প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে যত দাবি বিএনপি-জামায়াত-এনসিপির, যা বলছে সরকার

প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম
প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৫, ০১: ২৪
শনিবার সন্ধ্যা ও রাতে বিএনপি, জাময়াতে ইসলামী ও এনসিপির সঙ্গে পৃথক পৃথক বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর

আগের মতোই আবারও প্রধান উপদেষ্টার কাছে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করেছে বিএনপি। পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টাসহ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদত্যাগের লিখিত দাবি দিয়েছে দলটি।

পৃথক বৈঠকে জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনের রোডম্যাপের পাশাপাশি বিচার ও সংস্কার প্রক্রিয়ারও রোডম্যাপ দাবি করেছে। অন্যদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের সব নির্বাচন অবৈধ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের ওপর অনাস্থা জানিয়ে জুলাই সনদ ঘোষণা ও গণপরিষদ বা আইনসভা নির্বাচনের জন্য সমন্বিত রোডম্যাপ দাবি করেছে দলটি।

শনিবার (২৪ মে) প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা পৃথক পৃথক বৈঠকে এসব দাবি-দাওয়ার কথা জানিয়েছে। এসব বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সবগুলো রাজনৈতিক দলই প্রধান উপদেষ্টাকে আকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে।

একই সঙ্গে এসব বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা আবারও আগামী বছরের ৩০ জুনকে জাতীয় নির্বাচনের কাট-অফ টাইম হিসেবে ঘোষণা করেছেন বলে জানান প্রেস সচিব।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ থেকে শুরু করে বিএনপি ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পক্ষ থেকে সরকারের একাধিক উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি, অন্যদিকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সরকারের দূরত্ব— এসব নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা জল্পনা-কল্পনার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা এসব দলের সঙ্গে বৈঠক আহ্বান করেছিলেন। এ ছাড়া রোববার (২৫ মে) একটি সর্বদলীয় বৈঠকও আহ্বান করেছেন।

বৈঠকে যা বলেছে বিএনপি

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে। বৈঠক শেষে দলটির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং দুই ছাত্র উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলমকে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে বাদ দেওয়ার জন্য লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছে বিএনপি।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তাদের পদত্যাগের ব্যাপারে আমরা লিখিত বক্তব্য জানিয়েছি। আগেও জানিয়েছি। নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও দুই জন ছাত্র উপদেষ্টা, যাদের কারণে সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে, তাদের বাদ দেওয়ার জন্য আজও আমরা লিখিত বক্তব্য দিয়েছি।’

BNP-Meeting-With-CA-24-05-2025

যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির প্রতিনিধি দল। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর

এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আশ্বাস পেয়েছেন কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তা উনারা দেখবেন। আমরা আমাদের বক্তব্য দিয়েছি।’

এর আগে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে দেওয়া লিখিত বক্তব্যের সারসংক্ষেপ সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র উত্তরণের লক্ষ্যে বিএনপি নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করে আসছে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের জন্য দাবি জানিয়েছে।

ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপের দাবি জানিয়ে বিএনপি বলছে, এই সরকারের মূল দায়িত্ব সুষ্ঠু নির্বাচন। যেকোনো উছিলায় নির্বাচন যত বিলম্ব করা হবে, জাতির কাছে আবার স্বৈরাচার ফিরে আসার ক্ষেত্রে প্রস্তুত হবে। এর দায়-দায়িত্ব বর্তমান সরকার ও তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ওপর বর্তাবে। আলোচনায় সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন এসেছে। আমরা বলেছি, একটির সঙ্গে আরেকটির কোনো সম্পর্ক নাই। কারণ সংস্কার চলমান বিষয়। এটা চলতে থাকবে।

BNP-Briefing-After-Meeting-With-CA-24-05-2025

বৈঠক শেষে যমুনার সামনে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ছবি: ফোকাস বাংলা

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপি কখনোই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি। বরং, প্রথম দিন থেকেই এই সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছে।

বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং আব্দুল মঈন খানও বলেন, সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন— এগুলো ‘মিউচ্যুয়ালি এক্সক্লুসিভ’। বিএনপি স্পষ্ট ভাষায় বলেছে, দ্রুত নির্বাচন দেওয়া হলে বাংলাদেশে যে নৈরাজ্য হচ্ছে, এক অ্যানাউন্সমেন্টের ফলশ্রুতিতে দেশে শান্তি ফিরে আসবে।

২ দাবি জামায়াতের

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন দলের আমির শফিকুর রহমান। বৈঠকে দলের পক্ষ থেকে দুটি সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরা হয়েছে বলে বৈঠকের পর ব্রিফিংয়ে জানান তিনি।

শফিকুর রহমান বলেন, আমরা বলেছি, দুটি বিষয় স্পষ্ট হওয়া দরকার। নির্বাচনটা কখন হবে? আপনি যে সময়সীমা দিয়েছেন, এর ভেতরে জনগণের কোনো বড় ধরনের ভোগান্তি না হয়ে একটা কমফোর্টেবল টাইমে নির্বাচন হওয়া উচিত। দ্বিতীয়ত, নির্বাচনের আগে সংস্কার ও দৃশ্যমান বিচারের কিছু প্রক্রিয়া জনগণের সামনে আসতে হবে। সংস্কার শেষ না করে নির্বাচন হলে জনগণ এই নির্বাচনে তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে না। আবার সব সংস্কার এই সরকারের পক্ষে করা সম্ভবও নয়।

Jamaat-Meeting-With-CA-24-05-2025

যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি দল। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর

জামায়াতে ইসলামী তাদের দাবির জন্য কোনো সময় বেঁধে দিয়েছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির আমির বলেন, আমরা কোনো সময় বেঁধে দেইনি। আমরা কমফোর্টেবল দুটি টাইম জাতিকে জানিয়েছি। যদি সংস্কার শেষ হয়, তাহলে ফেব্রুয়ারির মধ্যভাগে এটা (নির্বাচন) হতে পারে। আর যদি আরেকটু সময় লাগে, তাহলে রোজার পরপর হতে হবে। তারপর এটাকে টেনে লম্বা করলে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে না।

জামায়াতের দুই দাবির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা কী বলেছেন— জানতে চাইলে শফিকুর রহমান বলেন, তিনি গভীর মনোযোগ সহকারে শুনেছেন এবং আমাদের আস্থা হয়েছে যে তিনি বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। উনি শুধু এটুকুই বলেছেন, দেশ আমাদের সবার। আমি (মুহাম্মদ ইউনূস) অবশ্যই একটি অর্থবহ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন দিতে চাই। আমি যেন-তেন কোনো নির্বাচন দিতে চাই না।

Jamaat-Briefing-After-Meeting-With-CA-24-05-2025

বৈঠক শেষে যমুনার সামনে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। ছবি: ফোকাস বাংলা

বিএনপির পক্ষ থেকে তিনজন উপদেষ্টার পদত্যাগ চাওয়া এবং নির্বাচন-বিচার-সংস্কার নিয়ে বক্তব্য প্রসঙ্গে দলের অবস্থান জানতে চাইলে জামায়াতের আমির এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘পদত্যাগ চাইল বিএনপি, আর ফতোয়া দেবে জামায়াতে ইসলামী— এটা কি মানায়? যারা পদত্যাগ চেয়েছে, তারাই ব্যাখ্যা করবে। আমরা কারও কোনো পদত্যাগ চাইনি।’

যেসব দাবি জানাল এনসিপি

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে এনসিপির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। বৈঠকের পর যমুনার সামনে তিনিও বাকিদের নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। বলেছেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা যেন কোনো রাজনৈতিক দলের বদলে গণঅভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতার প্রতি কমিটেড থাকেন’, সেটিই তারা বৈঠকে বলেছেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনার আমলে হওয়া জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের সব নির্বাচনকে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে অবৈধ ঘোষণা করতে বলেছি। কারণ সেই সময়টায় শেখ হাসিনা একটি ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থায় ইলেকশন করেছিলেন। মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছিলেন। রাতের ভোট হয়েছে, ডামি প্রার্থীর ভোট হয়েছে। ফলে সেই নির্বাচনগুলো নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সেই সময়ের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও ওগুলোকে বিভিন্নভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে... তাই, আগের নির্বাচনগুলোকে আইনিভাবে যেন অবৈধ ঘোষণা করা হয়।

NCP-Meeting-With-CA-24-05-2025

যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে এনসিপির প্রতিনিধি দল। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না জানিয়ে নাগরিক সেবা নিশ্চিত ও নাগরিক দুর্ভোগ কমানোর জন্য নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে দ্রুত স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছে এনসিপি। পাশাপাশি গণঅভ্যুত্থানের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য ‘জুলাই গণহত্যার বিচার, সংস্কার বা জুলাই সনদ ঘোষণা, গণপরিষদ বা আইনসভা নির্বাচনের’ জন্য সমন্বিত রোডম্যাপও সরকারের কাছে চেয়েছে দলটি।

নাহিদ ইসলাম বলেন, আগামী জুলাই মাসের মাঝেই জুলাই সনদ আসতে পারে, এমন আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ৩০ দিনের মাঝে জুলাই ঘোষণাপত্র হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যেন জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করা হয়, সে বিষয়ে আমরা আহ্বান জানিয়েছি। এবং সরকারের, ড. ইউনূস স্যারের পক্ষ থেকে আমাদের এ বিষয়ে আশ্বস্ত করা হয়েছে।

জুলাই অভ্যুত্থানে হতাহতদের বিষয়ে এনসিপির অবস্থান তুলে ধরা হয় বৈঠকে। নাহিদ বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের পরিবারের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া ধীর গতিতে আগাচ্ছে। যে সঞ্চয়পত্র দেওয়ার কথা ছিল, তা এখনো অনেক শহিদ পরিবার পায়নি। মাসিক ভাতাও শুরু হয়নি। আমরা বলেছি যে আর্থিক সহায়তাসহ পুনর্বাসনের যে প্রতিশ্রুতিগত দাবি, তা যেন নিশ্চিত করা যায়।

বিএনপির পক্ষ থেকে দুই ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগ চাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, স্পষ্টভাবে বলেছি, ছাত্র উপদেষ্টাদের সঙ্গে এনসিপির সম্পর্ক নেই। ছাত্র উপদেষ্টারা গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেসাবে সরকারে গেছেন, সরকারকে বৈধতা দিয়েছেন। ফলে তাদের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের বা এনসিপির সম্পর্ক নাই। আজ সকালেও তা পরিষ্কার করেছি।

NCP-Briefing-After-Meeting-With-CA-24-05-2025

বৈঠক শেষে যমুনার সামনে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ছবি: ফোকাস বাংলা

তিনি আরও বলেন, গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধি আকারে তারা (দুই ছাত্র উপদেষ্টা) সরকারে গেছেন। গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে কাজ করছেন। সেখানে তাদের হেয় করা, তাদেরকে অপমান করা, এ বিষয়ে আমরা নিন্দা জানিয়েছি। আমাদের সঙ্গে তাদের জড়িয়ে, ট্যাগ দিয়ে পদত্যাগ করতে বলাটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক।

প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের ভাবনার বিষয়ে এনসিপির অবস্থান জানতে চাইলে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা বলেছি— উনি যেন দায়িত্বে থাকেন। দায়িত্বে থেকে আলোচনার মাধ্যমে সব পক্ষের সব সমস্যা সমাধান করেন। কোনো রাজনৈতিক দল নয়, জনগণ ও গণঅভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতা, তাদের আহ্বানেই তিনি দায়িত্বে এসেছিলেন। তাদের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্যই তিনি কমিটেড। কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি উনি কমিটেড না। উনি যেন এ বিষয়টা যেকোনো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বিবেচনা করেন।

যা বলছে সরকার

বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তা নিয়ে পরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, সবগুলো দল প্রধান উপদেষ্ঠাকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে।

শফিকুল ইসলাম বলেন, তারা বলেছে, প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে তাদের আস্থা আছে। তারা পদত্যাগের বিষয়ে তাকে অনুরোধ করেছেন... উনার নেতৃত্বেই যেন ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন হয়।

নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে আলোচনার বিষয়ে প্রেস সব বলেন, বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছে। জামায়াত মনে করে, সংস্কার প্রক্রিয়া শেষ করতে ডিসেম্বর লেগে যাবে। অধ্যাপক ইউনূস তিনটি দলকেই বলেছেন, নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই হবে। জামায়াত ও এনসিপি তার টাইমলাইনকে সমর্থন জানিয়েছে।

Press-Secretary-Briefing-After-Meeting-With-CA-24-05-2025

বৈঠক শেষে যমুনার সামনে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ছবি: ফোকাস বাংলা

শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, নির্বাচন আগামী বছরের জুনের ৩০ তারিখের মধ্যেই হবে বলে প্রধান উপদেষ্টা বিএনপিকে জানিয়েছেন। বিএনপির মিটিংয়ে তিনি বলেছেন, ৩০ জুন কাট-অফ টাইম। জুনের ওই পারে যাবে না। উনি এক কথার মানুষ। উনি যে কথাটা বলেন, সে কথাটা রাখেন। জুনের ৩০ একটি সুনির্দিষ্ট তারিখ।

প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে এনসিপি ও জামায়াত মনে করে না যে এখন যে অবস্থায় আছে, তাতে ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশনের যে পরিবেশ দরকার, সেই পরিবেশটা আছে। কোনো লেভেল-প্লেয়িং ফিল্ড নাই। তারা জোর দিয়েছে, যেন ইলেকশন কমিশনের সংস্কারের মাধ্যমে লেভেল-প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত (এনশিওর) করা হয়।

সংস্কারের বিষয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরে শফিকুল আলম বলেন, সংস্কারের বিষয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, সংস্কার প্রক্রিয়া ২০ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করে জুলাই সনদ দ্রুত দেওয়া হবে। জুলাই প্রোক্লেমেশনের বিষয়েও আমাদের কাজ হচ্ছে এবং আশা করছি, তা দ্রুত শেষ হবে।

দলগুলোর বক্তব্য শুনে প্রধান উপদেষ্টা কী বলেছেন— এ প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, বিচার প্রক্রিয়ার ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, এ মাসেই বিচার শুরু হবে। জুলাই হত্যাযজ্ঞের বিচার এ মাসেই হবে। পার্টিগুলো তাকে অনুরোধ করেছেন, যেন দ্রুত হয়।

বৈঠকের পর দেশের রাজনৈতিক সংকট কাটবে কি না— জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, সংকটের কী হলো, আমরা জানি না। আজ খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বাংলাদেশের তিনটি নেতৃস্থানীয় পার্টির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হয়েছে। এনসিপি স্থানীয় সরকার নির্বাচন চেয়েছে। তারা মনে করে, এটা হওয়া উচিত। অনেকদিন ধরেই বাংলাদেশে নির্বাচন হচ্ছে না। তারা খুব জোর দিয়েছে, যেন দ্রুত এটা শুরু হয়। সেইসঙ্গে তারা পুরো আওয়ামী লীগ আমলে যত নির্বাচন হয়েছে, সবগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করার জন্য অনুরোধ করেছে।

তিন উপদেষ্টার পদত্যাগ বা উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, উনি (প্রধান উপদেষ্টা) এটা শুনেছেন। বিএনপি তাদের কথা বলেছে, আমরা শুনেছি।

যে প্রেক্ষাপটে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এসব বৈঠক

দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অস্থিরতার সূত্রপাত ঘটে বৃহস্পতিবার (২২ মে) সন্ধ্যায়। জানা যায়, বিভিন্ন মহলের নানামুখী প্রতিবন্ধকতার কারণে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব পালনে বাধার মুখে পড়ছে। এ পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগের কথাও ভেবেছেন।

এর মধ্যে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র হিসেবে নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের ঘোষণা ও নির্বাচন কমিশনের গেজেট প্রকাশের পর শপথ না পড়ানোয় তার অনুসারীরা সপ্তাহ জুড়ে রাজপথে অবস্থান নেন। ইশরাক ও বিএনপি সরকারের দুই ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে। পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের পদত্যাগও দাবি করে বিএনপি।

অন্যদিকে এনসিপির পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টাকে ‘বিএনপিপন্থি’ আখ্যা দিয়ে তাদের পদত্যাগ দাবি করা হয়। ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর আন্দোলনের কঠোর সমালোচনা করে দলটি। নির্বাচন কমিশন বিএনপির পক্ষে কাজ করছে অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচিও পালন করে দলটি।

এমন মুখোমুখি পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের ইচ্ছার কথা প্রকাশ্যে এলে রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা দেখা দেয়। এনসিপির পক্ষ থেকে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাকে পদত্যাগ না করার অনুরোধ জানান। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা কখনো প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি। এটি তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।

এর মধ্যে শনিবার উপদেষ্টা পরিষদ জরুরি এক অনির্ধারিত বৈঠকে বসে। সে বৈঠকের পর পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন জানান, প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করছেন না।

পরে উপদেষ্টা পরিষদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করে যাচ্ছে। সরকারের কাজে আরও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হলে সরকার তা জনগণের সামনে প্রকাশ করে দেবে। স্বৈরাচারকে চিরতরে প্রতিহত করতে উপদেষ্টা পরিষদ সবার মধ্যে ঐক্য কামনা করে।

এরপরই সন্ধ্যায় একে একে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির সঙ্গে বৈঠক করলেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রেস সচিবও জানালেন, অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ad
ad

ঘরের রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

খন্দকার মোশাররফের নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিনিধি দল যমুনায়

সরেজমিন দেখা যায়, বিএনপির প্রতিনিধি দলের মধ্যে প্রথমে যমুনায় প্রবেশ করেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। এরপর বাকি ৩ সদস্য প্রবেশ করেন।

১১ ঘণ্টা আগে

রাতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এনসিপির বৈঠক

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল আজ রাত ৮:৩০ টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বতী সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

১১ ঘণ্টা আগে

স্বৈরাচারের আগমন প্রতিহত করতে বৃহত্তর ঐক্য চায় উপদেষ্টা পরিষদ

উপদেষ্টা পরিষদ বিবৃতিতে বলছে, দেশকে স্থিতিশীল রাখতে, নির্বাচন-বিচার ও সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে এবং চিরতরে এ দেশে স্বৈরাচারের আগমন প্রতিহত করতে বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন বলে মনে করে উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য শুনবে এবং সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করবে।

১৩ ঘণ্টা আগে

কোথায় সংকট, কোনো সংকট দেখছি না: আমীর খসরু

দেশে চলমান সংকটে বিএনপি সরকারকে কী ধরনের পরামর্শ দেবে?— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোথায় সংকট? আমরা তো কোনো সংকট দেখছি না।’

১৪ ঘণ্টা আগে