ডয়চে ভেলে
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে রিভিউ আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা আগামী ১৭ নভেম্বর। তবে আইনজীবী ও বিশ্লেষকেরা মনে করেন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন আইন সংস্কারও প্রয়োজন।
এরইমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য যে ১০টি কমিশন গঠন করেছে তার মধ্যে সংবিধান, বিচার বিভাগ ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য তিনটি কমিশন আছে। আদালত যদি তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার পক্ষে রায় দেয় তাহলে তার প্রক্রিয়া কী হবে?
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার থাকা দরকার। কারণ ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পর এটা প্রমাণ হয়েছে যে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয় না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যে নির্বাচন হয়েছে তার গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায় দিলেও সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তুলে দেয়া হয় পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে। উচ্চ আদালতে পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলেও রিট হয়েছে এবং আদালত রুল দিয়েছেন।
প্রথমে সুশাসনের জন্য নাগরিক এই রিভিউ আবেদন করলেও পরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল(বিএনপি) ও জামায়াতে ইসলামী ও আবেদনের পক্ষভুক্ত হয়। ১৭ নভেম্বর আপিল বিভাগ তিনটি রিভিউ আবেদনই এক সঙ্গে শুনবেন।
আইনজীবীদের মতামত
আইনজীবীরা বলছেন সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের যে রায় তা মানা সরকারের জন্য বাধ্যতামূলক ছিল না। এছাড়া ওই রায়ে অন্তত আরো দুইটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার কথা ছিল। কিন্তু তখনকার আওয়ামী লীগ সরকার পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে ফিরে যায়। এই প্রক্রিয়ায় গত তিনটি নির্বাচন করে ক্ষমতায় থেকেছে আওয়ামী লীগ।
বিএনপি নেতা ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘আসলে আওয়ামী লীগ নিজেদের স্বার্থেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছিল৷ তবে শুধু ওই ব্যবস্থা এখন ফিরিয়ে আনাই যথেষ্ঠ নয়৷ এর সঙ্গে যদি আরো সংস্কার করা প্রয়োজন তাও করতে হবে৷ ওয়ান ইলেভেনের সময় যে অন্তর্বর্তী সরকার ছিল তারা তো আসলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল না৷ এইরকম যাতে আর না হয় তাও দেখতে হবে।’
তার জানান, ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের বিরুদ্ধে এখন যে তিন পক্ষের রিভিউ তা পুরো শুনানি হতে কিছুটা সময় লাগবে৷ কারণ রিভিউ আপিল বিভাগ গ্রহণ করলে আবার পূর্ণাঙ্গ আপিল করতে হবে৷ তিনি বলেন, ‘আমার মতে পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে দিলেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরে আসবে৷ এটা নিয়ে যে রিট হয়েছে তার ওপর রুলও জারি করা হয়েছে।’
তার মতে দেশে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা থাকা জরুরি। ওই সরকার যদি নিরপেক্ষ না হয় তাহলে নির্বাচন কমিশনের করণীয় কিছু থাকে না। আরেকজন আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর ফারুক উচ্চ আদালতের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা ফিরে আসার ব্যাপারে আশাবাদী।
নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন আইন সংস্কারের উপরও জোর দেন। বলেন, ‘সংসদ সদস্যদের ফ্লোর ক্রসিং-এর বিরুদ্ধে সংবিধানের সাত অনুচ্ছেদ বাতিল করতে হবে৷ আর প্রার্থীদের যোগ্যতার বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে৷ একই সঙ্গে নির্বাচনি সভা-সমাবেশ হতে হবে নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে। তাহলে কালোটাকার দৌরাত্ম্য কমবে। আশা করি সংস্কার কমিশনে যারা কাজ করছেন তারা এগুলো দেখবেন।’
সংস্কার কমিশন যা ভাবছে
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. জাহেদ উর রহমানের মতে আওয়ামী লীগের শাসনামলে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে প্রতারণা করা হয়েছে। সংক্ষিপ্ত রায়ে ছিলো দুইটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার কথা থাকলেও পূর্ণাঙ্গ রায়ে সেটা পরিবর্তন করা হয়। তিনি বলেন, ‘‘এটা ছিল একটা অসৎ রায়।’’
নির্বাচনি ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনের ভাবনা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি আমাদের দেশের অভিজ্ঞতা হলো নির্বাচন কমিশন যতই স্বাধীন হোক না কেন দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়৷ তাই নির্বাচনের সময় নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারও থাকতে হবে৷ শুধু জাতীয় নির্বাচন নয়, সব নির্বাচনে এটা কীভাবে করা যায় আমরা সেটা নিয়ে কাজ করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘সামনের নির্বাচনে যদি আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পায় দেখবেন তারাও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাইবে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রেক্ষাপট
১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানে এরশাদ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারে অধীনে সাধারন নির্বাচন হলেও সংবিধানে তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান যুক্ত করা হয়নি৷ ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের চাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান এনে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী সংসদে পাস করে বিএনপি সরকার৷ আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আবার ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।
বিএনপি সরকারের সময়ে ২০০৪ সালের ৪ অগাস্ট সেই রিট খারিজ হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল থাকে৷ হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালে আপিল করেন রিটকারীরা৷ ২০০৬ সালে রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে জরুরি অবস্থা জারির পর গঠিত সেনা সমর্থিত তত্ত্ববধায়ক সরকার দুই বছর ক্ষমতায় থাকে৷ যদিও সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ছিলো তিন মাস৷
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে ২০১০ সালের ১ মার্চ আপিল বিভাগে ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলার শুনানি শুরু হয়্ শুনানিতে আপিল আবেদনকারী এবং রাষ্ট্রপক্ষ ছাড়াও অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে শীর্ষস্থানীয় আট জন আইনজীবী বক্তব্য দেন। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দেন। এমনকি তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও এর পক্ষে মত দেন।
ওই আপিল মঞ্জুর করে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। তখন প্রধান বিচারপতি ছিলেন এবিএম খায়রুল হক। তবে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ার আগেই ২০১১ সালের ৩০ জুন আওয়ামী লীগ সরকার জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে এবং রাষ্ট্রপতি ৩ জুলাই তাতে অনুমোদন দেন। ওই সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়।
ওই একই সংশোধনীর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এছাড়া জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়। সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল করা হয়। রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয়।
রিভিউ আবেদন ও রিট
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত আগস্টে পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল চেয়ে একটি রিট আবেদন করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজন। ওই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় ওই রুলে৷ আর ওই আগস্ট মাসেই ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন করেন সুশাসনের সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজন। এরপর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একই আর্জি জানিয়ে আরেকটি আবেদন করেন। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও আবেদন করা হয়।
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে রিভিউ আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা আগামী ১৭ নভেম্বর। তবে আইনজীবী ও বিশ্লেষকেরা মনে করেন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন আইন সংস্কারও প্রয়োজন।
এরইমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য যে ১০টি কমিশন গঠন করেছে তার মধ্যে সংবিধান, বিচার বিভাগ ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য তিনটি কমিশন আছে। আদালত যদি তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার পক্ষে রায় দেয় তাহলে তার প্রক্রিয়া কী হবে?
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার থাকা দরকার। কারণ ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পর এটা প্রমাণ হয়েছে যে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয় না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যে নির্বাচন হয়েছে তার গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায় দিলেও সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তুলে দেয়া হয় পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে। উচ্চ আদালতে পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলেও রিট হয়েছে এবং আদালত রুল দিয়েছেন।
প্রথমে সুশাসনের জন্য নাগরিক এই রিভিউ আবেদন করলেও পরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল(বিএনপি) ও জামায়াতে ইসলামী ও আবেদনের পক্ষভুক্ত হয়। ১৭ নভেম্বর আপিল বিভাগ তিনটি রিভিউ আবেদনই এক সঙ্গে শুনবেন।
আইনজীবীদের মতামত
আইনজীবীরা বলছেন সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের যে রায় তা মানা সরকারের জন্য বাধ্যতামূলক ছিল না। এছাড়া ওই রায়ে অন্তত আরো দুইটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার কথা ছিল। কিন্তু তখনকার আওয়ামী লীগ সরকার পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে ফিরে যায়। এই প্রক্রিয়ায় গত তিনটি নির্বাচন করে ক্ষমতায় থেকেছে আওয়ামী লীগ।
বিএনপি নেতা ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘আসলে আওয়ামী লীগ নিজেদের স্বার্থেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছিল৷ তবে শুধু ওই ব্যবস্থা এখন ফিরিয়ে আনাই যথেষ্ঠ নয়৷ এর সঙ্গে যদি আরো সংস্কার করা প্রয়োজন তাও করতে হবে৷ ওয়ান ইলেভেনের সময় যে অন্তর্বর্তী সরকার ছিল তারা তো আসলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল না৷ এইরকম যাতে আর না হয় তাও দেখতে হবে।’
তার জানান, ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের বিরুদ্ধে এখন যে তিন পক্ষের রিভিউ তা পুরো শুনানি হতে কিছুটা সময় লাগবে৷ কারণ রিভিউ আপিল বিভাগ গ্রহণ করলে আবার পূর্ণাঙ্গ আপিল করতে হবে৷ তিনি বলেন, ‘আমার মতে পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে দিলেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরে আসবে৷ এটা নিয়ে যে রিট হয়েছে তার ওপর রুলও জারি করা হয়েছে।’
তার মতে দেশে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা থাকা জরুরি। ওই সরকার যদি নিরপেক্ষ না হয় তাহলে নির্বাচন কমিশনের করণীয় কিছু থাকে না। আরেকজন আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর ফারুক উচ্চ আদালতের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা ফিরে আসার ব্যাপারে আশাবাদী।
নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন আইন সংস্কারের উপরও জোর দেন। বলেন, ‘সংসদ সদস্যদের ফ্লোর ক্রসিং-এর বিরুদ্ধে সংবিধানের সাত অনুচ্ছেদ বাতিল করতে হবে৷ আর প্রার্থীদের যোগ্যতার বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে৷ একই সঙ্গে নির্বাচনি সভা-সমাবেশ হতে হবে নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে। তাহলে কালোটাকার দৌরাত্ম্য কমবে। আশা করি সংস্কার কমিশনে যারা কাজ করছেন তারা এগুলো দেখবেন।’
সংস্কার কমিশন যা ভাবছে
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. জাহেদ উর রহমানের মতে আওয়ামী লীগের শাসনামলে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে প্রতারণা করা হয়েছে। সংক্ষিপ্ত রায়ে ছিলো দুইটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার কথা থাকলেও পূর্ণাঙ্গ রায়ে সেটা পরিবর্তন করা হয়। তিনি বলেন, ‘‘এটা ছিল একটা অসৎ রায়।’’
নির্বাচনি ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনের ভাবনা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি আমাদের দেশের অভিজ্ঞতা হলো নির্বাচন কমিশন যতই স্বাধীন হোক না কেন দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়৷ তাই নির্বাচনের সময় নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারও থাকতে হবে৷ শুধু জাতীয় নির্বাচন নয়, সব নির্বাচনে এটা কীভাবে করা যায় আমরা সেটা নিয়ে কাজ করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘সামনের নির্বাচনে যদি আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পায় দেখবেন তারাও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাইবে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রেক্ষাপট
১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানে এরশাদ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারে অধীনে সাধারন নির্বাচন হলেও সংবিধানে তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান যুক্ত করা হয়নি৷ ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের চাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান এনে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী সংসদে পাস করে বিএনপি সরকার৷ আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আবার ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।
বিএনপি সরকারের সময়ে ২০০৪ সালের ৪ অগাস্ট সেই রিট খারিজ হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল থাকে৷ হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালে আপিল করেন রিটকারীরা৷ ২০০৬ সালে রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে জরুরি অবস্থা জারির পর গঠিত সেনা সমর্থিত তত্ত্ববধায়ক সরকার দুই বছর ক্ষমতায় থাকে৷ যদিও সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ছিলো তিন মাস৷
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে ২০১০ সালের ১ মার্চ আপিল বিভাগে ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলার শুনানি শুরু হয়্ শুনানিতে আপিল আবেদনকারী এবং রাষ্ট্রপক্ষ ছাড়াও অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে শীর্ষস্থানীয় আট জন আইনজীবী বক্তব্য দেন। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দেন। এমনকি তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও এর পক্ষে মত দেন।
ওই আপিল মঞ্জুর করে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। তখন প্রধান বিচারপতি ছিলেন এবিএম খায়রুল হক। তবে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ার আগেই ২০১১ সালের ৩০ জুন আওয়ামী লীগ সরকার জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে এবং রাষ্ট্রপতি ৩ জুলাই তাতে অনুমোদন দেন। ওই সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়।
ওই একই সংশোধনীর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এছাড়া জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়। সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল করা হয়। রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয়।
রিভিউ আবেদন ও রিট
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত আগস্টে পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল চেয়ে একটি রিট আবেদন করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজন। ওই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় ওই রুলে৷ আর ওই আগস্ট মাসেই ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন করেন সুশাসনের সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজন। এরপর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একই আর্জি জানিয়ে আরেকটি আবেদন করেন। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও আবেদন করা হয়।
স্লোগান বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক অবিছ্ছেদ্য অংশ। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে স্লোগানের ব্যবহার ছিল। “ব্রিটিশ হটাও, দেশ বাঁচাও”; “বিদেশি পণ্য বর্জন করো, দেশি পণ্য ব্যবহার করো”; “তুমি আমি স্বদেশি, স্বদেশি স্বদেশি” “আমরা লড়ব, আমরা জিতব” ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এরূপ অনেক স্লোগানই রাজনৈতিক সচেতন
৫ দিন আগে২২ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এ নিয়ে একটি প্রস্তাবনা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে । তাতে প্রধান শিক্ষকরা আগে কত টাকা বেতন ও ভাতা পেতেন, আর দশম গ্রেড বাস্তবায়ন হলে কত পাবেন—তা নিয়ে পরিপূর্ণ হিসাব রয়েছে ।
৬ দিন আগেভিওজিএসএস হলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর উদ্বেগ, স্বার্থ ও অগ্রাধিকারসমূহের বিষয়ে আলোচনা করা, ধারণা ও সমাধান বিনিময় করা, এবং উন্নয়ন সমাধান বিনির্মাণে কণ্ঠ ও উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য একটি অভিন্ন মঞ্চ প্রদানের লক্ষ্যে ভারতের প্রচেষ্টা।
৬ দিন আগেবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকেই খাজা সলিমুল্লাহ, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, আল্লামা ইকবাল, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দ্দী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ অনুধাবন করেন যে, ভারতবর্ষ স্বাধীন হলে মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমির প্রয়োজন হবে। অন্যথায় ভারতবর্ষের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির মধ্যে গৃহযুদ্ধ লেগেই থাকবে। রা
১০ দিন আগে