স্বাস্থ্য

লিভারের রোগিদের যেসব খাবার খাওয়া উচিত, যেসব উচিত নয়

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
আপডেট : ০৫ মে ২০২৫, ২০: ০০

লিভার বা যকৃৎ আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর একটি। এটি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়, হজমে সহায়তা করে, ভিটামিন জমিয়ে রাখে এবং রক্ত পরিশোধন করে। তাই লিভারে কোনো সমস্যা দেখা দিলে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা অত্যন্ত জরুরি। লিভারের রোগীদের জন্য সঠিক খাবার খাওয়া যেমন ওষুধের মতো কাজ করতে পারে, তেমনি ভুল খাবার তাদের আরও অসুস্থ করে তুলতে পারে। এই ফিচারে সহজ ভাষায় আলোচনা করা হবে, লিভারের রোগীদের কী খাওয়া উচিত, আর কী এড়িয়ে চলা উচিত। বিদেশি গবেষকদের মতামতও থাকছে এতে।

কেন খাবার এত গুরুত্বপূর্ণ?

বিশেষজ্ঞদের মতে, লিভার যেহেতু শরীরের বর্জ্য বের করার কাজ করে, তাই এমন কোনো খাবার খাওয়া ঠিক নয় যা লিভারের ওপর বাড়তি চাপ ফেলে। আবার কিছু খাবার লিভারের কোষ মেরামতেও সাহায্য করে। তাই খাদ্য তালিকা ঠিকভাবে ঠিক করলে লিভারের সুস্থতা বজায় রাখা অনেক সহজ হয়ে যায়।

কী কী খাবেন

সবুজ শাকসবজি ও ফল

লিভারের জন্য সবচেয়ে উপকারী হলো সবুজ পাতাযুক্ত শাক, যেমন পালং শাক, লাল শাক, মেথি শাক। এছাড়া গাজর, বিটরুট, কলা, পেঁপে, আপেল, আঙুর—এসব ফলও উপকারী।

যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনস্থ টেক্সাস লিভার ইনস্টিটিউট-এর হেপাটোলজিস্ট ডা. লিন্ডা উইলিয়ামস বলেন—“পাতাযুক্ত শাকসবজি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত ফল লিভারের প্রদাহ কমায় এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে।”

শস্য

ভাতের চেয়ে বেশি উপকারী হলো ওটস, লাল চাল, ব্রাউন ব্রেড, বার্লি ইত্যাদি। এতে ফাইবার বেশি থাকে, যা হজমে সাহায্য করে ও রক্তে চর্বির পরিমাণ কমায়।

প্রোটিনযুক্ত হালকা খাবার

ডিমের সাদা অংশ, ডাল, মুগ ডাল, চিড়া, টোফু, সেদ্ধ মুরগি বা মাছ লিভার রোগীদের জন্য ভালো। তবে অতিরিক্ত প্রোটিন এড়িয়ে চলতে হয় সিরোসিস বা হেপাটিক এনসেফালোপ্যাথি থাকলে।

দই বা প্রোবায়োটিক খাবার

পেট ভালো থাকলে লিভারও ভালো থাকে। দইয়ের মধ্যে থাকা প্রোবায়োটিক উপাদান হজমে সাহায্য করে ও শরীরে উপকারী ব্যাকটেরিয়া বাড়ায়।

পানি

পর্যাপ্ত পানি পান লিভারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন অন্তত ২.৫-৩ লিটার পানি পান করলে শরীর থেকে বর্জ্য দ্রুত বের হয়।

কী কী খাবেন না

তেলেভাজা ও ফাস্টফুড

চিপস, বার্গার, ফ্রাইড চিকেন, পুরি, কচুরি—এসব খাবারে প্রচুর স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা লিভারের চর্বি বাড়ায় এবং ফ্যাটি লিভার রোগ সৃষ্টি করে।

কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিদ ও গবেষক ডা. ক্যারলিন ডিন বলেন— “স্যাচুরেটেড চর্বি লিভারের ওপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে এবং দীর্ঘ মেয়াদে ফ্যাটি লিভার রোগ তৈরি করে।”

অতিরিক্ত লবণ ও চিনি

চিপস, প্যাকেটজাত খাবার, সফট ড্রিংকস—এসব খাবারে থাকা অতিরিক্ত লবণ ও চিনি লিভারের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। চিনিযুক্ত পানীয় লিভারে চর্বি জমার সম্ভাবনা বাড়ায়।

অ্যালকোহল

লিভার রোগীদের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর হলো অ্যালকোহল। এটি সরাসরি লিভার কোষ ধ্বংস করে এবং সিরোসিসের ঝুঁকি বাড়ায়।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের লিভার বিশেষজ্ঞ ডা. জর্জ ম্যাকগিনেস বলেন—“অ্যালকোহল হলো অসুস্থ লিভারের সবচেয়ে বড় শত্রু।”

রেড মিট ও অতিরিক্ত প্রোটিন

গরু, খাসির মাংস ও অতিরিক্ত ডিম, চিজ, ঘি খাওয়া লিভারের জন্য খারাপ। এসব খাবারে থাকা চর্বি হজম করতে লিভারকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়।

অতিরিক্ত ভিটামিন বা হেলথ সাপ্লিমেন্ট

অনেকেই ভিটামিন এ, ডি, ই ও কেএর সাপ্লিমেন্ট খেয়ে থাকেন নিয়মিত। কিন্তু এগুলো অতিরিক্ত খেলে লিভারের ওপর বিষক্রিয়ার মতো প্রভাব ফেলতে পারে। সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

লিভারের যত্ন নিতে হলে আরও কিছু বিষয় মেনে চলুন-

  • প্রতিদিন নিয়ম করে খাওয়া-দাওয়া করুন।
  • রাতের খাবার সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে শেষ করুন।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন, কারণ স্থূলতা লিভারের বড় শত্রু।
  • হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করুন প্রতিদিন।
  • ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কিছু খাবেন না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-র মতে,“বিশ্বের প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো ধরনের লিভার রোগে আক্রান্ত, যার বেশিরভাগই জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব।”

লিভার যদি ভালো থাকে, তাহলে শরীরের অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গও ভালোভাবে কাজ করে। তাই লিভারকে সুস্থ রাখতে হলে ওষুধের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে সঠিক খাবার এবং জীবনযাপন পদ্ধতির ওপর। মনে রাখতে হবে, খাবারই হতে পারে ওষুধ—আবার ভুল খাবারই হতে পারে বিষ।

সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

কুরআন অবমাননার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র গ্রেপ্তার

৪ ঘণ্টা আগে

মানবপাচার মোকাবিলায় বাংলাদেশের অগ্রগতি: মার্কিন টিআইপি রিপোর্ট

বাংলাদেশ সরকার মানবপাচার নির্মূলের সর্বনিম্ন মান সম্পূর্ণরূপে পূরণ না করলেও আগের তুলনায় এখন উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা চলছে। বর্তমান সরকার পূর্ববর্তী প্রতিবেদনের সময়ের তুলনায় সামগ্রিকভাবে ক্রমবর্ধমান প্রচেষ্টা প্রদর্শন করেছে। সে কারণে বাংলাদেশের অবস্থান এই তালিকায় দ্বিতীয় স্তরে।

৬ ঘণ্টা আগে

সরকার গঠন করতে পারলে শিক্ষায় সব বৈষম্য দূর করা হবে: মিলন

এহছানুল হক মিলন বলেন, আদর্শ শিক্ষকরা সমাজের শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাই তাদের প্রাপ্য মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের সমর্থনে যদি সরকার গঠন করা যায়, তাহলে শিক্ষা ক্ষেত্রে সব ধরনের বৈষম্য ও অব্যবস্থা দূর করা হবে।

১৪ ঘণ্টা আগে

শহিদুল আলম ও গাজার সঙ্গে আছি: প্রধান উপদেষ্টা

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি অব্যাহত নির্যাতনের প্রতিবাদে বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় অংশ নেওয়া খ্যাতিমান আলোকচিত্রী ও অধিকার কর্মী শহিদুল আলমের পক্ষে সংহতি জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। একই সঙ্গে ইসরায়েলি ধ্বংসযজ্ঞের শিকার গাজার প্রতিও সমর্থন জানিয়েছেন তিনি।

১৫ ঘণ্টা আগে