ডয়চে ভেলে
বাংলাদেশে অপরাধীদের বেপরোয়া এবং নৃশংস আচরণের পেছনে রাজনীতি, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও সমাজ ব্যবস্থাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ এমন অবস্থা অব্যাহত থাকলে একটি অপরাধপ্রবণ সমাজের শিকড় আরো গভীরে যাবে বলে মনে করছেন তারা৷
পুরনো ঢাকার মিটফোর্ডে যখন ব্যবসায়ী লাল চাঁন সোহাগকে দিনের বেলা প্রকাশ্যে পাথর আর ইট দিয়ে হত্যা করা হয় তখন সেখানে অনেক মানুষ ছিলেন৷ আশপাশের দোকানে ব্যবসায়ীরা ছিলেন৷ কিন্তু কেউ তাকে উদ্ধার বা রক্ষায় এগিয়ে যায়নি৷ সেখানে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ ওই ঘটনার ভিডিও করেছেন৷ দুর্বৃত্তরা চলে যাওয়ার পর মিটফোর্ড হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসাররা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়, যেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে৷ যে আসামীরা ধরা পড়েছে তাদের একজনের কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে৷ তাকে প্রশ্ন করা হয় এমন নৃশংসভাবে মানুষ কি মানুষকে হত্যা করে? সেখানে তার জবাব ছিলো: এরচেয়েও নৃশংসভাবে হত্যা করে৷ এটা তেমন কিছু না৷
সোহাগ হত্যাকাণ্ড বুধবার ৯ জুলাই ঘটলেও ১১ জুলাইয়ের আগে তেমন কোনো সংবাদ মাধ্যম বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেনি৷ পাথর ও ইট দিয়ে থেতলে হত্যার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরার পর সংবাদ মাধ্যম সরব হয়, সারাদেশে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়৷
মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, সমাজে নিজেদের হিরো হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতেই নৃশংসতার পথ বেছে নেয় অপরাধীরা৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিকাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমরা এই ধরনের একটি প্রবণতা দেখছি৷ কারণ অনেক মব ভায়েলেন্সের ক্ষেত্রে দেখা গেছে যারা মব করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা প্রশংসিত হচ্ছে৷ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তাদের ব্যাপারে উদাসীনতা দেখিয়েছে৷ এখানে কোনো না কোনোভাবে নৃশংসতারও প্রশংসা হয়েছে৷ একই সঙ্গে রাজনৈতিক বা অন্যকোনো কারণে যদি রেহাই পাওয়ার সুযোগ পায় তাহলে তারা আরো অপরাধে জড়িয়ে পড়তে উৎসাহিত হয়৷ ফলে তারা আরো বড় অপরাধী হয়ে ওঠে৷
এতগুলো মানুষের উপস্থিতিতে এ ঘটনাটি ঘটল, কেউ এগিয়ে গেলো না কেনো? এর উত্তরে তিনি বলেন, ব্যক্তি যখন নিজেকে নিরাপদ মনে করে না তখন সে অন্যের বিপদে সরাসরি এগিয়ে যায় না৷ এখানে ব্যক্তির নিরাপ্তাহীনতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে৷ অপরাধের প্রতিবাদ করলে উল্টো বিপদে পড়তে হয়৷ তাই সবাই নিজে নিরাপদ থাকতে নিজেকে গুটিয়ে রাখছে৷ কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ করে৷ কারণ সেখানে যে কিছুটা নিরাপদ মনে করে৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মো. রেজাউল করিম বলেন, কিছু মানুষ আছে যারা অপরাধ প্রবণ৷ তাদের বলা হয় লাইকলি অফেন্ডার৷ তারা অপরাধের সুযোগ খোঁজে৷ তারা সুইটেবল টার্গেট খোঁজে৷ তারা কখন অপরাধ করলে সেটা এফেকটিভ হবে তা বিবেচনা করে৷ তারা দেখছে অপরাধ করলে তারা পার পাচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নিচ্ছে না৷ আর তৃতীয়ত হলো লিগ্যাল গার্ডিয়ানশিপ৷ মনিটরিং, সার্ভিলেন্স, বিচার এগুলো ঠিক মতো হচ্ছে না৷ অপরাধের ক্ষেত্রে টেকনিক অব নিউট্রালাইজেশন আছে৷ এর পাঁচটি ভাগ আছে৷ ওই পাঁচটি বিষয় দূর করা না গেলে রাষ্ট্র ও সমাজে অপরাধ বাড়ে৷ প্রথম হচ্ছে দায় না নেয়ার সংস্কৃতি৷ সর্বশেষ যে সোহাগ মার্ডার কেউ এর দায় নিতে চাচ্ছে না৷ দ্বিতীয়ত, কেউ স্বীকার করতে চায় না যে তার কারণে এটা হয়েছে৷ কেউ দায় দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারকে৷ আবার কেউ দায় দিচ্ছে রাজনৈতিক দলকে৷ তারা আবার অস্বীকার করছে৷ তৃতীয়ত, ডিনায়েল দ্য ইনজ্যুরি৷ বলা হচ্ছে তার নিজের কারণেই সে হত্যার শিকার হয়েছে৷ সে নিজেও চাঁদাবাজ৷ চতুর্থত, কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে নিয়েও প্রশ্ন করা হয়৷ একটি রাজনৈতিক দল কথা বললে আরেকটি রাজনৈতিক দল তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়৷ বলা হয় আপনি কথা বলার কে? সর্বশেষ, অ্যাপিল টু দ্য হায়ার লয়ালটি৷ তারা ওই নেতৃত্বকে খুশি করতে যেকোনো কাজ করে৷ আর নেতৃত্বও তাকে শেল্টার দেয়৷ এই পাঁচটিই আমাদের এখানে বিদ্যমান৷
অপরাধীদের নৃশংসতা আর সাধারণ মানুষের নিস্ত্রিয়তাই নয়, মানুষ দলবদ্ধ সহিসংতায়ও জড়িয়ে পড়ছে৷ আর এই ধরনের সহিংসতার শিকার হচ্ছেন নারী ও শিশুরাও৷
পুরনো ঢাকার ঘটনার পর ১১ জুলাই খুলনায় বহিষ্কৃত যুবদল নেতা মোল্লা মাহবুবুর রহমানকে হত্যা করা হয় নগরীর দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা পশ্চিম পাড়ায় তার নিজ বাড়ির সামনে গুলি করে৷ কিন্তু এখানেই শেষ নয়৷ তাকে গুলি করার পর তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে কুপিয়ে তার পায়ের রগ কাটা হয় হয় প্রকাশ্যে৷ কিন্তু এখনো পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি৷ কুমিল্লায় তিন জুলাই সকালে মা মেয়ে ও ছেলেকে কুপিয়ে এবং পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷ মোবাইল ফোর চুরির অপবাদ দিয়ে মব তৈরি করে তাদের হত্যা করা হয়৷ ৯ জুলাই চট্টগ্রামে স্ত্রী ফাতেমাকে ১১ টুকরা করে হত্যা করে তার স্বামী সুমন৷ ঢাকার ধামরাইয়ে সৈয়দা শিরিন আক্তার নামে এক নারীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা ৫ এপ্রিল প্রকাশ্যে৷
আইন ও শালিস কেন্দ্রের হিসেবে জানুয়ারি থেকে জুন এই ছয় মাসে সারা দেশে মব ভায়োলেন্স বা গণপিটুনির শিকার হয়ে ৮৯ জন নিহত হয়েছেন৷ তার মধ্যে ঢাকা বিভাগেই নিহত হয়েছেন ৪৫ জন৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌহিদুল হক বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে রাষ্ট্র ও সমাজ যে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে চায় এবং আইনের শাসনের পথে হাঁটতে চায় সেই ব্যবস্থাগুলো আমরা দেখছি না৷ ফলে অপরাধ বেড়েই চলছে৷ বিচার নিশ্চিত না করা গেলে এরকম হবে৷ এর সঙ্গে আছেআইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা, আছে রাজনৈতিক প্রশ্রয়৷ সবমিলিয়ে পরিস্থিতি এমন হচ্ছে৷ আর এখানে এখন প্রতিবাদ করলে মানুষ নিগ্রহের শিকার হয়, তার নিরপত্তা নাই৷ এই কারণে কোনো মানুষ স্বেচ্ছায় মামলার সাক্ষীও হতে চায়না৷ একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে, যা অপরাধীদের উৎসাহিত করছে৷ তারা আরো নৃশংস হচ্ছে৷
তিনি বলেন, এর ফলে সমাজে বিচ্ছিন্নতা তৈরি হচ্ছে৷ মানুষ মনে করছে নিজেকে গুটিয়ে রাখলে, প্রতিবাদ না করলে, অন্যের বিপদ দেখলে নিজে ঘরে ঢুকে গেলে সে নিরাপদ থাকবে৷ কিন্তু বাস্তবে সে এতে আরো অনিরাপদ হয়ে পড়বে৷
সাবেক আইজি মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, সাধারণভাবে বলা যায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা এবং অপরাধীরা রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে আশ্রয় পাওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে৷
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর ডয়চে ভেলেকে বলেন, একথা অনস্বীকার্য যে, ৫ আগস্টের পরে আমরা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছি৷ আমাদের প্রচেষ্টা ছিল জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণে দ্রুততম সময়ে সাহস ও মনোবল অটুট রেখে পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করা৷ প্রাথমিক ধাক্কা বা সংকট অনেকটাই কাটিয়ে উঠে পুলিশ এখন অনেক আত্মবিশ্বাসী৷ পুলিশ সারাদেশেই অপরাধ প্রতিরোধে তৎপর আছে৷ অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে৷ সাম্প্রতিক সময়ে কার্যক্রম আরো জোরদার করেছে৷
অন্যদিকে, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে সোমবার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চলতি বছর দেশে অপরাধের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন খবর সঠিক নয়৷ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সরকারি অপরাধ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে করে দেখা গেছে চলতি বছর বড় ধরনের অপরাধের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়েনি৷
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ মাসে বড় ধরনের অপরাধের প্রবণতা স্থিতিশীল রয়েছে৷ বেশিরভাগ গুরুতর অপরাধের হার কমছে বা একই পর্যায়ে রয়েছে৷ তবে কিছু নির্দিষ্ট অপরাধের ক্ষেত্রে সামান্য বৃদ্ধির প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে৷
বাংলাদেশে অপরাধীদের বেপরোয়া এবং নৃশংস আচরণের পেছনে রাজনীতি, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও সমাজ ব্যবস্থাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ এমন অবস্থা অব্যাহত থাকলে একটি অপরাধপ্রবণ সমাজের শিকড় আরো গভীরে যাবে বলে মনে করছেন তারা৷
পুরনো ঢাকার মিটফোর্ডে যখন ব্যবসায়ী লাল চাঁন সোহাগকে দিনের বেলা প্রকাশ্যে পাথর আর ইট দিয়ে হত্যা করা হয় তখন সেখানে অনেক মানুষ ছিলেন৷ আশপাশের দোকানে ব্যবসায়ীরা ছিলেন৷ কিন্তু কেউ তাকে উদ্ধার বা রক্ষায় এগিয়ে যায়নি৷ সেখানে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ ওই ঘটনার ভিডিও করেছেন৷ দুর্বৃত্তরা চলে যাওয়ার পর মিটফোর্ড হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসাররা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়, যেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে৷ যে আসামীরা ধরা পড়েছে তাদের একজনের কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে৷ তাকে প্রশ্ন করা হয় এমন নৃশংসভাবে মানুষ কি মানুষকে হত্যা করে? সেখানে তার জবাব ছিলো: এরচেয়েও নৃশংসভাবে হত্যা করে৷ এটা তেমন কিছু না৷
সোহাগ হত্যাকাণ্ড বুধবার ৯ জুলাই ঘটলেও ১১ জুলাইয়ের আগে তেমন কোনো সংবাদ মাধ্যম বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেনি৷ পাথর ও ইট দিয়ে থেতলে হত্যার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরার পর সংবাদ মাধ্যম সরব হয়, সারাদেশে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়৷
মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, সমাজে নিজেদের হিরো হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতেই নৃশংসতার পথ বেছে নেয় অপরাধীরা৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিকাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমরা এই ধরনের একটি প্রবণতা দেখছি৷ কারণ অনেক মব ভায়েলেন্সের ক্ষেত্রে দেখা গেছে যারা মব করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা প্রশংসিত হচ্ছে৷ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তাদের ব্যাপারে উদাসীনতা দেখিয়েছে৷ এখানে কোনো না কোনোভাবে নৃশংসতারও প্রশংসা হয়েছে৷ একই সঙ্গে রাজনৈতিক বা অন্যকোনো কারণে যদি রেহাই পাওয়ার সুযোগ পায় তাহলে তারা আরো অপরাধে জড়িয়ে পড়তে উৎসাহিত হয়৷ ফলে তারা আরো বড় অপরাধী হয়ে ওঠে৷
এতগুলো মানুষের উপস্থিতিতে এ ঘটনাটি ঘটল, কেউ এগিয়ে গেলো না কেনো? এর উত্তরে তিনি বলেন, ব্যক্তি যখন নিজেকে নিরাপদ মনে করে না তখন সে অন্যের বিপদে সরাসরি এগিয়ে যায় না৷ এখানে ব্যক্তির নিরাপ্তাহীনতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে৷ অপরাধের প্রতিবাদ করলে উল্টো বিপদে পড়তে হয়৷ তাই সবাই নিজে নিরাপদ থাকতে নিজেকে গুটিয়ে রাখছে৷ কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ করে৷ কারণ সেখানে যে কিছুটা নিরাপদ মনে করে৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মো. রেজাউল করিম বলেন, কিছু মানুষ আছে যারা অপরাধ প্রবণ৷ তাদের বলা হয় লাইকলি অফেন্ডার৷ তারা অপরাধের সুযোগ খোঁজে৷ তারা সুইটেবল টার্গেট খোঁজে৷ তারা কখন অপরাধ করলে সেটা এফেকটিভ হবে তা বিবেচনা করে৷ তারা দেখছে অপরাধ করলে তারা পার পাচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নিচ্ছে না৷ আর তৃতীয়ত হলো লিগ্যাল গার্ডিয়ানশিপ৷ মনিটরিং, সার্ভিলেন্স, বিচার এগুলো ঠিক মতো হচ্ছে না৷ অপরাধের ক্ষেত্রে টেকনিক অব নিউট্রালাইজেশন আছে৷ এর পাঁচটি ভাগ আছে৷ ওই পাঁচটি বিষয় দূর করা না গেলে রাষ্ট্র ও সমাজে অপরাধ বাড়ে৷ প্রথম হচ্ছে দায় না নেয়ার সংস্কৃতি৷ সর্বশেষ যে সোহাগ মার্ডার কেউ এর দায় নিতে চাচ্ছে না৷ দ্বিতীয়ত, কেউ স্বীকার করতে চায় না যে তার কারণে এটা হয়েছে৷ কেউ দায় দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারকে৷ আবার কেউ দায় দিচ্ছে রাজনৈতিক দলকে৷ তারা আবার অস্বীকার করছে৷ তৃতীয়ত, ডিনায়েল দ্য ইনজ্যুরি৷ বলা হচ্ছে তার নিজের কারণেই সে হত্যার শিকার হয়েছে৷ সে নিজেও চাঁদাবাজ৷ চতুর্থত, কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে নিয়েও প্রশ্ন করা হয়৷ একটি রাজনৈতিক দল কথা বললে আরেকটি রাজনৈতিক দল তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়৷ বলা হয় আপনি কথা বলার কে? সর্বশেষ, অ্যাপিল টু দ্য হায়ার লয়ালটি৷ তারা ওই নেতৃত্বকে খুশি করতে যেকোনো কাজ করে৷ আর নেতৃত্বও তাকে শেল্টার দেয়৷ এই পাঁচটিই আমাদের এখানে বিদ্যমান৷
অপরাধীদের নৃশংসতা আর সাধারণ মানুষের নিস্ত্রিয়তাই নয়, মানুষ দলবদ্ধ সহিসংতায়ও জড়িয়ে পড়ছে৷ আর এই ধরনের সহিংসতার শিকার হচ্ছেন নারী ও শিশুরাও৷
পুরনো ঢাকার ঘটনার পর ১১ জুলাই খুলনায় বহিষ্কৃত যুবদল নেতা মোল্লা মাহবুবুর রহমানকে হত্যা করা হয় নগরীর দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা পশ্চিম পাড়ায় তার নিজ বাড়ির সামনে গুলি করে৷ কিন্তু এখানেই শেষ নয়৷ তাকে গুলি করার পর তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে কুপিয়ে তার পায়ের রগ কাটা হয় হয় প্রকাশ্যে৷ কিন্তু এখনো পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি৷ কুমিল্লায় তিন জুলাই সকালে মা মেয়ে ও ছেলেকে কুপিয়ে এবং পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷ মোবাইল ফোর চুরির অপবাদ দিয়ে মব তৈরি করে তাদের হত্যা করা হয়৷ ৯ জুলাই চট্টগ্রামে স্ত্রী ফাতেমাকে ১১ টুকরা করে হত্যা করে তার স্বামী সুমন৷ ঢাকার ধামরাইয়ে সৈয়দা শিরিন আক্তার নামে এক নারীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা ৫ এপ্রিল প্রকাশ্যে৷
আইন ও শালিস কেন্দ্রের হিসেবে জানুয়ারি থেকে জুন এই ছয় মাসে সারা দেশে মব ভায়োলেন্স বা গণপিটুনির শিকার হয়ে ৮৯ জন নিহত হয়েছেন৷ তার মধ্যে ঢাকা বিভাগেই নিহত হয়েছেন ৪৫ জন৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌহিদুল হক বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে রাষ্ট্র ও সমাজ যে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে চায় এবং আইনের শাসনের পথে হাঁটতে চায় সেই ব্যবস্থাগুলো আমরা দেখছি না৷ ফলে অপরাধ বেড়েই চলছে৷ বিচার নিশ্চিত না করা গেলে এরকম হবে৷ এর সঙ্গে আছেআইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা, আছে রাজনৈতিক প্রশ্রয়৷ সবমিলিয়ে পরিস্থিতি এমন হচ্ছে৷ আর এখানে এখন প্রতিবাদ করলে মানুষ নিগ্রহের শিকার হয়, তার নিরপত্তা নাই৷ এই কারণে কোনো মানুষ স্বেচ্ছায় মামলার সাক্ষীও হতে চায়না৷ একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে, যা অপরাধীদের উৎসাহিত করছে৷ তারা আরো নৃশংস হচ্ছে৷
তিনি বলেন, এর ফলে সমাজে বিচ্ছিন্নতা তৈরি হচ্ছে৷ মানুষ মনে করছে নিজেকে গুটিয়ে রাখলে, প্রতিবাদ না করলে, অন্যের বিপদ দেখলে নিজে ঘরে ঢুকে গেলে সে নিরাপদ থাকবে৷ কিন্তু বাস্তবে সে এতে আরো অনিরাপদ হয়ে পড়বে৷
সাবেক আইজি মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, সাধারণভাবে বলা যায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা এবং অপরাধীরা রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে আশ্রয় পাওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে৷
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর ডয়চে ভেলেকে বলেন, একথা অনস্বীকার্য যে, ৫ আগস্টের পরে আমরা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছি৷ আমাদের প্রচেষ্টা ছিল জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণে দ্রুততম সময়ে সাহস ও মনোবল অটুট রেখে পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করা৷ প্রাথমিক ধাক্কা বা সংকট অনেকটাই কাটিয়ে উঠে পুলিশ এখন অনেক আত্মবিশ্বাসী৷ পুলিশ সারাদেশেই অপরাধ প্রতিরোধে তৎপর আছে৷ অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে৷ সাম্প্রতিক সময়ে কার্যক্রম আরো জোরদার করেছে৷
অন্যদিকে, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে সোমবার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চলতি বছর দেশে অপরাধের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন খবর সঠিক নয়৷ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সরকারি অপরাধ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে করে দেখা গেছে চলতি বছর বড় ধরনের অপরাধের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়েনি৷
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ মাসে বড় ধরনের অপরাধের প্রবণতা স্থিতিশীল রয়েছে৷ বেশিরভাগ গুরুতর অপরাধের হার কমছে বা একই পর্যায়ে রয়েছে৷ তবে কিছু নির্দিষ্ট অপরাধের ক্ষেত্রে সামান্য বৃদ্ধির প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে৷
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, মব ভায়োলেন্স ও চাঁদাবাজি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একইসঙ্গে মাদককারবারিদের ধরে আইনের আওতায় আনা হবে।
৪ ঘণ্টা আগেজুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আবু সাঈদ, মীর মুগ্ধ ও ওয়াসিমসহ অন্যান্য শহীদদের কেন জাতীয় বীর ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। সোমবার (১৪ জুলাই) বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
৬ ঘণ্টা আগেউচ্চশিক্ষার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান এম কে খায়রুল বাশারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সোমবার দুপুর ১টার দিকে তাকে ঢাকার ধানমন্ডি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ।
৭ ঘণ্টা আগেবিবৃতিতে আরো বলা হয়, পরিসংখ্যানে বড় ধরনের অপরাধের দ্রুত বাড়ার কোনো লক্ষণ নেই। বাস্তবে বেশিরভাগ গুরুতর অপরাধের হার কমছে বা একই পর্যায়ে রয়েছে। তবে কিছু নির্দিষ্ট অপরাধের ক্ষেত্রে সামান্য বৃদ্ধির প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।
৯ ঘণ্টা আগে