প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক

‘আশ্বস্ত’ হলে ভোটের লড়াইয়ের কৌশল, না হলে কর্মসূচি দেবে বিএনপি

প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম
প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০২: ০৪
বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে নেতাকর্মীরা। ছবি: বিএনপির অফিশিয়াল ওয়েবসাইট

দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি)। দলটির আগামী দিনের রাজনৈতিক কর্মসূচির গতিপ্রকৃতির অনেকটাই এ বৈঠক থেকে নির্ধারণ হবে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা।

সার্বিকভাবে রাজনীতির নানা বিষয় আলোচনায় থাকলেও এ বৈঠকে বিএনপির প্রধান আলোচ্য বিষয় নির্বাচন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে, সেটিই সুনির্দিষ্টভাবে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের কাছে জানতে চায় বিএনপি। দলের পক্ষ থেকেও দেওয়া হতে পারে নির্বাচনি রোডম্যাপের প্রস্তাবনা।

দলটির নেতারা জানিয়েছেন, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যে আলোচনা হবে তাতে যদি তারা নির্বাচন নিয়ে ‘আশ্বস্ত’ বোধ করেন, তাহলে তারা জাতীয় নির্বাচনের ভোটের মাঠের কৌশল নির্ধারণে মনোযোগী হবে। তবে আলোচনা থেকে যদি বিএনপি আশ্বস্ত হতে না পারে, তাহলে নির্বাচনি রোডম্যাপের জন্য কর্মসূচি ঘোষণার দিকে যাবে দলটি।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় বিএনপি নেতারা গিয়ে বৈঠকে বসবেন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে। এর আগে মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) রাতে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছে দলটির স্থায়ী কমিটি। সেখানেও মূল আলোচ্য বিষয় ছিল বুধবারের বৈঠক।

এ বৈঠক নিয়ে গণমাধ্যমকে আগেই জানিয়েছিল বিএনপি। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকেও মঙ্গলবার বৈঠকটির তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল বুধবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করবে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গিয়েছিলেন সিঙ্গাপুরে। সেখান থেকে তিনি দেশে ফিরেছেন সোমবার (১৪ এপ্রিল)। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পরই সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আলোচনা ও ঐক্যের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের রোডম্যাপসহ সব সংকটের সমাধান হবে। ঐক্য সম্ভব হবে বলেও প্রত্যয় জানান তিনি।

কেন এ বৈঠক

নির্বাচন নিয়ে বিএনপি সন্দেহ আর অনিশ্চয়তার কথা অনেকদিন ধরেই বলে আসছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্বভার গ্রহণের পরপর বলেছিলেন, এ বছরের ডিসেম্বর নাগাদ নির্বাচন হতে পারে। পরে বিভিন্ন খাতের সংস্কারে সংস্কার কমিশন গঠন-পরবর্তী সময়ে তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচন এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে হবে।

জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণসহ বিদেশি বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ওপর নির্ভর করে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা হবে। দলগুলো অল্প সংস্কারে রাজি হলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা যাবে। বেশি সংস্কার চাইলে নির্বাচন জুনে গিয়ে ঠেকতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টা বারবার এ কথা বললেও আশ্বস্ত হতে পারেনি বিএনপি। দলটির বক্তব্য, নির্বাচন নিয়ে তারা সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চায়। সেই রোডম্যাপ পেলে তবেই তারা আশ্বস্ত হতে পারবে।

সংস্কারের সঙ্গে নির্বাচনের পারস্পরিক নির্ভরশীলতারও বিরুদ্ধে বিএনপি। দলটির ভাষ্য, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। ফলে সংস্কারের জন্য নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। সংস্কারকে চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে মেনে নিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দেওয়ার দাবি রয়েছে দলটির পক্ষ থেকে।

নির্বাচন নিয়ে দলের মধ্যেকার এ অনিশ্চয়তা থেকেই বিএনপি সরাসরি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক চায়। পরে গত ৯ এপ্রিল বৈঠকে বসে দলটির স্থায়ী কমিটি। ওই বৈঠকের পর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচনি রোডম্যাপের জন্য বিএনপি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করবে।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বিএনপিকে ১৬ এপ্রিল দুপুর ১২টায় সাক্ষাতের জন্য সময় দিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করব। যেহেতু বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন পক্ষের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্যের কারণে কিছু বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। তাই আমরা তাকে (প্রধান উপদেষ্টাকে) বিষয়গুলো স্পষ্ট করার অনুরোধ জানাব। আমরা অবশ্যই ডিসেম্বরের আগে সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চাইব।

নির্বাচন ঘিরেই আলোচনা

দলীয় সূত্র বলছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির মঙ্গলবারের বৈঠকের মূল আলোচ্যসূচিই ছিল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি। প্রধান উপদেষ্টাকে বিএনপির পক্ষ থেকে কী জানতে চাওয়া হবে বা কী বার্তা দেওয়া হবে, এ নিয়েই মূলত আলোচনা হয়েছে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, নির্বাচন নিয়ে সরকারের একেক উপদেষ্টা একেক ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন। অন্তর্বর্তী সরকারকে মানুষ পাঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চায়— এমন কথাও উঠে এসেছে। অন্তর্বর্তী সরকার অভ্যুত্থান দ্বারা নির্বাচিত বলেও উল্লেখ করেছেন কোনো কোনো উপদেষ্টা। এসব বিষয় নিয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। সংস্কার আর নির্বাচনের মধ্যে বিরোধ তৈরির চেষ্টা চলছে। এসব নিয়ে ধোঁয়াশা কাটাতে হবে।

কেবল সরকারের বক্তব্য শোনার জন্যই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে যাচ্ছে না বিএনপি, বরং বৈঠকে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরবে দলটি। বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, বিএনপির পক্ষ থেকে আগামী ডিসেম্বরকে টার্গেট করে একটি নির্বাচনি রোডম্যাপের প্রস্তাব তুলে ধরা হবে।

BNP-Standing-Comittee-Meeting-15-04-2025

মঙ্গলবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: সংগৃহীত

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট— আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাই। এ প্রসঙ্গে সরকারের অবস্থান কী, সেটি স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। বিএনপি চায়, সরকার নির্বাচন নিয়ে রোডম্যাপ ঘোষণা করুক।

নির্বাচন ডিসেম্বরের কিছুটা পরে গেলেও আপত্তি থাকবে না বিএনপির। দলের কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, ২০২৬ সালের শুরুর দিকেও যদি সরকার নির্বাচন আয়োজন করতে চায়, আমাদের পক্ষ থেকে আপত্তি নেই। কিন্তু সরকার যেন সেটাই স্পষ্ট করে বলে।

ভোটের প্রস্তুতি নাকি আন্দোলন?

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা স্পষ্ট করেই বলেছেন, সরকার নির্বাচন নিয়ে বিএনপিকে আশ্বস্ত করতে না পারলে নির্বাচনি রোডম্যাপের দাবিতেই তাদের কর্মসূচির দিকে যেতে হবে। বুধবারের বৈঠকের আলোচনা এই কর্মসূচির গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করবে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, জাতীয় নির্বাচন একটি রাজনৈতিক দলের জন্য মহা কর্মযজ্ঞ। নির্বাচনি ইশতেহার থেকে শুরু করে প্রার্থী মনোনয়ন, প্রার্থী বাছাইয়ে মনোনয়ন বোর্ড গঠনের মতো নানা ধরনের কাজ রয়েছে। দলের মধ্যে যারা নির্বাচন করতে আগ্রহী, তাদের জন্যও প্রস্তুতির বিষয় আছে। আর এসব কিছু করতে গেলেই প্রয়োজন হবে নির্বাচনি রোডম্যাপ।

বিএনপির কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বারবারই নির্বাচনের কথা বলেছেন। তার বক্তব্য শুনলে মনে হয় তিনি নির্বাচনের পক্ষেই আছেন। কিন্তু সেটি সুস্পষ্টভাবে জানা প্রয়োজন। সংস্কার আর নির্বাচনের প্রস্তুতি একসঙ্গেই হোক। সেটি কীভাবে হতে পারে, তা দলের পক্ষ থেকে একটি রোডম্যাপে প্রস্তাবনা আকারে দেওয়া হবে প্রধান উপদেষ্টার কাছে। আমরা বৈঠক থেকে ইতিবাচক কিছুই আশা করছি।

আলোচনায় সংস্কারসহ অন্য ইস্যু

দলীয় সূত্র বলছে, সংস্কার ইস্যুটিও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে আলোচনায় রাখছে বিএনপি। এরই মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে বিএনপির। ঐকমত্য কমিশনের সংস্কারের বিভিন্ন সুপারিশ নিয়ে বিএনপি নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে।

ঐকমত্য কমিশনের অধিকাংশ সংস্কার প্রস্তাবে দলটি যে একমত, বৈঠকে সেটি তুলে ধরবে বিএনপি। বাকি সুপারিশগুলো নিয়ে বিএনপির ব্যাখ্যা কী, সেগুলোও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করবেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আগের সরকারের আমলে দলের নেতাকর্মীদের নামে যেসব মামলা হয়েছিল, সে বিষয়টিও বৈঠকে তুলবেন তারা।

ad
ad

ঘরের রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

ড. ইউনূসের পদত্যাগ তার ব্যক্তিগত বিষয়, বিএনপি দাবি করেনি : সালাউদ্দিন

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা না করে যদি তিনি দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চান, সেটিও তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে একান্তই যদি তিনি দায়িত্ব পালনে অপারগ হন, তাহলে রাষ্ট্র তো বসে থাকবে না। রাষ্ট্র নিজ দায়িত্বে বিকল্প ব্যবস্থা নেবে।’

৯ ঘণ্টা আগে

আপনার পদত্যাগ চাই না— অধ্যাপক ইউনূসের প্রতি ফারুক

জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ‘আপনার মতো সচেতন নাগরিক, যিনি বিশ্বের দরবারে আমাদের গর্বিত করেছেন, আপনি নোবেলজয়ী। আপনি ব্যক্তিগত ইউনূস নন, আপনি জনগণের। আপনি বলেছেন পদত্যাগ করতে চাই, এসব দেখে আমার মন খারাপ হয়েছে। ড. ইউনূস, আপনি এই দেশের ১৮ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন, আমরা আপনার পদত্যাগ চাই না।’

৯ ঘণ্টা আগে

প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না: বিশেষ সহকারী

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমি মনে করি, সরকারকে এখন থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে আলোচনায় বসতে হবে। নিয়মিত বসে এবং বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত চাইতে হবে। কোনো ধরনের বিচ্ছিন্নতা কাম্য নয়।’

১৩ ঘণ্টা আগে

দায়িত্ব পালন করতে পারছি কি না, এটিই চাপ: রিজওয়ানা

উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, শুধু নির্বাচনের জন্য বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়নি। কাল (বৃহস্পতিবার) উপদেষ্টা পরিষদের সভার পর অনেক সময় আমরা আলোচনা করেছি। আমাদের তিনটি কঠিন দায়িত্ব- এর একটি সংস্কার, অন্যটি বিচার, আরেকটি নির্বাচন। শুধুমাত্র নির্বাচন করার জন্যই আমরা দায়িত্বটা নেইনি। আমাদের আরও দুটি দায়ি

১৪ ঘণ্টা আগে