এপ্রিলে সড়কে ৫৮৮ প্রাণহানি, পাঁচজনে একজন পথচারী

প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম
আপডেট : ১১ মে ২০২৫, ১১: ৪৯
টাঙ্গাইলে গত বৃহস্পতিবার একটি পিকআপ ভ্যান বড় একটি ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দিলে পিকআপের চালকসহ তিনজন নিহত হয়েছিলেন। রাজনীতি ডটকম ফাইল ছবি

এপ্রিল মাসে সারা দেশে ৫৯৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৮৮ জন নিহত ও এক হাজার ১২৪ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন। অন্যদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় পথচারীই প্রাণ হারিয়েছেন মোট নিহতের ১৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। অর্থাৎ সড়কে নিহতদের প্রতি পাঁচ জনের একজনই পথচারী। আর নিহতদের মধ্যে ১২ দশমিক ৫৮ শতাংশ বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও সহকারী।

রোববার (১১ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো সড়ক দুর্ঘটনার মাসিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। ৯টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ মাসে সাতটি নৌ দুর্ঘটনায় আটজন নিহত ও চারজন আহত এবং ২২টি রেল ট্র্যাক দুর্ঘটনায় আরও ২৪ জন নিহত ও ছয়জন আহত হয়েছেন।

যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, এপ্রিলে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ২২৯ জন মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহী (৩৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ), বাসের যাত্রী ২১ জন (৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ), ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর ও ট্রলির আরোহী ৩৫ জন (৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ), প্রাইভেট কার-মাইক্রোবাস- অ্যাম্বুলেন্সের আরোহী ২৬ জন (৪ দশমিক ৪২ শতাংশ)।

এ ছাড়া থ্রি-হুইলারের (সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা) যাত্রী ১১৯ জন (২০ দশমিক ২৩ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের (নসিমন-করিমন-ভটভটি-পাখিভ্যান-মাহিন্দ্র-টমটম-আলগামন) যাত্রী ৩১ জন (৫ দশমিক ২৭ শতাংশ) এবং বাইসাইকেল ও রিকশার আরোহী ১১ জন (১ দশমিক ৮৭ শতাংশ) নিহত হয়েছেন সড়কে।

কোন সড়কে কত দুর্ঘটনা

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে আঞ্চলিক সড়কে। এর পরিমাণ ২৩৪টি (৩৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ)। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১৩টি (৩৫ দশমিক ৯১ শতাংশ) দুর্ঘটনা ঘটেছে জাতীয় মহাসড়কে। এ ছাড়া গ্রামীণ সড়কে ৭৬টি (১২ দশমিক ৮১ শতাংশ), শহুরে সড়কে ৬১টি (১০ দশমিক ২৮ শতাংশ) ও অন্যান্য স্থানে ৯টি (১ দশমিক ৫১ শতাংশ) দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনার ধরন

এপ্রিলে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে যানবাহনগুলো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে। এ ধরনের দুর্ঘটনার সংখ্যা ২৩৭টি (৩৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ)। ছাড়া ১৪৬টি (২৪ দশমিক ৬২ শতাংশ) দুর্ঘটনা ঘটেছে মুখোমুখি সংঘর্ষে, ১১৯টি (২০ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ) দুর্ঘটনা ঘটেছে পথচারীকে চাপা বা ধাক্কা দেওয়ায় এবং ৭৪টি (১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ) দুর্ঘটনা ঘটেছে যানবাহনের পেছনে আঘাত করার কারণে। অন্যান্য কারণে ঘটেছে বাকি ১৭টি (২ দশমিক ৮৬ শতাংশ) দুর্ঘটনা।

Truck-Hit-A-House-Loosing-Control-File-Photo-11-05-2025

গত ২৪ এপ্রিল টাঙ্গাইলে একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশের একটি বসতঘরে ঢুকে পড়লে একজন নিহত হয়েছেন। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, এপ্রিলে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে এভাবে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে। রাজনীতি ডটকম ফাইল ছবি

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা

এপ্রিলে দুর্ঘটনায় জড়িত মোট যানবাহনের সংখ্যা ছিল ৯৪৯টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৩৪টি মোটরসাইকেল, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২৩টি থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা), তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৩৯টি ট্রাক।

এ ছাড়া ১৩২টি বাস, ৩৬টি স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-করিমন-ভটভটি-পাখিভ্যান-টমটম-মাহিন্দ্র-আলগামন), ২৮টি প্রাইভেট কার, ২৩টি পিকআপ, ২১টি বাইসাইকেল-রিকশা, ১৯টি মাইক্রোবাস, ১৭টি ড্রাম ট্রাক, ১৬টি কাভার্ড ভ্যান, ১১টি ট্রাক্টর, ৯টি ট্রলি, ৯টি লরি, ছয়টি অ্যাম্বুলেন্স, চারটি জিপ, তিনটি তেলবাহী ট্যাংকার, একটি পুলিশ ভ্যান এপ্রিলে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। দুর্ঘটনায় জড়িত ১৮টি যানবাহন শনাক্ত করা যায়নি।

কোথায় কত দুর্ঘটনা

দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে ঘটছে সবচেয়ে বেশি ২৯ দশমিক ১৭ শতাংশ দুর্ঘটনা। প্রাণহানিও সবচেয়ে বেশি এ বিভাগে— ২৬ দশমিক ১৯ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি দুটিই চট্টগ্রাম বিভাগে— দুর্ঘটনা ২০ দশমিক ৫৭ শতাংশ ও প্রাণহানি ২২ দশমিক ৪৪ শতাংশ। তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ দুর্ঘটনা ও ১৪ দশমিক ৬২ শতাংশ প্রাণহানি ঘটেছে খুলনা বিভাগে।

এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ঘটেছে ১০ দশমিক ৭৯ শতাংশ ও প্রাণহানি ঘটেছে ১১ দশমিক ২২ শতাংশ। ময়মনসিংহ বিভাগে ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ দুর্ঘটনা ও ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ প্রাণহানি; বরিশাল বিভাগে ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ দুর্ঘটনা ও ৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ প্রাণহানি, সিলেট বিভাগে ৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ দুর্ঘটনা ও ৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ প্রাণহানি এবং রংপুর বিভাগে ৫ দশমিক ২২ শতাংশ দুর্ঘটনা ও ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ প্রাণহানি ঘটেছে এপ্রিলে।

এর বাইরে একক জেলা হিসেবে সবচেয়ে বেশি চট্টগ্রামে ৩৫টি দুর্ঘটনায় ৪৬ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে নীলফামারী জেলায়। এ দুর্ঘটনায় কোনো প্রাণহানি ঘটেনি।

সড়ক দুর্ঘটনার কারণ

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণে সড়ক দুর্ঘটনার যেসব কারণ উঠে এসেছে সেগুলো হলো—

  • ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন ও বেপরোয়া গতি;
  • চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা;
  • বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা;
  • মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল;
  • তরুণ-যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো;
  • জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা;
  • দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা;
  • বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি; এবং
  • গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সুপারিশ

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন সড়ক দুর্ঘটনা ও এর কারণ পর্যবেক্ষণ করে দুর্ঘটনা রোধে বেশকিছু সুপারিশ করেছে। সেগুলো হলো—

  • দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বাড়াতে হবে;
  • চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে;
  • বিআরটিএর সক্ষমতা বাড়াতে হবে;
  • পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে;
  • মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্ব রাস্তা (সার্ভিস রোড) তৈরি করতে হবে;
  • পর্যায়ক্রমে সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে;
  • গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে;
  • রেল ও নৌ পথ সংস্কার করে সড়ক পথের ওপর চাপ কমাতে হবে;
  • টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে; এবং
  • সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

শনিবার দেশে ফিরছেন শহিদুল আলম

তুরস্কে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. আমানুর রহমান জানান, শহিদুল আলমের ঢাকা ফেরার ফ্লাইট শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে ইস্তানবুল থেকে ছাড়ার কথা রয়েছে। পরদিন শনিবার সকাল ৪টা ৫৫ মিনিটে তিনি দেশে পৌঁছাবেন।

১০ ঘণ্টা আগে

ডিবিএল গ্রুপে নারী কর্মী নিয়োগ, পদসংখ্যা ৫

১০ ঘণ্টা আগে

নৌবাহিনীতে অফিসার ক্যাডেট নিয়োগ, ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত আবেদন

১১ ঘণ্টা আগে

প্রযুক্তির যুগে সঠিক তথ্যের আদানপ্রদান গুরুত্বপূর্ণ : রিজওয়ানা

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামী দিনে অনেক মানুষের ঠিকানা হারানোর শঙ্কা রয়েছে। সেখানে ডাক বিভাগ ঠিকানা হালনাগাদের মাধ্যমে অবদান রাখতে পারে। আর ঠিকানা ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল হওয়া জরুরি।’

১১ ঘণ্টা আগে