চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপলাইনে তেল সরবরাহ শুরু

প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম

পাইপলাইনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় তেল সরবরাহের ফলে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত, সময় সাশ্রয় ও তেল চুরি এবং সিস্টেম লসের হাত থেকে বাঁচবে এ খাতটি। এতে বছরে আর্থিক সাশ্রয় হবে ২৩৬ কোটি টাকা।

শনিবার (১৬ আগস্ট) সকালে এই পাইপলাইনে তেল সরবরাহ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।

যদিও এর আগে গত জুনের মাঝামাঝি সময় থেকে ওই পাইপলাইনে তেল সরবরাহ শুরু করেছিল বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।

বিপিসি সূত্রে জানা যায়, পাইপলাইনে জ্বালানি সরবরাহে এ খাতে বার্ষিক অর্থ সাশ্রয়ের পরিমাণ ২৩৬ কোটি টাকা। আগে ঢাকায় তেল সরবরাহ করা হতো লরি দিয়ে। এতে তেল চুরি ও সিস্টেস লসের অজুহাত দেওয়া হতো হরহামেশাই। পথে নানা দুর্ঘটনা ও সময়ক্ষেপনের শঙ্কা থাকতো।

বর্তমানে পাইপলাইনে সরবরাহের ফলে জ্বালানি সরবরাহে নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানান কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ শুরুর প্রায় ছয় বছর পর পাম্পিংয়ের মাধ্যমে তেল সরবরাহ শুরু হয়। এ পাইপলাইনে চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারি থেকে ঢাকার নারায়ণগঞ্জের ডিপোতে সরবরাহ হবে ঘণ্টায় ৩০০ মেট্টিক টন তেল। পর্যায়ক্রমে পদ্মা, মেঘনা, যমুনাকে এই পাইপলাইনে তেল সরবরাহ করবে বিপিসি।

ঢাকায় পাইপলাইনে তেল সরবরাহের মাধ্যমে তেল চুরিসহ সিস্টেম লস থেকে মুক্তি মিলবে বলে আশা করেছেন বিপিসির কর্মকর্তারা।

বিপিসি মহাব্যবস্থাপক মনি লাল দাশ (বাণিজ্য ও অপারেশন) খবরের কাগজকে বলেন, পাইপলাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেল পাম্পিংয়ের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের ডিপোতে পাঠানো হয়েছে। আগে তেল চুরি, সিস্টেম লসসহ নানা অজুহাত শুনতাম। এখন সেগুলো থেকে মুক্ত থাকবে এ খাতটি। এতে সরকারের প্রতিবছর সাশ্রয় হবে ২৩৬ কোটি টাকা।

জানা গেছে, সরকারের গৃহীত প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর এবং মুন্সীগঞ্জ হয়ে নারায়ণগঞ্জের গোদলাইন ও ফতুল্লা পর্যন্ত ২৫০ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। দফায় দফায় সময় ও ব্যয় বেড়ে প্রায় ছয় বছরে গত ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয় এ প্রকল্পের কাজ। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এবার ছয় হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয় গত জুন মাসে।

কর্মকর্তারা জানান, নারায়ণগঞ্জের গোদলাইন ও ফতুল্লা পর্যন্ত ২৫০ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন প্রায় ২৭ হাজার মেট্রিক টন তেল জমা থাকে। পাইপলাইন তৈরি হওয়ার পর ওই পরিমাণ তেল পাইপলাইনে প্রবেশ করিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে সরবরাহ শুরু হলো।

২০১৮ সালে ২ হাজার ৮৬১ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৫০ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শুরু হয়। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতা এবং করোনাকালে কাজ বন্ধ থাকে। পরে কোভিডের জন্য কাজ বন্ধ রাখতে হয়। ফলে কাজের আশানুরূপ গতি পায়নি প্রকল্পটি। এতে প্রকল্পের ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। গত ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। বর্তমানে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিশ্বের নানা দেশ থেকে আমদানি করা জ্বালানি তেল চট্টগ্রামে খালাস করা হয়। অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির পর পরিশোধন করা হয় একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারিতে। এছাড়া আমদানি করা পরিশোধিত জ্বালানি তেলের একটি অংশ প্রাথমিক অবস্থায় মজুত রাখা হয় চট্টগ্রামের বিভিন্ন ডিপোতে। সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে লরিতে (ভাউসার) সরবরাহ করা হতো জ্বালানি তেল। ফলে জ্বালানি তেল পরিবহনে অপচয় কমানো আর সময় বাঁচাতে ২০১৮ সালে শুরু হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন প্রকল্পের কাজ।

সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশে বছরে প্রায় ৭০ লাখ টন জ্বালানি তেল প্রয়োজন হয়। বর্তমানে এই তেলের ৪০ ভাগই ব্যবহৃত হয় ঢাকা ও আশেপাশের এলাকায়। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সড়ক, নৌ ও রেলপথে এই তেল পরিবহন করা হয়। পরিবহনের সময় লুটপাটের অভিযোগ ওঠে। নৌপথে জ্বালানি তেল পরিবহনের সময় তেল চুরি করে সাগরের পানি মিশিয়ে দেওয়ার অভিযোগ বহু পুরানো। সড়ক ও রেলপথেও ঘাটে ঘাটে তেল চুরির উৎসবের সচিত্র বহু সংবাদ বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সিস্টেম লসের নামে এসব চুরি ও লুটের ঘটনা সামাল দেওয়া হলেও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন কোটি কোটি টাকার ক্ষতির কবলে পড়ে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেল সরবরাহের পাইপলাইন দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা খাতে বড় ধরনের সক্ষমতা বেড়েছে বলে দাবি বিপিসির।

শনিবার সকালে পতেঙ্গা গুপ্তখাল এলাকায় পদ্মা অয়েল কোম্পানির ডেসপাস টার্মিনালে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় তেল সরবরাহ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

বিশেষ অতিথি ছিলেন জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ মেজর জেনারেল মু. হাসান-উজ-জামান।

সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান।

বক্তব্য দেন বিপিসির পরিচালক ড. একেএম আজাদুর রহমান।

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে নিয়োগ, পদসংখ্যা ২৬১

৭ ঘণ্টা আগে

দাবি আদায় হয়নি, নতুন ঘোষণা প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের

প্রকৌশলী অধিকার পরিষদের উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান শহিদ বলেন, ‘রংপুরে হুমকির ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ছাত্রদের ওপর হামলার বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উপদেষ্টারা কোনো ব্যবস্থা নেননি।’

৭ ঘণ্টা আগে

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে নিয়োগ, পদসংখ্যা ৮০

৭ ঘণ্টা আগে

ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে নিয়োগ, স্নাতক পাসেই আবেদন

৮ ঘণ্টা আগে