মহাকাশ

রোমান টেলিস্কোপ: সম্ভাবনা নাকি স্বপ্নভঙ্গ?

রোমান টেলিস্কোপ

মহাকাশবিজ্ঞানের ইতিহাসে কিছু টেলিস্কোপ কেবল প্রযুক্তির কৌশলগত সাফল্য নয়, বরং মহাবিশ্বকে নতুনভাবে দেখার জানালা খুলে দিয়েছে। যেমন হাবল, ইউক্লিড কিংবা জেমস ওয়েব— এসব টেলিস্কোপ আমাদের মহাজাগতিক উপলব্ধিকে একেক ধাপে এগিয়ে নিয়ে গেছে, হয়ে উঠেছে বিশ্বাসযোগ্য আর অপরিহার্য অনুসন্ধানসঙ্গী।

এই তালিকায় যুক্ত হতে যাচ্ছে, নাসার নতুন রোমান স্পেস টেলিস্কোপ। যার পুরো নাম Nancy Grace Roman Space Telescope, এর জন্য

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।

এটি এমন এক টেলিস্কোপ, যাকে বলা হচ্ছে "টু হান্ড্রেড হাবল"। কারণ এটি হাবল টেলিস্কোপের মতোই নিয়ার ইনফ্রারেড রশ্মিতে কাজ করবে। তবে মহাবিশ্বকে দেখবে হাবল থেকে ২০০ গুণ বেশি বিস্তৃত দৃষ্টিকোণ নিয়ে। সহজ কথায়, এই টেলিস্কোপ মহাবিশ্বকে দেখতে পাবে একেবারে নতুন এবং বিস্তৃত এক চোখ দিয়ে।

রোমান টেলিস্কোপের কাজ প্রায় শেষ। নাসা ঘোষণা দিয়েছিল, এটি ২০২৭ সালে মহাকাশে পাঠানো হবে। কিন্তু কাজ এতটাই এগিয়ে গেছে যে ২০২৬ সালের শেষের দিকেই এটি উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই টেলিস্কোপের সবচেয়ে বড় সম্ভাবনা হলো—ডার্ক এনার্জির রহস্য উন্মোচন, কোটি কোটি ছায়াপথের ম্যাপ তৈরি, এবং এলিয়েন গ্রহ খোঁজার জন্য নতুন প্রযুক্তির পরীক্ষামূলক সূচনা করা। এর মধ্যে একটি 'করোনোগ্রাফ' থাকবে, যেটা ভবিষ্যতের মানুষের বাসযোগ্য গ্রহ অনুসন্ধানে সহায়ক হবে।

এই টেলিস্কোপের কাজ শুধুই নাসার একার নয়। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির ইউক্লিড টেলিস্কোপ এবং আমেরিকারই ভেরা সি. রুবিন অবজারভেটরির সঙ্গে তাল মিলিয়ে রোমান কাজ করবে এক বিশাল কসমিক সার্ভেয়ার হিসেবে। পুরো মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ, গ্যালাক্সির গঠন আর ডার্ক এনার্জির গতিপথ বুঝতে এই ত্রয়ী হবে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ইন্সট্রুমেন্ট।

কিন্তু হঠাৎই একটা স্বপ্নভঙ্গের খবর পাওয়া যাচ্ছে। ২০২৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাজেটের একটি লিক হওয়া খসড়া প্রস্তাব অনুযায়ী নাকি রোমান টেলিস্কোপের পুরো প্রকল্প বাতিল করে দেওয়া হতে পারে! এমনকি নাসার বিজ্ঞান বিভাগের মোট বাজেট ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর কথা উঠেছে। এটি যদি সত্যি হয়, তবে রোমান তো বটেই , বিজ্ঞানের সব অনুসন্ধানের ক্ষেত্রেই মারাত্মক আঘাত আসবে।

এই খবরে বৈজ্ঞানিক মহলে রীতিমতো আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। কারণ প্রায় শেষ মুহূর্তে এসে এভাবে রোমান বাতিল হলে শুধু যে কয়েক দশকের পরিকল্পনা ও হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ পানিতে যাবে তা-ই নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্র তার মহাকাশবিজ্ঞানের নেতৃত্ব হারাবে। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সহযোগিতার উপরও পড়বে এর কুপ্রভাব। ইউরোপ, জাপান, কানাডার মতো দেশ যারা নাসার সঙ্গে এইসব প্রকল্পে যুক্ত, তাদের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হতে পারে।

তবে আশার কথা হলো, এর আগেও আমেরিকার কংগ্রেস রোমানকে রক্ষা করেছে। বিজ্ঞানীরা এখনও আশাবাদী, যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ঠেকাবেন। বিজ্ঞানকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হলে রাজনীতির খেয়ালখুশির ঊর্ধ্বে উঠে দীর্ঘমেয়াদি অঙ্গীকারকেই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

সূত্র: সায়েন্টিফিক আমেরিকান

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

কুরআন অবমাননার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র গ্রেপ্তার

৪ ঘণ্টা আগে

মানবপাচার মোকাবিলায় বাংলাদেশের অগ্রগতি: মার্কিন টিআইপি রিপোর্ট

বাংলাদেশ সরকার মানবপাচার নির্মূলের সর্বনিম্ন মান সম্পূর্ণরূপে পূরণ না করলেও আগের তুলনায় এখন উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা চলছে। বর্তমান সরকার পূর্ববর্তী প্রতিবেদনের সময়ের তুলনায় সামগ্রিকভাবে ক্রমবর্ধমান প্রচেষ্টা প্রদর্শন করেছে। সে কারণে বাংলাদেশের অবস্থান এই তালিকায় দ্বিতীয় স্তরে।

৬ ঘণ্টা আগে

সরকার গঠন করতে পারলে শিক্ষায় সব বৈষম্য দূর করা হবে: মিলন

এহছানুল হক মিলন বলেন, আদর্শ শিক্ষকরা সমাজের শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাই তাদের প্রাপ্য মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের সমর্থনে যদি সরকার গঠন করা যায়, তাহলে শিক্ষা ক্ষেত্রে সব ধরনের বৈষম্য ও অব্যবস্থা দূর করা হবে।

১৪ ঘণ্টা আগে

শহিদুল আলম ও গাজার সঙ্গে আছি: প্রধান উপদেষ্টা

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি অব্যাহত নির্যাতনের প্রতিবাদে বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় অংশ নেওয়া খ্যাতিমান আলোকচিত্রী ও অধিকার কর্মী শহিদুল আলমের পক্ষে সংহতি জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। একই সঙ্গে ইসরায়েলি ধ্বংসযজ্ঞের শিকার গাজার প্রতিও সমর্থন জানিয়েছেন তিনি।

১৪ ঘণ্টা আগে