মহাকাশ

যেভাবে মহাকাশে নভোচারীরা খাওয়াদাওয়া করেন

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
মহাকাশ স্টেশনের বেশিরভাগ পানি রিসাইকেল করা। নভোচারীদের প্রস্রাব, ঘাম এবং বাতাসের আর্দ্রতা থেকে পানি সংগ্রহ করে তা পরিশোধন করা হয়। নাসা বলছে, এই পানি পৃথিবীর সাধারণ পানির চেয়েও বেশি পরিষ্কার!

পৃথিবীতে আমরা যেভাবে স্বাভাবিকভাবে খাবার খাই—বসে বা দাঁড়িয়ে, প্লেটে ভাত-তরকারি বা পিৎজা রেখে—মহাকাশে তা একেবারেই অসম্ভব। সেখানে মাধ্যাকর্ষণ নেই, তাই সবকিছুই ভেসে বেড়ায়। তাহলে নভোচারীরা কীভাবে খান? তাদের খাবার কেমন হয়? আসুন, জেনে নিই মহাকাশের এই অদ্ভুত ও মজাদার খাদ্যাভ্যাসের গল্প।

মহাকাশে সাধারণ খাবার নেওয়া যায় না। রুটি, বিস্কুট বা চিপসের মতো ঝুরঝুরে জিনিস বাতাসে ভেসে গিয়ে নভোচারীদের নাক-মুখে লাগতে পারে, যা বিপজ্জনক। তাই মহাকাশে খাবার বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত করে নেওয়া হয়। বেশিরভাগ খাবারই হয় শুকনো বা ফ্রিজ-ড্রাইড, যাতে সেগুলো হালকা হয় এবং দীর্ঘদিন টিকে থাকে।

নাসার সাবেক নভোচারী নিকোল স্টট বলেছেন, মহাকাশে পিৎজা খেতে তার খুব ইচ্ছা করত। কিন্তু সেখানে সাধারণ পিৎজা পাওয়া যায় না। মহাকাশ স্টেশনের পিৎজা নরম ময়দার তৈরি, যাতে কোনো ক্রাম্ব বা টুকরো ভেসে না যায়। একইভাবে, নভোচারীরা সকালে ডিম ভাজা বা ওমলেট খান, তবে তা পৃথিবীর মতো করে রান্না করা হয় না—এগুলো বিশেষভাবে প্রস্তুত করে দেওয়া হয়।

মহাকাশে থালা-বাসন ব্যবহার করা যায় না, কারণ সবকিছু ভেসে উঠবে। তাই খাবারগুলো প্লাস্টিকের প্যাকেট বা টিউবে ভরে দেওয়া হয়। নভোচারীরা এই প্যাকেটে গরম বা ঠাণ্ডা পানি মিশিয়ে খাবার প্রস্তুত করেন। ভাত, কারি, স্যুপ—সবই এইভাবে খেতে হয়।

খাবার খাওয়ার জন্য বিশেষ চামচ ব্যবহার করা হয়, যা দিয়ে প্যাকেট থেকে খাবার তুলে মুখে দেওয়া যায়। তবে শূন্য মাধ্যাকর্ষণের কারণে খাবার হাত থেকে ছুটে গিয়ে বাতাসে ভেসে উঠতে পারে! নভোচারীরা মাঝে মাঝে এটাকে খেলায় পরিণত করেন—চামচ থেকে খাবার শূন্যে ছুঁড়ে দিয়ে মুখে ধরা তাদের জন্য একধরনের মজার চ্যালেঞ্জ।

পৃথিবীতে আমরা গ্লাসে পানি ঢেলে পান করি, কিন্তু মহাকাশে তা অসম্ভব। সেখানে পানি গ্লাস থেকে বেরিয়ে গোলাকার ফোঁটায় ভেসে বেড়াবে! তাই নভোচারীরা পানীয় খান বিশেষ প্যাকেট থেকে, যার মুখে স্ট্র লাগানো থাকে। এই স্ট্র দিয়ে তারা সরাসরি তরল পান করেন।

মজার বিষয় হলো, মহাকাশ স্টেশনের বেশিরভাগ পানি রিসাইকেল করা। নভোচারীদের প্রস্রাব, ঘাম এবং বাতাসের আর্দ্রতা থেকে পানি সংগ্রহ করে তা পরিশোধন করা হয়। নাসা বলছে, এই পানি পৃথিবীর সাধারণ পানির চেয়েও বেশি পরিষ্কার!

মহাকাশ স্টেশনে নভোচারীদের খাবারে বৈচিত্র্য থাকে। তাদের জন্য প্রোটিন, ভিটামিন, কার্বোহাইড্রেট—সবই পরিমাণমতো দেওয়া হয়। শুকনো খাবারের পাশাপাশি মাঝে মাঝে তাজা ফল বা সবজিও পাঠানো হয়। যেমন—আপেল, কমলা বা গাজর।

কখনো কখনো নভোচারীদের পরিবারও তাদের প্রিয় খাবার পাঠায়। ২০১৬ সালে রুশ নভোচারী আলেক্সি অভচিনিন মহাকাশ থেকে ফিরে এসেই তার প্রিয় তরমুজ পেয়ে খুশি হয়েছিলেন!

শূন্য মাধ্যাকর্ষণে দীর্ঘদিন থাকলে শরীরের পেশি ও হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই নভোচারীদের খাবারে পুষ্টির দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়। এছাড়া, পৃথিবী থেকে দূরে থাকার সময় প্রিয় খাবার পাওয়া তাদের মনোবল বাড়ায়।

মহাকাশে খাওয়াদাওয়া পৃথিবীর মতো সহজ নয়, কিন্তু নভোচারীরা এই চ্যালেঞ্জকে মজাদার অভিজ্ঞতায় পরিণত করেছেন। বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি খাবার, পানি রিসাইক্লিং, ভাসমান খাবার ধরা—এসবই মহাকাশ জীবনের অংশ। ভবিষ্যতে যখন সাধারণ মানুষেরা মহাকাশে ভ্রমণ করবে, তখন হয়তো এই খাদ্যব্যবস্থা আরও উন্নত হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত, মহাকাশে খাওয়াদাওয়া রোমাঞ্চ আর বিজ্ঞানের এক অসাধারণ মিশেল!

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায় বৃহস্পতিবার

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় ১৯৯৬ সালে। এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। ২০১১ সালের ১০ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য প্রণীত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা

১৩ ঘণ্টা আগে

অজিত দোভালকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালেন নিরাপত্তা উপদেষ্টা

হাইকমিশন জানিয়েছে, কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভের (সিএসসি) জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ের সপ্তম সম্মেলনে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল আজ দিল্লিতে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও তার দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

১৪ ঘণ্টা আগে

বিজয় দিবসে এবারও প্যারেড হবে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর কিছুটা অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল। বিজয় দিবস উপলক্ষে কোনো শঙ্কা দেখছেন কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, রায়ের পরে কোনো ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়নি। বিজয় দিবসেও কোনো অস্থিরতার সম্ভাবনা নেই।

১৪ ঘণ্টা আগে

ডেঙ্গুতে একদিনে ৬ জনের মৃত্যু

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, নতুন আক্রান্তদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ৮৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০৮ জন, ঢাকা বিভাগে ১৩০ জন (সিটি করপোরেশনের বাইরে), ঢাকা উত্তর সিটিতে ১৬৬ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৮৬ জন, ময়মনসিহং বিভাগে ৫৪ জন, খুলনা বিভাগে ৬৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ৮৮ জন এবং সিলেট বিভাগে ৩ জন রোগী রয়েছেন।

১৫ ঘণ্টা আগে