মহাকাশ

মঙ্গলের অতীত খুঁড়ে বের করছে নাসার পার্সিভারেন্স

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
গত কয়েক মাস ধরে রোভারটি ঘুরে বেড়াচ্ছে এই ক্রেটারের পশ্চিম দিকের পাহাড়ি অঞ্চল ও পাথুরে ঢালে।

মানুষের মহাকাশ অভিযানের ইতিহাসে মঙ্গল গ্রহের প্রতি কৌতূহল সবসময়ই একটু বেশি। লাল গ্রহের বুকে আদৌ কি কখনও প্রাণ ছিল? ছিল কি পানি, হাওয়া কিংবা জীবনের উপযোগী পরিবেশ? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই নাসা পাঠিয়েছে পার্সিভারেন্স রোভার নামের এক অত্যাধুনিক রোবটকে।

পার্সিভারেন্স রোভার অবতরণ করে মঙ্গলের জেজেরো ক্রেটারে ২০২১ সালে। এই অঞ্চলটি এক সময় একটি বিশাল হ্রদ ছিল বলে ধারণা করেন বিজ্ঞানীরা। গত কয়েক মাস ধরে রোভারটি ঘুরে বেড়াচ্ছে এই ক্রেটারের পশ্চিম দিকের পাহাড়ি অঞ্চল ও পাথুরে ঢালে। এই এলাকাটি বৈজ্ঞানিকদের কাছে এখন এক কথায় “সোনার খনি”।

নাসার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পার্সিভারেন্স রোভার সম্প্রতি সবচেয়ে দ্রুত গতিতে বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ করছে। শুধু গত কয়েক মাসেই রোভারটি পাঁচটি পাথরের নমুনা সংগ্রহ করেছে, সাতটি পাথরের বিশ্লেষণ করেছে এবং আরও ৮৩টি পাথরে লেজার দিয়ে দূর থেকে পরীক্ষা চালিয়েছে। এসব পাথরের গঠন ও উপাদান বিশ্লেষণ করে মঙ্গলের হাজার হাজার কোটি বছরের পুরনো ইতিহাসের নানা দিক জানা যাচ্ছে।

রোভারটি বর্তমানে অবস্থান করছে “উইচ হ্যাজেল হিল” নামক একটি ঢালের ওপর। এই এলাকায় রয়েছে স্তরে স্তরে গঠিত নানা ধরনের পাথর, যা মঙ্গলের অতীত আবহাওয়ার চিত্র তুলে ধরতে পারে। এমনকি কিছু পাথর প্রমাণ দিচ্ছে যে, একসময় মঙ্গলে পানির উপস্থিতি ছিল এবং তা আগ্নেয়গিরির পাথরের সঙ্গে বিক্রিয়ায় হাইড্রোজেন তৈরি করত – যা পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টির এক সম্ভাব্য উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়।

এই অঞ্চলের সবচেয়ে চমকপ্রদ আবিষ্কার হচ্ছে “সিলভার মাউন্টেন” নামের একটি পাথরের নমুনা। এটি প্রায় ৩.৯ বিলিয়ন বছর আগের, অর্থাৎ মঙ্গলের “নোয়াকিয়ান যুগে” গঠিত হয়েছিল – তখন গ্রহটিতে প্রচুর উল্কা পতন ঘটত এবং তাতে ভূমির গঠন অনেক বদলে গিয়েছিল। এই পাথরের গঠন এমনভাবে তৈরি, যা আগে কখনো দেখা যায়নি। রোভারটি তার অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টে এই নমুনাকে “এককথায় অমূল্য” বলে উল্লেখ করেছে।

আরও একটি দারুণ আবিষ্কার হলো “গ্রিন গার্ডেনস” নামের নমুনা, যা সংগ্রহ করা হয়েছিল ২০২৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। তবে এই নমুনাটি সঠিকভাবে সিল করে রাখা ছিল বেশ কষ্টসাধ্য কাজ। অবশেষে মার্চ মাসের ২ তারিখে সেটি সুরক্ষিতভাবে রাখা সম্ভব হয়।

বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য এখন এসব নমুনা পৃথিবীতে ফিরিয়ে এনে আরও উন্নত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া – আদৌ কি মঙ্গলে কোনো সময় প্রাণের অস্তিত্ব ছিল? কিন্তু এখানেই রয়েছে বড় চ্যালেঞ্জ। “মার্স স্যাম্পল রিটার্ন মিশন” নামের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে রোভার থেকে সংগৃহীত নমুনা পৃথিবীতে ফেরত আনার পরিকল্পনা আছে। তবে এর বাজেট এখন প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গেছে এবং সময়সীমাও পেছানো হয়েছে অন্তত ২০৪০ সাল পর্যন্ত।

এমন পরিস্থিতিতে নাসা নতুনভাবে চিন্তা করছে কীভাবে আরও কম খরচে ও দ্রুত সময়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায়। এর জন্য তারা বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা ও প্রাইভেট কোম্পানির কাছ থেকে প্রস্তাবও চাইছে। তবে এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে।

তবে যত চ্যালেঞ্জই থাকুক না কেন, পার্সিভারেন্স রোভার তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে নিরলসভাবে। প্রতিটি পাথর, প্রতিটি ঢাল আর প্রতিটি নমুনায় হয়তো লুকিয়ে আছে মঙ্গল গ্রহের হারিয়ে যাওয়া জীবনের গল্প। আর সেই গল্পের খোঁজেই চলছে এই রোবট অভিযানের চমকপ্রদ যাত্রা।

সূত্র: স্পেস ডট কম

ad
ad

ফিচার থেকে আরও পড়ুন

চুলের যত্নে কোন তেল উপকারী?

বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে চুলের গঠন, তার প্রাকৃতিক বৃদ্ধি এবং ক্ষতির কারণ নিয়ে গবেষণা করে আসছেন। চুল মূলত প্রোটিন দ্বারা গঠিত, বিশেষ করে কেরাটিন নামের একটি প্রোটিন চুলের মূল উপাদান। যখন চুল পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় না কিংবা বাইরে থেকে সঠিক যত্ন পায় না, তখন তা রুক্ষ হয়ে যায়, ভেঙে যায় এবং ঝরে পড়ে। তেল মূলত চ

৮ ঘণ্টা আগে

দৈইখাওয়া গ্রামের হট্টিটি

লাল লতিকা হট্টিটি মাঝারি আকারের হয়ে থাকে। এই পাখিটি খুবেই চটপটে ও চঞ্চল প্রকৃতির হয়ে থাকে। তার সতর্ক ভঙ্গি ও জলশয়ের পাতার ওপর দ্রুত দৌড়ানোর ক্ষমতার জন্য সুপরিচিত। লাল লতিকা হট্টিটি লম্বায় ৩৪-৩৭ সেন্টিমিটার। এদের চোখের সামনে টকটকে লাল চামড়া। সেটিই লতিকা।

১ দিন আগে

মারা গেছেন ‘থ্রি ইডিয়েটস’ সিনেমার অধ্যাপক

অচ্যুত পোতদারের অভিনয়জীবন ছিল চার দশকেরও বেশি। তিনি ১২৫টির বেশি হিন্দি ও মারাঠি ছবিতে কাজ করেছেন। হিন্দি ও মারাঠি চলচ্চিত্র অঙ্গনে তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সহকর্মী, ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা সামাজিক মাধ্যমে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। বাস্তব জীবনেও তিনি ছিলেন নম্র, অমায়িক এবং বহুমুখী প্রতিভ

১ দিন আগে

থাইরয়েড সমস্যায় কোন কোন ফল খাওয়া উচিত

থাইরয়েড সমস্যায় ওষুধের পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসেরও বড় ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে কিছু ফল আছে যেগুলো থাইরয়েড রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে। এসব ফলে থাকে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা থাইরয়েড গ্রন্থির কাজকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, শুধুমাত্র ফল খেয়েই থাইরয়েড সারানো

১ দিন আগে