
প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম

জুলাই অভ্যুত্থান ঘিরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে রায়ের তারিখ নির্ধারণ করবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আজ বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) এ তারিখের ঘোষণা দেবেন আদালত। এ মামলায় আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করছে প্রসিকিউশন।
শেখ হাসিনা ছাড়া এ মামলার বাকি দুই আসামি হলেন— ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং জুলাই আন্দোলন চলাকালে পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) দায়িত্বে থাকা চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল আদালতে হাজির না হওয়ায় তারা পলাতক হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। অন্যদিকে আত্মসমর্পণ করে রাজসাক্ষী হয়েছেন চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। এ কারণে তার সাজা বাকি দুজনের তুলনায় ভিন্ন হতে পারে।
প্রসিকিউশন আশা করছে, বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মামলাটির তারিখ নির্ধারণ করবেন আজ বৃহস্পতিবার। ট্রাইব্যুনালের বাকি দুই সদস্য হলেন— বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
গত ২৩ অক্টোবর এ মামলায় প্রসিকিউশন ও আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী তাদের যুক্তিতর্ক ও সমাপনী বক্তব্য রাখেন। সেদিন ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান প্রসিকিউশন পক্ষে মামলার সমাপনী বক্তব্য রাখেন। আসামিদের পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরেন স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
বুধবার (১২ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করছে প্রসিকিউশন।
তারিখ নিয়ে এই প্রসিকিউটর বলেন, রায়ের দিন নির্ধারণের এখতিয়ার পুরোপুরি ট্রাইব্যুনালের। তবে আমরা বিশ্বাস করি, আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) রায়ের ডেট আমরা পাব।
রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের সাজার বিষয়ে জানতে চাইলে মিজানুল ইসলাম বলেন, সাবেক আইজিপি আসামি থেকে রাজসাক্ষী হয়েছেন। তিনি মুক্তি পাবেন কি না, সে সিদ্ধান্ত ট্রাইব্যুনালই নেবেন। নানা প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে বিচার বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর ২০২৪ সালের ১৪ আগস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ জমা পড়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায়। সংস্থাটি অভিযোগের তদন্ত শুরু করে। তদন্ত শেষে গত ১২ মে তদন্ত সংস্থা প্রধান প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়।
তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ১ জুন ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান ও আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। সেদিনই ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ আমলে নেন। পরে ১০ জুলাই তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
একপর্যায়ে এ মামলায় দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে ‘অ্যাপ্রুভার’ তথা ‘রাজসাক্ষী’ হতে আবেদন করেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তার সে আবেদন মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল। পরে এ মামলার রাজসাক্ষী হয়ে সাক্ষ্য দেন তিনি। তবে মামলার বিচারকাজ শুরু হয় ৪ আগস্ট, রাষ্ট্রপক্ষের প্রথম সাক্ষী খোকন চন্দ্র বর্মণের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে।
এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ মোট ৮১ জনকে সাক্ষী হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। তাদের মধ্যে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহিদ আবু সাঈদের বাবা, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ মোট ৫৪ জন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন।
এ মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম। আদালতে পলাতক দুই আসামির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। এ মামলাতেই দেশে প্রথম কোনো আদালতের বিচারিক কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে টেলিভিশন চ্যানেলে।
মামলায় টানা পঞ্চম দিনে প্রসিকিউশন পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয় গত ১৬ অক্টোবর। ২২ অক্টোবর এ মামলায় পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত (স্টেট ডিফেন্স) এবং উপস্থিত রাজসাক্ষী সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়।
পরদিন ২৩ অক্টোবর মামলায় অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সমাপনী বক্তব্য দেন। তিনি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রার্থনা করেন। পরে আসামিপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্যের জবাব দেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনিও শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সর্বোচ্চ শাস্তি চান।
অ্যাটর্নি জেনারেল ও চিফ প্রসিকিউটরের বক্তব্যের জবাব দেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। তিনি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের খালাস প্রার্থনা করেন। পরে ট্রাইব্যুনাল মামলার রায় কবে দেওয়া হবে, তা ১৩ নভেম্বর জানানো হবে বলে জানান।
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। গত ১২ মে প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার এবং শহিদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার।
গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ ও ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ উল্লেখ করে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। এর পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণ করে। গুলি করে দেড় হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়। আহত হন প্রায় ২৫ হাজার।
হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি তাদের অধীন বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে সেই নির্দেশ কার্যকর করেন।
গত বছরের ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল ও ১৮ জুলাই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে কথা বলেন শেখ হাসিনা। দুজনের সঙ্গে কথোপকথনের পৃথক অডিও রেকর্ড থেকে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোকে মারণাস্ত্র ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।
শেখ হাসিনার সেই নির্দেশ তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির মাধ্যমে সব বাহিনীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও এর অন্যান্য অঙ্গসংগঠন এবং ১৪-দলীয় জোটের কাছেও এ নির্দেশ চলে যায়। এর আলোকে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়। এর দায়ে শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও মামুনের বিরুদ্ধে সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (সর্বোচ্চ দায়) আওতায় অভিযোগ গঠন করা হয়।
রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি আসাদুজ্জামান ও মামুনকে অভিযুক্ত করা হয়।
রাজধানীর চানখাঁরপুলে আন্দোলনরত নিরীহ-নিরস্ত্র ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায়ও শেখ হাসিনাসহ তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়।
আশুলিয়ায় নিরীহ-নিরস্ত্র ছয়জনকে হত্যার আগুনে পোড়ানোর ঘটনাতেও অভিযুক্ত হয়েছেন শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও মামুন।

জুলাই অভ্যুত্থান ঘিরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে রায়ের তারিখ নির্ধারণ করবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আজ বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) এ তারিখের ঘোষণা দেবেন আদালত। এ মামলায় আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করছে প্রসিকিউশন।
শেখ হাসিনা ছাড়া এ মামলার বাকি দুই আসামি হলেন— ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং জুলাই আন্দোলন চলাকালে পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) দায়িত্বে থাকা চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল আদালতে হাজির না হওয়ায় তারা পলাতক হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। অন্যদিকে আত্মসমর্পণ করে রাজসাক্ষী হয়েছেন চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। এ কারণে তার সাজা বাকি দুজনের তুলনায় ভিন্ন হতে পারে।
প্রসিকিউশন আশা করছে, বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মামলাটির তারিখ নির্ধারণ করবেন আজ বৃহস্পতিবার। ট্রাইব্যুনালের বাকি দুই সদস্য হলেন— বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
গত ২৩ অক্টোবর এ মামলায় প্রসিকিউশন ও আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী তাদের যুক্তিতর্ক ও সমাপনী বক্তব্য রাখেন। সেদিন ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান প্রসিকিউশন পক্ষে মামলার সমাপনী বক্তব্য রাখেন। আসামিদের পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরেন স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
বুধবার (১২ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করছে প্রসিকিউশন।
তারিখ নিয়ে এই প্রসিকিউটর বলেন, রায়ের দিন নির্ধারণের এখতিয়ার পুরোপুরি ট্রাইব্যুনালের। তবে আমরা বিশ্বাস করি, আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) রায়ের ডেট আমরা পাব।
রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের সাজার বিষয়ে জানতে চাইলে মিজানুল ইসলাম বলেন, সাবেক আইজিপি আসামি থেকে রাজসাক্ষী হয়েছেন। তিনি মুক্তি পাবেন কি না, সে সিদ্ধান্ত ট্রাইব্যুনালই নেবেন। নানা প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে বিচার বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর ২০২৪ সালের ১৪ আগস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ জমা পড়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায়। সংস্থাটি অভিযোগের তদন্ত শুরু করে। তদন্ত শেষে গত ১২ মে তদন্ত সংস্থা প্রধান প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়।
তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ১ জুন ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান ও আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। সেদিনই ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ আমলে নেন। পরে ১০ জুলাই তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
একপর্যায়ে এ মামলায় দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে ‘অ্যাপ্রুভার’ তথা ‘রাজসাক্ষী’ হতে আবেদন করেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তার সে আবেদন মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল। পরে এ মামলার রাজসাক্ষী হয়ে সাক্ষ্য দেন তিনি। তবে মামলার বিচারকাজ শুরু হয় ৪ আগস্ট, রাষ্ট্রপক্ষের প্রথম সাক্ষী খোকন চন্দ্র বর্মণের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে।
এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ মোট ৮১ জনকে সাক্ষী হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। তাদের মধ্যে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহিদ আবু সাঈদের বাবা, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ মোট ৫৪ জন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন।
এ মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম। আদালতে পলাতক দুই আসামির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। এ মামলাতেই দেশে প্রথম কোনো আদালতের বিচারিক কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে টেলিভিশন চ্যানেলে।
মামলায় টানা পঞ্চম দিনে প্রসিকিউশন পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয় গত ১৬ অক্টোবর। ২২ অক্টোবর এ মামলায় পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত (স্টেট ডিফেন্স) এবং উপস্থিত রাজসাক্ষী সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়।
পরদিন ২৩ অক্টোবর মামলায় অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সমাপনী বক্তব্য দেন। তিনি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রার্থনা করেন। পরে আসামিপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্যের জবাব দেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনিও শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সর্বোচ্চ শাস্তি চান।
অ্যাটর্নি জেনারেল ও চিফ প্রসিকিউটরের বক্তব্যের জবাব দেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। তিনি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের খালাস প্রার্থনা করেন। পরে ট্রাইব্যুনাল মামলার রায় কবে দেওয়া হবে, তা ১৩ নভেম্বর জানানো হবে বলে জানান।
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। গত ১২ মে প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার এবং শহিদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার।
গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ ও ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ উল্লেখ করে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। এর পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণ করে। গুলি করে দেড় হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়। আহত হন প্রায় ২৫ হাজার।
হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি তাদের অধীন বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে সেই নির্দেশ কার্যকর করেন।
গত বছরের ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল ও ১৮ জুলাই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে কথা বলেন শেখ হাসিনা। দুজনের সঙ্গে কথোপকথনের পৃথক অডিও রেকর্ড থেকে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোকে মারণাস্ত্র ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।
শেখ হাসিনার সেই নির্দেশ তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির মাধ্যমে সব বাহিনীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও এর অন্যান্য অঙ্গসংগঠন এবং ১৪-দলীয় জোটের কাছেও এ নির্দেশ চলে যায়। এর আলোকে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়। এর দায়ে শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও মামুনের বিরুদ্ধে সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (সর্বোচ্চ দায়) আওতায় অভিযোগ গঠন করা হয়।
রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি আসাদুজ্জামান ও মামুনকে অভিযুক্ত করা হয়।
রাজধানীর চানখাঁরপুলে আন্দোলনরত নিরীহ-নিরস্ত্র ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায়ও শেখ হাসিনাসহ তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়।
আশুলিয়ায় নিরীহ-নিরস্ত্র ছয়জনকে হত্যার আগুনে পোড়ানোর ঘটনাতেও অভিযুক্ত হয়েছেন শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও মামুন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পোশাকশ্রমিক মিনারুল হত্যাসহ পাঁচটি মামলায় অভিযুক্ত সেলিনা হায়াৎ আইভী। এসব মামলার মধ্যে হত্যার অভিযোগে তিনটি ও মারাত্মক জখমের অভিযোগে দুটি মামলা রয়েছে।
৬ ঘণ্টা আগে
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার রোজিনা আক্তার বলেন, আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ আমাদের কাছে সংবাদ আসে ধোলাইপাড়ে একটি বাসে আগুন লেগেছে।
৬ ঘণ্টা আগে
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করছেন এক ব্যক্তি। পেছন থেকে কোমর থেকে অস্ত্র বের করেন দুজন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই একের পর এক গুলিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন টার্গেট ব্যক্তি। অপারেশন শেষে মোটরসাইকেল নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায় গুলি ছোড়া দুজন।
৬ ঘণ্টা আগে
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ১ হাজার ১৩৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮১ হাজার ৭৭৩ জন।
৭ ঘণ্টা আগে