২৮৬ মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়েছিল সাড়ে চার লাখ: চিফ প্রসিকিউটর

প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম

চব্বিশের ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নির্দেশে ২৮৬টি মিথ্যা মামলায় সাড়ে চার লাখ ছাত্র-জনতাকে আসামি করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কারফিউ দিয়ে গণহত্যায় উসকানির দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলার অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানিতে এ কথা বলেন তিনি।

এদিন দুপুরে ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ শুনানি হয়। অপর সদস্য বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে আসামি করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। এসবের ওপর শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর।

প্রথমেই সালমান ও আনিসুলের ব্যক্তিগত দায় পড়ে শোনান তাজুল ইসলাম। একপর্যায়ে ২০২৪ সালের ১৯ জুলাইয়ের তাদের একটি ফোনালাপ শোনানো হয়। এরপরই সুনির্দিষ্ট পাঁচটি অভিযোগ আলাদা আলাদা পড়েন তিনি।

প্রথমত, চব্বিশের জুলাই-আগস্ট আন্দোলন দমনে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতেন সালমান ও আনিসুল। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ১৯ জুলাই ফোনে কথা বলেন তারা। তাদের কথোপকথনের একপর্যায়ে শোনা যায় ওদের শেষ করে দেওয়া। অর্থাৎ আজ রাতেই কারফিউ জারির মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের শেষ করে দিতে হবে বলে জানান সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

এরই ধারাবাহিকতায় ২২ জুলাই ব্যবসায়ীদের নিয়ে গণভবনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন সালমান এফ রহমান। ওই বৈঠকে জীবন দিয়ে হলেও হাসিনার পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যেই আইনমন্ত্রীর নির্দেশে ২৮৬টি মিথ্যা মামলা করা হয়। যেখানে সাড়ে চার লাখ ছাত্র-জনতাকে আসামি করা হয়েছিল। তাদের এমন ধারাবাহিক ষড়যন্ত্র ও প্ররোচনায় প্রাণ দিয়েছেন বহু ছাত্র-জনতা। তবু নির্যাতন বন্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি তারা।

দ্বিতীয়ত, সালমান-আনিসুলের জ্ঞাতানুসারে ২৩ জুলাই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। অর্থাৎ তাদের প্ররোচনা-উসকানিতে মিরপুরে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দলীয় বাহিনী।

তৃতীয়ত, মারণাস্ত্র ব্যবহারে প্ররোচনা ও ষড়যন্ত্র করেছিলেন এ দুই প্রভাবশালী। তাদের উসকানি ও সহায়তায় ২৮ জুলাই মিরপুর-১০-এ আক্তারুজ্জামানকে জীবন দিতে হয়। আহত হন আরও অনেকে। চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়, কারফিউ জারির মাধ্যমে মারণাস্ত্র ব্যবহারে উসকানি-প্ররোচনায় ৪ আগস্ট মিরপুর-১-এ আকাশ, সেতু, আলভীসহ ১২ জনকে হত্যা করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

পাঁচ নম্বরে বলা হয়, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঠেকাতে পরিকল্পনা করেন সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হক। তাদের নির্দেশে প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের হামলায় মিরপুর-২, ১০ ও ১৩ নম্বরে আল-আমিন, আশরাফুল, সাব্বির, রিতাসহ ১৬ জন হত্যার শিকার হন।

ব্যাপক মাত্রা ও পদ্ধতিগত অপরাধ করেছেন সালমান ও আনিসুল। এ জন্য তাদের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগই গঠনের জন্য আবেদন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। পরে আসামিপক্ষে শুনানির জন্য সময় চান সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। তার আবেদন মঞ্জুর করে সালমান-আনিসুলের পক্ষে শুনানির জন্য আগামী ৪ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

২০ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি পেলেন গানম্যান

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডের পর নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনায় ঝুঁকিতে থাকা ২০ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে সরকার গানম্যান প্রদান করেছে। এ তালিকায় প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের সম্পাদকও রয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

১ ঘণ্টা আগে

হাদির হত্যাকারী দেশেও থাকতে পারে, বাইরেও থাকতে পারে

হাদি হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি কোথায় আছে, এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন যদি... কোথায় আছে জানলে তো তাকে ধরেই ফেলতাম। যদি আমাদের কাছে ওইরকম নিউজটা থাকত, তাহলে তো ধরেই ফেলতাম। দেশেও থাকতে পারে, বাইরেও থাকতে পারে। বাট আমরা এক্সজ্যাক্ট লোকেশন যদি জানতে পারতাম, তাহলে তো...।’

৩ ঘণ্টা আগে

ওসমান হাদি হত্যার বিচার হবে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে: আসিফ নজরুল

আসিফ নজরুল বলেন, শহীদ শরীফ ওসমান হাদি হত্যার বিচার হবে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন, ২০০২ এর ১০ ধারা অনুযায়ী পুলিশ রিপোর্ট আসার পর সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করা হবে।

৩ ঘণ্টা আগে

ওসমান হাদি হত্যার বিচার: দ্রুত বিচারিক ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি ইনকিলাব মঞ্চের

শরিফ ওসমান হাদির খুনিদের বিচার নিশ্চিতে বিচারিক ট্রাইব্যুনাল গঠন ও ট্রাইব্যুনালের কাজে সহায়তার জন্য এফবিআই এবং স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের মতো পেশাদারী ইন্টেলিজেন্সের সহায়তা গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।

৩ ঘণ্টা আগে