বিজ্ঞান

মশা কেন ভন ভন করে

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
মশার ভনভনানির পেছনেও আছে বিজ্ঞান

রাতের ঘুমের সবচেয়ে বড় শত্রুদের একটি হলো মশা। কিন্তু মশার কামড়ের আগে যেটা আমাদের সচেতন করে তোলে, সেটা হলো তার বিখ্যাত ভনভনানি—একটা টানটান শব্দ, যেটা কানে বাজলে চোখ খুলে যায় ঘুমের মাঝখান থেকেও। অনেকেই এই শব্দকে মশার “গান” বলে মজা করে থাকেন, কিন্তু বাস্তবে এই ভনভন শব্দ কিন্তু কোনো গানের মতো মুখ দিয়ে তৈরি হয় না।

মশার এই ভনভন শব্দ তৈরি হয় তাদের ডানার দ্রুত ঝাপটানো থেকে। একটি মশা প্রতি সেকেন্ডে ২৫০ থেকে ৬০০ বার পর্যন্ত ডানা ঝাপটায়! এই গতি আমাদের কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যায়। ডানার এই কম্পন বাতাসে একটি নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ তরঙ্গ তৈরি করে, যেটাই আমাদের কানে ভনভন করে বাজে।

এই শব্দটিকে আমরা যতই বিরক্তিকর মনে করি না কেন, মশাদের জীবনে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ মশারা এই শব্দ ব্যবহার করেই একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক, ড. লরা হার্লো, মশার শব্দ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে দেখেছেন, ডানার কম্পনের ফ্রিকোয়েন্সি মশাদের জন্য একটি ধরণের "ভাষা"—যার মাধ্যমে তারা সঙ্গী নির্বাচন করে এবং নিজেদের প্রজাতি শনাক্ত করতে পারে।

পুরুষ ও স্ত্রী মশার ডানার কম্পনের গতি এক নয়। সাধারণত স্ত্রী মশার ডানার কম্পনের হার একটু কম হয়। পুরুষ মশারা যখন আকাশে উড়ছে, তখন তারা এই শব্দ শুনেই বুঝে ফেলে আশেপাশে কোনো স্ত্রী মশা আছে কি না এবং সেটা তাদের প্রজাতির কি না। ঠিক এইভাবেই তারা সঙ্গী নির্বাচন করে, এবং প্রজননের জন্য উপযুক্ত জুটি খুঁজে পায়।

বিজ্ঞান কী বলছে?

বিজ্ঞানীরা বলছেন, যদি আমরা মশার এই ধ্বনিগত যোগাযোগ ব্যবস্থার মাঝে হস্তক্ষেপ করতে পারি, তাহলে হয়তো মশা নিয়ন্ত্রণের নতুন উপায় পাওয়া যেতে পারে। যেমন, কৃত্রিমভাবে কোনো নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ তৈরি করে পুরুষ মশাকে বিভ্রান্ত করা যেতে পারে যাতে তারা ভুল স্ত্রী মশাকে অনুসরণ করে। এতে প্রজনন বাধাগ্রস্ত হবে এবং মশার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।

অনেক জায়গায় এই পদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষামূলক গবেষণা চলছে। ভবিষ্যতে এটি কার্যকরভাবে কাজ করলে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া বা ম্যালেরিয়ার মতো মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

আমরা অনেকেই ভনভন শব্দ শুনলেই ভয় পাই, কারণ আমরা জানি এর পরেই মশার কামড় আসতে পারে। কিন্তু এই ছোট্ট শব্দের পেছনে যে এত গভীর বিজ্ঞান আর জৈবিক সংকেত লুকিয়ে আছে, সেটা হয়তো ভাবিনি কখনো। মশাদের ভাষা আসলে শব্দ—একটা অদৃশ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা, যা কানে শোনা গেলেও তার তাৎপর্য বোঝা সহজ নয়।

তাই পরবর্তীবার যখন রাতে ঘুমানোর সময় কানে মশার ভনভনানি শুনবেন, বিরক্ত হওয়ার আগে একটু ভাবুন—এই শব্দটিই মশাদের প্রেম, পরিচয় ও প্রজননের ভাষা। একটা ছোট্ট প্রাণী, যার জীবনধারাও বিজ্ঞান দিয়ে জর্জরিত।

সত্র: নিউ সায়েন্টিস্ট

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়োগ, পদসংখ্যা ৫০

১৩ ঘণ্টা আগে

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে নিয়োগ, লাগবে ৩ বছরের অভিজ্ঞতা

১৩ ঘণ্টা আগে

‘জুলাই অভ্যুত্থান থেকে ডাকসু নির্বাচন পর্যন্ত ডুজা সাহসী ভূমিকা রেখেছে’

সাদিক কায়েম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান থেকে শুরু করে ডাকসু নির্বাচন পর্যন্ত প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ডুজা সাহসী ভূমিকা রেখেছে। আগামী দিনেও ডাকসুকে শিক্ষার্থীদের সত্যিকারের প্রতিনিধি প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে সাংবাদিক সমিতির সহযোগিতা অপরিহার্য।

১৩ ঘণ্টা আগে

মেঘনা ব্যাংকে কাজের সুযোগ, পদসংখ্যা ১২

১৪ ঘণ্টা আগে