মোদির বিরুদ্ধে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির অভিযোগ আনলেন রাহুল

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম

ভারতের লোকসভা নির্বাচনের শেষ পর্যায়ে শেয়ারবাজার ধসে বিনিয়োগকারীদের হাজার হাজার কোটি রুপির ক্ষতির জন্য নরেন্দ্র মোদিসহ বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের দায়ী করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী। তাঁরা শেয়ারের দাম বৃদ্ধির ভবিষ্যদ্বাণী করে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করেন বলে অভিযোগ তুলেছেন এই কংগ্রেস নেতা।

শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির ঘটনা এবং তাতে মোদি ও তাঁর জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীদের ভূমিকা তদন্ত করতে রাহুল গান্ধী যৌথ সংসদীয় কমিটির (জেপিসি) তদন্ত দাবি করেছেন বলে বিবিসি জানিয়েছে।

রাহুলের অভিযোগ, লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার দিন ৪ জুনের পর শেয়ারের দাম বাড়বে বলে বিভ্রান্তিকর ভবিষ্যদ্বাণী করেন বিজেপির শীর্ষ নেতারা। তাঁর দাবি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এর আগে মানুষকে শেয়ার কিনতে উৎসাহিত করেন। এর ফলে বাজার ধসে বিনিয়োগকারীরা বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছে। তবে মোদির দল বিজেপি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

৫ দিনে চন্দ্রবাবুর স্ত্রীর বাড়ল ৫৩৫ কোটি, ছেলের ২৩৭ কোটি রুপি৫ দিনে চন্দ্রবাবুর স্ত্রীর বাড়ল ৫৩৫ কোটি, ছেলের ২৩৭ কোটি রুপি

এই কংগ্রেস নেতা বলেছেন, নির্বাচনের ফল প্রকাশের কয়েক সপ্তাহ আগে প্রধানমন্ত্রী মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বিনিয়োগকারীদের ‘৪ জুনের আগে শেয়ার কেনার’ পরামর্শ দেন। বিজেপির বিজয়ের প্রত্যাশায় পরে শেয়ারের দাম বাড়বে বলে তাঁরা ভবিষ্যদ্বাণী করেন।

গত মাসে মোদিঘনিষ্ঠ আদানির মালিকানাধীন সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে এক সাক্ষাৎকারে অমিত শাহ বলেন, ‘নির্বাচনের সঙ্গে শেয়ারবাজার ধসকে জড়ানো উচিত নয়। তবে এমন গুজব যদি ছড়িয়েও থাকে তবু আমার পরামর্শ, আপনার ৪ জুনের আগে (শেয়ার) কিনুন। পরে দাম বেড়ে যাবে।’

এটিকে ভারতের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে ‘সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি’ বলে আখ্যা দিয়ে রাহুল গান্ধী বলেন, এই কারচুপির ফলে কিছু ‘সন্দেহজনক বিদেশি বিনিয়োগকারী’ উপকৃত হয়েছে। এর ফলে হাজার হাজার কোটি রুপি হারিয়েছে ভারতীয়রা।

তবে মোদীর মন্ত্রিসভার বিদায়ী বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল এই অভিযোগ অস্বীকার করে রাহুলের বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করার পাল্টা অভিযোগ করেছেন।

বুথফেরত জরিপগুলোর ভবিষ্যদ্বাণী ছিল, বিজেপি স্বাচ্ছন্দ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে অর্থাৎ লোকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে ২৭২টির বেশি পাবে। আর এর নেতৃত্বে এনডিএ জোট মিলে তা ৩৬০-৩৭০ ছুঁয়ে যাবে।

কিন্তু গত মঙ্গলবারের নির্বাচনের ফলাফল এসব ভবিষ্যদ্বাণীর ধারে কাছেও ছিল না। বিজেপি লক্ষ্যের অর্ধেক আসনও পায়নি। আর এনডিএ পেয়েছে ২৯৩ আসন। মোদির দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পর শেয়ারবাজারের সূচক ধসে চার বছরের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামে।

রাহুলের দাবি, বুথফেরত জরিপগুলো ছিল ‘ভুয়া’ এবং ‘অভ্যন্তরীণ জরিপ ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন’ থেকে বিজেপিও জানত তারা ২২০টির বেশি আসন জিততে পারবে না।

তিনি বলেন, তারপরও বিজেপি ব্যাপক সংখ্যক আসন জিতেছে বলে বুথফেরত জরিপে দেখানো হয়। আর এ কারণে লোকসভার ফল ঘোষণার আগের দিন ৩ জুন বিনিয়োগকারীরা হুমড়ি খেয়ে শেয়ার কেনে।

কিন্তু পরের দিন ভোটের ফল প্রকাশের পর কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় পতন দেখল ভারতের শেয়ারবাজার। মুহূর্তের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের হাজার হাজার কোটি রুপি বাজার থেকে উধাও হয়ে যায়।

তবে বিজেপির পীযূষ গয়াল দাবি করছেন, শেয়ারের দামের উত্থান-পতনে ভারতীয়রাই লাভ করেছেন। তিনি বলেন, এপ্রিল ও মে মাসে বাজারে উত্থানের সময় বিদেশী বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দেন, যেগুলো ভারতীয়রা কিনেন। একই ঘটনা ৪ জুন বাজার ধসের ক্ষেত্রেও ঘটেছে।

তিনি বলেন, ‘ফলে, বিদেশীরা বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করেছে। আর ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা বেশি দামে বিক্রি করে কম দামে কিনেছে। তাই এক অর্থে, এই সময়েও ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা মুনাফা করেছে। কারোরই ক্ষতি হয়নি।’

পীযূষ গয়ালের এই ব্যাখ্যাকে ‘রাবিশ’ আখ্যা দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ। গতকাল শুক্রবার তিনি বলেন, রাহুল গান্ধীর উত্থাপিত সুনির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর দেননি গয়াল।

তবে জয়রাম রমেশের অভিযোগের কোনো জবাব দেয়নি বিজেপি।

তবে বুথফেরত জরিপ সবক্ষেত্রে যে ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে, তা নয়। অন্ধ্র প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির শরিক অন্ধ্র প্রদেশের তেলেগু দেশম পার্টির বিষয়ে জরিপের ফল মিলেছে। এর ফলে বিজেপি ও তার জোট লাভবান হয়েছে।

আর জরিপের প্রভাবে শেয়ারবাজার থেকে বেশ লাভবান হয়েছেন তেলেগু দেশম পার্টির নেতা চন্দ্রবাবু নাইডুর পরিবার। শুক্রবার পর্যন্ত পাঁচদিনে তাঁর প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি হেরিটেজ ফুডের শেয়ারের দাম হু হু করে ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এর ফলে কোম্পানিটির প্রমোটরের দায়িত্বে থাকা চন্দ্রবাবুর স্ত্রী নারা ভুবনেশ্বরীর সম্পদের পরিমাণ ৫৭৯ কোটি রুপি বেড়ে গেছে।

মঙ্গলবার মিঃ মোদির দল সম্পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পর বাজার চার বছরের সর্বনিম্নে বিধ্বস্ত হয়। এএফপি

মঙ্গলবার মিঃ মোদির দল সম্পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পর বাজার চার বছরের সর্বনিম্নে বিধ্বস্ত হয়। এএফপি

হেরিটেজ কোম্পানির শেয়ারের মূল্য এমন অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে শুরু করেছিল ভারতের নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ৩ জুন ভারতের নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার ৩ ঘণ্টা আগে হেরিটেজ ফুডের শেয়ারমূল্য ছিল ৪২৪ রুপি। কিন্তু গত পাঁচ দিনের ব্যবধানে আজ শুক্রবার পর্যন্ত ওই শেয়ারের মূল্য দাঁড়িয়েছে ৬৬১ রুপি ২৫ পয়সা।

লোকসভা নির্বাচনে অন্ধ্র প্রদেশের ১৭টি আসনে নির্বাচন করে ১৬টি আসনেই বিজয়ী হয়েছে চন্দ্রবাবুর দল তেলেগু দেশম পার্টি। শুধু তা-ই নয়, এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে বিজেপির আসন্ন জোট সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হতে যাচ্ছে দলটি। কারণ, ২৪০ আসন পাওয়া বিজেপির জন্য তেলেগু দেশম পার্টির আসন যোগ না হলে সরকার গঠন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।

শুধু লোকসভাই নয়, একদিনে অন্ধ্র প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনেরও ফল প্রকাশ হয়েছে। বিধানসভায়ও বাজিমাত করেছে তেলেগু দেশম পার্টি। রাজ্যের ১৭৫ আসনের মধ্যে ১৩৫ আসন জিতে নিয়ে এবার ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে দলটি। অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শিগগিরই শপথ নেওয়ার কথা রয়েছে চন্দ্রবাবুর।

ad
ad

বিশ্ব রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

ভয়ংকর 'মেগা সুনামি'র ঝুঁকিতে যুক্তরাষ্ট্র, নিশ্চিহ্ন হতে পারে উপকূলীয় এলাকা

গবেষণায় বলা হয়েছে, আগামী ৫০ বছরের মধ্যে ওই ফল্টলাইনে ৮ মাত্রা বা তার বেশি শক্তির ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ১৫ শতাংশ। এতে উপকূলীয় ভূমি সাড়ে ৬ ফুট পর্যন্ত ধসে যেতে পারে।

১৬ ঘণ্টা আগে

লিবিয়া থেকে ১৭৫ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন

বাংলাদেশ দূতাবাস (লিবিয়া) বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে আটক বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

১৭ ঘণ্টা আগে

গাজা সিটি দখলে ইসরায়েলি হামলা শুরু, নিহত ৮১

গাজায় খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া এবং লাগাতার সামরিক হামলার কারণে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ নেমে এসেছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সতর্ক করেছে, ইসরায়েলের অবরোধ চলায় গাজায় অপুষ্টি মারাত্মকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। সংস্থাটি বলেছে, “এটি কেবল ক্ষুধা নয়, এটি হচ্ছে অনাহার।”

১৮ ঘণ্টা আগে

পুতিন চুক্তি করতে চাইবেন না— আশঙ্কা ট্রাম্পের

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মনে করেন এই 'সংঘাত' এর সমাধান করা 'কঠিন একটি কাজ'। তিনি এটিও স্বীকার করেছেন যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট সম্ভবত সংঘাতের ইতি টানতে আগ্রহী নন।

২ দিন আগে