ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
জুলাই অভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে বিগত ১০ মাস লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মুখ খুলেছেন। ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ওয়ালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই প্রথম সাবেক এই সেতুমন্ত্রী উত্তাল জুলাইয়ের সেই সংকাটাপন্ন সময় নিয়ে কথা বলেছেন।
আওয়ামী লীগের তিন বারের সাধারণ সম্পাদক ৭৩ বছর বয়সি এই নেতা বাংলাদেশের রাজনীতিতে বরাবরই অত্যন্ত বিতর্কিত এবং সমালোচিত। তবে দলটির উত্থান-পতনের সঙ্গে তার সম্পর্ক আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। দ্য ওয়ালকে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসার ঘটনাসহ তাকে নিয়ে নানাবিধ সমালোচনার উত্তর দিয়েছেন। এই নেতা দ্য ওয়ালকে জানান, জীবন বাঁচাতে তিনি পাঁচ ঘণ্টা বাথরুমে লুকিয়ে ছিলেন!
তিনি বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের দিন সস্ত্রী্ক এক পরিচিতের বাসায় গিয়ে উঠেছিলাম। আমার বাসায় তখন হামলা শুরু হয়ে গেছে। সেসময় যে বাসায় উঠি সেখানেও হামলা, লুটপাট শুরু হয়ে যায়। এরকম একটি পরিস্থিতিতে এক পর্যায়ে বাথরুমে গিয়ে আশ্রয় নিয়ে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা লুকিয়ে ছিলাম। এরপর হামলাকারীরা বাথরুমে খোঁজ করতে চাইলে বেরিয়ে আসি। স্ত্রীকে বলি যা হওয়ার হবে, ওদের ঠুকতে দাও। সাত-আটটা হিংস্র ছেলে যখন ঘরে ঢুকে তখন ভাবিনি বেঁচে থাকব।’
এরপর তিনি বলেন, ‘আশ্চর্যের বিষয় হলো আমাকে চিনতে পেরে ছেলেগুলো বলল, আপনার নেত্রী চলে গেছেন। আপনি যাননি কেন? আমি চুপ ছিলাম। ওদের একদল আমাকে সেনা, আর একদল জনতার হাতে তুলে দিতে চাইল। তখন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। একদল আবার আমার সঙ্গে সেলফি তুলল। কী মনে করে ওরা আমাদের রাস্তায় নিয়ে গেল। ধরে নিয়েছিলাম, জনতার হাতে তুলে দেবে। ওরা সেটা না করে আমাদের পোশাক বদল করিয়ে, মাস্ক পরিয়ে একটা গাড়িতে করে দূরে একটি জায়গায় নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দিল। রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে চেক করা হচ্ছিল। গাড়ি চেক করতে আসা লোকজনকে ছেলেগুলো বলল, আমাদের চাচা-চাচিকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। ছেড়ে দাও। এরপর বড় রাস্তা থেকে আমরা স্বামী-স্ত্রী দূরে আর এক জায়গায় চলে যাই।’
এই নেতা বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পর ঝুঁকি নিয়ে তিন মাস দেশেই আত্মগোপন করে ছিলাম। দেশে থেকে যাওয়ার পিছনে আমার একটা পরিকল্পনা ছিল। আমি চেষ্টা করছিলাম, শ্রমিক, কৃষক-সহ পেশাজীবী, বিশেষ করে গার্মেন্ট শ্রমিকদের নিয়ে যদি কিছু করা যায়। শ্রমিক-কর্মচারীদের অসন্তোষ, ক্ষোভকে সংঘঠিত করার চেষ্টায় ছিলাম।
আমি অসুস্থ। বাইপাস সার্জারি হয়েছে আগেই। অনেক ওষুধ খেতে হয়। এক পর্যায়ে আমার ওষুধ খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। ধরা পড়লে ওষুধ খাওয়া পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেত। এদিকে, মাথার উপর ১১২টা খুনের মামলা। একের পর এক নেতা ধরা পড়ছেন। তখন অনেকেই বললেন, দেশে থাকা ঠিক হবে না। এক পর্যায়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হই।‘
গণ-অভ্যুত্থান দমনে ছাত্রলীগ, যুবলীগকে মাঠে নামানোর প্রসঙ্গে এই নেতা বলেন, ‘আমি কখনও ছাত্রলীগ, যুবলীগকে অভ্যুত্থান দমন করতে পথে নামতে বলিনি। আমার ভাষণের ভিডিওতে দেখবেন, ছাত্রলীগ কথাটাই আমি উচ্চারণ করিনি। আমি দলের সাধারণ সম্পাদক। তারা আমাদের বিটিভি ভবন, সেতু ভবন পুড়িয়ে দিচ্ছে। আমাদের অফিসে বারবার হামলা করছে। আমি কি চুপ করে থাকব? আমি কি নিজেকে, পার্টিকে, আমার নেত্রীকে বাঁচাব না? সে সময় দলের নেতা হিসেবে আমার দায়িত্ব আমি পালন করেছি। আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে তিনিও সেটা করতেন।’
আওয়ামী লিগ শেষ পর্যায়ে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিল। এত দীর্ঘ সময় তারা দেশ চালিয়েছে। এত বড় একটি দল। মানুষের এত ক্ষোভ এই দল ও প্রশাসন কেন বুঝতে পারল না?
এসব প্রশ্নের জবাবে গোয়েন্দা ব্যর্থতাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটি একটি আকস্মিক ঘটনা। এটা শুরু হয় কোটাবিরোধী আন্দোলন দিয়ে, শেষ হয় এক দফা দাবি দিয়ে। এটা একটি ষড়যন্ত্র ছিল। এক্ষেত্রে ইন্টেলিজেন্সের যে ব্যর্থতা ছিল সেটা তো মানতেই হবে।’
দলের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে অভ্যুত্থান মোকাবিলা করতে না পারার দায় নিচ্ছেন?
এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাকে আমার নেত্রী যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, সেভাবে কাজ করেছি। সাধারণ সম্পাদক হিসাবে আমার ভূল-ত্রুটি থাকতে পারে। আই অ্যাম নট ইমিউনড ফ্রম মিসটেকস। মানুষ মাত্রই ভুল করে। এমন তো নয় যে সাধারণ সম্পাদক ভুল করেন না।’
দলের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে নিজের কোনো ভুল নিজে চিহ্নিত করতে পারেন কী না?
এ প্রসঙ্গে এই নেতা বলেন, ‘চাঁদাবাজি করিনি, কমিশন খাইনি, টাকা নিয়ে দলের পদ দিইনি। এসব ব্যাপারে আমি নির্দোষ। বলতে পারি, আমি কাজ করেছি। আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করতে কমিশন নিইনি। কমিশনের বিনিময়ে কাউকে পদ দেইনি। সেদিক থেকে আমি নিজেরে নির্দোষ বলে দাবি করতে পারি।‘
আমরা ভুল করে থাকলে দেশে ফিরে গিয়ে ক্ষমা চাইব
শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। ১৫ বছর আগের আর পরের উন্নয়নে দিন আর রাতের মতো পার্থক্য। আমাদের সমালোচনা তারাই করেন, যারা দিনের আলোয় রাতের অন্ধকার দেখেন, আবার ঘোর অমাবস্যাকে পূর্ণিমা বলে দাবি করেন। সমালোচনা করার মতো বিষয় অবশ্যই আছে। সময় হলে দেশের মাটিতে দাঁড়িয়েই সব কিছুরই উত্তর আমরা দেব।
আপনার এতদিনের নীরবতার পেছনের কারণ কি? এটি কি কোন ধরণের শাস্তি?
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে নীরব ছিলাম কারণ আমাকে চুপ থাকতে বলা হয়েছিল। এটা একটি শাস্তি- কিছু লোক আছে যারা এসব বলে শান্তি পান। এসব বলার মধ্যে তাদের এক ধরণের সুখানুভূতি আছে। আমাকে তিন-তিনবার দলের সাধারণ সম্পাদক করেছেন নেত্রী। এটা তো অনেকের পছন্দ হওয়ার কথা না। আমাদের মতো দলে অনেক প্রতিযোগিতা থাকে। আমি যখন দলের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলাম তখনও ছিল। এটা অবাস্তব কিছু নয়। আমাদের মতো দেশে, আওয়ামী লীগের মতো মাল্টিক্লাস পার্টিতে এটা স্বাভাবিক।‘
নেত্রীর নির্দেশে নীরব ছিলাম, তিনিই এখন সক্রিয় হতে বলেছেন
'আমার শরীর-স্বাস্থ্য নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবচেয়ে বেশী চিন্তিত ছিলেন। তিনি আমাকে বলেন, তোমাকে এখন কিছু করতে হবে না। তুমি ভাল করে নিজের চিকিৎসা করাও। পারলে মুক্তিযুদ্ধ, সমকালীন রাজনীতি নিয়ে লেখালেখি করো। কখন কী করতে হবে আমি বলে দেব। আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কখনও দেখা করার চেষ্টা করিনি। কারণ উনি যেখানে আছেন, সেটা হাইসিকিউরিটি জোন। উনি যদি প্রয়োজন মনে করেন, ঠিক আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। উনিই সম্প্রতি আমাকে সক্রিয় হতে বলেছেন। আমি ভাল করেছি কী মন্দ করেছি তার সবচেয়ে বড় সাক্ষী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
আওয়ামী লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে মতবিরোধ
এ প্রসঙ্গে এই নেতা বলেন, ‘এই কামড়াকামড়ি অসুস্থ রাজনীতি। এখনও আমরা দেশের বাইরে। আগে দেশ নিয়ে আমাদের ভাবা দরকার। এখানে বসে পদ নিয়ে কামড়াকামড়ি করলে আমাদেরই ক্ষতি।’
আওয়ামী লিগের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
সবশেষে, আওয়ামী লিগের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে ওয়ায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে নিজেদের জায়গা ফিরে পাব, এনিয়ে শতভাগ আশাবাদী। জনমত সমীক্ষার রিপোর্ট দেখুন, বেশিরভাগ মানুষ বলছেন, শেখ হাসিনাই ভাল ছিলেন। আগে ভাল ছিলাম।‘
আওয়ামী লিগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা নিয়ে ভারত সরকার ছাড়া আর কোনো দেশ প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তাহলে আওয়ামী লীগ কি একঘরে হয়ে আছে?
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মোটেই না। আমরা ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞ। তবে কোনো দেশ সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করতে চাই না।’
সবশেষে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা প্রার্থনা করে এই নেতা বলেন, ‘ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকলে সেটা দেশে ফিরে বলব। ভারতে বসে বলব কেন? আমারা, আমাদের ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকলে সেটা বলার জন্য আমাদের নেত্রী আছেন। তিনিই দেশে ফিরে দেশবাসীকে বলবেন। এখান থেকে বলা কি ঠিক?’
সূত্র: দ্য ওয়াল
জুলাই অভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে বিগত ১০ মাস লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মুখ খুলেছেন। ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ওয়ালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই প্রথম সাবেক এই সেতুমন্ত্রী উত্তাল জুলাইয়ের সেই সংকাটাপন্ন সময় নিয়ে কথা বলেছেন।
আওয়ামী লীগের তিন বারের সাধারণ সম্পাদক ৭৩ বছর বয়সি এই নেতা বাংলাদেশের রাজনীতিতে বরাবরই অত্যন্ত বিতর্কিত এবং সমালোচিত। তবে দলটির উত্থান-পতনের সঙ্গে তার সম্পর্ক আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। দ্য ওয়ালকে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসার ঘটনাসহ তাকে নিয়ে নানাবিধ সমালোচনার উত্তর দিয়েছেন। এই নেতা দ্য ওয়ালকে জানান, জীবন বাঁচাতে তিনি পাঁচ ঘণ্টা বাথরুমে লুকিয়ে ছিলেন!
তিনি বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের দিন সস্ত্রী্ক এক পরিচিতের বাসায় গিয়ে উঠেছিলাম। আমার বাসায় তখন হামলা শুরু হয়ে গেছে। সেসময় যে বাসায় উঠি সেখানেও হামলা, লুটপাট শুরু হয়ে যায়। এরকম একটি পরিস্থিতিতে এক পর্যায়ে বাথরুমে গিয়ে আশ্রয় নিয়ে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা লুকিয়ে ছিলাম। এরপর হামলাকারীরা বাথরুমে খোঁজ করতে চাইলে বেরিয়ে আসি। স্ত্রীকে বলি যা হওয়ার হবে, ওদের ঠুকতে দাও। সাত-আটটা হিংস্র ছেলে যখন ঘরে ঢুকে তখন ভাবিনি বেঁচে থাকব।’
এরপর তিনি বলেন, ‘আশ্চর্যের বিষয় হলো আমাকে চিনতে পেরে ছেলেগুলো বলল, আপনার নেত্রী চলে গেছেন। আপনি যাননি কেন? আমি চুপ ছিলাম। ওদের একদল আমাকে সেনা, আর একদল জনতার হাতে তুলে দিতে চাইল। তখন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। একদল আবার আমার সঙ্গে সেলফি তুলল। কী মনে করে ওরা আমাদের রাস্তায় নিয়ে গেল। ধরে নিয়েছিলাম, জনতার হাতে তুলে দেবে। ওরা সেটা না করে আমাদের পোশাক বদল করিয়ে, মাস্ক পরিয়ে একটা গাড়িতে করে দূরে একটি জায়গায় নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দিল। রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে চেক করা হচ্ছিল। গাড়ি চেক করতে আসা লোকজনকে ছেলেগুলো বলল, আমাদের চাচা-চাচিকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। ছেড়ে দাও। এরপর বড় রাস্তা থেকে আমরা স্বামী-স্ত্রী দূরে আর এক জায়গায় চলে যাই।’
এই নেতা বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পর ঝুঁকি নিয়ে তিন মাস দেশেই আত্মগোপন করে ছিলাম। দেশে থেকে যাওয়ার পিছনে আমার একটা পরিকল্পনা ছিল। আমি চেষ্টা করছিলাম, শ্রমিক, কৃষক-সহ পেশাজীবী, বিশেষ করে গার্মেন্ট শ্রমিকদের নিয়ে যদি কিছু করা যায়। শ্রমিক-কর্মচারীদের অসন্তোষ, ক্ষোভকে সংঘঠিত করার চেষ্টায় ছিলাম।
আমি অসুস্থ। বাইপাস সার্জারি হয়েছে আগেই। অনেক ওষুধ খেতে হয়। এক পর্যায়ে আমার ওষুধ খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। ধরা পড়লে ওষুধ খাওয়া পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেত। এদিকে, মাথার উপর ১১২টা খুনের মামলা। একের পর এক নেতা ধরা পড়ছেন। তখন অনেকেই বললেন, দেশে থাকা ঠিক হবে না। এক পর্যায়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হই।‘
গণ-অভ্যুত্থান দমনে ছাত্রলীগ, যুবলীগকে মাঠে নামানোর প্রসঙ্গে এই নেতা বলেন, ‘আমি কখনও ছাত্রলীগ, যুবলীগকে অভ্যুত্থান দমন করতে পথে নামতে বলিনি। আমার ভাষণের ভিডিওতে দেখবেন, ছাত্রলীগ কথাটাই আমি উচ্চারণ করিনি। আমি দলের সাধারণ সম্পাদক। তারা আমাদের বিটিভি ভবন, সেতু ভবন পুড়িয়ে দিচ্ছে। আমাদের অফিসে বারবার হামলা করছে। আমি কি চুপ করে থাকব? আমি কি নিজেকে, পার্টিকে, আমার নেত্রীকে বাঁচাব না? সে সময় দলের নেতা হিসেবে আমার দায়িত্ব আমি পালন করেছি। আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে তিনিও সেটা করতেন।’
আওয়ামী লিগ শেষ পর্যায়ে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিল। এত দীর্ঘ সময় তারা দেশ চালিয়েছে। এত বড় একটি দল। মানুষের এত ক্ষোভ এই দল ও প্রশাসন কেন বুঝতে পারল না?
এসব প্রশ্নের জবাবে গোয়েন্দা ব্যর্থতাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটি একটি আকস্মিক ঘটনা। এটা শুরু হয় কোটাবিরোধী আন্দোলন দিয়ে, শেষ হয় এক দফা দাবি দিয়ে। এটা একটি ষড়যন্ত্র ছিল। এক্ষেত্রে ইন্টেলিজেন্সের যে ব্যর্থতা ছিল সেটা তো মানতেই হবে।’
দলের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে অভ্যুত্থান মোকাবিলা করতে না পারার দায় নিচ্ছেন?
এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাকে আমার নেত্রী যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, সেভাবে কাজ করেছি। সাধারণ সম্পাদক হিসাবে আমার ভূল-ত্রুটি থাকতে পারে। আই অ্যাম নট ইমিউনড ফ্রম মিসটেকস। মানুষ মাত্রই ভুল করে। এমন তো নয় যে সাধারণ সম্পাদক ভুল করেন না।’
দলের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে নিজের কোনো ভুল নিজে চিহ্নিত করতে পারেন কী না?
এ প্রসঙ্গে এই নেতা বলেন, ‘চাঁদাবাজি করিনি, কমিশন খাইনি, টাকা নিয়ে দলের পদ দিইনি। এসব ব্যাপারে আমি নির্দোষ। বলতে পারি, আমি কাজ করেছি। আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করতে কমিশন নিইনি। কমিশনের বিনিময়ে কাউকে পদ দেইনি। সেদিক থেকে আমি নিজেরে নির্দোষ বলে দাবি করতে পারি।‘
আমরা ভুল করে থাকলে দেশে ফিরে গিয়ে ক্ষমা চাইব
শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। ১৫ বছর আগের আর পরের উন্নয়নে দিন আর রাতের মতো পার্থক্য। আমাদের সমালোচনা তারাই করেন, যারা দিনের আলোয় রাতের অন্ধকার দেখেন, আবার ঘোর অমাবস্যাকে পূর্ণিমা বলে দাবি করেন। সমালোচনা করার মতো বিষয় অবশ্যই আছে। সময় হলে দেশের মাটিতে দাঁড়িয়েই সব কিছুরই উত্তর আমরা দেব।
আপনার এতদিনের নীরবতার পেছনের কারণ কি? এটি কি কোন ধরণের শাস্তি?
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে নীরব ছিলাম কারণ আমাকে চুপ থাকতে বলা হয়েছিল। এটা একটি শাস্তি- কিছু লোক আছে যারা এসব বলে শান্তি পান। এসব বলার মধ্যে তাদের এক ধরণের সুখানুভূতি আছে। আমাকে তিন-তিনবার দলের সাধারণ সম্পাদক করেছেন নেত্রী। এটা তো অনেকের পছন্দ হওয়ার কথা না। আমাদের মতো দলে অনেক প্রতিযোগিতা থাকে। আমি যখন দলের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলাম তখনও ছিল। এটা অবাস্তব কিছু নয়। আমাদের মতো দেশে, আওয়ামী লীগের মতো মাল্টিক্লাস পার্টিতে এটা স্বাভাবিক।‘
নেত্রীর নির্দেশে নীরব ছিলাম, তিনিই এখন সক্রিয় হতে বলেছেন
'আমার শরীর-স্বাস্থ্য নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবচেয়ে বেশী চিন্তিত ছিলেন। তিনি আমাকে বলেন, তোমাকে এখন কিছু করতে হবে না। তুমি ভাল করে নিজের চিকিৎসা করাও। পারলে মুক্তিযুদ্ধ, সমকালীন রাজনীতি নিয়ে লেখালেখি করো। কখন কী করতে হবে আমি বলে দেব। আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কখনও দেখা করার চেষ্টা করিনি। কারণ উনি যেখানে আছেন, সেটা হাইসিকিউরিটি জোন। উনি যদি প্রয়োজন মনে করেন, ঠিক আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। উনিই সম্প্রতি আমাকে সক্রিয় হতে বলেছেন। আমি ভাল করেছি কী মন্দ করেছি তার সবচেয়ে বড় সাক্ষী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
আওয়ামী লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে মতবিরোধ
এ প্রসঙ্গে এই নেতা বলেন, ‘এই কামড়াকামড়ি অসুস্থ রাজনীতি। এখনও আমরা দেশের বাইরে। আগে দেশ নিয়ে আমাদের ভাবা দরকার। এখানে বসে পদ নিয়ে কামড়াকামড়ি করলে আমাদেরই ক্ষতি।’
আওয়ামী লিগের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
সবশেষে, আওয়ামী লিগের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে ওয়ায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে নিজেদের জায়গা ফিরে পাব, এনিয়ে শতভাগ আশাবাদী। জনমত সমীক্ষার রিপোর্ট দেখুন, বেশিরভাগ মানুষ বলছেন, শেখ হাসিনাই ভাল ছিলেন। আগে ভাল ছিলাম।‘
আওয়ামী লিগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা নিয়ে ভারত সরকার ছাড়া আর কোনো দেশ প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তাহলে আওয়ামী লীগ কি একঘরে হয়ে আছে?
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মোটেই না। আমরা ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞ। তবে কোনো দেশ সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করতে চাই না।’
সবশেষে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা প্রার্থনা করে এই নেতা বলেন, ‘ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকলে সেটা দেশে ফিরে বলব। ভারতে বসে বলব কেন? আমারা, আমাদের ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকলে সেটা বলার জন্য আমাদের নেত্রী আছেন। তিনিই দেশে ফিরে দেশবাসীকে বলবেন। এখান থেকে বলা কি ঠিক?’
সূত্র: দ্য ওয়াল
হাতে হাত রেখে পরস্পর সৌহার্দ্যের বার্তা দিয়েছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
১ দিন আগেলন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠক নিয়ে একটি দলের অসন্তুষ্টির কথা তুলে ধরেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
১ দিন আগেঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কর্মসূচির উদ্বোধন করলেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। আজ বুধবার দুপুরে নগর ভবনে চলমান টানা অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি এই কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন।
১ দিন আগে