জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
জ্বর হলে শরীর ঠান্ডা রাখাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতীকী ছবি

শরীর গরম হয়ে উঠছে, কপাল জ্বলছে, গায়ে কাঁপুনি। চোখে-মুখে ক্লান্তির ছাপ। এমন সময়েই বুঝতে হয়— জ্বর এসেছে।

আমাদের দেশে জ্বর খুব পরিচিত একটি অসুস্থতা। আবহাওয়ার বদল, ভাইরাস সংক্রমণ, ক্লান্তি, ঘুমের অভাব— যেকোনো কিছু থেকেই জ্বর আসতে পারে। আর একবার জ্বর এলে শরীর যেন সব শক্তি হারিয়ে ফেলে। কিন্তু সবসময় তো হাসপাতালে দৌড়ানো সম্ভব হয় না। তাই অনেক সময় ঘরোয়া উপায়েই জ্বর কমানোর চেষ্টা করা হয়।

জ্বর আসলে শরীরের এক প্রতিক্রিয়া। যখন শরীরে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া ঢুকে পড়ে, তখন আমাদের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যেন জীবাণুগুলো মরে যায় বা দুর্বল হয়। মানে জ্বর একদিক থেকে আমাদের বন্ধু। কিন্তু সেই জ্বর যদি অনেকক্ষণ থাকে, যদি খুব বেশি তাপমাত্রা ওঠে, তখন সেটাই বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। তখন তা কমানো দরকার। আর এই কমানোর কাজটি অনেক সময় ঘরে বসেই করা সম্ভব।

প্রথম কাজই হলো শরীরকে ঠান্ডা রাখা। যেকোনো জ্বরের সময় শরীরের তাপমাত্রা কমাতে চাইলে সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে ভেজা কাপড় বা স্পঞ্জ ব্যবহার করা। পরিষ্কার এক টুকরো কাপড় হালকা গরম বা স্বাভাবিক পানিতে ভিজিয়ে শরীর মুছে দিতে হয়। কপাল, গলা, বগল আর হাত-পা— এই জায়গাগুলোতে স্পঞ্জ করলে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমে আসে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান মায়ো ক্লিনিক তাদের ওয়েবসাইটে বলছে, বাচ্চাদের জ্বর কমাতে কোল্ড স্পঞ্জিং বেশ কার্যকর। তবে খুব ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা যাবে না, হালকা গরম পানিই বেশি উপকারী।

অনেক সময় দেখা যায়, জ্বর এলে খাওয়ার ইচ্ছা একেবারে মরে যায়। কিন্তু শরীরকে লড়াই করতে হলে শক্তি দরকার। তাই এ সময় হালকা, সহজপাচ্য খাবার খাওয়া দরকার।

গরম ভাতের সঙ্গে পাতলা ডাল, স্যুপ, ভাতের মাড়, খিচুড়ি, অথবা সুজি— এসব খেলে শরীরে পানি ও পুষ্টি দুটোই থাকে। সঙ্গে চাই পর্যাপ্ত পানি। কারণ জ্বর এলে ঘাম হয়। ফলে শরীর থেকে প্রচুর পানি বেরিয়ে যায়। এই পানি পূরণ না করলে শরীর আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। পানির পাশাপাশি ফলের রস, ডাবের পানি, লেবুর শরবত— এসবও জ্বরের সময় খুব উপকারী।

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস বা এনএইচএস বলছে, জ্বরের সময় শরীর ডিহাইড্রেট (পানিশূন্য) হয়ে পড়ে। তাই বারবার অল্প অল্প করে তরল গ্রহণ করাই সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা।

আরও একটি ঘরোয়া পদ্ধতি হলো আদা ও তুলসী পাতা দিয়ে তৈরি গরম পানীয়। এক কাপ গরম পানিতে কয়েকটি তুলসী পাতা আর একটু আদা সেদ্ধ করে খেলে শরীর কিছুটা গরম হয়। এই পানীয় জীবাণু প্রতিরোধেও কাজ করে।

ভারতের আয়ুর্বেদ চিকিৎসক ড. অনুরাগ ভার্মা বলেন, তুলসী ও আদা— এই দুটি উপাদানে প্রাকৃতিক অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ থাকে, যা ভাইরাসজনিত জ্বরের উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে।

জ্বর হলে বিশ্রামও খুব জরুরি। অনেকেই মনে করেন, ঘাম ঝরিয়ে জ্বর কমাতে হবে। কিন্তু শরীর তখন দুর্বল থাকে। তাই এ সময়ে বেশি চলাফেরা বা কাজ করলে উলটো বিপদ হতে পারে। আর জ্বরের সঙ্গে যদি মাথাব্যথা বা চোখে ব্যথা থাকে, তবে আলো কম, নীরব ঘর সবচেয়ে আরামদায়ক হয়।

আরও একটি উপকারী ঘরোয়া উপায় হলো গরম পানিতে ভাপ নেওয়া। বিশেষ করে যদি ঠান্ডাজনিত জ্বর হয়, সঙ্গে কাশি বা নাক বন্ধ থাকে, তাহলে ভাপ নেওয়া অনেকটা আরাম দেয়।

এক বাটি গরম পানিতে সামান্য ইউক্যালিপটাস তেল দিলে আরও ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে এই ভাপ নিতে গিয়ে যেন কেউ গরম পানিতে মুখ না পুড়িয়ে ফেলে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হয়।

অনেকে আবার ঘরোয়া পথ্য হিসেবে কাঁচা হলুদ বা মধু খাওয়ার পরামর্শ দেন। এসব পদ্ধতি নিয়ে মতভেদ আছে, তবে অনেকেই এতে আরাম পান। জার্মানির ইউনিভার্সিটি অব ফ্রাইবুর্গ-এর গবেষক ড. ইয়োহানেস হ্যামার বলেন, জ্বরের সময় কিছু প্রাকৃতিক উপাদান যেমন— মধু, আদা বা হলুদ শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তবে এগুলো কোনো ম্যাজিক নয়, বরং সহায়ক মাত্র।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো জ্বরের ধরন বোঝা। যদি হালকা জ্বর হয়, গলা ব্যথা বা হালকা কাশি ছাড়া বড় সমস্যা না থাকে, তাহলে ঘরোয়া চিকিৎসায় ভালো হওয়া যায়। কিন্তু যদি তাপমাত্রা ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হয়, যদি শ্বাসকষ্ট হয়, যদি তিন দিনেও জ্বর না কমে, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যাওয়া দরকার।

শিশুদের ক্ষেত্রে আরও বেশি সাবধানতা দরকার। শিশুদের শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত ওঠানামা করে। তারা কথা বলেও বোঝাতে পারে না। তাই শিশুদের জ্বর হলে বেশি পানি দেওয়া, শরীর ঠান্ডা রাখা এবং প্রয়োজনে ডাক্তার দেখানো ছাড়া উপায় নেই।

জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় মানে এই নয় যে ওষুধ বাদ দিতে হবে। কিন্তু অনেক সময় ওষুধ ছাড়াও সহজ কিছু নিয়ম মেনে জ্বর নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। আর এই নিয়মগুলো আমাদের বহু প্রজন্ম ধরে শিখে এসেছে দাদা-দাদি বা নানা-নানির কাছ থেকে।

জ্বরের সময় শরীর শুধু নয়, মনও দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন প্রয়োজন একটু স্নেহ, একটু সহানুভূতি, আর কিছু সহজ উপায়; যা আমাদের আবার সুস্থতার দিকে নিয়ে যায়।

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

আরো দুটি জাতীয় দিবস চালু করছে সরকার

ওই পোস্টে জানানো হয়, শহীদ আবরার ফাহাদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীতে আগামীকাল ৭ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকাসহ দেশের সব শিল্পকলা একাডেমিতে ‘ইউ ফেইলড টু কিল আবরার ফাহাদ’ প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হবে। ঢাকার প্রদর্শনীতে উপস্থিত থাকবেন আবরার ফাহাদের বাবা।

১৩ ঘণ্টা আগে

চলতি বছরে ৫০ হাজার ছাড়াল ডেঙ্গু রোগী

এর মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসে মৃত্যু হয়েছে ৭৬ জনের। এ ছাড়া জানুয়ারিতে ১০, ফেব্রুয়ারি মাসে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। মার্চ ছিল মৃত্যুহীন। এপ্রিলে ৭, মে মাসে ৩ জনের মৃত্যু হলেও বাড়তে থাকে জুন মাস থেকে।

১৪ ঘণ্টা আগে

বিসিবি নির্বাচনে পরিচালক পদে জয়ী হলেন যারা

ক্যাটাগরি-১ অর্থাৎ জেলা ও বিভাগ কোটায় নির্বাচিত হয়েছেন ১০ জন, ক্যাটাগরি-২ বা ঢাকার ক্লাব ক্যাটাগরি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ১২ জন। ক্যাটাগরি-৩ অর্থাৎ সাবেক ক্রিকেটার এবং বিভিন্ন সরকারি এবং স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কোটা থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ১ জন।

১৪ ঘণ্টা আগে

বাংলাদেশ-সৌদি আরবের মধ্যে কর্মী নিয়োগে আনুষ্ঠানিক চুক্তি

সৌদি আরব ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরের ইতিহাসে এটাই প্রথমবারের মতো সাধারণ কর্মী নিয়োগ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক চুক্তি। এর আগে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে কর্মী পাঠানো হতো অনানুষ্ঠানিকভাবে। ১৯৭৬ সালে প্রথম বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে শ্রমিক পাঠানো শুরু হয়। তখন থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ৩০ লাখের বেশি বাং

১৬ ঘণ্টা আগে