
নাজমুল ইসলাম হৃদয়

শাহবাগ মোড় থেকে শিক্ষা ভবন— রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মুখরিত স্লোগান আর পালটা স্লোগানে। ২০১৭ সালে শিক্ষার মানোন্নয়নের যে স্বপ্ন নিয়ে ঢাকার সাতটি বড় সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল, ২০২৫ সালে এসে তা এক ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। রাজপথে দাঁড়িয়ে পাঁচটি ভিন্ন পক্ষ একে অন্যের মুখোমুখি। তাদের দাবিগুলো এতটাই পরস্পরবিরোধী যে আপাতদৃষ্টিতে কোনো সহজ সমাধান চোখে পড়ছে না।
সাত কলেজ নিয়ে দীর্ঘ দিনের সংকটের সূচনা ২০১৭ সালে। ওই বছর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত করা হয়।
‘মানোন্নয়নে’র লক্ষ্য নিয়ে এ কাজ করা হলেও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সাতটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজকে এভাবে ঢাবির অধিভুক্ত করা ছিল ‘অপরিকল্পিত’। এ কারণে গত সাত বছরে নিয়মিত ক্লাস না হওয়া, সিলেবাস জটিলতা, মাসের পর মাস ফল আটকে থাকা, গণহারে ফেল— এমন নানা সংকট আর ভোগান্তি সঙ্গী হয়েছে তাদের। ঢাবির অধিভুক্ত থেকে মুক্ত হওয়ার জন্যও শুরু হয় আন্দোলন।
শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ আন্দোলনের মুখে গত ১২ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়, এই সাত কলেজকে নিয়ে একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ গঠন করা হবে। এতেও সমস্যার সমাধান না হয়ে বরং নতুন সংকটের জন্ম নেয়। প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো হিসেবে যখন ‘স্কুলিং মডেল’ (যেখানে বিভাগগুলোকে বিভিন্ন স্কুলের অধীনে আনা হয় ও কলেজ কাঠামো বিলুপ্ত হয়) সম্বলিত খসড়া অধ্যাদেশ সামনে আসে, তখনই কলেজগুলোর উচ্চ মাধ্যমিক স্তর, শিক্ষকদের ক্যাডার স্ট্যাটাস ও কলেজগুলোর স্বাতন্ত্র্য ইস্যুতে দেখা দেয় নতুন মতবিভেদ।
সাতটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ইস্যুটি এখন বহুমুখী সমস্যার জন্ম দিয়েছে। ঢাবির অধিভুক্ত করার পর ঢাবি ও সাত কলেজ ছিল দুটি পক্ষ। ঢাবির অধিভুক্তি থেকে বের হয়ে যখন এগুলো নিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়টি সামনে এলো, তখন যেন সংকট ডালপালা মেলেছে। এখন এই সাত কলেজ ঘিরে তৈরি হয়েছে পাঁচটি পক্ষ, যারা নিজ নিজ অবস্থানে অনড়।
এ পক্ষটি মূলত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী, যারা ঢাবির অধিভুক্ত ব্যবস্থায় চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাদের দাবি, অবিলম্বে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করা হোক।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) শিক্ষা ভবন ঘেরাও করে আন্দোলনে নেমেছিলেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। সেখানে আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজনীতি ডটকমকে হতাশার কথা জানিয়ে বলেন, ‘আগস্ট মাসে আমাদের ভর্তি পরীক্ষা হয়েছে, এখন ডিসেম্বর। চার মাস শেষ, কিন্তু আমরা ক্লাসে ঢুকতে পারছি না। তার মানে আমাদের এক সেমিস্টার লস।’
ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘চাকরির পরীক্ষায় কিন্তু আমরা ছয় মাস পিছিয়ে গেলাম, ওদিকে বয়স বেড়ে যাচ্ছে। এখন অধ্যাদেশ ছাড়া আমরা ক্লাসে ফিরব না। কারণ অধ্যাদেশ ছাড়া সুষ্ঠু গবেষণামূলক ক্লাস সম্ভব নয়।’ তাদের কাছে এটি অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে।
ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধীন সাত কলেজের মধ্যে ঢাকা কলেজ, বাঙলা কলেজ, কবি নজরুল, সোহরাওয়ার্দী ও বদরুন্নেসা— এই পাঁচটি কলেজে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রির পাশাপাশি উচ্চ মাধ্যমিক ডিগ্রিও চালু রয়েছে। এই পাঁচ কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থদের দাবি, ‘স্কুলিং মডেল’ বাতিল করে কলেজে এইচএসসি বহাল রাখতে হবে।
উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় বন্ধের প্রতিবাদ জানিয়ে ঢাকা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে গেলে ইন্টারমিডিয়েট সেকশন তুলে দেওয়া হবে। ঢাকা কলেজ বা বদরুন্নেসার মতো ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান থেকে এইচএসসি উঠে গেলে সাধারণ মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়ার সুযোগ সংকুচিত হবে।’
সাত কলেজ ঘিরে সৃষ্ট বিরোধের একটি বড় অংশে রয়েছেন শিক্ষকরা। এতদিন তারা বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত ছিলেন। স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হওয়ার পর তাদের চাকরির পদক্রম ও মর্যাদা কী হবে, সে বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকরা শঙ্কা ও সংশয়ের মধ্যে রয়েছেন।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সাবেক মহাসচিব ও ইডেন মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যাপক মো. মাসুমে রাব্বানি খান মনে করছেন, সাত কলেজকে নিয়ে ‘স্কুলিং মডেলে’ বিশ্ববিদ্যালয় করলে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের ‘গ্ল্যামার’ ও ‘অস্তিত্ব’ বিলীন হয়ে যাবে।
অধ্যাপক রাব্বানী রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘আমরা যখন এ ক্যাডারে জয়েন করেছিলাম, তখন শিক্ষকতার মতো মহৎ পেশাকে ব্রত হিসেবে নেওয়ার পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেখে আগ্রহী হয়েছিলাম। কলেজগুলো যদি বিলীন করে ফ্যাকাল্টিতে পরিণত করা হয়, তবে ক্যাডারের ঐতিহ্যও নষ্ট হয়ে যাবে।’
অধ্যাপক রাব্বানি আরও সতর্ক করেন, ঢাকায় সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির এ উদ্যোগ সফল হলে ভবিষ্যতে টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, রাজশাহী বা সিলেটের বড় কলেজগুলো নিয়েও ‘সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’র দাবি উঠতে পারে। এ অবস্থায় শিক্ষা ক্যাডার একটি ‘মৃত ক্যাডারে’ পরিণত হবে এবং দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ভার্টিক্যাল ও হরাইজন্টাল মোবিলিটি নষ্ট হয়ে যাবে বলেও আশঙ্কা তার।
সাত কলেজের মধ্যে আলাদা করে নারী শিক্ষার এই বৃহত্তম প্রতিষ্ঠানটি এখন দ্বিধাবিভক্ত ভিন্ন ধরনের সমস্যায়। শিক্ষকদের একাংশ ও রক্ষণশীল পক্ষের দাবি, ইডেনকে কো-এডুকেশন বা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিলে নারী শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হবে।
অধ্যাপক মাসুমে রাব্বানি বলেন, ‘বহু অভিভাবক আছেন যারা তাদের মেয়েদের কো-এডুকেশনে পড়াতে চান না। ইডেন কলেজ আছে বলেই তারা মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় দেন। বিশ্ববিদ্যালয় হলে নারী শিক্ষা সংকুচিত হবে।’
যদিও রোববার শিক্ষা ভবনের সামনে আন্দোলনরত ইডেন কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী রাজনীতি ডটকমকে বলেছেন, কো-এডুকেশন নিয়ে জটিলতার যে কথা বলা হচ্ছে, তার সঙ্গে তারা একমত নন। নাম প্রকাশ না করে ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘ছাত্রী সংস্থা বা অন্যরা নারী শিক্ষা সংকোচন ও পর্দার দোহাই দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের ক্লাস তো ছেলে শিক্ষকরাই নেন, ক্যানটিনেও পুরুষরাই কাজ করেন। কর্মক্ষেত্রেও আমাদের পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। আমার পর্দা আমার কাছে। পর্দা ইস্যু করে ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি অযৌক্তিক।’
এদিকে সব তর্ক-বিতর্কের ঊর্ধ্বে গিয়ে নিজেদের স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন দেখছে তিতুমীর কলেজের একাংশ। বড় ক্যাম্পাস আর শিক্ষার্থীদের সংখ্যায় আধিক্যের কারণে কারণে তাদের একাংশ মনে করছে, অন্য কলেজগুলোর দায়ভার না নিয়ে তিতুমীর নিজেই একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে। তারা ‘স্কুলিং মডেল’ বা একীভূত হওয়া— কোনোটিরই পক্ষ না নিয়ে বরং দুই পন্থার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নিজেদের দাবি নিয়েই বেশি আগ্রহী।
সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার পর থেকেই নানা সময়ে রাজপথে নেমেছেন এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা। সবশেষ ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি ঘোষণা আসার পরও এর অধ্যাদেশ ও বাস্তবায়নের দাবিতে দফায় দফায় রাজপথে নেমেছেন তারা।
এবার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো থেকে ‘স্কুলিং মডেল’ বাদ দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় অন্তর্ভুক্ত রাখার দাবিতে রাজপথে নেমেছেন উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে বাকি শিক্ষার্থীরাও দ্রুত অধ্যাদেশের দাবিতে শিক্ষা ভবন ঘেরাও করেন।
রোববার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তিতুমীর ও ইডেন বাদে বাকি পাঁচ কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এর আগে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকা ও বাকিরা নিজ নিজ ক্যাম্পাস থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগে জড়ো হন।
শিক্ষার্থীরা সুস্পষ্টভাবে বলছেন, প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্কুলিং মডেল’ বা স্কুলিং কাঠামো বাতিল করতে হবে। কারণ এই মডেলে কলেজগুলোর উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগ রাখার কোনো বিধান খসড়া অধ্যাদেশে নেই, যা তাদের অস্তিত্বের সংকট তৈরি করেছে।
অন্যদিকে সাত কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীরা ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাদেশ দ্রুত জারির দাবিতে শিক্ষা ভবন ঘেরাও করেন। তারা সচিবালয় অভিমুখে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। এই শিক্ষার্থীদের দাবি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তাদের বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের প্রক্রিয়া আটকে রাখা হয়েছে।
সাত কলেজ তথা নতুন ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি ঘিরে চলমান পরিস্থিতিতে নানা পক্ষের অবস্থান সংকটকেই দীর্ঘায়িত করছে। শিক্ষর্থীদের সেশনজট ও বাস্তবতার নিরিখে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের দাবি মানবিক ও যৌক্তিক। চার মাসেও ক্লাস শুরু না হওয়া বা ২০২৪-২৫ সেশনের ভর্তি স্থবির হয়ে থাকার বিষয়গুলো তাদের শিক্ষাজীবন প্রলম্বিত করার পাশাপাশি কর্মজীবনের প্রবেশের পথেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
অধ্যাপক রাব্বানি পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন, বর্তমানে সাত কলেজে অধ্যায়ন করছেন প্রায় দেড় লাখ শিক্ষার্থী। অথচ নতুন বিশ্ববিদ্যালয় মডেলে মাত্র ১০ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘বাকি শিক্ষার্থীরা কোথায় যাবে? তাদের কি উচ্চ মূল্যে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা কিনতে হবে?’
ইডেন কলেজের এক শিক্ষার্থী আবার এ আন্দোলনের পেছনে ‘ইন্ধনে’র কথা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষকরা অনেক শিক্ষার্থীদের জোর করে মানববন্ধনে নামাচ্ছেন। বলা হচ্ছে, স্বাতন্ত্র্য রক্ষার আন্দোলনে না নামলে হলের সিট বাতিল করে দেওয়া হবে, ইনকোর্সে মার্ক কম দেওয়া হবে।’
শিক্ষকদের সরকারি চাকরি ও ক্যাডার মর্যাদা ছেড়ে অনিশ্চিত বিশ্ববিদ্যালয় কাঠামোর অধীনে যাওয়াকে পেশাগত ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন। এ ছাড়া জেলা পর্যায়ে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা।
চলমান এ পরিস্থিতিতে ২০২৪-২৫ সেশনের ১১ হাজার শিক্ষার্থীর জীবন থেকে এরই মধ্যে ছয় মাস হারিয়ে গেছে। চাকরির বাজারে তারা পিছিয়ে পড়ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে বেকারত্ব বাড়াতে পরে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না। এক পক্ষের দাবি মানলে অন্য পক্ষ রাজপথে নামছে। ফলে কোনো অধ্যাদেশই চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না।
সাত কলেজ নিয়ে জটিল এই জট খুলতে ‘একতরফা’ কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা আত্মঘাতী হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা গোটা বিষয়টিকে নতুনভাবে বিশ্লেষণ করে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের কথা মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিতে বলছেন প্রশাসনকে।
অধ্যাপক মাসুমে রাব্বানির এ ক্ষেত্রে অ্যাফিলিয়েটিং’ বা ‘ফেডারেল ইউনিভার্সিটি’ মডেলের কথা বলছেন সমাধান হিসেবে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় বা লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “দিল্লি ইউনিভার্সিটির অধীনে ৭৭টি কলেজ আছে, যাদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখেও তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ। একইভাবে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’কেও একটি অ্যাফিলিয়েটিং বিশ্ববিদ্যালয় করা হোক, যেখানে সাতটি কলেজ তাদের নিজস্ব ক্যাম্পাসে, নিজস্ব নামে ও কাঠামোতে চলবে। কিন্তু তাদের পরীক্ষা, কারিকুলাম ও ডিগ্রি নিয়ন্ত্রণ করবে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এতে কলেজের এইচএসসিও থাকবে, আবার শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিও পাবে।’
শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষায় তাদের জন্য ‘দ্বিবিধ’ ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যাপক মাসুমে রাব্বানীসহ অন্যরা। তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় হলেও বর্তমান শিক্ষকদের প্রেষণে থাকার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। শিক্ষকদের যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোতে যেতে চান না, তাদের অন্য সরকারি কলেজে বদলির সুযোগ রাখতে হবে। এতে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বাধা কমে আসবে।

শাহবাগ মোড় থেকে শিক্ষা ভবন— রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মুখরিত স্লোগান আর পালটা স্লোগানে। ২০১৭ সালে শিক্ষার মানোন্নয়নের যে স্বপ্ন নিয়ে ঢাকার সাতটি বড় সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল, ২০২৫ সালে এসে তা এক ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। রাজপথে দাঁড়িয়ে পাঁচটি ভিন্ন পক্ষ একে অন্যের মুখোমুখি। তাদের দাবিগুলো এতটাই পরস্পরবিরোধী যে আপাতদৃষ্টিতে কোনো সহজ সমাধান চোখে পড়ছে না।
সাত কলেজ নিয়ে দীর্ঘ দিনের সংকটের সূচনা ২০১৭ সালে। ওই বছর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত করা হয়।
‘মানোন্নয়নে’র লক্ষ্য নিয়ে এ কাজ করা হলেও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সাতটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজকে এভাবে ঢাবির অধিভুক্ত করা ছিল ‘অপরিকল্পিত’। এ কারণে গত সাত বছরে নিয়মিত ক্লাস না হওয়া, সিলেবাস জটিলতা, মাসের পর মাস ফল আটকে থাকা, গণহারে ফেল— এমন নানা সংকট আর ভোগান্তি সঙ্গী হয়েছে তাদের। ঢাবির অধিভুক্ত থেকে মুক্ত হওয়ার জন্যও শুরু হয় আন্দোলন।
শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ আন্দোলনের মুখে গত ১২ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়, এই সাত কলেজকে নিয়ে একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ গঠন করা হবে। এতেও সমস্যার সমাধান না হয়ে বরং নতুন সংকটের জন্ম নেয়। প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো হিসেবে যখন ‘স্কুলিং মডেল’ (যেখানে বিভাগগুলোকে বিভিন্ন স্কুলের অধীনে আনা হয় ও কলেজ কাঠামো বিলুপ্ত হয়) সম্বলিত খসড়া অধ্যাদেশ সামনে আসে, তখনই কলেজগুলোর উচ্চ মাধ্যমিক স্তর, শিক্ষকদের ক্যাডার স্ট্যাটাস ও কলেজগুলোর স্বাতন্ত্র্য ইস্যুতে দেখা দেয় নতুন মতবিভেদ।
সাতটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ইস্যুটি এখন বহুমুখী সমস্যার জন্ম দিয়েছে। ঢাবির অধিভুক্ত করার পর ঢাবি ও সাত কলেজ ছিল দুটি পক্ষ। ঢাবির অধিভুক্তি থেকে বের হয়ে যখন এগুলো নিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়টি সামনে এলো, তখন যেন সংকট ডালপালা মেলেছে। এখন এই সাত কলেজ ঘিরে তৈরি হয়েছে পাঁচটি পক্ষ, যারা নিজ নিজ অবস্থানে অনড়।
এ পক্ষটি মূলত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী, যারা ঢাবির অধিভুক্ত ব্যবস্থায় চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাদের দাবি, অবিলম্বে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করা হোক।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) শিক্ষা ভবন ঘেরাও করে আন্দোলনে নেমেছিলেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। সেখানে আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজনীতি ডটকমকে হতাশার কথা জানিয়ে বলেন, ‘আগস্ট মাসে আমাদের ভর্তি পরীক্ষা হয়েছে, এখন ডিসেম্বর। চার মাস শেষ, কিন্তু আমরা ক্লাসে ঢুকতে পারছি না। তার মানে আমাদের এক সেমিস্টার লস।’
ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘চাকরির পরীক্ষায় কিন্তু আমরা ছয় মাস পিছিয়ে গেলাম, ওদিকে বয়স বেড়ে যাচ্ছে। এখন অধ্যাদেশ ছাড়া আমরা ক্লাসে ফিরব না। কারণ অধ্যাদেশ ছাড়া সুষ্ঠু গবেষণামূলক ক্লাস সম্ভব নয়।’ তাদের কাছে এটি অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে।
ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধীন সাত কলেজের মধ্যে ঢাকা কলেজ, বাঙলা কলেজ, কবি নজরুল, সোহরাওয়ার্দী ও বদরুন্নেসা— এই পাঁচটি কলেজে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রির পাশাপাশি উচ্চ মাধ্যমিক ডিগ্রিও চালু রয়েছে। এই পাঁচ কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থদের দাবি, ‘স্কুলিং মডেল’ বাতিল করে কলেজে এইচএসসি বহাল রাখতে হবে।
উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় বন্ধের প্রতিবাদ জানিয়ে ঢাকা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে গেলে ইন্টারমিডিয়েট সেকশন তুলে দেওয়া হবে। ঢাকা কলেজ বা বদরুন্নেসার মতো ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান থেকে এইচএসসি উঠে গেলে সাধারণ মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়ার সুযোগ সংকুচিত হবে।’
সাত কলেজ ঘিরে সৃষ্ট বিরোধের একটি বড় অংশে রয়েছেন শিক্ষকরা। এতদিন তারা বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত ছিলেন। স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হওয়ার পর তাদের চাকরির পদক্রম ও মর্যাদা কী হবে, সে বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকরা শঙ্কা ও সংশয়ের মধ্যে রয়েছেন।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সাবেক মহাসচিব ও ইডেন মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যাপক মো. মাসুমে রাব্বানি খান মনে করছেন, সাত কলেজকে নিয়ে ‘স্কুলিং মডেলে’ বিশ্ববিদ্যালয় করলে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের ‘গ্ল্যামার’ ও ‘অস্তিত্ব’ বিলীন হয়ে যাবে।
অধ্যাপক রাব্বানী রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘আমরা যখন এ ক্যাডারে জয়েন করেছিলাম, তখন শিক্ষকতার মতো মহৎ পেশাকে ব্রত হিসেবে নেওয়ার পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেখে আগ্রহী হয়েছিলাম। কলেজগুলো যদি বিলীন করে ফ্যাকাল্টিতে পরিণত করা হয়, তবে ক্যাডারের ঐতিহ্যও নষ্ট হয়ে যাবে।’
অধ্যাপক রাব্বানি আরও সতর্ক করেন, ঢাকায় সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির এ উদ্যোগ সফল হলে ভবিষ্যতে টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, রাজশাহী বা সিলেটের বড় কলেজগুলো নিয়েও ‘সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’র দাবি উঠতে পারে। এ অবস্থায় শিক্ষা ক্যাডার একটি ‘মৃত ক্যাডারে’ পরিণত হবে এবং দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ভার্টিক্যাল ও হরাইজন্টাল মোবিলিটি নষ্ট হয়ে যাবে বলেও আশঙ্কা তার।
সাত কলেজের মধ্যে আলাদা করে নারী শিক্ষার এই বৃহত্তম প্রতিষ্ঠানটি এখন দ্বিধাবিভক্ত ভিন্ন ধরনের সমস্যায়। শিক্ষকদের একাংশ ও রক্ষণশীল পক্ষের দাবি, ইডেনকে কো-এডুকেশন বা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিলে নারী শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হবে।
অধ্যাপক মাসুমে রাব্বানি বলেন, ‘বহু অভিভাবক আছেন যারা তাদের মেয়েদের কো-এডুকেশনে পড়াতে চান না। ইডেন কলেজ আছে বলেই তারা মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় দেন। বিশ্ববিদ্যালয় হলে নারী শিক্ষা সংকুচিত হবে।’
যদিও রোববার শিক্ষা ভবনের সামনে আন্দোলনরত ইডেন কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী রাজনীতি ডটকমকে বলেছেন, কো-এডুকেশন নিয়ে জটিলতার যে কথা বলা হচ্ছে, তার সঙ্গে তারা একমত নন। নাম প্রকাশ না করে ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘ছাত্রী সংস্থা বা অন্যরা নারী শিক্ষা সংকোচন ও পর্দার দোহাই দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের ক্লাস তো ছেলে শিক্ষকরাই নেন, ক্যানটিনেও পুরুষরাই কাজ করেন। কর্মক্ষেত্রেও আমাদের পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। আমার পর্দা আমার কাছে। পর্দা ইস্যু করে ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি অযৌক্তিক।’
এদিকে সব তর্ক-বিতর্কের ঊর্ধ্বে গিয়ে নিজেদের স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন দেখছে তিতুমীর কলেজের একাংশ। বড় ক্যাম্পাস আর শিক্ষার্থীদের সংখ্যায় আধিক্যের কারণে কারণে তাদের একাংশ মনে করছে, অন্য কলেজগুলোর দায়ভার না নিয়ে তিতুমীর নিজেই একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে। তারা ‘স্কুলিং মডেল’ বা একীভূত হওয়া— কোনোটিরই পক্ষ না নিয়ে বরং দুই পন্থার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নিজেদের দাবি নিয়েই বেশি আগ্রহী।
সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার পর থেকেই নানা সময়ে রাজপথে নেমেছেন এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা। সবশেষ ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি ঘোষণা আসার পরও এর অধ্যাদেশ ও বাস্তবায়নের দাবিতে দফায় দফায় রাজপথে নেমেছেন তারা।
এবার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো থেকে ‘স্কুলিং মডেল’ বাদ দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় অন্তর্ভুক্ত রাখার দাবিতে রাজপথে নেমেছেন উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে বাকি শিক্ষার্থীরাও দ্রুত অধ্যাদেশের দাবিতে শিক্ষা ভবন ঘেরাও করেন।
রোববার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তিতুমীর ও ইডেন বাদে বাকি পাঁচ কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এর আগে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকা ও বাকিরা নিজ নিজ ক্যাম্পাস থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগে জড়ো হন।
শিক্ষার্থীরা সুস্পষ্টভাবে বলছেন, প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্কুলিং মডেল’ বা স্কুলিং কাঠামো বাতিল করতে হবে। কারণ এই মডেলে কলেজগুলোর উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগ রাখার কোনো বিধান খসড়া অধ্যাদেশে নেই, যা তাদের অস্তিত্বের সংকট তৈরি করেছে।
অন্যদিকে সাত কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীরা ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাদেশ দ্রুত জারির দাবিতে শিক্ষা ভবন ঘেরাও করেন। তারা সচিবালয় অভিমুখে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। এই শিক্ষার্থীদের দাবি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তাদের বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের প্রক্রিয়া আটকে রাখা হয়েছে।
সাত কলেজ তথা নতুন ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি ঘিরে চলমান পরিস্থিতিতে নানা পক্ষের অবস্থান সংকটকেই দীর্ঘায়িত করছে। শিক্ষর্থীদের সেশনজট ও বাস্তবতার নিরিখে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের দাবি মানবিক ও যৌক্তিক। চার মাসেও ক্লাস শুরু না হওয়া বা ২০২৪-২৫ সেশনের ভর্তি স্থবির হয়ে থাকার বিষয়গুলো তাদের শিক্ষাজীবন প্রলম্বিত করার পাশাপাশি কর্মজীবনের প্রবেশের পথেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
অধ্যাপক রাব্বানি পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন, বর্তমানে সাত কলেজে অধ্যায়ন করছেন প্রায় দেড় লাখ শিক্ষার্থী। অথচ নতুন বিশ্ববিদ্যালয় মডেলে মাত্র ১০ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘বাকি শিক্ষার্থীরা কোথায় যাবে? তাদের কি উচ্চ মূল্যে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা কিনতে হবে?’
ইডেন কলেজের এক শিক্ষার্থী আবার এ আন্দোলনের পেছনে ‘ইন্ধনে’র কথা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষকরা অনেক শিক্ষার্থীদের জোর করে মানববন্ধনে নামাচ্ছেন। বলা হচ্ছে, স্বাতন্ত্র্য রক্ষার আন্দোলনে না নামলে হলের সিট বাতিল করে দেওয়া হবে, ইনকোর্সে মার্ক কম দেওয়া হবে।’
শিক্ষকদের সরকারি চাকরি ও ক্যাডার মর্যাদা ছেড়ে অনিশ্চিত বিশ্ববিদ্যালয় কাঠামোর অধীনে যাওয়াকে পেশাগত ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন। এ ছাড়া জেলা পর্যায়ে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা।
চলমান এ পরিস্থিতিতে ২০২৪-২৫ সেশনের ১১ হাজার শিক্ষার্থীর জীবন থেকে এরই মধ্যে ছয় মাস হারিয়ে গেছে। চাকরির বাজারে তারা পিছিয়ে পড়ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে বেকারত্ব বাড়াতে পরে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না। এক পক্ষের দাবি মানলে অন্য পক্ষ রাজপথে নামছে। ফলে কোনো অধ্যাদেশই চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না।
সাত কলেজ নিয়ে জটিল এই জট খুলতে ‘একতরফা’ কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা আত্মঘাতী হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা গোটা বিষয়টিকে নতুনভাবে বিশ্লেষণ করে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের কথা মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিতে বলছেন প্রশাসনকে।
অধ্যাপক মাসুমে রাব্বানির এ ক্ষেত্রে অ্যাফিলিয়েটিং’ বা ‘ফেডারেল ইউনিভার্সিটি’ মডেলের কথা বলছেন সমাধান হিসেবে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় বা লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “দিল্লি ইউনিভার্সিটির অধীনে ৭৭টি কলেজ আছে, যাদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখেও তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ। একইভাবে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’কেও একটি অ্যাফিলিয়েটিং বিশ্ববিদ্যালয় করা হোক, যেখানে সাতটি কলেজ তাদের নিজস্ব ক্যাম্পাসে, নিজস্ব নামে ও কাঠামোতে চলবে। কিন্তু তাদের পরীক্ষা, কারিকুলাম ও ডিগ্রি নিয়ন্ত্রণ করবে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এতে কলেজের এইচএসসিও থাকবে, আবার শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিও পাবে।’
শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষায় তাদের জন্য ‘দ্বিবিধ’ ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যাপক মাসুমে রাব্বানীসহ অন্যরা। তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় হলেও বর্তমান শিক্ষকদের প্রেষণে থাকার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। শিক্ষকদের যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোতে যেতে চান না, তাদের অন্য সরকারি কলেজে বদলির সুযোগ রাখতে হবে। এতে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বাধা কমে আসবে।

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে সুনামগঞ্জ-২ আসনের জামায়াতে ইসলামী মনোনীত এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনিরের বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে মামলা হয়েছে। রোববার (৭ ডিসেম্বর) ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলামের আদালতে রিদওয়ান হোসেন রবিন নামে এক আইনজীবী বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। অভিযো
১৭ ঘণ্টা আগে
এ সময় তিনি বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চরম অবহেলার সঙ্গে এই দায়সারা সমাবর্তন আয়োজন করতে যাচ্ছে। সমাবর্তনপ্রত্যাশীরা যে ৩ দফা দাবি জানিয়েছে তার প্রতি সংহতি জানাচ্ছি। আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দাবিগুলো ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করবে।
১৭ ঘণ্টা আগে
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলের অন্য দুই বিচারক ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
১৮ ঘণ্টা আগে
জাতীয় নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে নৌবাহিনী প্রধান বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য পাঁচ হাজার নৌ সদস্যকে প্রস্তুত করা হয়েছে।’
১৯ ঘণ্টা আগে