স্বাস্থ্য

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ কী কী

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
প্রতিকী ছবি। ছবি : এআইয়ের তৈরি।

গরমকাল আর বৃষ্টির মৌসুম একসাথে এলেই আমাদের দেশে বাড়তে থাকে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ। আর তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ যেটি, সেটি হলো ডেঙ্গু জ্বর। কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে ডেঙ্গু যেন এক দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাসপাতালগুলো ভর্তি থাকে জ্বরগ্রস্ত রোগীতে, অনেকে আবার প্রাণও হারান এই ভাইরাস জ্বরে। অথচ ডেঙ্গু যদি শুরুতেই চিহ্নিত করা যায়, তবে সময়মতো চিকিৎসা নিয়ে বিপদ এড়ানো সম্ভব। তাই খুব জরুরি বিষয় হলো—ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো দ্রুত বুঝে ফেলা।

ডেঙ্গু জ্বর হয় ‘ডেঙ্গু ভাইরাস’-এর সংক্রমণে, যেটি ছড়ায় ‘এইডিস ইজিপ্টাই’ (Aedes aegypti) নামের একটি বিশেষ জাতের মশার মাধ্যমে। এই মশাগুলো সাধারণত দিনের বেলা কামড়ায়, বিশেষ করে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১১টা এবং বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৫টার মধ্যে। তাই এই সময়গুলোতে সতর্ক থাকা জরুরি।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ প্রথম দিকে সাধারণ ভাইরাল জ্বরের মতোই হতে পারে, আর সেখানেই মূল বিপদের জায়গা। অনেকেই এটিকে সাধারণ জ্বর ভেবে উপেক্ষা করেন। কিন্তু এই জ্বর ধীরে ধীরে ভয়ংকর রূপ নিতে পারে। ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণ হলো হঠাৎ করে খুব বেশি মাত্রার জ্বর। ১০৩–১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠে যেতে পারে। জ্বরের সঙ্গে শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা, বিশেষ করে চোখের পেছনে, হাড়ের জোড়ায় এবং মাংসপেশিতে ব্যথা থাকে।

জ্বর শুরু হওয়ার এক–দুই দিনের মধ্যেই শরীরে লালচে দাগ বা ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। অনেক সময় মনে হতে পারে, সারা গায়ে যেন গরম কিছু ছিটানো হয়েছে। রোগীর অরুচি হয়, বমি বমি ভাব থাকে কিংবা সত্যি বমিও হয়। ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে তারা খেতে চায় না, অনেক সময় অবসন্ন হয়ে পড়ে।

আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বা সিডিসি-এর এক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, “ডেঙ্গুর সবচেয়ে স্পষ্ট লক্ষণ হলো হঠাৎ উচ্চমাত্রার জ্বর, যা সাধারণত একসাথে চোখ, মাথা ও মাংসপেশির তীব্র ব্যথার সঙ্গে দেখা দেয়।”

শুধু তাই নয়, ডেঙ্গু জ্বরের সবচেয়ে ভয়ংকর দিক হলো এর জটিলতা—যেটিকে বলে 'ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার' বা 'ডেঙ্গু শক সিনড্রোম'। এই অবস্থায় রোগীর শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা কমে যায়, ফলে শরীরের ভেতরে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। নাক-মুখ দিয়ে রক্ত পড়া, মল কিংবা প্রস্রাবে রক্ত থাকা, চামড়ার নিচে নীলচে দাগ—এগুলো সেই সংকেত। এ অবস্থায় রক্তচাপ দ্রুত কমে গিয়ে রোগী শকে চলে যেতে পারে, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, “যেসব দেশে ডেঙ্গু ব্যাপকভাবে ছড়ায়, সেখানে এই জ্বরের প্রাথমিক লক্ষণগুলো বুঝে ফেলা এবং দ্রুত চিকিৎসা শুরু করাই হলো মৃত্যুর ঝুঁকি কমানোর মূল চাবিকাঠি।”

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ট্রপিকাল মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডঃ ট্রিসি ম্যাকগ্রেডি বলেন, “ডেঙ্গুর লক্ষণগুলোর একটি ভয়ংকর দিক হলো, এটি কখন জটিল রূপ ধারণ করবে তা একেবারেই নিশ্চিত করে বলা যায় না। অনেক সময় রোগী ভালো বোধ করছে বলেই আমরা ধরে নিই সে সেরে উঠেছে, অথচ বিপদ তখনই ঘনিয়ে আসে।”

তাই লক্ষণগুলো খেয়াল রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত জ্বর তিন থেকে সাত দিন স্থায়ী হয়। কিন্তু জ্বর কমে যাওয়ার ২৪–৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যদি রোগী খুব দুর্বল হয়ে পড়ে, রক্তচাপ কমে যায়, বমি শুরু হয় কিংবা শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। এই সময়টিকে ডেঙ্গুর ‘ক্রিটিকাল পিরিয়ড’ বলা হয়।

আরেকটি লক্ষণ যেটি অনেক সময় অবহেলা করা হয়, সেটি হলো গলা ও মুখমণ্ডলে ফোলা ভাব বা পানি জমার মতো লক্ষণ। রোগীর হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে, হৃদস্পন্দন কমে যেতে পারে, এবং ত্বক শুকনো হয়ে যেতে পারে।

চিকিৎসা না নিলে এই অবস্থায় রোগীর জীবনঝুঁকি বাড়ে। তবে আশার কথা হলো—ডেঙ্গুর কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ না থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সঠিক সময়ে তরল খাওয়ানো, বিশ্রাম এবং লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসায় রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন।

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস-এর গবেষক জেমস অ্যান্ডারসন বলেন, “ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে প্রচুর তরল খাওয়া এবং শরীর থেকে পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করাই হলো রোগ প্রতিরোধের মূল হাতিয়ার। জ্বর কমাতে ‘প্যারাসিটামল’ ব্যবহার করা যায়, তবে অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ পরিহার করা উচিত কারণ তা রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ায়।”

সবচেয়ে বড় কথা হলো—ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা। মশা যাতে বিস্তার করতে না পারে, সেজন্য চারপাশ পরিষ্কার রাখা, জমে থাকা পানি সরিয়ে দেওয়া, মশারির ব্যবহার, দিনে ও সন্ধ্যায় শরীর ঢাকা জামা পরা ইত্যাদি অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

সবশেষে, আমাদের মনে রাখতে হবে ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে লড়াই একা একজনের নয়, এটি সমাজের, শহরের, এমনকি পুরো দেশের সম্মিলিত লড়াই। ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো চেনা এবং সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া—এই দুটি কাজই পারে হাজারো জীবন বাঁচাতে।

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

ঘরে বসেই মেট্রোরেলের এমআরটি পাস রিচার্জ

রিচার্জের পর টাকা না ব্যবহৃত থাকলে তা তিন মাস পর্যন্ত বৈধ থাকবে। যদি যাত্রী স্পর্শ না করেন, তাহলে ১০% সার্ভিস চার্জ কেটে রিচার্জ করা টাকা ফেরত নেওয়া যাবে।

৩ ঘণ্টা আগে

‘নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে তরুণদের প্রতিরোধ গড়তে হবে’

শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে যে বয়সের ছেলে-মেয়েদের দেখেছিলাম, ২৪ এর যুদ্ধে আবার সেই তরুণ ছেলে-মেয়েদেরকে রাস্তায় খুব কাছে থেকে তোমাদের পাশে থেকে দেখলাম।

৩ ঘণ্টা আগে

শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘিরে দেশে অস্থিরতা নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর দেশে কোনো অস্থিরতা দেখা দিয়েছে কি না এবং আসন্ন বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে কোনো শঙ্কা আছে কি না—জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘রায় হওয়ার পরে কোনো রকম অস্থিরতা সৃষ্টি হয়নি। বিজয় দিবসেও কোনো অস্থিরতার শঙ্কা নেই।’

৪ ঘণ্টা আগে

সুষ্ঠু নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা সবচেয়ে বড়: সিইসি

তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চেয়েও ভোটে বড় ভূমিকা রাজনৈতিক দলগুলোর। দলগুলো আন্তরিকভাবে কাজ করলে নির্বাচন কমিশনকে বাড়তি চাপ নিতে হয় না।

৫ ঘণ্টা আগে