বিবিসি বাংলা
কিছু দিন ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের মাঝে সম্পর্কে এক ধরনের উত্তেজনা চলছে। একদিকে যেমন দুই দেশের সামাজিক মাধ্যমে পরস্পরের বিরুদ্ধে বিষোদগার চলছে, অন্যদিকে রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে উত্তেজনাকর বক্তব্য দেয়া হয়েছে। এর মধ্যেই ভারতে বাংলাদেশের উপ হাইকমিশনে হামলার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
মূলত, ভারত বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্কের এই টানাপোড়েন শুরু হয়েছে ভারত সরকার বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার পর থেকে।
গত কয়েকদিন ধরে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতারা প্রকাশ্যে বাংলাদেশ বিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন। এমনকি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী পাঠানোর ব্যবস্থা করতে বলেছেন। তার সেই বক্তব্য নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনা হয়েছে।
বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে, ভারতের গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে ভিত্তিহীন নেতিবাচক খবর প্রকাশ করা হচ্ছে। যদিও দুই দেশের সরকারের পক্ষ থেকেই এসব উত্তেজনা নিরসনের বক্তব্য দেয়া হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান কী? দুই প্রতিবেশী দেশের এই উত্তেজনাকে কোন দল কীভাবে দেখছে?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে নানা কারণে ভারত বিরোধিতার বিষয়টি নতুন নয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি আবার নতুন করে উস্কে দিচ্ছে কোনও কোনও রাজনৈতিক দলকে।
তবে এই দফায় দুই দেশের সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি টানাপোড়েন তৈরি হয় ত্রিপুরার বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার পর। ওই ঘটনার পর বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল ও সরকার এক হয়ে জাতীয় ঐক্যের ঘোষণাও দিয়েছে। আওয়ামী লীগ বাদে বাদে দুটি বড় দলের নেতারাই বিবিসি বাংলাকে বলেছেন যে তারা চান– রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের, জনগণের সাথে জনগণের মাঝে বন্ধুত্ব হোক।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেন "ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তো বাংলাদেশ কোনো মন্তব্য করছে না, তাহলে ভারত কেন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছে? যদি কোনো সংকট থেকে থাকে, বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ তার সমাধান করবে।"
ভারতে 'অপপ্রচার' ও রাজনীতি
সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ ঘিরে বেশ কিছু ভুয়া খবর ছড়াতে দেখা গেছে। এর আগে পাঁচই অগাস্টে সরকার পতনের পরপরই একই ধরনের চিত্র দেখা গিয়েছিল। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর ভারতীয় মিডিয়াগুলোতে বাংলাদেশ নিয়ে এত বেশি নেতিবাচক খবরের অভিযোগ উঠেছে।
ওই বাংলাদেশের প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দল– বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগ বাদে বাকি দুই দলের নেতারাই বলেছেন যে ভারত নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এই মধ্যযুগীয় কায়দায় ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্তি সৃষ্টি করলে একটা দেশের অগ্রগতি থেমে যাবে। কোনও দেশের জন্যই ভালো না এটা। তারা যে ন্যারেটিভ তৈরি করছে, তা বাংলাদেশের জন্যও ড্যামেজিং, তাদের জন্যও ড্যামেজিং। ভারতের একটি অংশ এই কাজ করে যাচ্ছে, বলেন তিনি।
তিনি মনে করেন, ভারতের গণমাধ্যম যা করে যাচ্ছে, তাতে বাংলাদেশের মানুষ যথেষ্ট পরিপক্কতার পরিচয় দিয়েছে। টলারেন্স ও রেসপেক্টের জায়গায় গেছে। মানুষ প্রতিক্রিয়া দেখায় নাই। মানুষ নৈতিকতার দিক থেকে ভালো অবস্থানে গেছে, এটিই বাংলাদেশের শক্তি।
বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গেও কথা হয় বিবিসি বাংলা'র। তিনিও বলেন, "ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।"
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বিবিসি বাংলাকে বলেন, বাংলাদেশের সাথে যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা দরকার ছিল, সেটি ভারতের পক্ষ থেকে বজায় রাখা হয়নি। তা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক।
তবে ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশের বিষয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে না, বরং "ভারতীয় সংবাদপত্র যে কথাগুলো বলছে, সেগুলোর সাথে বাংলাদেশ সরকার সম্পূর্ণভাবে জড়িত," বিবিসি বাংলাকে বলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
এছাড়াও, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিংবা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের বক্তব্য ধারাবাহিকভাবে ভারতের মিডিয়াগুলোর অপপ্রচার ও রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্যের পর দুই দেশের সম্পর্কে বেশ নেতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ভৌগোলিক কারণেই বাংলাদেশের কাছে ভারতের গুরুত্ব রয়েছে। তাই দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্যও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত।
সংখ্যালঘু ইস্যুতে পাল্টাপাল্টি অবস্থান
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গত নভেম্বরের শেষ দিকে 'বহিস্কৃত' ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার ও জামিন বাতিলের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছিলো ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সেসময় দেওয়া এক বিবৃতিতে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল মি. দাসকে আটকের পর বাংলাদেশের চরমপন্থী গ্রুপগুলো হিন্দু সম্প্রদায় ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপরও হামলা চালিয়েছে; হিন্দু এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ভাঙচুর এবং মন্দিরে হামলার মতো ঘটনা ঘটছে।
যদিও ঢালাওভাবে এসব বক্তব্যকে 'প্রোপাগান্ডা' হিসেবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে বলা হয়েছে। এদিকে, নির্বাচনসহ বাংলাদেশের রাজনৈতিক নানা ইস্যুতে বিএনপি জামায়াতের ভারত বিরোধী অবস্থান বিভিন্ন সময় লক্ষ্য করা গেছে।
কিন্তু শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ধর্মকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক দলগুলো।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেন, "বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কটা ধর্মভিত্তিক পোলারাইজেশন, এটি একটি মধ্যযুগীয় ব্যাপার। একবিংশ শতাব্দীতে বসে ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্তি সৃষ্টি করা মধ্যযুগীয় কারবার।"
জামায়াত ইসলামী মনে করছে বর্তমানে সংখ্যালঘু ইস্যুতে ভারতে যে ধরনের প্রচারণা চলছে সেটি দুই দেশের সম্পর্কে আরো বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বিবিসি বাংলাকে বলেন, "ভারত যদি এই প্রচারণা বন্ধ না করে তাহলে আন্তর্জাতিক আইনকে সামনে রেখে এটি সমাধানের জন্য এগিয়ে যেতে হবে। আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে"।
যদিও এই ইস্যুতে আওয়ামী লীগ মনে করছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু ইস্যুতে দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ ছিল যখন শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় ছিল। দলটির কেন্দ্রীয় নেতা খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেন, "বাংলাদেশ পাঁচই অগাস্টের পর সেই স্পিরিট থেকে সরে গেছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে কী পরিমাণ সন্ত্রাসবাদ সেখানে চলতেছে"।
যে কারণে সংখ্যালঘু ইস্যুতে ভারতের মিডিয়া ও দেশটির রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য আওয়ামী লীগ নেতিবাচক হিসেবে দেখছে না। রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরিক বিবিসি বাংলাকে বলছেন, এই মুহূর্তে ভারতের গণমাধ্যম যে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে, তা উত্তেজনা বাড়াচ্ছে বাংলাদেশে।
রাজনীতি ও কূটনীতি
আগস্ট থেকেই বাংলাদেশ ভারত সম্পর্কের টানাপোড়েন তৈরি হলেও বাংলাদেশে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস আটক ও ত্রিপুরায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার পর থেকে বিষয়টি আও বেশি দানা বাঁধে।
দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও বেশি নেতিবাচক সম্পর্কের দিকে উস্কে দেয়ার অভিযোগ ওঠে ভারতীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা নেতিবাচক সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে। বতর্মান পরিস্থিতি রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষেত্রে আপাতত দুই ধরনের সংকট তৈরি হচ্ছে বলেও বিশ্লেষকরা মনে করছে।
প্রথমত, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বাংলাদেশের অনেক মানুষের মধ্যে ভারত বিরোধী অবস্থান অনেকটাই প্রকাশ্যে। যে কারণে কোনও রাজনৈতিক দলের নেতারা ভারতের সাথে সুসম্পর্ক রেখে রাজনীতি করার বক্তব্য দিলেও তা নিয়ে নানা সমালোচনা করতে দেখা যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
এর বিপরীতে সরকারের দায়িত্বশীল কিংবা রাজনৈতিক নেতাদের পক্ষ থেকে ভারত বিরোধী বক্তব্যে দেয়া হলে সে সব বক্তব্য ইতিবাচক সমর্থনের প্রবনতা দেখা যাচ্ছে অনলাইনসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এসব কারণে রাজনৈতিক নেতাদের অনেকেই কিছুটা কৌশলী বক্তব্য দিচ্ছেন এই ইস্যুতে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের সাথে জনগণের, রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্ক চাই। এবং, বিদ্যমান কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে উভয় দেশের পরস্পর নির্ভরশীলতা বাড়ানো। এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করা যায়।
ঐতিহাসিকভাবে জামায়াতে ইসলামিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতবিরোধী মনে করা হলেও সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যুতে তারা বক্তব্য দিচ্ছেন খুব বুঝে শুনে।
দলটির নেতা মতিউর রহমান আকন্দ বিবিসি বাংলাকে বলেন, সম্পর্কের ক্ষেত্রে দুই দেশকেই কো-অপারেটিভ হতে হবে। রাষ্ট্রের অবস্থান থেকে বাংলাদেশ চেষ্টা করবে। আর ভারতকেও তার রাষ্ট্রীয় বিধিবিধান মেনেই তার আচরণ নির্ধারণ করতে হবে। এটা না হলে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ভারত বিরোধিতা বাড়তে থাকবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের পেছনে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতের বাংলাদেশ নীতিতে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার প্রভাব।
বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরিন বিবিসি বাংলাকে বলেন, ভারত সরকারের সাথে বসে ফলপ্রসূ আলোচনায় করতেও দেখছি না আমরা। উল্টো বিএনপি নেতা রিজভী স্ত্রীর শাড়ি পুড়িয়ে যে বক্তব্য দিচ্ছেন, এগুলো উস্কানিমূলক বক্তব্যের মতো মনে হচ্ছে। তারা দায়িত্বপূর্ণ আচরণের বিপরীতে অনেকটাই দায়িত্বহীন কাজ করছে।
কিছু দিন ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের মাঝে সম্পর্কে এক ধরনের উত্তেজনা চলছে। একদিকে যেমন দুই দেশের সামাজিক মাধ্যমে পরস্পরের বিরুদ্ধে বিষোদগার চলছে, অন্যদিকে রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে উত্তেজনাকর বক্তব্য দেয়া হয়েছে। এর মধ্যেই ভারতে বাংলাদেশের উপ হাইকমিশনে হামলার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
মূলত, ভারত বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্কের এই টানাপোড়েন শুরু হয়েছে ভারত সরকার বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার পর থেকে।
গত কয়েকদিন ধরে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতারা প্রকাশ্যে বাংলাদেশ বিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন। এমনকি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী পাঠানোর ব্যবস্থা করতে বলেছেন। তার সেই বক্তব্য নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনা হয়েছে।
বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে, ভারতের গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে ভিত্তিহীন নেতিবাচক খবর প্রকাশ করা হচ্ছে। যদিও দুই দেশের সরকারের পক্ষ থেকেই এসব উত্তেজনা নিরসনের বক্তব্য দেয়া হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান কী? দুই প্রতিবেশী দেশের এই উত্তেজনাকে কোন দল কীভাবে দেখছে?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে নানা কারণে ভারত বিরোধিতার বিষয়টি নতুন নয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি আবার নতুন করে উস্কে দিচ্ছে কোনও কোনও রাজনৈতিক দলকে।
তবে এই দফায় দুই দেশের সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি টানাপোড়েন তৈরি হয় ত্রিপুরার বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার পর। ওই ঘটনার পর বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল ও সরকার এক হয়ে জাতীয় ঐক্যের ঘোষণাও দিয়েছে। আওয়ামী লীগ বাদে বাদে দুটি বড় দলের নেতারাই বিবিসি বাংলাকে বলেছেন যে তারা চান– রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের, জনগণের সাথে জনগণের মাঝে বন্ধুত্ব হোক।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেন "ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তো বাংলাদেশ কোনো মন্তব্য করছে না, তাহলে ভারত কেন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছে? যদি কোনো সংকট থেকে থাকে, বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ তার সমাধান করবে।"
ভারতে 'অপপ্রচার' ও রাজনীতি
সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ ঘিরে বেশ কিছু ভুয়া খবর ছড়াতে দেখা গেছে। এর আগে পাঁচই অগাস্টে সরকার পতনের পরপরই একই ধরনের চিত্র দেখা গিয়েছিল। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর ভারতীয় মিডিয়াগুলোতে বাংলাদেশ নিয়ে এত বেশি নেতিবাচক খবরের অভিযোগ উঠেছে।
ওই বাংলাদেশের প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দল– বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগ বাদে বাকি দুই দলের নেতারাই বলেছেন যে ভারত নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এই মধ্যযুগীয় কায়দায় ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্তি সৃষ্টি করলে একটা দেশের অগ্রগতি থেমে যাবে। কোনও দেশের জন্যই ভালো না এটা। তারা যে ন্যারেটিভ তৈরি করছে, তা বাংলাদেশের জন্যও ড্যামেজিং, তাদের জন্যও ড্যামেজিং। ভারতের একটি অংশ এই কাজ করে যাচ্ছে, বলেন তিনি।
তিনি মনে করেন, ভারতের গণমাধ্যম যা করে যাচ্ছে, তাতে বাংলাদেশের মানুষ যথেষ্ট পরিপক্কতার পরিচয় দিয়েছে। টলারেন্স ও রেসপেক্টের জায়গায় গেছে। মানুষ প্রতিক্রিয়া দেখায় নাই। মানুষ নৈতিকতার দিক থেকে ভালো অবস্থানে গেছে, এটিই বাংলাদেশের শক্তি।
বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গেও কথা হয় বিবিসি বাংলা'র। তিনিও বলেন, "ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।"
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বিবিসি বাংলাকে বলেন, বাংলাদেশের সাথে যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা দরকার ছিল, সেটি ভারতের পক্ষ থেকে বজায় রাখা হয়নি। তা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক।
তবে ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশের বিষয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে না, বরং "ভারতীয় সংবাদপত্র যে কথাগুলো বলছে, সেগুলোর সাথে বাংলাদেশ সরকার সম্পূর্ণভাবে জড়িত," বিবিসি বাংলাকে বলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
এছাড়াও, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিংবা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের বক্তব্য ধারাবাহিকভাবে ভারতের মিডিয়াগুলোর অপপ্রচার ও রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্যের পর দুই দেশের সম্পর্কে বেশ নেতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ভৌগোলিক কারণেই বাংলাদেশের কাছে ভারতের গুরুত্ব রয়েছে। তাই দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্যও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত।
সংখ্যালঘু ইস্যুতে পাল্টাপাল্টি অবস্থান
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গত নভেম্বরের শেষ দিকে 'বহিস্কৃত' ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার ও জামিন বাতিলের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছিলো ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সেসময় দেওয়া এক বিবৃতিতে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল মি. দাসকে আটকের পর বাংলাদেশের চরমপন্থী গ্রুপগুলো হিন্দু সম্প্রদায় ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপরও হামলা চালিয়েছে; হিন্দু এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ভাঙচুর এবং মন্দিরে হামলার মতো ঘটনা ঘটছে।
যদিও ঢালাওভাবে এসব বক্তব্যকে 'প্রোপাগান্ডা' হিসেবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে বলা হয়েছে। এদিকে, নির্বাচনসহ বাংলাদেশের রাজনৈতিক নানা ইস্যুতে বিএনপি জামায়াতের ভারত বিরোধী অবস্থান বিভিন্ন সময় লক্ষ্য করা গেছে।
কিন্তু শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ধর্মকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক দলগুলো।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেন, "বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কটা ধর্মভিত্তিক পোলারাইজেশন, এটি একটি মধ্যযুগীয় ব্যাপার। একবিংশ শতাব্দীতে বসে ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্তি সৃষ্টি করা মধ্যযুগীয় কারবার।"
জামায়াত ইসলামী মনে করছে বর্তমানে সংখ্যালঘু ইস্যুতে ভারতে যে ধরনের প্রচারণা চলছে সেটি দুই দেশের সম্পর্কে আরো বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বিবিসি বাংলাকে বলেন, "ভারত যদি এই প্রচারণা বন্ধ না করে তাহলে আন্তর্জাতিক আইনকে সামনে রেখে এটি সমাধানের জন্য এগিয়ে যেতে হবে। আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে"।
যদিও এই ইস্যুতে আওয়ামী লীগ মনে করছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু ইস্যুতে দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ ছিল যখন শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় ছিল। দলটির কেন্দ্রীয় নেতা খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেন, "বাংলাদেশ পাঁচই অগাস্টের পর সেই স্পিরিট থেকে সরে গেছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে কী পরিমাণ সন্ত্রাসবাদ সেখানে চলতেছে"।
যে কারণে সংখ্যালঘু ইস্যুতে ভারতের মিডিয়া ও দেশটির রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য আওয়ামী লীগ নেতিবাচক হিসেবে দেখছে না। রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরিক বিবিসি বাংলাকে বলছেন, এই মুহূর্তে ভারতের গণমাধ্যম যে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে, তা উত্তেজনা বাড়াচ্ছে বাংলাদেশে।
রাজনীতি ও কূটনীতি
আগস্ট থেকেই বাংলাদেশ ভারত সম্পর্কের টানাপোড়েন তৈরি হলেও বাংলাদেশে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস আটক ও ত্রিপুরায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার পর থেকে বিষয়টি আও বেশি দানা বাঁধে।
দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও বেশি নেতিবাচক সম্পর্কের দিকে উস্কে দেয়ার অভিযোগ ওঠে ভারতীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা নেতিবাচক সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে। বতর্মান পরিস্থিতি রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষেত্রে আপাতত দুই ধরনের সংকট তৈরি হচ্ছে বলেও বিশ্লেষকরা মনে করছে।
প্রথমত, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বাংলাদেশের অনেক মানুষের মধ্যে ভারত বিরোধী অবস্থান অনেকটাই প্রকাশ্যে। যে কারণে কোনও রাজনৈতিক দলের নেতারা ভারতের সাথে সুসম্পর্ক রেখে রাজনীতি করার বক্তব্য দিলেও তা নিয়ে নানা সমালোচনা করতে দেখা যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
এর বিপরীতে সরকারের দায়িত্বশীল কিংবা রাজনৈতিক নেতাদের পক্ষ থেকে ভারত বিরোধী বক্তব্যে দেয়া হলে সে সব বক্তব্য ইতিবাচক সমর্থনের প্রবনতা দেখা যাচ্ছে অনলাইনসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এসব কারণে রাজনৈতিক নেতাদের অনেকেই কিছুটা কৌশলী বক্তব্য দিচ্ছেন এই ইস্যুতে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের সাথে জনগণের, রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্ক চাই। এবং, বিদ্যমান কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে উভয় দেশের পরস্পর নির্ভরশীলতা বাড়ানো। এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করা যায়।
ঐতিহাসিকভাবে জামায়াতে ইসলামিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতবিরোধী মনে করা হলেও সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যুতে তারা বক্তব্য দিচ্ছেন খুব বুঝে শুনে।
দলটির নেতা মতিউর রহমান আকন্দ বিবিসি বাংলাকে বলেন, সম্পর্কের ক্ষেত্রে দুই দেশকেই কো-অপারেটিভ হতে হবে। রাষ্ট্রের অবস্থান থেকে বাংলাদেশ চেষ্টা করবে। আর ভারতকেও তার রাষ্ট্রীয় বিধিবিধান মেনেই তার আচরণ নির্ধারণ করতে হবে। এটা না হলে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ভারত বিরোধিতা বাড়তে থাকবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের পেছনে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতের বাংলাদেশ নীতিতে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার প্রভাব।
বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরিন বিবিসি বাংলাকে বলেন, ভারত সরকারের সাথে বসে ফলপ্রসূ আলোচনায় করতেও দেখছি না আমরা। উল্টো বিএনপি নেতা রিজভী স্ত্রীর শাড়ি পুড়িয়ে যে বক্তব্য দিচ্ছেন, এগুলো উস্কানিমূলক বক্তব্যের মতো মনে হচ্ছে। তারা দায়িত্বপূর্ণ আচরণের বিপরীতে অনেকটাই দায়িত্বহীন কাজ করছে।
ঐকমত্য কমিশনে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তার অনেকগুলোতেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে বা ঘোরতর দ্বিমত জানিয়েছে। এসব ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা ঘোরতম দ্বিমতকে কোনোভাবে ঐকমত্য হিসেবে ধরা যাবে না।
৭ দিন আগেক্ষুধা ধীরে হত্যা করে, ভেজাল নীরবে হত্যা করে। খাদ্যে ভেজাল কেবল বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটি বৈশ্বিক সংকট। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, প্রতি বছর ৬০ কোটি মানুষ খাদ্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে চার লাখ ২০ হাজার মানুষ মারাও যায়।
৮ দিন আগেএ জাতির মুক্তির মন্দিরের সোপানতলে কে হবেন কান্ডারী? আমরা কি সেই ইতিহাসের ভারবাহী নতুন প্রজন্ম তৈরি করতে পেরেছি? না পারার দায় কার? লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও লেখক
৯ দিন আগেগত আট দশক ধরে জাতিসংঘ ধারাবাহিকভাবে তার কর্মপরিধি সম্প্রসারিত করেছে এবং নানা ক্ষেত্রে আরো গভীরভাবে সম্পৃক্ত হয়েছে । বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা, মানবাধিকার, বিশ্বব্যাপী মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন, ন্যায়বিচার, ন্যায্যতা ও সমতা প্রসারে জাতিসংঘ অনস্বীকার্য ভূমিকা রেখেছে। জাতিসংঘের কারণেই আজ বিশ্বের ১২০ টি দে
১৫ দিন আগে