি-দের, তরুণ জনগোষ্ঠীকে। তাদের রক্তের উপর দিয়েই এই সরকারটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, এখন এসে সেই তরুণদের একধরনের ‘ক্রিমিনালাইজ’ করা হচ্ছে।'

'ভুলে যাবেন না, এবং আপনারা কেউ ভুল করবেন না, এই ক্রিমিনালাইজেশনের শেষ এখানেই নয়। এটা শুধু বক্তব্যের মাধ্যমে শেষ হবে না। জুলাই সনদ যদি আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়িত না হয়, যদি আইনি প্রক্রিয়ায় তা নিশ্চিত না করা যায়, তাহলে এই ক্রিমিনালাইজেশন কোর্ট পর্যন্ত গড়াবে।,' বলেন সামান্তা।

পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোকে বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে অচল বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'তারা নিয়ম মেনে চলে, ঘুম থেকে ওঠে, ঘুমায়, কিন্তু তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা নেই। নতুন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কাঠামো গড়ার ক্ষমতাও তাদের নেই। অথচ তারাই এখন বড় বড় কথা বলে।'

তিনি দাবি করেন, 'এক বছর আগেও এই বড় দলের নেতারা ছিলেন হতাশা আর ক্রন্দনের মধ্যে। নিজেরাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সেটেলমেন্ট করে রেখেছিলেন। এখন এসে বিশাল বিশাল বক্তব্য দিচ্ছেন।

সামান্তা শারমিন বলেন, ঐক্যমত কমিশনে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য চার-পাঁচজন তরুণ যুক্ত হওয়ায় সেটি অনেকের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

'তারা এখন তিন বছরের ট্রানজিশনের কথা বলেন। কিন্তু আমরা আমাদের শৈশব, কৈশোর ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবন কাটিয়েছি ফ্যাসিস্ট আমলে। হাসিনাকে হটাতে চেয়েছি এই কারণে নয় যে, তার জায়গায় আরেক ফ্যাসিস্ট আসবে।'

সামান্তা বলেন, 'পুরনো রাজনৈতিক দলগুলো দেশকে আবার সেই একই জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। তাদের কোনো বুদ্ধিভিত্তিক মেকানিজম নেই। বাংলাদেশকে নতুন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর দিকে নিতে হলে এই মানসিকতা ভাঙতেই হবে।'

গণঅভ্যুত্থানের পরও মৌলিক কাঠামো পরিবর্তনের কোনো লড়াই হয়নি উল্লেখ করে সামান্তা বলেন, এর মূল বাধা হচ্ছে এস্টাবলিশমেন্ট ও পুরনো রাজনৈতিক দলগুলো। তারা এখন বলে জুলাই সনদ দরকার নেই, নির্বাচনই যথেষ্ট। কিন্তু আমরা জানি, এই নির্বাচনে কারা জেতে— খুনি, দালাল আর রিল খেলা নেতারা।

গণপরিষদ নির্বাচনই উত্তরণের পথ উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এনসিপি শুরু থেকেই গণপরিষদ নির্বাচনের পক্ষে। কিন্তু ঐক্যমত কমিশনে তরুণদের কণ্ঠ দমন করা হয়েছে। কমিশনে যেমন গুন্ডামি-মাস্তানি হয়েছে, এলাকাতেও তারা তাই করছে। তারা ভাবে মাস্তানি করেই ভোট সংগ্রহ করা যাবে।'

সামান্তা শারমিন বলেন, বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ তরুণ জনগোষ্ঠী এখন আর আগের মতো নিরব নয়। তাদের ভোটের শক্তি ও ভোট আন্দোলনের মধ্য দিয়েই গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।'

ad
ad

রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

এনসিপির কেন্দ্রীয় নির্বাচন সেলে যুক্ত হলেন যারা

সেলগুলোর মধ্যে রয়েছে- আইটি সেল, প্রচার ও প্রকাশনা সেল, দপ্তর সেল, মিডিয়া সেল, অর্থ সেল এবং বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক।

৬ ঘণ্টা আগে

কারো দলীয় স্বার্থ বাস্তবায়ন করা এই সরকারের কাজ নয় : তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “ফ্যাসিবাদী শাসনামলে ফ্যাসিবাদের রোষানল থেকে বাঁচতে ফ্যাসিবাদবিরোধীদের কেউ কেউ ‘গুপ্ত কৌশল’ অবলম্বন করেছিল।’ একইভাবে পতিত-পরাজিত ফ্যাসিবাদী অপশক্তিও বর্তমানে ‘গুপ্ত কৌশল’ অবলম্বন করে দেশের গণতন্ত্রে উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করে কি না, সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখার

৬ ঘণ্টা আগে

জামায়াতসহ ৮ দলের কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি

এদিনের বৈঠকে আগামী ১১ নভেম্বর ঢাকার সমাবেশ সফল করার আহ্বান জানান আট দলের নেতারা। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটসহ পাঁচ দফা দাবিতে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে দাবি মেনে নেওয়া না হলে সমাবেশ থেকে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়।

৬ ঘণ্টা আগে

'জামায়াতের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি না বিএনপি'

হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, আমরা বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছিলাম। তারা বলেছেন, আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন না। আমরা যেকোনো সময় আলোচনায় বসতে রাজি আছি। প্রয়োজনে অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে আলোচনায় বসতে উদ্বুদ্ধ করব।

৬ ঘণ্টা আগে