৮ কোটি টাকার অক্সিজেন প্ল্যান্ট অকেজো, নড়াইলে রোগীদের ভোগান্তি

নড়াইল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৫, ১০: ১৮

নড়াইল সদর হাসপাতালের কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা শুরু থেকেই অকার্যকর। কোভিড-১৯ মহামারির সময় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এই ব্যবস্থা চালু করা হলেও তা রোগীদের কাজে আসেনি। এখনও সিলিন্ডারনির্ভর হয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ১৭৩টি অক্সিজেন পয়েন্টের কোনোটিই সঠিকভাবে কাজ করছে না। ফলে জরুরি অবস্থায় সিলিন্ডারের উপর নির্ভর করতে হয়, যা প্রায়ই ফুরিয়ে যায়। আবার সিলিন্ডার পরিবহন ও সংকটের কারণে প্রতিনিয়ত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় নার্সদের।

হাসপাতালের নার্স ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলার একমাত্র আধুনিকায়িত সদর হাসপাতালটিতে করোনাকালীন রোগীর ভিড় বাড়তে থাকে। সে সময় অধিকাংশ রোগীই শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এর ফলে কৃত্রিম অক্সিজেনের চাহিদা বাড়ে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের জুন মাসে হাসপাতালটিতে হাইফ্লো অক্সিজেন সরবরাহ চালু করা হয়। বিশ্বব্যাঙ্কের সহায়তায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০০ লিটারের অক্সিজেন ট্যাঙ্ক নির্মাণ করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। এরপর হাসপাতালের বিছানা, কেবিন ও জরুরি বিভাগসহ ১৭৩টি স্থানে অক্সিজেন সরবরাহ পয়েন্ট স্থাপন করা হয়। কিন্তু কোনো পয়েন্ট দিয়েই সে সময় অক্সিজেন নির্গত হয়নি।

বর্তমানে হাসপাতালের পেছনের অংশে লতাপাতার ভিড়ে অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে অক্সিজেন ট্যাঙ্কটি। হাসপাতালের ভিতরের সঞ্চালন লাইনে কোথাও মরিচা ধরেছে। আবার সকেটগুলোও ভেঙ্গে পড়ে আছে বিছানার ওপর।

চিকিৎসকরা জানান, বর্তমানে হাসপাতালটিতে কৃত্রিম অক্সিজেনের চাহিদা মেটানো হয় সিলিন্ডার অক্সিজেন দিয়ে। তবে এ ব্যবস্থায় জরুরি অক্সিজেন সেবা দিতে নিত্যদিন হিমশিম খেতে হয় তাদের। কারণ সেখানে সিলিন্ডারের সংকট রয়েছে। পাশাপাশি নিয়মিত সিলিন্ডারভর্তি করতে গিয়ে প্রায়শই বিড়ম্বনায় পড়তে হয় নার্সদের। আবার হঠাৎ করে সিলিন্ডার শেষ হওয়ার আশঙ্কা তো রয়েছেই।

হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, জরুরি প্রয়োজনে যদি অক্সিজেন পাওয়া না যায়, তাহলে হাসপাতালে এসেও চিকিৎসার অভাবে রোগী মারা যাবে। দেশে আবারও করোনার প্রকোপ বাড়ছে। তাই হাসপাতালের অক্সিজেন সরবরাহ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা।

ক্ষোভ প্রকাশ করে রোগীর স্বজনরা বলেন, অক্সিজেন ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও তা কাজে লাগছে না। এতে প্রাণহানির ঝুঁকি বাড়ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, 'হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা থাকতেও জরুরি প্রয়োজনে তা কাজে আসছে না। অনেক সময় হাসপাতালের বিছানায়-ই রোগী মারা যাবার শঙ্কায় থাকতে হয় আমাদের। মাঝেমধ্যে তো এ নিয়ে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে নার্স ও চিকিৎসকদের কথা কাটাকাটি থেকে মারামারির ঘটনা পর্যন্ত ঘটে।'

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন নার্স বলেন, হাসপাতালের অক্সিজেন সিলিন্ডার কখন ফুরিয়ে যায়, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। প্রতিদিন সিলিন্ডার টানাটানি করতেও নানা ঝামেলা পোহাতে হয় তাদের। কখনো কখনো সিলিন্ডারের মিটার নষ্ট হয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ড ও জরুরি বিভাগে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু থাকা আবশ্যক। নতুবা করোনার প্রকোপ বাড়লে অতিরিক্ত রোগীদের সামাল দিতে হিমিশিম খেতে হবে তাদের।

চিকিৎসক ও রোগীদের আশঙ্কা, করোনার প্রকোপ বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।

হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞা ডা. আলিমুজ্জামান সেতু বলেন,কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা না থাকায় হাসপাতালে শিশু রোগীদের অনেক কষ্ট ভোগ করতে হয়। কৃত্রিম অক্সিজেনের অভাবে অনেক শিশু মারাও যায়। এখানে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ থাকলে এই ভোগান্তি থাকতো না।

আগামীতে করোনার প্রকোপ বাড়লে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা নিয়ে জটিলতা আরও বাড়বে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আব্দুল গাফফার বলেন, 'এই কর্মস্থলে যোগদানের পর কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ট্যাঙ্কটিতে দুই দফায় অক্সিজেন ঢালা হয়েছে। কিন্তু ব্যবহারের আগেই সেই অক্সিজেন ফুরিয়ে যায়। কোথাও লিকেজ আছে হয়তো।'

তিনি আরও বলেন, 'বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ কোম্পানিকেও জানিয়েছি। তবে এ ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কোনো পক্ষ-ই। উপায় না পেয়ে আমরা বোতল অক্সিজেন দিয়ে কাজ চালিয়ে নিচ্ছি।'

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

সজীব গ্রুপে কাজের সুযোগ, পদসংখ্যা ২০

২ ঘণ্টা আগে

ডিজিকনে নিয়োগ, পদসংখ্যা ২০

২ ঘণ্টা আগে

হাসিনাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে গুমের অভিযোগ বিএনপির

২০১৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগ পর্যন্ত সংগঠিত ১১টি গুমের সঙ্গে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচার শেখ হাসিনাসহ ওই সময়ে সরকারের শীর্ষ পদে থাকা ১৬ জনের জড়িত থাকার অভিযোগ জানানো হয়েছে।

২ ঘণ্টা আগে

প্রাইম ব্যাংকে চাকরি, স্নাতক পাসেই আবেদন

২ ঘণ্টা আগে