নিউইয়র্কের সম্ভাব্য প্রথম মুসলিম মেয়র— কে এই মামদানি?

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
আপডেট : ২৬ জুন ২০২৫, ১৩: ৪৮

মুসলিম রাজনীতিক জোহরান মামদানি চলতি বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। ২৪ জুন বাছাইপর্বের নির্বাচনে তিনি নিউইয়র্কের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোসহ প্রায় এক ডজন প্রার্থীকে পরাজিত করে রীতিমতো ইতিহাস গড়েছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক থেকে শুরু করে সবাই ধারণা করছেন, চূড়ান্ত নির্বাচনে জিতে মামদানিই নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে বসবেন। সে ক্ষেত্রে তিনিই হবেন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান এই শহরের প্রথম মুসলিম মেয়র।

জোহরান কোয়ামে মামদানি একজন ডেমোক্র্যাটিক সোশালিস্ট। তিনি উগান্ডার বিখ্যাত একাডেমিক মাহমুদ মামদানি ও ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ারের ছেলে। তার জন্ম উগান্ডার কাম্পালায়, তবে সাত বছর বয়সে নিউইয়র্কে চলে আসেন।

পড়াশোনা করেছেন আফ্রিকানা স্টাডিজে। রাজনীতিতে আসার আগে ছিলেন একটি হাউজিং সংগঠনের পরামর্শক, যেখানে তিনি গরিব পরিবারদের উচ্ছেদ ঠেকাতে সহায়তা করতেন।

৩৩ বছর বয়সি মামদানি বর্তমানে নিউ ইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলিতে অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট ৩৬-এর তিন মেয়াদের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। চলতি বছর তিনি বিয়ে করেন সিরীয় শিল্পী রামা দুওয়াজিকে, যার কাজ দ্য নিউইয়র্কার, ওয়াশিংটন পোস্ট ও ভাইস-এর মতো মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

গাজা যুদ্ধ ইস্যু মামদানির নির্বাচনি প্রচারের অন্যতম কেন্দ্রে ছিল। তিনি গত অক্টোবরে স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘ইসরাইল গণহত্যা চালাচ্ছে।’ তিনি বিডিএস (বয়কট, বিনিয়োগ প্রত্যাহার, নিষেধাজ্ঞা) আন্দোলনেরও একজন দৃঢ় সমর্থক।

ডিসেম্বরে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিউইয়র্কে আসলে আমি তাকে গ্রেফতার করব।’

এছাড়া ‘গ্লোবালাইজ দ্য ইন্তিফাদা’ স্লোগান থেকে নিজেকে দূরে রাখেননি, যদিও তা নিয়ে কট্টরপন্থি মহলে সমালোচনা ওঠে। মামদানি বলেন, একজন মুসলিম হিসেবে আমি জানি কীভাবে আরবি শব্দ বিকৃত করা হয়, অথচ এটি নিপীড়িতদের প্রতি সংহতির প্রতীক।

তাকে ইসলামবিদ্বেষী হুমকিও দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি জানিয়েছেন, তার সমালোচনাগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলি সরকারের বিরুদ্ধে, ইহুদিদের বিরুদ্ধে নয়।

প্রথাগত জরিপগুলো বলছিল—কুয়োমো এগিয়ে। জুনের মাঝামাঝি মারিস্ট জরিপে দেখা যায়, কুয়োমোর সমর্থন ৩৮ শতাংশ, মামদানির ২৭ শতাংশ। কিন্তু র্যাঙ্কড-চয়েস ভোটিংয়ে শেষ পর্যন্ত মামদানি ল্যান্ডারের সমর্থকদের ভোট পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন।

তার প্রচারণা ছিল স্বতঃস্ফূর্ত, স্বল্প বাজেটের, স্বেচ্ছাসেবক-নির্ভর এবং তরুণ ভোটারকেন্দ্রিক। কুয়োমো বিপুল অর্থ ব্যয়ে প্রচার চালালেও মামদানির পক্ষে কাজ করেছে গণসংযোগ ও স্পষ্ট বার্তা।

মামদানি একটি বুদ্ধিদীপ্ত ডিজিটাল কৌশল ব্যবহার করেছেন যা কেবল তার জনপ্রিয়তাই বাড়াননি বরং তার তহবিল সংগ্রহকেও বাড়িয়ে তুলেছে। প্রাইমারি নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে, মামদানি বিশাল পদযাত্রা করেছিলেন, পুরো পুরো ম্যানহাটন জুড়ে হেঁটেছিলেন এবং পথে নিউ ইয়র্কবাসীদের সঙ্গে সেলফি তোলার জন্য থেমেছিলেন।

মামদানির এই উদ্যমী প্রচারণা কেবল তাকে নিউইয়র্কবাসীর নয়; জায়গা করে নিয়েছেন প্রবাসীদের হৃদয়েও। তারাও তার এই উদ্ভাবনী যাত্রায় উল্লাস করছে। তিনি একবার তার দাদীকে নিয়ে একটি র্যাপ গান তৈরি করেছিলেন এবং তার প্রচারণার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছিলেন।

মামদানি একজন সমর্থক লোকমণি রাই বলেছেন, ‘জোহরান হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক এবং লক্ষ লক্ষ দাতাদের মাধ্যমে পরিচালিত। স্থানীয় ডেমোক্র্যাটিক প্রাথমিক নিউইয়র্ক প্রচারণায় এত স্বেচ্ছাসেবক এবং তৃণমূল স্তরের উত্তেজনা দেখা খুবই বিরল।’ তথ্যসূত্র: আলজাজিরা

ad
ad

বিশ্ব রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

ইসরায়েলি হামলা গাজায় নিহত ছাড়াল ৬২ হাজার

গাজায় উদ্ধার প্রচেষ্টা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অনেক ভুক্তভোগী এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন অথবা রাস্তায় পড়ে আছেন তবে ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ এবং সরঞ্জামের অভাবে জরুরি দল তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না।

১০ ঘণ্টা আগে

এবার পুতিন-জেলেনস্কিকে মুখোমুখি নিয়ে বসবেন ট্রাম্প

এ বৈঠকের দিন-তারিখ নিয়ে অবশ্য কোনো তরহ্য মেলেনি। নির্ধারণ হয়নি বৈঠকের স্থানও। তবে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্ৎস আভাস দিয়েছেন, সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই ত্রিপাক্ষিক বৈঠকটি হতে পারে।

১২ ঘণ্টা আগে

বৈঠকে ট্রাম্প-জেলেনস্কি, যেসব শর্ত আলোচনায়

বৈঠকের আগে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধে অনেক অগ্রগতি হচ্ছে। এ সময় জেলেনস্কি বলেন, কূটনৈতিকভাবে যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্টের পরিকল্পনায় ইউক্রেনের সমর্থন আছে।

২০ ঘণ্টা আগে

ব্যাটল অব হ্যাস্টিংসের ইতিহাস

ইংল্যান্ডের সিংহাসন তখন ছিল এক জটিল রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কেন্দ্র। ইংরেজ রাজা এডওয়ার্ড দ্য কনফেসর ১০৬৬ সালের জানুয়ারিতে উত্তরাধিকারী ছাড়াই মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াল—কে ইংল্যান্ডের নতুন রাজা হবেন? রাজ্যের প্রধান অভিজাতেরা হ্যারল্ড গডউইনসনকে রাজা ঘোষণা করলেন।

১ দিন আগে