জীবনযাপন

আদার অপকারিতা

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
প্রতিকী ছবি। ছবি : এআইয়ের তৈরি।

আদা আমাদের রান্নাঘরের পরিচিত একটি উপাদান। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এটি শুধু রান্নায় স্বাদ বৃদ্ধির জন্য নয়, ভেষজ ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অনেকেই সকালে খালি পেটে আদা-চা পান করেন, কেউ আবার বিভিন্ন অসুখ-বিসুখে আদার রস ব্যবহার করেন। আদার গুণাগুণ নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন গবেষণায় ইতিবাচক দিকগুলো প্রায়শই সামনে আসে। তবে যেমন কোনো ভেষজ উপাদানের উপকারিতা থাকে, তেমনি থাকে কিছু অপকারিতাও। বিশেষ করে অতিরিক্ত আদা খেলে বা কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে এর প্রভাব শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। অনেকেই এ বিষয়ে জানেন না, বরং আদাকে একেবারে নিরীহ মনে করেন। বাস্তবে বিষয়টি তা নয়।

প্রথমেই জানা দরকার, আদায় থাকে জিঞ্জারল নামের একটি রাসায়নিক উপাদান। এটি আদার ঝাঁজ এবং গন্ধের জন্য দায়ী। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলেন, এই জিঞ্জারল পরিমাণে নিয়ন্ত্রিত থাকলে শরীরের জন্য উপকারী, কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত হলে তা শরীরে নানা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড মেডিকেল সেন্টারের গবেষক ডক্টর মাইকেল টেইলর বলেন, “আদা হজমে সহায়তা করলেও অতিরিক্ত খেলে এটি পাকস্থলীর আস্তরণে জ্বালা ধরাতে পারে। ফলে গ্যাস্ট্রিক, অম্বল বা বুক জ্বালার সমস্যা বাড়তে পারে।” অনেকেই খালি পেটে আদা খেলে বমি বমি ভাব, পেট মোচড়ানো বা অতিরিক্ত অম্লতা অনুভব করেন।

আরেকটি বড় সমস্যা হলো রক্ত তরল করার ক্ষমতা। আদা রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। এটি অনেক সময় উপকারী হলেও যারা নিয়মিত ব্লাড থিনার জাতীয় ওষুধ খাচ্ছেন, তাদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। যুক্তরাজ্যের লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের গবেষক ডক্টর এমিলি ওয়াটসন বলেন, “আদা ওষুধের প্রভাবে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে সার্জারির আগে বা পরে বেশি আদা খেলে গুরুতর বিপদ হতে পারে।”

গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রেও আদা নিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন অনেক গবেষক। যদিও বমি বা মর্নিং সিকনেস কমাতে আদা ব্যবহারের চল আছে, তবে অতিরিক্ত আদা খেলে গর্ভে থাকা শিশুর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ-এর গবেষক ডক্টর সুসান লরেন্স বলেন, “গর্ভাবস্থায় বেশি আদা খেলে জরায়ুতে সংকোচন হতে পারে, যা গর্ভপাত বা অকাল প্রসবের ঝুঁকি তৈরি করে।”

ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রেও আদার অপকারিতা নিয়ে আলোচনা আছে। আদা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। শুনতে ভালো লাগলেও সমস্যা হলো, যদি কেউ আগে থেকেই ডায়াবেটিসের ওষুধ খাচ্ছেন, তবে আদার কারণে রক্তে শর্করা অস্বাভাবিকভাবে নেমে যেতে পারে। এতে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা শর্করার ঘাটতি দেখা দিতে পারে, যা মাথা ঘোরা, দুর্বলতা এমনকি অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থার কারণ হতে পারে।

এ ছাড়া অতিরিক্ত আদা খেলে অনেকের শরীরে অ্যালার্জির মতো প্রতিক্রিয়াও হতে পারে। ত্বকে লালচে দাগ, চুলকানি বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের মায়ো ক্লিনিকের অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞ ডক্টর জন অ্যান্ডারসন বলেন, “আদা সবার শরীরে একইভাবে কাজ করে না। কারও কারও জন্য এটি গুরুতর অ্যালার্জি ট্রিগার করতে পারে।”

অনেক সময় অতিরিক্ত আদা খেলে রক্তচাপও বেড়ে যেতে পারে। যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে, তারা বেশি আদা খেলে মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা বা হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়ার মতো জটিলতায় পড়তে পারেন।

শিশুদের ক্ষেত্রেও আদা সব সময় নিরাপদ নয়। বিশেষ করে বেশি পরিমাণে আদা খেলে শিশুদের হজমে গোলমাল, ডায়রিয়া বা বমির সমস্যা দেখা দিতে পারে। শিশুদের শরীর অনেক সংবেদনশীল, তাই ডাক্তাররা তাদের ক্ষেত্রে আদা খাওয়ানোর আগে সতর্ক হতে বলেন।

আদার ঝাঁজ অনেক সময় অতি সংবেদনশীল মানুষের মুখ ও গলায় জ্বালাপোড়া তৈরি করতে পারে। যাদের মুখে ঘা হয় বা অ্যাসিড রিফ্লাক্স সমস্যা আছে, তারা আদা খেলে ব্যথা ও অস্বস্তি আরও বাড়তে পারে।

সব মিলিয়ে দেখা যায়, আদা যেমন উপকারী, তেমনি অযথা বা অতিরিক্ত খেলে ক্ষতিকরও বটে। এর সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আমরা সাধারণত মনে করি ভেষজ জিনিসের কোনো ক্ষতি হয় না। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বারবার সতর্ক করেছেন যে প্রাকৃতিক উপাদানও শরীরের জন্য বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

ডক্টর মাইকেল টেইলর যেমন বলেছিলেন, “ভেষজ উপাদানগুলোকে অবহেলা করা যাবে না। এগুলোর প্রভাবও ওষুধের মতোই শক্তিশালী হতে পারে, তাই সাবধানতার সঙ্গে ব্যবহার করা উচিত।”

তাই আদা খাওয়ার ক্ষেত্রে ভারসাম্য জরুরি। প্রতিদিন পরিমাণমতো আদা খেলে সমস্যা নেই, কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত খেলে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যারা ওষুধ খাচ্ছেন, গর্ভবতী নারী, শিশু বা বৃদ্ধ—তাদের ক্ষেত্রে সতর্কতা আরও বেশি প্রয়োজন।

অবশেষে বলা যায়, আদা আমাদের জীবনের অংশ, এটি রান্নায় স্বাদ বাড়ায়, অনেক সময় ছোটখাটো অসুখ সারাতে সাহায্যও করে। তবে একে কখনোই পুরোপুরি নিরীহ ভেবে নেওয়া উচিত নয়। কারণ অতিরিক্ত আদা শরীরের জন্য যেমন ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তেমনি নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে জীবনহানির কারণও হয়ে উঠতে পারে। তাই ভেষজ উপাদান হিসেবে আদা ব্যবহার করার সময় জেনে-বুঝে, প্রয়োজনমতো এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

ডেঙ্গুতে আরও ছয় জনের মৃত্যু

সারা দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে ৬৪৭ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

৪ ঘণ্টা আগে

সীমানা বিরোধ: আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে ইসি

সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান বিক্ষোভ-বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

৪ ঘণ্টা আগে

স্ত্রীসহ সাইফুজ্জামানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘রেড নোটিশ’ জারির আবেদন

চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল ২০ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে সাইফুজ্জামান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। সাইফুজ্জামান ও রুকমিলা জামানের নামে যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৮টি এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি সম্পত্তিসহ অন্যান্য দেশে স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত। এছাড়া গত ৫ মার্চ তাদের নামে

৪ ঘণ্টা আগে

মিডিয়া এখনো আগের মতোই নিয়ন্ত্রিত: নাহিদ ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, দেশের মিডিয়া এখনো আগের মতোই নিয়ন্ত্রিত। বৃহস্পতিবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

৫ ঘণ্টা আগে