শপথ নিলেন সুশিলা, প্রথম নারী সরকারপ্রধান পেল নেপাল

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান সুশিলা কার্কিকে শপথ পড়াচ্ছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পাওদেল। শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্টের বাসভবন শীতল নিবাসে এ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হয়। ছবি: খবরহাব থেকে

নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন দেশটির সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশিলা কার্কি। এর মধ্য দিয়ে নেপালের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বা নারী সরকারপ্রধান হওয়ার নজির গড়লেন তিনি।

নেপালের সংবাদমাধ্যম খবর হাবের খবরে বলা হয়েছে, শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় কার্কিকে শপথ পড়ান নেপালের প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাওদেল। তার সরকারি বাসভবন শীতল নিবাসে এই শপথ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল।

প্রেসিডেন্ট পাওদেল এর আগে সংবিধানের ৬১ অনুচ্ছেদের অধীনে কার্কিকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেন। ২০১৫ সালে নতুন সংবিধান প্রণয়নের পর এখন পর্যন্ত সব সরকারই ৭৬ অনুচ্ছেদের ভিত্তিতে গঠিত হয়। তবে জেন-জিদের আন্দোলনের সমর্থনে আসীন হওয়া কার্কির নিয়োগকে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এর আগে শুক্রবার দিনভর দীর্ঘ আলোচনার পর পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে ঐকমত্যে পৌঁছায় প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। এ সময় আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে সুশিলা কার্কিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

প্রেসিডেন্ট পাওদেল অবশ্য জানিয়েছিলেন, তিনি সংবিধানের মধ্য থেকেই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সমাধান খুঁজছেন। পরে শীতল নিবাস ঘেরাওয়ের হুমকির মুখে প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে কার্কির নিয়োগ চূড়ান্ত করেন।

‘জেন-জি’দের বিক্ষোভের মুখে সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে অবশ্য শুরুতে উঠে এসেছিল কাঠমান্ডুর মেয়র বলেন্দ্র শাহর নাম। পরে নেপাল সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি সুশিলা কার্কিকে বেছে নেন আন্দোলনকারীরা।

বৃহস্পতিবার অবশ্য দেশটির বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী কুল মান ঘিসিংয়ের নামও আলোচনায় উঠে আসে। শুক্রবার দুপুর থেকে নেপালের প্রেসিডেন্টের বাসভবনে সেনাপ্রধানের উপস্থিতিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে সবগুলো নাম নিয়েই আলোচনা হয়। শেষ পর্যন্ত সুশিলা কার্কিকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়।

সুশিলার এ নিয়োগকে নেপালের রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে তরুণ আন্দোলনের প্রত্যাশা, তার নেতৃত্বে দুর্নীতিবিরোধী শাসনব্যবস্থা ও সাংবিধানিক সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব নিয়ে নেপাল জুড়ে জোরালো আলোচনা চলছে। বিভিন্ন মহল মনে করছে, সুশিলার অতীত কর্মজীবনের কঠোর মনোভাব ও সৎ ভাবমূর্তি এই সংকটে নেপালকে নতুন দিশা দেখাতে সক্ষম হবে।

কে এই সুশীলা কার্কি

সুশীলা কার্কির জন্ম ১৯৫২ সালের ৭ জুন বিরাটনগরে। তিনি নেপালের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের একমাত্র নারী প্রধান বিচারপতি ছিলেন। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে তিনি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নেন।

উচ্চ আদালতের এক রায়ের বিরোধিতা করে ২০১৭ সালের এপ্রিলে নেপালি কংগ্রেস ও মাওবাদী কেন্দ্র তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব আনে। জনমতের চাপ ও সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী আদেশে শেষ পর্যন্ত প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় সরকার।

সুশিলা দীর্ঘদিন শিক্ষকতাও করেছেন। ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন ও ভারতের বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনৈতিক বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। নব্বইয়ের গণআন্দোলনে তিনি সরাসরি অংশ নিয়ে কারাবন্দি হন। সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি পরে ‘কারা’ নামে একটি উপন্যাসও লিখেছেন।

২০০৮ সালে নেপাল বার অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র অ্যাডভোকেট হিসেবে তালিকাভুক্ত হন সুশিলা। ২০০৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের অস্থায়ী বিচারপতি হন। এক বছর পর স্থায়ী করা হয় পদটি। ২০১৬ সালে নিয়োগ পান প্রধান বিচারপতি হিসেবে। দুর্নীতিবিরোধী কঠোর অবস্থানের জন্য তিনি সুপরিচিত।

সুশিলা তার প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় বেশ কয়েকটি আলোচিত মামলার রায় দিয়েছিলেন। এর মধ্যে সাবেক মন্ত্রী জয়প্রকাশ গুপ্তকে দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা অন্যতম।

ad
ad

বিশ্ব রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন