মহাবিশ্ব

শিগগির ধংস হবে মহাবিশ্ব, কী বলছে নতুন গবেষণা!

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৫, ১২: ৪৯
গবেষক দল হিসাব করে দেখিয়েছেন, একটি সাধারণ হোয়াইট ডোয়ার্ফ তারার শেষ হতে সময় লাগবে প্রায় ১০⁷⁸ বছর। একে তারা ধরেছেন মহাবিশ্বের "শেষের সময়" বোঝার মানদণ্ড হিসেবে।

আমরা সবাই জানি, একদিন না একদিন আমাদের এই মহাবিশ্বেরও শেষ হবে। তবে বিজ্ঞানীরা এতদিন ভেবেছিলেন, সেই শেষ আসতে এখনও অনেক সময় বাকি — সম্ভবত ১০১,১০০ বছর (মানে একশো কোটি কোটি বছর!)। কিন্তু এক দল গবেষক বলছেন, এই মহাবিশ্বের পরিণতি ভাবনার চেয়েও অনেক আগে চলে আসতে পারে।

নেদারল্যান্ডসের র‌্যাডবাউড ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্বিজ্ঞানী হেইনো ফাল্কে ও তাঁর সহকর্মীরা নতুন এক গবেষণায় দেখিয়েছেন, মহাবিশ্বের যাবতীয় বস্তু আস্তে আস্তে "বাষ্পীভবিত" হতে থাকবে, যাকে বলে ‘হকিং-এর মতো বিকিরণ’ । এভাবে সবকিছু একসময় শেষ হয়ে যাবে। তাঁদের মতে, এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হতে সময় লাগবে প্রায় ১০⁷⁸ বছর (মানে, একের পরে ৭৮টি শূন্য!) — যা আগের ধারণার চেয়ে অনেক কম।

১৯৭০-এর দশকে বিখ্যাত পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং বলেছিলেন, কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাক হোলও ধীরে ধীরে বিকিরণ ছড়িয়ে শেষ হয়ে যেতে পারে। এটাকেই বলা হয় হকিং বিকিরণ। নতুন গবেষণায় ফাল্কে এবং তাঁর দুই সহকর্মী — মাইকেল ভনড্রাক (Michael Wondrak) ও ওয়াল্টার ফন সয়লেকম (Walter van Suijlekom) — দেখিয়েছেন, শুধু ব্ল্যাক হোল নয়, বরং তুলনায় কম ঘন বস্তু যেমন নিউট্রন তারা, হোয়াইট ডোয়ার্ফ, এমনকি গ্যালাক্সি ক্লাস্টারও একইভাবে ধীরে ধীরে বিকিরণ ছড়িয়ে শেষ হতে পারে।

ফাল্কে বলেন, “এই ফলাফল আমাদের কেবল হকিং বিকিরণের নতুন ধারণাই দেয় না, বরং মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেয়।”

কোন জিনিস কত দিনে শেষ হবে?

গবেষক দল হিসাব করে দেখিয়েছেন, একটি সাধারণ হোয়াইট ডোয়ার্ফ তারার শেষ হতে সময় লাগবে প্রায় ১০⁷⁸ বছর। একে তারা ধরেছেন মহাবিশ্বের "শেষের সময়" বোঝার মানদণ্ড হিসেবে।

স্টেলার ব্ল্যাক হোল শেষ হতে পারে পারে ১০^৬৭ থেকে ১০^৬৮ বছরের মধ্যে। নিউট্রন তারাও একই সময়ে শেষ হবে বলে দেখা গেছে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে হোয়াইট ডোয়ার্ফই সবচেয়ে বেশি সময় নেবে — কারণ তাদের ঘনত্ব কম।

মানুষ, চাঁদ আর কৃষ্ণগহ্বরের শেষ কোথায়?

এই গবেষণার সবচেয়ে মজার অংশ হল, বিজ্ঞানীরা হিসাব করে দেখেছেন, যদি কোনোভাবে একটি মানুষের দেহ মহাবিশ্বে চিরকাল টিকে থাকে, তবে সেটিরও শেষ হতে সময় লাগবে প্রায় ১০⁹⁰ বছর। চাঁদ শেষ হতে সময় লাগবে ১০⁸⁹ বছর। আর যে সুবিশাল কৃষ্ণগহ্বর গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকে — যাদের সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল বলা হয় — সেগুলো শেষ হতে সময় লাগবে ১০⁹⁶ বছর। সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হবে গ্যালাক্সি সুপারক্লাস্টারের চারপাশে থাকা ডার্ক ম্যাটারের বিশাল বলয় — যেটি শেষ হতে সময় নেবে ১০¹³⁵ বছর।

আমাদের চিন্তার কিছু আছে?

সত্যি কথা বলতে, এই মহাবিশ্বের শেষ আমাদের বা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কোনো সমস্যা তৈরি করবে না। সূর্য তো আরও ৫ বিলিয়ন (পাঁচশো কোটি) বছর জ্বলবে। যদি কোনোভাবে মানুষ আন্তর্গ্রহ বা আন্তর্জাগতিক ভ্রমণে সক্ষমও হয়, তাহলে তাকে মহাবিশ্বের বর্তমান আয়ুর চেয়েও অনেক বেশি সময় টিকে থাকতে হবে — যা প্রায় অসম্ভব।

তবু, এই গবেষণা আমাদের এক ঝলক দেখায় ভবিষ্যতের একদম চূড়ান্ত গন্তব্য — যেখানে সবকিছু শেষ হয়ে যাবে। গবেষক ওয়াল্টার ফন সয়লেকম বলেন, “এই ধরনের চরম প্রশ্ন নিয়ে ভাবতে গিয়ে আমরা হয়তো একদিন হকিং বিকিরণের রহস্য পুরোপুরি বুঝে ফেলব।”

এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানপত্র Journal of Cosmology and Astroparticle Physics-এ। এর মাধ্যমে আমরা শুধু মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ নিয়েই নয়, বরং মহাকর্ষ, সময় ও পদার্থের গভীর রহস্য নিয়েও নতুন করে ভাবতে পারি।

অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট মাইকেল ভনড্রাক বলেন, “ব্ল্যাক হোলের কোনো পৃষ্ঠ নেই। ফলে তারা নিজের বিকিরণের কিছু অংশ আবার শুষে নেয়, যা তাদের শেষ হয়ে যেতে সময় বাড়িয়ে দেয়।”

এইসব গবেষণা হয়তো এখনকার জীবনের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে না। কিন্তু ভবিষ্যতের বিজ্ঞানের জন্য এগুলো একেকটি মূল্যবান ধাপ — যেগুলো একদিন হয়তো আমাদের মহাবিশ্বকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।

সূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট

ad
Ad

ফিচার থেকে আরও পড়ুন

শরীরিক দুর্বলতা কাটানোর উপায়

প্রথমেই বলা দরকার, দুর্বলতা সব সময় কোনো রোগের উপসর্গ নয়। এটি হতে পারে আমাদের জীবনযাত্রার ভুলভ্রান্তির কারণে। যেমন পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া, সঠিক খাবার না খাওয়া, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, শরীরচর্চার ঘাটতি ইত্যাদি।

২ দিন আগে

জন্ম নিবন্ধন সনদ যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তা ও পদ্ধতি

যারা ইন্টারনেট ব্যবহারে দক্ষ নন, তারা স্থানীয় ডিজিটাল সেন্টারে গিয়ে এই সেবা নিতে পারেন অথবা ৩৩৩ নম্বরে কল করলেই সহায়তা পাবেন।

২ দিন আগে

হিমোগ্লোবিন বাড়াতে কোন খাবার সবচেয়ে উপকারী?

বিশেষজ্ঞদের মতে, দুটি ধরনের আয়রন রয়েছে—হিম আয়রন এবং নন-হিম আয়রন। হিম আয়রন পাওয়া যায় প্রাণিজ উৎস যেমন মাংস, মাছ ও ডিমে। এটি সহজে শরীরে শোষিত হয়।

২ দিন আগে

চার অঞ্চলে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস

দেশের চারটি অঞ্চলের ওপর দিয়ে দুপুরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। মঙ্গলবার দুপুর ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

২ দিন আগে