অরুণাভ বিশ্বাস
পৃথিবীর মানচিত্রে একটুকরো ভূখণ্ড রয়েছে, যেখানে প্রতিদিনই ইতিহাস নতুন করে রচিত হয়, আর রক্তের দাগে লেখা হয় রাজনীতির ভয়াবহতা। সেই ভূখণ্ডের নাম পশ্চিম তীর (West Bank)। এই অঞ্চলটি মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে আলোচিত ও বিতর্কিত এলাকা, যেখানে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের মধ্যে সংঘাত বছরের পর বছর ধরে চলেছে। এ সংঘাতের মূল শিকড় ইতিহাসে, ধর্মে, ভূরাজনীতিতে এবং আন্তর্জাতিক স্বার্থে গভীরভাবে গাঁথা।
পশ্চিম তীর মূলত জর্ডান নদীর পশ্চিম পাশে অবস্থিত একটি পাহাড়ি অঞ্চল। এখানেই রয়েছে ফিলিস্তিনিদের বহু প্রাচীন বসতি, সেইসঙ্গে ইহুদিদের ধর্মীয় ঐতিহ্যের বহু স্থান। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠিত হওয়ার পর থেকেই এই অঞ্চলটি হয়ে ওঠে বিরোধের কেন্দ্র। তখন বহু ফিলিস্তিনি নিজেদের ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তুতে পরিণত হন। এরপর ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল পশ্চিম তীর দখল করে নেয়। সেই থেকেই এই অঞ্চলে ইসরায়েলি দখলদারিত্ব, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আর আন্তর্জাতিক কূটনীতির এক জটিল নাটক চলছে।
১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর ইসরায়েল পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন শুরু করে। তারা বলেছিল, এটি ঐতিহাসিকভাবে ইহুদি জাতির ভূমি। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা দাবি করে, পশ্চিম তীর তাদের রাষ্ট্র গঠনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। এখানেই তারা চায় নিজেদের স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী, পূর্ব জেরুজালেমসহ। কিন্তু বাস্তবে আজ পশ্চিম তীর একটি বিভক্ত ভূখণ্ড, যেখানে ইসরায়েলি সেনা চেকপয়েন্ট, বসতি আর দেয়ালের কারণে ফিলিস্তিনিদের চলাচল, জীবনযাপন, চিকিৎসা, শিক্ষা—সবকিছুই কঠিন হয়ে উঠেছে।
এই দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিরা একাধিকবার প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। ১৯৮৭ সালে প্রথম ইন্তিফাদা (জনবিস্ফোরণ) শুরু হয়। ছোট ছোট পাথর হাতে কিশোরেরা ইসরায়েলি ট্যাংকের সামনে দাঁড়ায়। এই গণআন্দোলন ছিল শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ আর বিক্ষোভের মিশ্রণ। কিন্তু ইসরায়েলি বাহিনীর কঠোর দমন নীতির কারণে বহু ফিলিস্তিনি প্রাণ হারায়। ২০০০ সালে দ্বিতীয় ইন্তিফাদা শুরু হয়, যা আগের চেয়ে আরও রক্তক্ষয়ী হয়। আত্মঘাতী হামলা, বিমান হামলা, বাড়ি গুড়িয়ে দেওয়া—সব মিলিয়ে পশ্চিম তীর এক মৃত্যুকূপে পরিণত হয়।
এই সংঘাত থামানোর জন্য বহু শান্তিচেষ্টা হয়েছে। ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তি স্বাক্ষর হয়, যেখানে ইসরায়েল ও পিএলও (ফিলিস্তিনি লিবারেশন অর্গানাইজেশন) একে অপরকে স্বীকৃতি দেয়। অনেকেই তখন আশাবাদী হয়েছিলেন যে, এবার হয়তো একটা সমাধান আসবে। কিন্তু সেই আশাও ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যায়। বসতি স্থাপন বন্ধ হয়নি, বরং বেড়েছে। ফিলিস্তিনিরাও নিজেদের রাজনৈতিক নেতৃত্বে বিভক্ত হয়ে পড়ে—একদিকে হামাস, অন্যদিকে ফাতাহ। এই বিভাজন পশ্চিম তীর ও গাজা ভূখণ্ডকে ভিন্ন দুই ধারায় পরিচালিত করে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বারবার ইসরায়েলকে পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন বন্ধ করতে বলেছে। কিন্তু বাস্তবে সে আহ্বান অনেকটাই অনুরণনের মতো ফিরে আসে। জাতিসংঘের বহু প্রস্তাবে এই দখলদারিত্বকে অবৈধ বলা হয়েছে, কিন্তু ইসরায়েল যুক্তি দেয়—এই ভূমি তাদের ধর্মীয় উত্তরাধিকার, এবং নিরাপত্তার খাতিরে তারা এখানেই সেনা ও বসতি রাখতে বাধ্য। এমনকি তারা এখানে হাজার হাজার নতুন বসতিও গড়ে তোলে, যেখানে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ।
এই দখল ও প্রতিরোধের মাঝে, সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় সাধারণ ফিলিস্তিনিরা। প্রত্যেকদিন তাদের স্কুলে যাওয়া, হাসপাতালে পৌঁছানো, এমনকি বাজারে যাওয়া পর্যন্ত নিয়ন্ত্রিত হয়। শত শত চেকপয়েন্ট, দেয়াল, এবং সেনা তল্লাশির মাঝে তারা যেন বন্দি হয়ে আছে নিজেদের ভূমিতেই। মানবাধিকার সংস্থা "হিউম্যান রাইটস ওয়াচ" জানিয়েছে, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের ‘অ্যাপারথেইড’ নীতির কারণে ফিলিস্তিনিরা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। সংস্থাটির গবেষক ও মুখপাত্র ওমর শাকির বলেন, “ইসরায়েল যেভাবে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের উপর নিয়ন্ত্রণ চালায়, তা আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে এক ধরনের নিপীড়ন।” ওমর শাকির আমেরিকান মানবাধিকার আইনজীবী এবং মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, যিনি হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন শাখায় কাজ করেছেন।
তবে শুধু মানবাধিকার কর্মীরাই নয়, আন্তর্জাতিক ইতিহাসবিদরাও এই সংঘাতকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আভা হুয়েডলি, যিনি মধ্যপ্রাচ্য রাজনীতির ওপর দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন, বলেন, “পশ্চিম তীর ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের প্রতীক। এই ভূমিতে ইতিহাস, ধর্ম, এবং আধুনিক রাজনীতি একত্রে গাঁথা হয়ে গেছে। ফলে এখানে সমাধান খুব সহজ নয়।” তাঁর মতে, শান্তি কেবল তখনই সম্ভব, যখন দুইপক্ষ একে অপরকে সমানভাবে স্বীকার করবে।
একই কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত গবেষক নাথান ব্রাউন, যিনি জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। তিনি বলেন, “ওয়েস্ট ব্যাংক ইস্যুতে ইসরায়েল কৌশলে সময় নিচ্ছে, একদিকে নিরাপত্তার অজুহাত দেখাচ্ছে, অন্যদিকে বসতি স্থাপনের মাধ্যমে বাস্তবতাকে স্থায়ী করে তুলছে। এর ফলে দুই রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধান দিন দিন অসম্ভব হয়ে উঠছে।”
ফিলিস্তিনিদের দিক থেকে বলা যায়, তাদের মধ্যেও নেতৃত্বের সংকট প্রকট। পশ্চিম তীরের প্রশাসন এখন ফাতাহ-নিয়ন্ত্রিত প্যালেস্টাইন অথরিটি’র হাতে। কিন্তু দুর্নীতি, অপারগতা আর ইসরায়েলের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতার অভিযোগে তাদের জনপ্রিয়তা তলানিতে। অন্যদিকে গাজায় শক্তিশালী হামাস, যারা আবার পশ্চিম তীরেও প্রভাব বিস্তার করতে চায়। এই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ফিলিস্তিনি জাতিগত ঐক্যকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
এতসব সংঘাত, দখল, প্রতিরোধের মাঝেও, পশ্চিম তীরে বসবাসরত মানুষদের জীবনের গতি থেমে নেই। প্রতিদিন তারা স্কুলে যায়, দোকান খোলে, বিয়ের অনুষ্ঠান করে, আবার শোক পালন করে। কারণ, জীবনের রূপ একটানা চলে। কিন্তু সেই জীবনকে ঘিরে থাকে অবিশ্বাস, অস্ত্র, সেনার ছায়া আর অদৃশ্য দেয়াল। শিশুদের বেড়ে ওঠা হয় কাঁটাতারের পাশে, মায়েরা প্রতিদিন প্রার্থনা করেন সন্তানটি যেন নিরাপদে স্কুল থেকে ফেরে। এই অসহায়তা শুধু একজন বা একপক্ষের নয়, বরং একটি গোটা জাতির সংগ্রাম।
আন্তর্জাতিকভাবে এখনো অনেকেই আশায় বুক বেঁধে আছেন যে, হয়তো একদিন পশ্চিম তীর আবার শান্তির নাম হবে। কিন্তু সে শান্তি আসতে হলে চাই উভয় পক্ষের আন্তরিকতা, বৈশ্বিক চাপ, এবং সবচেয়ে বেশি দরকার সাধারণ মানুষের অধিকারের প্রতি সম্মান। কারণ, ভূখণ্ডের দখল নিয়ে যুদ্ধ চলতেই পারে, কিন্তু মানবিকতা যেন কখনও পরাজিত না হয়।
পশ্চিম তীরের ইতিহাস আমাদের শেখায়—রাজনীতি যখন মানবতার উপর চেপে বসে, তখন শুধু সীমান্তই নয়, ভেঙে পড়ে মানুষের আশা, বিশ্বাস, ভবিষ্যৎ। সেই কারণেই পশ্চিম তীরের এই পুরোনো আগুন নিভানো আজ বিশ্বের সামনে সবচেয়ে বড় নৈতিক চ্যালেঞ্জ। শান্তি যেন আর শুধু একটি শব্দ না থাকে, বরং হয়ে উঠুক প্রত্যেক মানুষের অধিকার।
পৃথিবীর মানচিত্রে একটুকরো ভূখণ্ড রয়েছে, যেখানে প্রতিদিনই ইতিহাস নতুন করে রচিত হয়, আর রক্তের দাগে লেখা হয় রাজনীতির ভয়াবহতা। সেই ভূখণ্ডের নাম পশ্চিম তীর (West Bank)। এই অঞ্চলটি মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে আলোচিত ও বিতর্কিত এলাকা, যেখানে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের মধ্যে সংঘাত বছরের পর বছর ধরে চলেছে। এ সংঘাতের মূল শিকড় ইতিহাসে, ধর্মে, ভূরাজনীতিতে এবং আন্তর্জাতিক স্বার্থে গভীরভাবে গাঁথা।
পশ্চিম তীর মূলত জর্ডান নদীর পশ্চিম পাশে অবস্থিত একটি পাহাড়ি অঞ্চল। এখানেই রয়েছে ফিলিস্তিনিদের বহু প্রাচীন বসতি, সেইসঙ্গে ইহুদিদের ধর্মীয় ঐতিহ্যের বহু স্থান। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠিত হওয়ার পর থেকেই এই অঞ্চলটি হয়ে ওঠে বিরোধের কেন্দ্র। তখন বহু ফিলিস্তিনি নিজেদের ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তুতে পরিণত হন। এরপর ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল পশ্চিম তীর দখল করে নেয়। সেই থেকেই এই অঞ্চলে ইসরায়েলি দখলদারিত্ব, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আর আন্তর্জাতিক কূটনীতির এক জটিল নাটক চলছে।
১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর ইসরায়েল পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন শুরু করে। তারা বলেছিল, এটি ঐতিহাসিকভাবে ইহুদি জাতির ভূমি। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা দাবি করে, পশ্চিম তীর তাদের রাষ্ট্র গঠনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। এখানেই তারা চায় নিজেদের স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী, পূর্ব জেরুজালেমসহ। কিন্তু বাস্তবে আজ পশ্চিম তীর একটি বিভক্ত ভূখণ্ড, যেখানে ইসরায়েলি সেনা চেকপয়েন্ট, বসতি আর দেয়ালের কারণে ফিলিস্তিনিদের চলাচল, জীবনযাপন, চিকিৎসা, শিক্ষা—সবকিছুই কঠিন হয়ে উঠেছে।
এই দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিরা একাধিকবার প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। ১৯৮৭ সালে প্রথম ইন্তিফাদা (জনবিস্ফোরণ) শুরু হয়। ছোট ছোট পাথর হাতে কিশোরেরা ইসরায়েলি ট্যাংকের সামনে দাঁড়ায়। এই গণআন্দোলন ছিল শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ আর বিক্ষোভের মিশ্রণ। কিন্তু ইসরায়েলি বাহিনীর কঠোর দমন নীতির কারণে বহু ফিলিস্তিনি প্রাণ হারায়। ২০০০ সালে দ্বিতীয় ইন্তিফাদা শুরু হয়, যা আগের চেয়ে আরও রক্তক্ষয়ী হয়। আত্মঘাতী হামলা, বিমান হামলা, বাড়ি গুড়িয়ে দেওয়া—সব মিলিয়ে পশ্চিম তীর এক মৃত্যুকূপে পরিণত হয়।
এই সংঘাত থামানোর জন্য বহু শান্তিচেষ্টা হয়েছে। ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তি স্বাক্ষর হয়, যেখানে ইসরায়েল ও পিএলও (ফিলিস্তিনি লিবারেশন অর্গানাইজেশন) একে অপরকে স্বীকৃতি দেয়। অনেকেই তখন আশাবাদী হয়েছিলেন যে, এবার হয়তো একটা সমাধান আসবে। কিন্তু সেই আশাও ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যায়। বসতি স্থাপন বন্ধ হয়নি, বরং বেড়েছে। ফিলিস্তিনিরাও নিজেদের রাজনৈতিক নেতৃত্বে বিভক্ত হয়ে পড়ে—একদিকে হামাস, অন্যদিকে ফাতাহ। এই বিভাজন পশ্চিম তীর ও গাজা ভূখণ্ডকে ভিন্ন দুই ধারায় পরিচালিত করে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বারবার ইসরায়েলকে পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন বন্ধ করতে বলেছে। কিন্তু বাস্তবে সে আহ্বান অনেকটাই অনুরণনের মতো ফিরে আসে। জাতিসংঘের বহু প্রস্তাবে এই দখলদারিত্বকে অবৈধ বলা হয়েছে, কিন্তু ইসরায়েল যুক্তি দেয়—এই ভূমি তাদের ধর্মীয় উত্তরাধিকার, এবং নিরাপত্তার খাতিরে তারা এখানেই সেনা ও বসতি রাখতে বাধ্য। এমনকি তারা এখানে হাজার হাজার নতুন বসতিও গড়ে তোলে, যেখানে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ।
এই দখল ও প্রতিরোধের মাঝে, সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় সাধারণ ফিলিস্তিনিরা। প্রত্যেকদিন তাদের স্কুলে যাওয়া, হাসপাতালে পৌঁছানো, এমনকি বাজারে যাওয়া পর্যন্ত নিয়ন্ত্রিত হয়। শত শত চেকপয়েন্ট, দেয়াল, এবং সেনা তল্লাশির মাঝে তারা যেন বন্দি হয়ে আছে নিজেদের ভূমিতেই। মানবাধিকার সংস্থা "হিউম্যান রাইটস ওয়াচ" জানিয়েছে, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের ‘অ্যাপারথেইড’ নীতির কারণে ফিলিস্তিনিরা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। সংস্থাটির গবেষক ও মুখপাত্র ওমর শাকির বলেন, “ইসরায়েল যেভাবে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের উপর নিয়ন্ত্রণ চালায়, তা আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে এক ধরনের নিপীড়ন।” ওমর শাকির আমেরিকান মানবাধিকার আইনজীবী এবং মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, যিনি হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন শাখায় কাজ করেছেন।
তবে শুধু মানবাধিকার কর্মীরাই নয়, আন্তর্জাতিক ইতিহাসবিদরাও এই সংঘাতকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আভা হুয়েডলি, যিনি মধ্যপ্রাচ্য রাজনীতির ওপর দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন, বলেন, “পশ্চিম তীর ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের প্রতীক। এই ভূমিতে ইতিহাস, ধর্ম, এবং আধুনিক রাজনীতি একত্রে গাঁথা হয়ে গেছে। ফলে এখানে সমাধান খুব সহজ নয়।” তাঁর মতে, শান্তি কেবল তখনই সম্ভব, যখন দুইপক্ষ একে অপরকে সমানভাবে স্বীকার করবে।
একই কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত গবেষক নাথান ব্রাউন, যিনি জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। তিনি বলেন, “ওয়েস্ট ব্যাংক ইস্যুতে ইসরায়েল কৌশলে সময় নিচ্ছে, একদিকে নিরাপত্তার অজুহাত দেখাচ্ছে, অন্যদিকে বসতি স্থাপনের মাধ্যমে বাস্তবতাকে স্থায়ী করে তুলছে। এর ফলে দুই রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধান দিন দিন অসম্ভব হয়ে উঠছে।”
ফিলিস্তিনিদের দিক থেকে বলা যায়, তাদের মধ্যেও নেতৃত্বের সংকট প্রকট। পশ্চিম তীরের প্রশাসন এখন ফাতাহ-নিয়ন্ত্রিত প্যালেস্টাইন অথরিটি’র হাতে। কিন্তু দুর্নীতি, অপারগতা আর ইসরায়েলের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতার অভিযোগে তাদের জনপ্রিয়তা তলানিতে। অন্যদিকে গাজায় শক্তিশালী হামাস, যারা আবার পশ্চিম তীরেও প্রভাব বিস্তার করতে চায়। এই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ফিলিস্তিনি জাতিগত ঐক্যকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
এতসব সংঘাত, দখল, প্রতিরোধের মাঝেও, পশ্চিম তীরে বসবাসরত মানুষদের জীবনের গতি থেমে নেই। প্রতিদিন তারা স্কুলে যায়, দোকান খোলে, বিয়ের অনুষ্ঠান করে, আবার শোক পালন করে। কারণ, জীবনের রূপ একটানা চলে। কিন্তু সেই জীবনকে ঘিরে থাকে অবিশ্বাস, অস্ত্র, সেনার ছায়া আর অদৃশ্য দেয়াল। শিশুদের বেড়ে ওঠা হয় কাঁটাতারের পাশে, মায়েরা প্রতিদিন প্রার্থনা করেন সন্তানটি যেন নিরাপদে স্কুল থেকে ফেরে। এই অসহায়তা শুধু একজন বা একপক্ষের নয়, বরং একটি গোটা জাতির সংগ্রাম।
আন্তর্জাতিকভাবে এখনো অনেকেই আশায় বুক বেঁধে আছেন যে, হয়তো একদিন পশ্চিম তীর আবার শান্তির নাম হবে। কিন্তু সে শান্তি আসতে হলে চাই উভয় পক্ষের আন্তরিকতা, বৈশ্বিক চাপ, এবং সবচেয়ে বেশি দরকার সাধারণ মানুষের অধিকারের প্রতি সম্মান। কারণ, ভূখণ্ডের দখল নিয়ে যুদ্ধ চলতেই পারে, কিন্তু মানবিকতা যেন কখনও পরাজিত না হয়।
পশ্চিম তীরের ইতিহাস আমাদের শেখায়—রাজনীতি যখন মানবতার উপর চেপে বসে, তখন শুধু সীমান্তই নয়, ভেঙে পড়ে মানুষের আশা, বিশ্বাস, ভবিষ্যৎ। সেই কারণেই পশ্চিম তীরের এই পুরোনো আগুন নিভানো আজ বিশ্বের সামনে সবচেয়ে বড় নৈতিক চ্যালেঞ্জ। শান্তি যেন আর শুধু একটি শব্দ না থাকে, বরং হয়ে উঠুক প্রত্যেক মানুষের অধিকার।
সবাইকে বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা জানিয়ে এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশে জনগণ একে অপরের ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবে অংশ নেয়- এটাই বাংলাদেশি জাতির ঐতিহ্য।’ তিনি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে এই ঐতিহ্য ধরে রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এর মধ্যেই নিহিত রয়েছে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী দর্শন।’
১ দিন আগেবৈঠক শেষে পাটওয়ারী বলেন, তারা (ইসি) যেহেতু ব্যাখ্যা দিতে পারেনি, এখন আমরা প্রতীক প্রশ্নে নেই। আমরা মনে করেছি প্রতীক প্রশ্নে তাদের ওপর অন্য কিছু বিরাজ করছে। অথবা প্রতীক সামনে রেখে অন্য কোনো ষড়যন্ত্র করছে। আমরা মনে করি এই মাসের মধ্যেই এটা জাতির সামনে স্পষ্ট হবে।
১ দিন আগেঅন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যেসব কাজের সমালোচনা করার আছে, আমরা তা করব। তবে তাদের ভালো দিকও তুলে ধরব। আমরা চাই না সরকার ব্যর্থ হোক, বরং দায়িত্বশীলভাবে দেশ পরিচালনা করুক। কেউ যদি দুর্নীতি বা অপরাধে জড়িত থাকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
১ দিন আগেতারেক রহমান বলেন, ‘গণতন্ত্র মানে কেবল নির্বাচন নয়; এটি মানুষের স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার নাম। শহীদ জেহাদের আত্মত্যাগ আমাদেরকে প্রেরণা দিতে হবে দেশি-বিদেশি অপশক্তির চক্রান্ত প্রতিহত করতে এবং গণতন্ত্রকে দৃঢ় ভিত্তিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে।’
১ দিন আগে