ইঞ্জিন না ল্যান্ডিং গিয়ার— এয়ার ইন্ডিয়ার দুর্ঘটনার কারণ কী

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
দুর্ঘটনাকবলিত এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান। ছবি: পিটিআই

ইতিহাসের ভয়াবহতম বিমান দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়েছে ভারত। গুজরাটের আহমেদাবাদে উড্ডয়নের পরপরই বিধ্বস্ত হয়েছে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইট। তাকে যে ২৪২ জন আরোহী ছিলেন, তাদের মধ্যে মাত্র একজনকে জীবিত পাওয়া গেছে। বাকি ২৪১ জনই প্রাণ হারিয়েছেন বলে এয়ার ইন্ডিয়া নিশ্চিত করেছে।

ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় শোকে ভাসছে ভারত। মরদেহ উদ্ধারের পাশাপাশি দুর্ঘটনাস্থল থেকে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের অনুসন্ধান চলছে। চলছে শনাক্ত করার উপযোগী না থাকা মরদেহগুলোর ডিএনএ পরীক্ষার প্রক্রিয়া। চালু করা হয়েছে বিশেষ হেল্পলাইন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুর্ঘটনাস্থল ও হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন।

প্রশ্ন উঠেছে, এত বড় দুর্ঘটনার নেপথ্যে কী? কোনে ত্রুটির কারণে এতগুলো মানুষের মৃত্যুর সাক্ষী হতে হলো এয়ার ইন্ডিয়ার ওই ফ্লাইটকে? বিমানের ইঞ্জিনে কি ত্রুটি ছিল? নাকি ত্রুটি ছিল ল্যান্ডিং গিয়ারে?

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছে এই বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে। তাদের পর্যবেক্ষণ ও মতামতে বিমান দুর্ঘটনার সম্ভাব্য চারটি কারণ উঠে এসেছে, যার সবগুলোই ওই বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে হয়ে থাকতে পারে।

প্রথমত, এ দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হতে পারে বিমানটির ভার এবং সেই সংক্রান্ত হিসাবে ত্রুটি। বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, ওড়ার সময়ে যাত্রী ও মালপত্রসহ বিমানের ওজন কত হয়েছিল, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানতে হয়। কারণ প্রতিটি বিমানের নির্দিষ্ট ভারবহন ক্ষমতা থাকে। অনেক সময়ে বিমান ওড়ার মুখে এই ওজনের হিসাবে দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা গোলমাল করে ফেললে বিমানটি দুর্ঘটনায় কবলিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো বিমানের আকার ও গঠন অনুযায়ী তার ভারবহন ক্ষমতা নির্দিষ্ট করা হয়ে থাকে। বিমানের মধ্যে যাত্রীদের কোথায় বসানো হবে, কোন দিকে কত যাত্রী বসলে বিমানের সামনে ও পেছনের দিকের ভারসাম্য বজায় থাকবে— বিমান ওড়ার আগেই এগুলো হিসাব করতে হয়। এ ক্ষেত্রে সেই হিসাবে ভুল হয়েছিল কি না, খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

বিমান বিশেষজ্ঞ বন্দনা সিংহ আনন্দবাজারকে বলেন, বিমানটি যে ভবনে ধাক্কা খেয়েছে, সেখানে তার একটি চাকা আটকে গিয়েছিল। ওজনের হিসাবে ভুল হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।

বিমানটির দুর্ঘটনায় কবলিত হওয়ার দ্বিতীয় সম্ভাব্য কারণ মনে করা হচ্ছে ল্যান্ডিং গিয়ারের ত্রুটিকে। বিশেষজ্ঞেরা অনেকেই মনে করছেন, দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটির ল্যান্ডিং গিয়ারে ত্রুটি থাকতে পারে। হতে পারে, ল্যান্ডিং গিয়ারটি বিমান ওড়ার পর ঠিকমতো বন্ধ হয়নি।

এই ল্যান্ডিং গিয়ারই বিমানের ভার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বিমান ওঠানামার সময় রানওয়ের সংস্পর্শে আসে ল্যান্ডিং গিয়ার। এখান থেকে বিমানের চাকা বেরিয়ে আসে। ফলে বিমানের গতিও ল্যান্ডিং গিয়ারের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। সেখানে গোলমালের কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

তৃতীয় সম্ভাব্য কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বিমানটির উড্ডয়ন সক্ষমতা কমে যাওয়াকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, মাটি ছাড়ার পরেই বিমানের ওপরের দিকে ওঠার ক্ষমতা (লিফট) কমে যেতে পারে। একসময় তা হয়তো একেবারেই শেষ হয়ে আসে। তখন বিমানটিকে আর ভাসিয়ে রাখতে পারেননি পাইলট।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও দেখেও অনেকে বলেছেন, রানওয়ে ছাড়ার পর বিমানটি মাঝপথে সামান্য গোত্তা খেয়েছিল বলে মনে হচ্ছে। লিফট কমে যাওয়ার কারণেই এমনটি ঘটে থাকতে পারে।

বিমানের ইঞ্জিনের ত্রুটির সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। বিমানটির দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে এটিই উঠে এসেছে তাদের অভিমতে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটির ইঞ্জিনে ত্রুটি ছিল। সেটি ভেঙে পড়ার আগে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩২২ কিলোমিটার গতিতে পৌঁছাতে পেরেছিল, যা একেবারেই স্বাভাবিক নয়। কারণ ওই সময়ে বিমানের গতি আরও অনেক বেশি হওয়ার কথা। কোনো কারণে বিমানের ইঞ্জিন শক্তি হারিয়ে ফেলে। তার ফলে দুর্ঘটনা অনিবার্য হয়ে পড়েছিল।

নজর বিমানের ডানায়

এদিকে আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার যে বোয়িং বিমানটি ভেঙে পড়েছে, তার ডানাতে কোনো সমস্যা হয়ে থাকতে পারে বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বিবিসি ভেরিফাই একটি ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখেছে, বিমানটি নেমে আসছে এবং মাটি ছোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিস্ফোরণ ঘটছে।

বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞ জেফরি টমাস বলেন, আমি যখন এই ভিডিওটি দেখছি, তাতে বিমানের চাকাসহ নিচের দিকে, অর্থাৎ আন্ডারক্যারেজটা তখনো নামানো অথচ ডানার ফ্ল্যাপ গুটিয়ে ছিল।

বিমানের ডানায় যে ফ্ল্যাপ থাকে, সেগুলো খুলে বা বন্ধ করে আকাশে ওড়া বা মাটিতে নামার সময় বিমানের গতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। টমাসের ভাষ্য, ডানা আর ফ্ল্যাপগুলো একই সমতলে ছিল। আকাশে ওড়ার পরে ওই সামান্য সময়ের মধ্যে এরকমটা খুবই অস্বাভাবিক।

টমাস বলেন, আন্ডারক্যারেজ, অর্থাৎ চাকা সাধারণত ১০-১৫ সেকেন্ডে গুটিয়ে নেওয়া হয়। তবে ফ্ল্যাপগুলো অনেকটা সময় নিয়ে ১০-১৫ মিনিট ধরে গুটিয়ে নেওয়া হয়।

আরেক বিশেষজ্ঞ টেরি টোজার বলেন, এই ভিডিওটি দেখে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তবে মনে হচ্ছে না যে ফ্ল্যাপগুলো খোলা রয়েছে এবং এটা স্পষ্ট বোঝা যায় যে বিমানটি টেক অফ ঠিক মতো করতে পারেনি।

ফ্ল্যাপগুলো যদি ঠিক না থেকে থাকে, তাহলে মানুষের ভুলের আশঙ্কা থাকে বলে মন্তব্য সাবেক পাইলট ও বাকিংহামশায়ার নিউ ইউনিভার্সিটির জ্যেষ্ঠ প্রভাষক মাকোরআ চানের। তবে ভিডিওটির রেজ্যুলেশন এত খারাপ যে ওই ভিডিও থেকে এ বিষয়ে নিশ্চিত মন্তব্য করা কঠিন বলেও মনে করছেন তিনি।

ad
ad

বিশ্ব রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন