অরুণাভ বিশ্বাস
বাংলার ইতিহাসে বহু আক্রমণকারীর নাম পাওয়া যায়, কিন্তু “মারাঠা আক্রমণ” শব্দ দুটি আজও মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি করে। এই আক্রমণ শুধু সামরিক আঘাত ছিল না, এটি ছিল এক ধারাবাহিক লুট, ধ্বংস ও জনজীবনের উপর নিষ্ঠুর চাপে গড়ে ওঠা ভয়ংকর এক অধ্যায়। সময়টা ছিল আঠারো শতকের শুরু। মুঘল সাম্রাজ্য তখন দুর্বল হতে শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় শক্তি দুর্বল হওয়ার কারণে উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আঞ্চলিক শক্তিগুলো মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছিল। মারাঠারা তখন ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এই সময় তারা বাংলার দিকে চোখ দেয়। এবং শুরু হয় মারাঠা বাহিনীর একের পর এক আক্রমণ, যাকে বাংলার মানুষ ‘বর্গি আক্রমণ’ বলেও মনে রাখে।
মারাঠা আক্রমণের পেছনে দুটি মূল কারণ ছিল—প্রথমত, অর্থনৈতিক লোভ এবং দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের ইচ্ছা। মারাঠা বাহিনী চেয়েছিল বাংলার ধন-সম্পদ দখল করতে এবং মুঘলদের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে পূর্বভারতে নিজেদের শক্তি বাড়াতে।
ইতিহাসবিদ জন কে তাঁর ইন্ডিয়া: অ্যা হিস্টরি বইয়ে বলেন, “মারাঠা আক্রমণ ছিল কার্যত একটি সুপরিকল্পিত লুটতরাজ। এখানে সামরিক সাফল্যের চাইতে বেশি গুরুত্ব পেয়েছিল সম্পদ আহরণ। তারা যুদ্ধ করে শত্রুপক্ষের উপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার পরিবর্তে কৃষিজীবী সাধারণ মানুষের সম্পদ লুটে নিত।”
১৭৪১ সাল থেকে শুরু হয়ে প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই আক্রমণ চলে। বাংলার নবাব আলীবর্দী খানের সময়কালেই সবচেয়ে ভয়ংকর রূপ নেয় মারাঠা আক্রমণ। আলীবর্দী খান স্বীয় দক্ষতা ও সাহসিকতায় মুঘল সম্রাটের অনুমোদন নিয়ে বাংলার নবাব হন ১৭৪০ সালে। কিন্তু নবাব হওয়ার পর থেকেই তাঁকে মারাঠা হানাদারদের প্রতিহত করতে প্রাণপণ সংগ্রাম করতে হয়েছে।
মারাঠা বাহিনীর একটি বিশেষ দল ছিল “বর্গি” নামে পরিচিত। এই বর্গিরা ছিল মূলত হালকা সশস্ত্র ঘোড়সওয়ার সৈন্য, যারা প্রচণ্ড গতিতে ঘোড়ায় চড়ে গ্রামে গ্রামে আক্রমণ চালাতো। তারা হঠাৎ করে হাজির হয়ে গ্রামের খাজাঞ্চি, ধনী কৃষক ও সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে জোর করে টাকা-পয়সা, ধান, গবাদি পশু ও অন্যান্য সম্পদ ছিনিয়ে নিতো। মানুষ দিশেহারা হয়ে যেত। এই আক্রমণের সময় কোনো নিরাপত্তা ছিল না, প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে পড়েছিল।
একজন বিদেশি পর্যটক এবং ইতিহাসবিদ, ফরাসি ভ্রমণকারী ফ্রাঁসোয়া বার্নিয়ার তাঁর লেখায় তাদের তাণ্ডবের বিবরণ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “মারাঠা বাহিনী এমনভাবে আক্রমণ করত, যেন গ্রীষ্মের ঝড়। তারা আগুন জ্বালিয়ে দিত, গবাদি পশু লুট করত, নারীদের ধরে নিয়ে যেত, এবং গ্রামের পুরুষদের মেরে ফেলত বা অঙ্গহানি করত।”
মারাঠা আক্রমণ শুধু ধ্বংসই আনেনি, মানুষের ওপর মানসিক চাপও বাড়িয়ে দিয়েছিল। বহু মানুষ গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যেত, ফসলের মাঠ অনাবাদি হয়ে পড়ত, এবং অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়ত। বাংলার চাষবাস ও ব্যবসা-বাণিজ্য চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাট, চাল, তুলা, আখের মতো কৃষিজ ফসল চাষে ভাটা পড়ে। ফলে রপ্তানি কমে যায়, অভ্যন্তরীণ বাজারও দুর্বল হয়ে পড়ে।
ইতিহাসবিদ উইলিয়াম ডালরিম্পল তাঁর গবেষণায় লিখেছেন, “মারাঠা আক্রমণ বাংলার অর্থনীতিকে এক দশকে কয়েক দশক পিছিয়ে দেয়। এটা শুধু লুট নয়, ছিল এক ধরণের অর্থনৈতিক সন্ত্রাস।”
নবাব আলীবর্দী খান চেষ্টা করেছিলেন এই ভয়াবহ আক্রমণ ঠেকাতে। তিনি সেনা গঠন করেন, প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এবং বেশ কয়েকবার মারাঠা বাহিনীকে পিছু হটতেও বাধ্য করেন। কিন্তু মারাঠাদের মতো মোবাইল, হালকা সজ্জিত বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করা ছিল কঠিন। তাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে গিয়ে নবাবের অর্থভাণ্ডারও খালি হয়ে পড়ছিল।
১৭৫১ সালে অবশেষে নবাব আলীবর্দী খান মারাঠাদের সঙ্গে একটি চুক্তি করেন—যাকে বলা হয় “মঙ্গলপুর চুক্তি”। এই চুক্তির আওতায় নবাব প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি মারাঠাদের প্রতি বছর বার্ষিক খাজনা বা “চৌথ” দেবেন, যার পরিমাণ ছিল রাজস্বের এক-চতুর্থাংশ। এর বিনিময়ে মারাঠারা বাংলার ওপর আক্রমণ বন্ধ করবে। অনেক ঐতিহাসিক এই চুক্তিকে পরাধীনতার সূচনা হিসেবেও দেখেন।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক ড. পিটার হার্ডিং বলেন, “চৌথ প্রদানের মাধ্যমে বাংলার স্বাধীনতা সীমিত হয়ে পড়ে। নবাব যদিও সাময়িকভাবে আক্রমণ থেকে রেহাই পেয়েছিলেন, কিন্তু রাজনৈতিক দিক থেকে মারাঠাদের কাছে এক ধরণের দায়বদ্ধতা তৈরি হয়। এভাবেই বাংলা মুঘল পরাধীনতা থেকে বেরিয়ে আবার এক নতুন প্রভুর ছায়ায় চলে যায়।”
মারাঠা আক্রমণের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়ে বাংলার সমাজ ও সংস্কৃতিতে। মানুষ আতঙ্কে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছিল। ধর্মীয় উৎসব, হাটবাজার, যাত্রাপালা, সামাজিক অনুষ্ঠান—সবকিছুই থমকে যায়। গ্রামের পর গ্রাম জনশূন্য হয়ে পড়ে। মারাঠা বাহিনীর বিরুদ্ধে যে রকম কোনো সংগঠিত প্রতিরোধ গড়ে ওঠেনি, তার মূল কারণ ছিল প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও জনগণের আত্মবিশ্বাসের অভাব।
এই সময়ে বাংলার মানুষ এক ধরণের ‘ভীত-সন্ত্রস্ত চেতনায়’ দিন কাটাচ্ছিল। সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করত, বর্গিদের কোনো শক্তি আটকাতে পারবে না। এই মানসিকতা জাতিগত আত্মবিশ্বাসেও গভীর প্রভাব ফেলে, যার প্রভাব অনেক বছর ধরে ছিল।
পরবর্তীতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার ওপর কর্তৃত্ব গ্রহণ করে। ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধ এবং পরে ১৭৬৪ সালের বক্সারের যুদ্ধে ব্রিটিশরা নবাবদের পরাজিত করে সম্পূর্ণরূপে বাংলার শাসনভার নিজের হাতে নেয়। মারাঠা আক্রমণ এই রাজনৈতিক পরিবর্তনের পেছনেও একটি বড় ভূমিকা রাখে। কারণ বাংলার প্রশাসনিক কাঠামো তখন এতটাই দুর্বল হয়ে গিয়েছিল যে ব্রিটিশরা খুব সহজেই শাসন ক্ষমতা দখল করতে পেরেছিল।
ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ইতিহাসবিদ ড. ম্যালকম ডেভিসের মতে, “মারাঠা আক্রমণ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জন্য সুবিধাজনক পরিবেশ তৈরি করেছিল। দুর্বল নবাব, আতঙ্কিত জনগণ, অর্থনৈতিক অস্থিরতা—সবকিছুই কোম্পানির আগমনের পথ মসৃণ করে দেয়।”
সব মিলিয়ে বলতে গেলে, বাংলায় মারাঠা আক্রমণ ছিল একটি ভয়ংকর ও দুঃসহ অধ্যায়। এটি শুধুমাত্র যুদ্ধ বা রাজনৈতিক সংঘাত ছিল না, বরং ছিল অর্থনৈতিক ধ্বংস ও সামাজিক সংকটের যুগ। এক দশকের বেশি সময় ধরে চলে আসা এই আক্রমণ বাংলার ইতিহাসে এক কালো ছায়া ফেলেছিল, যা বহু প্রজন্ম ধরে মানুষ মনে রেখেছে।
আজ ইতিহাসের পাতা উল্টে আমরা দেখতে পাই যে কিভাবে দুর্বল প্রশাসন, আঞ্চলিক রাজনীতির জটিলতা এবং বহিরাগত লোভ একত্রিত হয়ে একটি সমৃদ্ধ অঞ্চলকে ধ্বংস করে দিতে পারে। মারাঠা আক্রমণ আমাদের শেখায় যে শক্তিশালী স্থানীয় নেতৃত্ব, সংগঠিত প্রতিরোধ এবং জনগণের আত্মবিশ্বাস—এই তিনটি না থাকলে কোনো সমাজই নিরাপদ নয়।
বাংলার মানুষ যে রকম সাহসিকতা ও স্থিতিশীলতা নিয়ে এই দুঃসময়ের মোকাবিলা করেছিল, তা আজও অনুপ্রেরণার উৎস।
বাংলার ইতিহাসে বহু আক্রমণকারীর নাম পাওয়া যায়, কিন্তু “মারাঠা আক্রমণ” শব্দ দুটি আজও মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি করে। এই আক্রমণ শুধু সামরিক আঘাত ছিল না, এটি ছিল এক ধারাবাহিক লুট, ধ্বংস ও জনজীবনের উপর নিষ্ঠুর চাপে গড়ে ওঠা ভয়ংকর এক অধ্যায়। সময়টা ছিল আঠারো শতকের শুরু। মুঘল সাম্রাজ্য তখন দুর্বল হতে শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় শক্তি দুর্বল হওয়ার কারণে উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আঞ্চলিক শক্তিগুলো মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছিল। মারাঠারা তখন ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এই সময় তারা বাংলার দিকে চোখ দেয়। এবং শুরু হয় মারাঠা বাহিনীর একের পর এক আক্রমণ, যাকে বাংলার মানুষ ‘বর্গি আক্রমণ’ বলেও মনে রাখে।
মারাঠা আক্রমণের পেছনে দুটি মূল কারণ ছিল—প্রথমত, অর্থনৈতিক লোভ এবং দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের ইচ্ছা। মারাঠা বাহিনী চেয়েছিল বাংলার ধন-সম্পদ দখল করতে এবং মুঘলদের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে পূর্বভারতে নিজেদের শক্তি বাড়াতে।
ইতিহাসবিদ জন কে তাঁর ইন্ডিয়া: অ্যা হিস্টরি বইয়ে বলেন, “মারাঠা আক্রমণ ছিল কার্যত একটি সুপরিকল্পিত লুটতরাজ। এখানে সামরিক সাফল্যের চাইতে বেশি গুরুত্ব পেয়েছিল সম্পদ আহরণ। তারা যুদ্ধ করে শত্রুপক্ষের উপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার পরিবর্তে কৃষিজীবী সাধারণ মানুষের সম্পদ লুটে নিত।”
১৭৪১ সাল থেকে শুরু হয়ে প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই আক্রমণ চলে। বাংলার নবাব আলীবর্দী খানের সময়কালেই সবচেয়ে ভয়ংকর রূপ নেয় মারাঠা আক্রমণ। আলীবর্দী খান স্বীয় দক্ষতা ও সাহসিকতায় মুঘল সম্রাটের অনুমোদন নিয়ে বাংলার নবাব হন ১৭৪০ সালে। কিন্তু নবাব হওয়ার পর থেকেই তাঁকে মারাঠা হানাদারদের প্রতিহত করতে প্রাণপণ সংগ্রাম করতে হয়েছে।
মারাঠা বাহিনীর একটি বিশেষ দল ছিল “বর্গি” নামে পরিচিত। এই বর্গিরা ছিল মূলত হালকা সশস্ত্র ঘোড়সওয়ার সৈন্য, যারা প্রচণ্ড গতিতে ঘোড়ায় চড়ে গ্রামে গ্রামে আক্রমণ চালাতো। তারা হঠাৎ করে হাজির হয়ে গ্রামের খাজাঞ্চি, ধনী কৃষক ও সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে জোর করে টাকা-পয়সা, ধান, গবাদি পশু ও অন্যান্য সম্পদ ছিনিয়ে নিতো। মানুষ দিশেহারা হয়ে যেত। এই আক্রমণের সময় কোনো নিরাপত্তা ছিল না, প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে পড়েছিল।
একজন বিদেশি পর্যটক এবং ইতিহাসবিদ, ফরাসি ভ্রমণকারী ফ্রাঁসোয়া বার্নিয়ার তাঁর লেখায় তাদের তাণ্ডবের বিবরণ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “মারাঠা বাহিনী এমনভাবে আক্রমণ করত, যেন গ্রীষ্মের ঝড়। তারা আগুন জ্বালিয়ে দিত, গবাদি পশু লুট করত, নারীদের ধরে নিয়ে যেত, এবং গ্রামের পুরুষদের মেরে ফেলত বা অঙ্গহানি করত।”
মারাঠা আক্রমণ শুধু ধ্বংসই আনেনি, মানুষের ওপর মানসিক চাপও বাড়িয়ে দিয়েছিল। বহু মানুষ গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যেত, ফসলের মাঠ অনাবাদি হয়ে পড়ত, এবং অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়ত। বাংলার চাষবাস ও ব্যবসা-বাণিজ্য চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাট, চাল, তুলা, আখের মতো কৃষিজ ফসল চাষে ভাটা পড়ে। ফলে রপ্তানি কমে যায়, অভ্যন্তরীণ বাজারও দুর্বল হয়ে পড়ে।
ইতিহাসবিদ উইলিয়াম ডালরিম্পল তাঁর গবেষণায় লিখেছেন, “মারাঠা আক্রমণ বাংলার অর্থনীতিকে এক দশকে কয়েক দশক পিছিয়ে দেয়। এটা শুধু লুট নয়, ছিল এক ধরণের অর্থনৈতিক সন্ত্রাস।”
নবাব আলীবর্দী খান চেষ্টা করেছিলেন এই ভয়াবহ আক্রমণ ঠেকাতে। তিনি সেনা গঠন করেন, প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এবং বেশ কয়েকবার মারাঠা বাহিনীকে পিছু হটতেও বাধ্য করেন। কিন্তু মারাঠাদের মতো মোবাইল, হালকা সজ্জিত বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করা ছিল কঠিন। তাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে গিয়ে নবাবের অর্থভাণ্ডারও খালি হয়ে পড়ছিল।
১৭৫১ সালে অবশেষে নবাব আলীবর্দী খান মারাঠাদের সঙ্গে একটি চুক্তি করেন—যাকে বলা হয় “মঙ্গলপুর চুক্তি”। এই চুক্তির আওতায় নবাব প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি মারাঠাদের প্রতি বছর বার্ষিক খাজনা বা “চৌথ” দেবেন, যার পরিমাণ ছিল রাজস্বের এক-চতুর্থাংশ। এর বিনিময়ে মারাঠারা বাংলার ওপর আক্রমণ বন্ধ করবে। অনেক ঐতিহাসিক এই চুক্তিকে পরাধীনতার সূচনা হিসেবেও দেখেন।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক ড. পিটার হার্ডিং বলেন, “চৌথ প্রদানের মাধ্যমে বাংলার স্বাধীনতা সীমিত হয়ে পড়ে। নবাব যদিও সাময়িকভাবে আক্রমণ থেকে রেহাই পেয়েছিলেন, কিন্তু রাজনৈতিক দিক থেকে মারাঠাদের কাছে এক ধরণের দায়বদ্ধতা তৈরি হয়। এভাবেই বাংলা মুঘল পরাধীনতা থেকে বেরিয়ে আবার এক নতুন প্রভুর ছায়ায় চলে যায়।”
মারাঠা আক্রমণের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়ে বাংলার সমাজ ও সংস্কৃতিতে। মানুষ আতঙ্কে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছিল। ধর্মীয় উৎসব, হাটবাজার, যাত্রাপালা, সামাজিক অনুষ্ঠান—সবকিছুই থমকে যায়। গ্রামের পর গ্রাম জনশূন্য হয়ে পড়ে। মারাঠা বাহিনীর বিরুদ্ধে যে রকম কোনো সংগঠিত প্রতিরোধ গড়ে ওঠেনি, তার মূল কারণ ছিল প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও জনগণের আত্মবিশ্বাসের অভাব।
এই সময়ে বাংলার মানুষ এক ধরণের ‘ভীত-সন্ত্রস্ত চেতনায়’ দিন কাটাচ্ছিল। সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করত, বর্গিদের কোনো শক্তি আটকাতে পারবে না। এই মানসিকতা জাতিগত আত্মবিশ্বাসেও গভীর প্রভাব ফেলে, যার প্রভাব অনেক বছর ধরে ছিল।
পরবর্তীতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার ওপর কর্তৃত্ব গ্রহণ করে। ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধ এবং পরে ১৭৬৪ সালের বক্সারের যুদ্ধে ব্রিটিশরা নবাবদের পরাজিত করে সম্পূর্ণরূপে বাংলার শাসনভার নিজের হাতে নেয়। মারাঠা আক্রমণ এই রাজনৈতিক পরিবর্তনের পেছনেও একটি বড় ভূমিকা রাখে। কারণ বাংলার প্রশাসনিক কাঠামো তখন এতটাই দুর্বল হয়ে গিয়েছিল যে ব্রিটিশরা খুব সহজেই শাসন ক্ষমতা দখল করতে পেরেছিল।
ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ইতিহাসবিদ ড. ম্যালকম ডেভিসের মতে, “মারাঠা আক্রমণ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জন্য সুবিধাজনক পরিবেশ তৈরি করেছিল। দুর্বল নবাব, আতঙ্কিত জনগণ, অর্থনৈতিক অস্থিরতা—সবকিছুই কোম্পানির আগমনের পথ মসৃণ করে দেয়।”
সব মিলিয়ে বলতে গেলে, বাংলায় মারাঠা আক্রমণ ছিল একটি ভয়ংকর ও দুঃসহ অধ্যায়। এটি শুধুমাত্র যুদ্ধ বা রাজনৈতিক সংঘাত ছিল না, বরং ছিল অর্থনৈতিক ধ্বংস ও সামাজিক সংকটের যুগ। এক দশকের বেশি সময় ধরে চলে আসা এই আক্রমণ বাংলার ইতিহাসে এক কালো ছায়া ফেলেছিল, যা বহু প্রজন্ম ধরে মানুষ মনে রেখেছে।
আজ ইতিহাসের পাতা উল্টে আমরা দেখতে পাই যে কিভাবে দুর্বল প্রশাসন, আঞ্চলিক রাজনীতির জটিলতা এবং বহিরাগত লোভ একত্রিত হয়ে একটি সমৃদ্ধ অঞ্চলকে ধ্বংস করে দিতে পারে। মারাঠা আক্রমণ আমাদের শেখায় যে শক্তিশালী স্থানীয় নেতৃত্ব, সংগঠিত প্রতিরোধ এবং জনগণের আত্মবিশ্বাস—এই তিনটি না থাকলে কোনো সমাজই নিরাপদ নয়।
বাংলার মানুষ যে রকম সাহসিকতা ও স্থিতিশীলতা নিয়ে এই দুঃসময়ের মোকাবিলা করেছিল, তা আজও অনুপ্রেরণার উৎস।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, ১৯৭২ সালের মুজিববাদী সংবিধান রেখে কখনোই নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। এজন্য আমাদের নতুন সংবিধান ও গণপরিষদ নির্বাচন প্রয়োজন।
৮ ঘণ্টা আগেসোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসমাবেশে বক্তৃতা করতে করতেই মঞ্চে ঢলে পড়েছেন জামআয়াতে ইসালামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। পরে একাধিকবার দাঁড়িয়ে বকতৃতা করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত বসেই বক্তৃতা শেষ করেন তিনি।
৯ ঘণ্টা আগেআমীর খসরু বলেন, জনগণের ভোটে, জনগণের মালিকানায় নির্বাচিত সংসদ-সরকার; এর বিকল্প নেই। বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘদিন এজন্য ভোটের প্রতীক্ষায় রয়েছে। যারা নির্বাচন চান না, তাদের দল করার কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা, সেটা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
৯ ঘণ্টা আগেজামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশে বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
৯ ঘণ্টা আগে