বিশেষ প্রতিনিধি, রাজনীতি ডটকম
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে চূড়ান্ত রূপ পেয়েছে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকার এই সনদে সইয়ের দিনক্ষণও চূড়ান্ত করে ফেলেছে। তবে এই সনদ সইয়ের মাত্র একদিন আগে এসেও দেখা গেল, সনদে সই নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আসেনি পূর্ণাঙ্গ ঐকমত্য। এমনকি প্রধান উপদেষ্টা নিজে উপস্থিত থেকে দলগুলোর সঙ্গে বসলেও অন্তত দুটি বিষয় এখনো অমীমাংসিতই রয়ে গেছে।
কিছু রাজনৈতিক দল বলছে, জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে হওয়া ঐকমত্যগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ তথা ভিন্নমতগুলোও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখন এসব ভিন্নমত কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, সেটি স্পষ্ট করা হয়নি। আবার সাংবিধানিক মূলনীতি সংস্কারের ক্ষেত্রেও ‘নোট অব ডিসেন্ট’ রয়েছে, যা সনদে থাকলে সই করার সুযোগ নেই বলে অনড় অবস্থান কয়েকটি দলের।
এদিকে মোটাদাগে জুলাই সনদ নিয়ে ঐকমত্য থাকলেও এটি বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে ভিন্নমত এই শেষ মুহূর্তে এসেও কাটেনি। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জনগণের রায় নিতে গণভোট আয়োজনের যে সিদ্ধান্ত, তার দিনক্ষণ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন এবং অনড় অবস্থান রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের।
আগামী শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) জুলাই সনদ সইয়ের কথা থাকলেও এতদিন ধরে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে আসা সব রাজনৈতিক দল এতে আসলেই সই করবে কি না, বুধবার (১৫ অক্টোবর) রাত পর্যন্ত তা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি।
জুলাই সনদ নিয়ে শুরু থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নানা ধরনের মতভিন্নতা ছিল। দিনের পর দিন আলোচনার মাধ্যমে ভিন্নমত দূর হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত গত মাসে এসে জুলাই সনদের আলোচনা শেষ হয়। একাধিক খসড়ার পর গতকাল মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে জুলাই সনদের চূড়ান্ত রূপ।
এরপরই দলগুলো অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করে। বিভিন্ন দলের কাছ থেকেই প্রতিক্রিয়া আসে, জুলাই জাতীয় সনদ যে রূপ ধারণ করেছে, তাতে তারা এতে সই করবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধান্বিত। একাধিক দলের নেতা এ নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানান।
এদিকে আগেই আগামী শুক্রবার জুলাই সনদ সইয়ের তারিখ ঘোষণা করেছিল ঐকমত্য কমিশন। সরকারও এ নিয়ে সব প্রস্তুতি শেষ করে এনেছে। সার্বিক বিষয় পর্যালোচনার জন্য বুধবার দুপুরে ঐকমত্য কমিশন নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসেছিল। কমিশনের প্রধান ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বিভিন্ন দলের অনানুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ার পরিপ্রেক্ষিতেই আবার সব দলকে নিয়ে ‘অতি জরুরি’ বৈঠক ডাকা হয় সন্ধ্যায়।
বুধবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলো বসেছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে ‘অতি জরুরি’ সেই বৈঠকে। সেখানে সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিই বক্তব্য রাখেন। জুলাই জাতীয় সনদের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সেখানে কেউ প্রশ্ন তোলেননি। কিন্তু এর বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়েই উঠে এসেছে প্রশ্ন।
দলগুলো বলছে, জুলাই সনদে ৮৪টি প্রস্তাবে দলগুলো একমত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার এসব প্রস্তাবের মধ্যে অনেকগুলোতেই রয়েছে বিভিন্ন দলের ভিন্নমত রয়েছে। তারা এসব প্রস্তাবে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে।
দলগুলোর মধ্যে বিএনপি যেমন ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে অন্তত ৯টি সংস্কার প্রস্তাবে, যার মধ্যে রয়েছে সংসদের উচ্চ কক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনও। আবার বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি পরিবর্তনবিষয়ক সংস্কার প্রস্তাবেই।
সবগুলো ‘নোট অব ডিসেন্ট’ই উল্লেখ করা হয়েছে জুলাই সনদে। এখন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোট করা হলে ‘নোট অব ডিসেন্ট’সহই এটি গণভোটে যাবে। কিন্তু এগুলো কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, সে বিষয়টি সুস্পষ্ট নয় বলেই জানিয়েছে একাধিক রাজনৈতিক দল।
গণভোট ইস্যুতেও রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতা। বিএনপি যেমন চাইছে, আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের দিনই জুলাই সনদ নিয়ে গণভোট হবে। পরে নির্বাচিত সংসদ সনদ বাস্তবায়ন করবে।
জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য কিছু দলের আবার অবস্থান, জুলাই সনদের গণভোট জাতীয় নির্বাচনের আগেই হতে হবে। তাদের যুক্তি, এই গণভোটের ওপরই নির্ভর করবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা হবে কি না, আবার জুলাই সনদের ওপর নির্ভর করবে জাতীয় নির্বাচনের কিছু কিছু বিষয়। ফলে আগে জুলাই সনদের গণভোট না হলে জাতীয় নির্বাচন জুলাই সনদ অনুযায়ী আয়োজন করা সম্ভব হবে না।
‘নোট অব ডিসেন্ট’ বাস্তবায়ন নিয়ে দলের মধ্যে কোনো সংশয় নেই বলে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে জানিয়েছে বিএনপি। জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনের পক্ষে আগের মতোই অবস্থান জানিয়েছে দলটি। শুধু তাই নয়, বিএনপি মনে করছে, জুলাই সনদের গণভোট আগে আয়োজন করার দাবি জাতীয় নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার প্রয়াস হতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ প্রণীত হলে এবং তাতে সব রাজনৈতিক দল সই করলে গণভোটে একটাই প্রশ্ন থাকতে পারে— জুলাই জাতীয় সনদ যেভাবে স্বাক্ষরিত হয়েছে, জনগণ তার পক্ষে আছে কি না— ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ বলুন। আমরা আশা করি, এই গণভোটে ‘না’ ভোটের পরিমাণ হাতে গোনা যাবে। কারণ সমগ্র জাতি সংস্কারের পক্ষে। সুতরাং আমরা ধরেই নিতে পারি জনগণ সংস্কারের পক্ষে আছে।
তিনি বলেন, সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী জনগণ গণভোটের মধ্য দিয়ে এমন একটি এখতিয়ার-কর্তৃত্ব দেয় সংসদকে, যেন সেটা প্রতিপালনে-বাস্তবায়নে বাধ্যবাধকতা থাকে। সেটাকে বলা হচ্ছে গাঠনিক ক্ষমতা। সেটা সংসদকে দেওয়া হচ্ছে এবং সেটার অনুবলে যখন কোনো সংস্কার বা সংশোধনী গৃহীত হবে, সেটা চাইলেও বিচার বিভাগ তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে পারবে না। এটাই হচ্ছে গণভোটের ভিত্তি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা অপেক্ষায় আছি আগামী ১৭ তারিখ আমাদের ঐতিহাসিক দলিল জুলাই জাতীয় সনদ সই হবে সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় এবং সেটার পরে সেই স্বাক্ষরিত দলিল সবার কাছে দেওয়া হবে, জাতির জন্য উন্মুক্ত করা হবে। তারপর বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে সরকারের কাছে ঐকমত্য কমিশন বিভিন্ন প্রক্রিয়াসহ সুপারিশ করবে।
জুলাই সনদ নিয়ে বিএনপির মতো এত নিঃসংশয় অবশ্য না জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘নোট অব ডিসেন্টে’র একটি সংজ্ঞা প্রয়োজন এবং যেভাবে সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে, সেই পথনকশা এবং গণভোট প্রসঙ্গ স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন।
আখতার বলেন, আমরা প্রস্তাব দিয়েছি— ‘জুলাই আদেশ’ বা ‘সাংবিধানিক সংস্কার আদেশে’র মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা হোক। যে নামেই সেটি করা হোক না কেন, আমরা সেটিকে বাস্তবায়নের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা মনে করি, প্রধান উপদেষ্টা এ আদেশ জারি করবেন। জনগণের মধ্য দিয়ে যে অভিপ্রায় এরই মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে, তাকে বাস্তব রূপ দিতে তিনিই এ আদেশ বাস্তবায়ন করবেন।
এনসিপির এই নেতা বলেন, আমরা যে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছি, সেই গণভোটের প্রশ্ন এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। গণভোটের দিন-তারিখসহ বিষয়গুলো জাতির কাছে এবং আমাদের কাছেও স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। আমরা সংবিধানের এতগুলো মৌলিক বিষয় পরিবর্তনের যে প্রস্তাব করেছি, তা শুধু সংশোধনের মাধ্যমে টেকসই করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত। তাই মৌলিক সাংবিধানিক সংস্কার সই করার পরই পরবর্তী নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ক্ষমতার অধিকারী হবেন। সংসদ সদস্যরা ‘কনস্টিটিউয়েন্ট পাওয়ারে’র দায়িত্ব পাবেন— এ বিষয়টিও আমাদের কাছে পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন।
গণভোটের তারিখ প্রসঙ্গে অনড় অবস্থান রয়েছে জামায়াতে ইসলামীরও। দলটির কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ বৈঠকে বলেন, গণভোট আর জাতীয় নির্বাচন আলাদা বিষয়। নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট আয়োজন করতে হবে। এর মাধ্যমে জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে। এর ভিত্তিতেই পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
পরে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, এক দিনে দুই ভোট করার প্রস্তাব উদ্ভট আলোচনা। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট নভেম্বরেই দিতে হবে। আমরা বলেছি, গণভোট হচ্ছে রিফর্মস কমিশন কমিটির জন্য। এটা আলাদা বিষয়, আর জাতীয় নির্বাচন একটি আলাদা বিষয়।
আগে গণভোট চাওয়ার যুক্তি তুলে ধরে তাহের বলেন, গণভোটে এমন কিছু দিক আছে, যেগুলা যদি হ্যাঁ/না ভোটে না হয়, তাহলে তার ভিত্তিতে নির্বাচনের ক্যারেক্টারে কিছু পরিবর্তন হবে। যেমন— সংসদের উচ্চ কক্ষে পিআর সিস্টেম। নির্বাচনের আগেই ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত জনগণের কাছে পৌঁছাতে হবে এবং সেই সিদ্ধান্তের আলোকে জাতীয় নির্বাচনে আপার হাউজের ভোট হবে। যদি এটা নির্বাচনের দিনেই হয়, তাহলে তো আপার হাউজ নির্বাচনের দিন পর্যন্ত আর পাস হলো না। এক দিনে জাতীয় ও গণভোট হলে ভোট কাস্টিং একেবারেই অপ্রতুল হবে। কারণ, সেদিন গণভোটের কোনো গুরুত্বই থাকবে না।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ ওভারঅল ঐকমত্য, নোট অব ডিসেন্ট ও এর বাস্তবায়নের পদ্ধতিসহ একটা ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোটের মধ্য দিয়ে যাবে। তাহলে দুটি বিষয়ে গণভোটের রায় হবে। একটি হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদের অনুমোদন, আরেকটি হচ্ছে আগামী আইনসভাকে এই ক্ষমতা দেওয়া যে তারা কনস্টিটুয়েন্ট পাওয়ার ব্যবহার করে জুলাই সনদের মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক সংস্কার করতে পারবে।
তিনি বলেন, বেশ কয়েকটি পয়েন্ট আছে, যেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ভিন্ন অবস্থানের কারণে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। এগুলোসহ ঐকমত্য অংশ মিলিয়েই কিন্তু জাতীয় সনদ। যেখানে নোট অব ডিসেন্ট আছে, সেখানে প্রতিটা বিষয়ের নিচেই লেখা আছে কেন, কারা কারা এই ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে এবং সেগুলো কীভাবে বাস্তবায়িত হবে।
‘নোট অব ডিসেন্ট’গুলো বাস্তবায়নের পদ্ধতি তুলে ধরে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘নোট অব ডিসেন্ট’গুলো যারা দিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনে তারা তাদের ইশতেহারে এগুলো উল্লেখ করবেন। যে দল দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে তারা এটা তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী বাস্তবায়ন করতে পারবে। যদি কোনো দল দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায়, পরবর্তী আইনসভায় বা সংসদে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে এটা বাস্তবায়িত হবে।
গণসংহতি আন্দোলনের এই প্রধান সমন্বয়ক আরও বলেন, গণভোটের মধ্য দিয়ে আগামী আইনসভাকে একটি কনস্টিটুয়েন্ট পাওয়ার দিচ্ছেন। সে কারণে আগামী সংসদটা হবে সংবিধান সংস্কার পরিষদের সংসদ। অর্থাৎ সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও জাতীয় সংসদ। এর মধ্যে এই যে ক্ষমতাটা গণভোটের মধ্য দিয়ে জনগণ দিলো, জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে তারা মৌলিক সংস্কার করতে পারবে। এখন এই গণভোট কবে হবে? আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি, গণভোট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন একই দিনে হওয়াটাই ভালো।
এদিকে জুলাই জাতীয় সনদে রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির প্রশ্নে বাম গণতান্ত্রিক জোট ‘নোট অব ডিসেন্টে’র ঘোরতর বিরোধী। জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি পরিবর্তনের প্রশ্নে শুধু ভিন্নমত না, ঘোরতর আপত্তি। আমরা আগেই বলেছি, নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে আমরা সেখানে সই করতে পারব না।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, যেসব বিষয়ে সব দল সর্বসম্মতভাবে ঐকমত্য হবে, সেগুলোর বাইরে আর কিছুকে ঐকমত্য ধরা হবে না। কিন্তু ঐকমত্য কমিশন জুলাই জাতীয় সনদের যে খসড়া আমাদের কাছে পাঠিয়েছে সেখানে আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে দেখলাম— বেশ কিছু বিষয়ে বিভিন্ন দলের ‘নোট অব ডিসেন্ট’ আছে। সেগুলো নিয়েই জুলাই জাতীয় সনদ সইয়ের প্রস্তুতি চলছে।
বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, আমরা কিছু বিষয় উপস্থাপন করেছিলাম। আমরা বলেছিলাম, জুলাই জাতীয় সনদের যে পটভূমি, সেখানে সঠিক ইতিহাস বর্ণিত হয়নি। ‘নোট অব ডিসেন্ট’গুলো প্রোপারলি আসেনি। আমরা বলেছিলাম, রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি, সেই মূলনীতিতে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়ে আমরা সই করতে পারব না। বলা হয়েছে, পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হবে জুলাই সনদ। কিন্তু ‘নোট অব ডিসেন্ট’সহ কীভাবে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হবে?
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে চূড়ান্ত রূপ পেয়েছে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকার এই সনদে সইয়ের দিনক্ষণও চূড়ান্ত করে ফেলেছে। তবে এই সনদ সইয়ের মাত্র একদিন আগে এসেও দেখা গেল, সনদে সই নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আসেনি পূর্ণাঙ্গ ঐকমত্য। এমনকি প্রধান উপদেষ্টা নিজে উপস্থিত থেকে দলগুলোর সঙ্গে বসলেও অন্তত দুটি বিষয় এখনো অমীমাংসিতই রয়ে গেছে।
কিছু রাজনৈতিক দল বলছে, জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে হওয়া ঐকমত্যগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ তথা ভিন্নমতগুলোও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখন এসব ভিন্নমত কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, সেটি স্পষ্ট করা হয়নি। আবার সাংবিধানিক মূলনীতি সংস্কারের ক্ষেত্রেও ‘নোট অব ডিসেন্ট’ রয়েছে, যা সনদে থাকলে সই করার সুযোগ নেই বলে অনড় অবস্থান কয়েকটি দলের।
এদিকে মোটাদাগে জুলাই সনদ নিয়ে ঐকমত্য থাকলেও এটি বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে ভিন্নমত এই শেষ মুহূর্তে এসেও কাটেনি। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জনগণের রায় নিতে গণভোট আয়োজনের যে সিদ্ধান্ত, তার দিনক্ষণ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন এবং অনড় অবস্থান রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের।
আগামী শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) জুলাই সনদ সইয়ের কথা থাকলেও এতদিন ধরে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে আসা সব রাজনৈতিক দল এতে আসলেই সই করবে কি না, বুধবার (১৫ অক্টোবর) রাত পর্যন্ত তা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি।
জুলাই সনদ নিয়ে শুরু থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নানা ধরনের মতভিন্নতা ছিল। দিনের পর দিন আলোচনার মাধ্যমে ভিন্নমত দূর হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত গত মাসে এসে জুলাই সনদের আলোচনা শেষ হয়। একাধিক খসড়ার পর গতকাল মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে জুলাই সনদের চূড়ান্ত রূপ।
এরপরই দলগুলো অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করে। বিভিন্ন দলের কাছ থেকেই প্রতিক্রিয়া আসে, জুলাই জাতীয় সনদ যে রূপ ধারণ করেছে, তাতে তারা এতে সই করবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধান্বিত। একাধিক দলের নেতা এ নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানান।
এদিকে আগেই আগামী শুক্রবার জুলাই সনদ সইয়ের তারিখ ঘোষণা করেছিল ঐকমত্য কমিশন। সরকারও এ নিয়ে সব প্রস্তুতি শেষ করে এনেছে। সার্বিক বিষয় পর্যালোচনার জন্য বুধবার দুপুরে ঐকমত্য কমিশন নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসেছিল। কমিশনের প্রধান ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বিভিন্ন দলের অনানুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ার পরিপ্রেক্ষিতেই আবার সব দলকে নিয়ে ‘অতি জরুরি’ বৈঠক ডাকা হয় সন্ধ্যায়।
বুধবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলো বসেছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে ‘অতি জরুরি’ সেই বৈঠকে। সেখানে সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিই বক্তব্য রাখেন। জুলাই জাতীয় সনদের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সেখানে কেউ প্রশ্ন তোলেননি। কিন্তু এর বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়েই উঠে এসেছে প্রশ্ন।
দলগুলো বলছে, জুলাই সনদে ৮৪টি প্রস্তাবে দলগুলো একমত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার এসব প্রস্তাবের মধ্যে অনেকগুলোতেই রয়েছে বিভিন্ন দলের ভিন্নমত রয়েছে। তারা এসব প্রস্তাবে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে।
দলগুলোর মধ্যে বিএনপি যেমন ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে অন্তত ৯টি সংস্কার প্রস্তাবে, যার মধ্যে রয়েছে সংসদের উচ্চ কক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনও। আবার বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি পরিবর্তনবিষয়ক সংস্কার প্রস্তাবেই।
সবগুলো ‘নোট অব ডিসেন্ট’ই উল্লেখ করা হয়েছে জুলাই সনদে। এখন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোট করা হলে ‘নোট অব ডিসেন্ট’সহই এটি গণভোটে যাবে। কিন্তু এগুলো কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, সে বিষয়টি সুস্পষ্ট নয় বলেই জানিয়েছে একাধিক রাজনৈতিক দল।
গণভোট ইস্যুতেও রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতা। বিএনপি যেমন চাইছে, আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের দিনই জুলাই সনদ নিয়ে গণভোট হবে। পরে নির্বাচিত সংসদ সনদ বাস্তবায়ন করবে।
জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য কিছু দলের আবার অবস্থান, জুলাই সনদের গণভোট জাতীয় নির্বাচনের আগেই হতে হবে। তাদের যুক্তি, এই গণভোটের ওপরই নির্ভর করবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা হবে কি না, আবার জুলাই সনদের ওপর নির্ভর করবে জাতীয় নির্বাচনের কিছু কিছু বিষয়। ফলে আগে জুলাই সনদের গণভোট না হলে জাতীয় নির্বাচন জুলাই সনদ অনুযায়ী আয়োজন করা সম্ভব হবে না।
‘নোট অব ডিসেন্ট’ বাস্তবায়ন নিয়ে দলের মধ্যে কোনো সংশয় নেই বলে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে জানিয়েছে বিএনপি। জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনের পক্ষে আগের মতোই অবস্থান জানিয়েছে দলটি। শুধু তাই নয়, বিএনপি মনে করছে, জুলাই সনদের গণভোট আগে আয়োজন করার দাবি জাতীয় নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার প্রয়াস হতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ প্রণীত হলে এবং তাতে সব রাজনৈতিক দল সই করলে গণভোটে একটাই প্রশ্ন থাকতে পারে— জুলাই জাতীয় সনদ যেভাবে স্বাক্ষরিত হয়েছে, জনগণ তার পক্ষে আছে কি না— ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ বলুন। আমরা আশা করি, এই গণভোটে ‘না’ ভোটের পরিমাণ হাতে গোনা যাবে। কারণ সমগ্র জাতি সংস্কারের পক্ষে। সুতরাং আমরা ধরেই নিতে পারি জনগণ সংস্কারের পক্ষে আছে।
তিনি বলেন, সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী জনগণ গণভোটের মধ্য দিয়ে এমন একটি এখতিয়ার-কর্তৃত্ব দেয় সংসদকে, যেন সেটা প্রতিপালনে-বাস্তবায়নে বাধ্যবাধকতা থাকে। সেটাকে বলা হচ্ছে গাঠনিক ক্ষমতা। সেটা সংসদকে দেওয়া হচ্ছে এবং সেটার অনুবলে যখন কোনো সংস্কার বা সংশোধনী গৃহীত হবে, সেটা চাইলেও বিচার বিভাগ তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে পারবে না। এটাই হচ্ছে গণভোটের ভিত্তি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা অপেক্ষায় আছি আগামী ১৭ তারিখ আমাদের ঐতিহাসিক দলিল জুলাই জাতীয় সনদ সই হবে সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় এবং সেটার পরে সেই স্বাক্ষরিত দলিল সবার কাছে দেওয়া হবে, জাতির জন্য উন্মুক্ত করা হবে। তারপর বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে সরকারের কাছে ঐকমত্য কমিশন বিভিন্ন প্রক্রিয়াসহ সুপারিশ করবে।
জুলাই সনদ নিয়ে বিএনপির মতো এত নিঃসংশয় অবশ্য না জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘নোট অব ডিসেন্টে’র একটি সংজ্ঞা প্রয়োজন এবং যেভাবে সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে, সেই পথনকশা এবং গণভোট প্রসঙ্গ স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন।
আখতার বলেন, আমরা প্রস্তাব দিয়েছি— ‘জুলাই আদেশ’ বা ‘সাংবিধানিক সংস্কার আদেশে’র মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা হোক। যে নামেই সেটি করা হোক না কেন, আমরা সেটিকে বাস্তবায়নের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা মনে করি, প্রধান উপদেষ্টা এ আদেশ জারি করবেন। জনগণের মধ্য দিয়ে যে অভিপ্রায় এরই মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে, তাকে বাস্তব রূপ দিতে তিনিই এ আদেশ বাস্তবায়ন করবেন।
এনসিপির এই নেতা বলেন, আমরা যে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছি, সেই গণভোটের প্রশ্ন এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। গণভোটের দিন-তারিখসহ বিষয়গুলো জাতির কাছে এবং আমাদের কাছেও স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। আমরা সংবিধানের এতগুলো মৌলিক বিষয় পরিবর্তনের যে প্রস্তাব করেছি, তা শুধু সংশোধনের মাধ্যমে টেকসই করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত। তাই মৌলিক সাংবিধানিক সংস্কার সই করার পরই পরবর্তী নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ক্ষমতার অধিকারী হবেন। সংসদ সদস্যরা ‘কনস্টিটিউয়েন্ট পাওয়ারে’র দায়িত্ব পাবেন— এ বিষয়টিও আমাদের কাছে পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন।
গণভোটের তারিখ প্রসঙ্গে অনড় অবস্থান রয়েছে জামায়াতে ইসলামীরও। দলটির কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ বৈঠকে বলেন, গণভোট আর জাতীয় নির্বাচন আলাদা বিষয়। নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট আয়োজন করতে হবে। এর মাধ্যমে জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে। এর ভিত্তিতেই পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
পরে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, এক দিনে দুই ভোট করার প্রস্তাব উদ্ভট আলোচনা। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট নভেম্বরেই দিতে হবে। আমরা বলেছি, গণভোট হচ্ছে রিফর্মস কমিশন কমিটির জন্য। এটা আলাদা বিষয়, আর জাতীয় নির্বাচন একটি আলাদা বিষয়।
আগে গণভোট চাওয়ার যুক্তি তুলে ধরে তাহের বলেন, গণভোটে এমন কিছু দিক আছে, যেগুলা যদি হ্যাঁ/না ভোটে না হয়, তাহলে তার ভিত্তিতে নির্বাচনের ক্যারেক্টারে কিছু পরিবর্তন হবে। যেমন— সংসদের উচ্চ কক্ষে পিআর সিস্টেম। নির্বাচনের আগেই ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত জনগণের কাছে পৌঁছাতে হবে এবং সেই সিদ্ধান্তের আলোকে জাতীয় নির্বাচনে আপার হাউজের ভোট হবে। যদি এটা নির্বাচনের দিনেই হয়, তাহলে তো আপার হাউজ নির্বাচনের দিন পর্যন্ত আর পাস হলো না। এক দিনে জাতীয় ও গণভোট হলে ভোট কাস্টিং একেবারেই অপ্রতুল হবে। কারণ, সেদিন গণভোটের কোনো গুরুত্বই থাকবে না।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ ওভারঅল ঐকমত্য, নোট অব ডিসেন্ট ও এর বাস্তবায়নের পদ্ধতিসহ একটা ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোটের মধ্য দিয়ে যাবে। তাহলে দুটি বিষয়ে গণভোটের রায় হবে। একটি হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদের অনুমোদন, আরেকটি হচ্ছে আগামী আইনসভাকে এই ক্ষমতা দেওয়া যে তারা কনস্টিটুয়েন্ট পাওয়ার ব্যবহার করে জুলাই সনদের মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক সংস্কার করতে পারবে।
তিনি বলেন, বেশ কয়েকটি পয়েন্ট আছে, যেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ভিন্ন অবস্থানের কারণে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। এগুলোসহ ঐকমত্য অংশ মিলিয়েই কিন্তু জাতীয় সনদ। যেখানে নোট অব ডিসেন্ট আছে, সেখানে প্রতিটা বিষয়ের নিচেই লেখা আছে কেন, কারা কারা এই ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে এবং সেগুলো কীভাবে বাস্তবায়িত হবে।
‘নোট অব ডিসেন্ট’গুলো বাস্তবায়নের পদ্ধতি তুলে ধরে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘নোট অব ডিসেন্ট’গুলো যারা দিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনে তারা তাদের ইশতেহারে এগুলো উল্লেখ করবেন। যে দল দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে তারা এটা তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী বাস্তবায়ন করতে পারবে। যদি কোনো দল দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায়, পরবর্তী আইনসভায় বা সংসদে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে এটা বাস্তবায়িত হবে।
গণসংহতি আন্দোলনের এই প্রধান সমন্বয়ক আরও বলেন, গণভোটের মধ্য দিয়ে আগামী আইনসভাকে একটি কনস্টিটুয়েন্ট পাওয়ার দিচ্ছেন। সে কারণে আগামী সংসদটা হবে সংবিধান সংস্কার পরিষদের সংসদ। অর্থাৎ সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও জাতীয় সংসদ। এর মধ্যে এই যে ক্ষমতাটা গণভোটের মধ্য দিয়ে জনগণ দিলো, জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে তারা মৌলিক সংস্কার করতে পারবে। এখন এই গণভোট কবে হবে? আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি, গণভোট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন একই দিনে হওয়াটাই ভালো।
এদিকে জুলাই জাতীয় সনদে রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির প্রশ্নে বাম গণতান্ত্রিক জোট ‘নোট অব ডিসেন্টে’র ঘোরতর বিরোধী। জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি পরিবর্তনের প্রশ্নে শুধু ভিন্নমত না, ঘোরতর আপত্তি। আমরা আগেই বলেছি, নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে আমরা সেখানে সই করতে পারব না।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, যেসব বিষয়ে সব দল সর্বসম্মতভাবে ঐকমত্য হবে, সেগুলোর বাইরে আর কিছুকে ঐকমত্য ধরা হবে না। কিন্তু ঐকমত্য কমিশন জুলাই জাতীয় সনদের যে খসড়া আমাদের কাছে পাঠিয়েছে সেখানে আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে দেখলাম— বেশ কিছু বিষয়ে বিভিন্ন দলের ‘নোট অব ডিসেন্ট’ আছে। সেগুলো নিয়েই জুলাই জাতীয় সনদ সইয়ের প্রস্তুতি চলছে।
বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, আমরা কিছু বিষয় উপস্থাপন করেছিলাম। আমরা বলেছিলাম, জুলাই জাতীয় সনদের যে পটভূমি, সেখানে সঠিক ইতিহাস বর্ণিত হয়নি। ‘নোট অব ডিসেন্ট’গুলো প্রোপারলি আসেনি। আমরা বলেছিলাম, রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি, সেই মূলনীতিতে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়ে আমরা সই করতে পারব না। বলা হয়েছে, পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হবে জুলাই সনদ। কিন্তু ‘নোট অব ডিসেন্ট’সহ কীভাবে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হবে?
বুধবার (১৫ অক্টোবর) জুলাই সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের জরুরি বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন। বৈঠকে কমিশন প্রধান এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও উপস্থিত আছেন।
৬ ঘণ্টা আগেজিএম কাদের বলেন, দেশের বর্তমান অবক্ষয় থেকে রক্ষাকবচ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহনমূলক নির্বাচন। বর্তমান সরকার নিরপেক্ষ নয়। সে কারনে প্রয়োজন সরকার পরিবর্তন। তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন ও সে সরকারের অধীনে আগামী তিন মাসের মধ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশ গ্রহনমূলক
৭ ঘণ্টা আগে'জুলাই সনদে' উল্লিখিত গণভোট প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, "এখন অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়, নির্বাচন ও গণভোটের তো একটা প্রস্তুতি আছে। জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হয়, বহুবিধ কাজ থাকে।" তিনি রোজার আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়সীমা বিবেচনা করে বলেন, গণভোট আগে করে ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব নয়, এতে সংকট তৈরি হব
৯ ঘণ্টা আগেগণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা ড.ইউনূসের বিদেশ ভ্রমণের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে বিশ্বের কাছে অপ্রাসঙ্গিক ও ফ্যাসিস্ট শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা গেছে। রাষ্ট্রের অর্থ ব্যয় হলেও এই কাজ করার জন্য আমি প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানাই।
১০ ঘণ্টা আগে