আব্দুল্লাহ আল নোমান, টাঙ্গাইল
নানা জটিলতায় এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্পের টাঙ্গাইল অংশের কাজ শেষ হয়নি আট বছরেও। এতে আসছে ঈদুল ফিতরেও ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহসড়কে ভোগান্তিতে পড়তে হতে পারে যাত্রীদের। বিশেষ করে এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত যে সাড়ে ১৩ কিলোমিটার মহাসড়কের কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। ফলে এই অংশে যানজটের আশঙ্কা ঘিরে ধরেছে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের।
পরিবহন চালকরা বলছেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও তদারকির অভাবে কাজের এ ধীরগতি। যাত্রীরাও বলছেন, সঠিক তদারকি হলে প্রতিবছর মহাসড়কে যানজট নামের দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।
তবে নির্মাণকাজে ধীর গতির কথা অস্বীকার করে যথাযথভাবেই কাজ হচ্ছে বলে দাবি করলেন প্রকল্প পরিচালক। অন্যদিকে পুলিশ সুপার জানালেন, ঈদযাত্রায় যান চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে মহাসড়কে সাড়ে সাত শরও বেশি পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। সেই সাথে নেওয়া হবে বিভিন্ন পদক্ষেপ।
ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়ক দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম। রাজধানী ঢাকার সাথে সড়ক পথে উত্তরবঙ্গের একমাত্র যোগাযোগমাধ্যম এই মহাসড়কটি। শুধু ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কের টাঙ্গাইলের অংশ ৬৫ কিলোমিটার। ঈদের সময় উত্তরবঙ্গের লাখো মানুষকে বহনকারী যানবাহনের ভিড়ে এই মহাসড়কে যানজট নিয়মিত চিত্র।
পরিবহনসংশ্লিষ্টদের তথ্য, ঈদের সময় এ মহাসড়ক দিয়ে উত্তরবঙ্গের পথে যাত্রীর পরিমাণ সাধারণ সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। দেশের দক্ষিণপশ্চিম অঞ্চলের কিছু জেলার গাড়িও এ মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করে থাকে। ফলে ঈদের সময় এই মহাসড়কে যানবাহনের চাপ থাকে অনেক বেশি। তাই ফল হিসেবে তৈরি হয় দীর্ঘ যানজট।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ঈদযাত্রার সময় প্রতিবছরই তীব্র যানজট দেখা দেয়। ছবি: রাজনীতি ডটকম
ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কের ঈদযাত্রা স্বাচ্ছন্দ্য করতে পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। এবারের ঈদে মহাসড়কে চারটি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। মহাসড়কে সাড়ে সাত শ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। লিংক রোডগুলোতে বসানো হবে বাঁশ কল। পুলিশের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করবে টাঙ্গাইল শ্রমিক ফেডারেশন।
পুলিশের ব্যাপক প্রস্তুতির পরও যানজটের আশঙ্কা করছেন এই সড়কে চলাচলকারী পরিবহন চালক ও সাধারণ যাত্রীরা। পরিবহন চালকরা বলছেন, ঈদ এলেই তড়িঘড়ি করে শুরু হয় কাজ। তাড়াহুড়ো করে করা কাজের কারণে সড়ক পুরোপুরি প্রস্তুত থাকে না। এতে গাড়ির গতি ঠিক থাকে না, দেবে যাওয়া রাস্তায় গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।
তারা আরও বলছেন, মহাসড়কের চার লেনের কাজ শেষ হয়েছে এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত। এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত চার লেনের কাজ চলমান। এই অংশটিই এই মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট তৈরির জন্য যথেষ্ট।
এ বছর এখনো টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু অংশের মহাসড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় রয়েছে যানজটের আশঙ্কা। ছবি: রাজনীতি ডটকম
পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মহাসড়কের কাজের পাশাপাশি আরও কয়েকটি বিষয় যানজটের ওপর প্রভাব ফেলে। যমুনা সেতুতে টোল আদায়ের সফটওয়ারে সমস্যার কারণে টোল আদায় দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকলে তা যানজট তৈরি করে। সেতুর ওপর কোনো কারণে দীর্ঘ সময় গাড়ি আটকা থাকলেও যানজট তৈরি হয়। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম তথা সিরাজগঞ্জের অংশে গাড়ি ঠিকমতো বের হতে না পারলেও যানজট তৈরি হবে।
তারা বলছেন, গত কয়েক ঈদে সিরাজগঞ্জ অংশ দিয়ে গাড়ি ঠিকমতো বের হতে না পারায় বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল আদায় বন্ধ থাকে। এতে করে টাঙ্গাইলের অংশেও দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। ফলে শুধু টাঙ্গাইল অংশ নয়, সিরাজগঞ্জও ঈদযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এদিকে প্রতি বছরই ঈদ সামন রেখে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সড়কে লক্করঝক্কর ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি বের করে। এসব গাড়ি হঠাৎ করেই মহাসড়কে বিকল হয়ে যায়। এতে দুপাশের গাড়ি থেমে পড়ে। এক পর্যায়ে তীব্র যানজট তৈরি হয়। অনেক সময় চালকের অদক্ষতা, সড়ক দুর্ঘটনা ও গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণেও যানজট হয়।
ঈদ সামনে রেখে এই মহাসড়কের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। তবু যানজটের আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারছেন না চালকসহ পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। ছবি: রাজনীতি ডটকম
ঈদযাত্রার আগে এই মহাসড়কের কী অবস্থা, সেটি সরেজমিনে জানতে এই প্রতিবেদক মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখেন। দেখা যায়, এলেঙ্গার পর থেকে বিভিন্ন পয়েন্টে কাজ চলছে। ঈদ উপলক্ষ্যে অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। উত্তরবঙ্গগামী লেনে পুরোদমে কাজ চলছে। বিশেষ করে ব্রিজের কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। ঢাকাগামী লেন দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।
মহাসড়কের আনালিয়াবাড়ী এলাকায় ব্রিজের কাজ করছিলেন শ্রমিক সেলিম। জানতে চাইলে তিনি রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ১৮ তারিখের মধ্যে ব্রিজের কাজ শেষ করতে হবে। আমরা আটজন শ্রমিক মিলে এখানে সার্বক্ষণিক কাজ করছি। আশা করছি যথাসময়ে কাজ শেষ হবে।
ধলাটেঙ্গর এলাকায় কাজ করছিলেন শ্রমিক খলিলুর ও সজিব। তারা বলেন, কয়েকদিন দিন ধরে আমাদের কাজ করার জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। আমরা যত দ্রুত সম্ভব কাজ করছি।
উত্তরবঙ্গগামী এসএন পরিবহনের এক বাসচালক বলেন, এই রাস্তায় প্রতিবছরই আমাদের যানজটে পড়তে হয়। গত বছরও পড়েছি। এবার দেখলাম এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত কাজ করছে। ঈদের সপ্তাহখানেক আগে কাজ শেষ না হলে এবারও যানজট হবে। কাজ শেষ হলেও যানজট প্রতিরোধে পুলিশের সঠিক তদারকি প্রয়োজন।
আরেক বাসচালক বলেন, সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকার কারণে এবারও যানজট হবে। পুলিশকে আরও দায়িত্বশীল হয়ে কাজ করতে হবে। ৫ আগস্টের পর সারাদেশে পুলিশের ভূমিকা কম দেখা যাচ্ছে। ঈদযাত্রাতেও একই চিত্র থাকলে যানজট হবে।
আবদুল মোনেম লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার রবিউল আওয়াল রাজনীতি ডটকমকে বলেন, এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত মহাসড়কের ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তবে ঈদের আগেই মহাসড়কের এই অংশের উত্তরঙ্গগামী পুরো লেন চলাচলের জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে। আশা করছি, ২৫ মার্চ থেকে এই লেনে যানবাহন চলাচল করতে পারবে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে যেসব গাড়ি ঢুকবে, সেগুলো বের হবে এলেঙ্গা-হাটিকুমড়ুল-রংপুর মহাসড়ক অংশ দিয়ে। এই অংশের চার লেনের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় ২০১৬ সালে। তবে টেন্ডার জটিলতায় কাজ শুরু হয় ২০২১ সালে। মাটি ভরাটের কিছু সমস্যা থাকায় এই অংশে কোনো কোনো জায়গায় কাজ করতে সমস্যা হয়েছে।
এই অংশের চার লেন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ওয়ালিউর রহমান রাজনীতি ডটকমকে বলেন, সমস্যাগুলো কাটিয়ে কাজ চলছে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে আমরা আশা করছি, এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারব। তবে সার্ভিস লেনের কাজ ঈদের আগেই শেষ হয়ে যাবে। ফলে এবারের ঈদযাত্রাতেই চার লেনের সুবিধা পাবে সবাই।
টাঙ্গাইল জেলা বাস কোচ মিনিবাস মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেন বলেন, মহাসড়কে কমবেশি যানজট হবেই। তবে যানজট যেন সহনীয় পর্যায়ে থাকে, সেদিকে পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের নজর ও ভূমিকা রাখতে হবে। যানজট হলেই নিরসনের জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। পুলিশের সঙ্গে এবারও আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করবেন।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানসহ কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরাও বলছেন, তারা ঈদের আগে যত দ্রুতসম্ভব সড়কের কাজ শেষ করে ফেলতে চান। পুলিশও সড়ক যানজটমুক্ত রাখতে সচেষ্ট থাকবে বলে জানিয়েছে। ছবি: রাজনীতি ডটকম
যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল জানালেন, সাধারণরত প্রতিদিন যমুনা সেতু দিয়ে গড়ে ২০ থেকে ২১ হাজার যানবাহন পারাপার হয়। ঈদযাত্রায় সেই সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ কিংবা তারও বেশি হয়ে যায়।
আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, ঈদযাত্রায় যমুনা সেতু দিয়ে সার্বক্ষণিক টোল চালু রাখার চেষ্টা করা হবে। এবার সেতুর দুই প্রান্তে ৯টি করে বুথ দিয়ে যানবাহন পারাপার হবে। এর মধ্যে মোটরসাইকেলের জন্য দুটি করে আলাদা বুথ থাকবে। আশা করছি, যানবাহনগুলো নির্বিঘ্নে সেতু পার হবে।
জানতে চাইলে সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সিনথিয়া আজমিরী খান রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ঈদের ১০ দিন আগে থেকে মহাসড়কের মেরামতের কাজ বন্ধ থাকবে। এ ছাড়াও গোবিন্দাসী সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্যও প্রস্তত রাখা হবে। আশা করা যায়, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হবে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান রাজনীতি ডটকমকে বলেন, এরই মধ্যে আমরা যানজট নিরসনে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। যানজট নিরসনে টাঙ্গাইলের অংশে ৬৫ কিলোমিটারে জেলা পুলিশের ৭৫০ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। মহাসড়কে মোবাইল টিম ও প্রিকেট টিমও কাজ করবেন। এ ছাড়া মহাসড়কে চারটি সেক্টর ভাগ করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, ২৫ মার্চ থেকে মহাসড়কে পুলিশ ২৪ ঘণ্টা কাজ করবে। ঈদের পরও যানজট নিরসনে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। আশা করছি মহাসড়কে যানজট হবে না।
নানা জটিলতায় এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্পের টাঙ্গাইল অংশের কাজ শেষ হয়নি আট বছরেও। এতে আসছে ঈদুল ফিতরেও ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহসড়কে ভোগান্তিতে পড়তে হতে পারে যাত্রীদের। বিশেষ করে এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত যে সাড়ে ১৩ কিলোমিটার মহাসড়কের কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। ফলে এই অংশে যানজটের আশঙ্কা ঘিরে ধরেছে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের।
পরিবহন চালকরা বলছেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও তদারকির অভাবে কাজের এ ধীরগতি। যাত্রীরাও বলছেন, সঠিক তদারকি হলে প্রতিবছর মহাসড়কে যানজট নামের দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।
তবে নির্মাণকাজে ধীর গতির কথা অস্বীকার করে যথাযথভাবেই কাজ হচ্ছে বলে দাবি করলেন প্রকল্প পরিচালক। অন্যদিকে পুলিশ সুপার জানালেন, ঈদযাত্রায় যান চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে মহাসড়কে সাড়ে সাত শরও বেশি পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। সেই সাথে নেওয়া হবে বিভিন্ন পদক্ষেপ।
ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়ক দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম। রাজধানী ঢাকার সাথে সড়ক পথে উত্তরবঙ্গের একমাত্র যোগাযোগমাধ্যম এই মহাসড়কটি। শুধু ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কের টাঙ্গাইলের অংশ ৬৫ কিলোমিটার। ঈদের সময় উত্তরবঙ্গের লাখো মানুষকে বহনকারী যানবাহনের ভিড়ে এই মহাসড়কে যানজট নিয়মিত চিত্র।
পরিবহনসংশ্লিষ্টদের তথ্য, ঈদের সময় এ মহাসড়ক দিয়ে উত্তরবঙ্গের পথে যাত্রীর পরিমাণ সাধারণ সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। দেশের দক্ষিণপশ্চিম অঞ্চলের কিছু জেলার গাড়িও এ মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করে থাকে। ফলে ঈদের সময় এই মহাসড়কে যানবাহনের চাপ থাকে অনেক বেশি। তাই ফল হিসেবে তৈরি হয় দীর্ঘ যানজট।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ঈদযাত্রার সময় প্রতিবছরই তীব্র যানজট দেখা দেয়। ছবি: রাজনীতি ডটকম
ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কের ঈদযাত্রা স্বাচ্ছন্দ্য করতে পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। এবারের ঈদে মহাসড়কে চারটি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। মহাসড়কে সাড়ে সাত শ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। লিংক রোডগুলোতে বসানো হবে বাঁশ কল। পুলিশের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করবে টাঙ্গাইল শ্রমিক ফেডারেশন।
পুলিশের ব্যাপক প্রস্তুতির পরও যানজটের আশঙ্কা করছেন এই সড়কে চলাচলকারী পরিবহন চালক ও সাধারণ যাত্রীরা। পরিবহন চালকরা বলছেন, ঈদ এলেই তড়িঘড়ি করে শুরু হয় কাজ। তাড়াহুড়ো করে করা কাজের কারণে সড়ক পুরোপুরি প্রস্তুত থাকে না। এতে গাড়ির গতি ঠিক থাকে না, দেবে যাওয়া রাস্তায় গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।
তারা আরও বলছেন, মহাসড়কের চার লেনের কাজ শেষ হয়েছে এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত। এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত চার লেনের কাজ চলমান। এই অংশটিই এই মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট তৈরির জন্য যথেষ্ট।
এ বছর এখনো টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু অংশের মহাসড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় রয়েছে যানজটের আশঙ্কা। ছবি: রাজনীতি ডটকম
পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মহাসড়কের কাজের পাশাপাশি আরও কয়েকটি বিষয় যানজটের ওপর প্রভাব ফেলে। যমুনা সেতুতে টোল আদায়ের সফটওয়ারে সমস্যার কারণে টোল আদায় দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকলে তা যানজট তৈরি করে। সেতুর ওপর কোনো কারণে দীর্ঘ সময় গাড়ি আটকা থাকলেও যানজট তৈরি হয়। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম তথা সিরাজগঞ্জের অংশে গাড়ি ঠিকমতো বের হতে না পারলেও যানজট তৈরি হবে।
তারা বলছেন, গত কয়েক ঈদে সিরাজগঞ্জ অংশ দিয়ে গাড়ি ঠিকমতো বের হতে না পারায় বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল আদায় বন্ধ থাকে। এতে করে টাঙ্গাইলের অংশেও দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। ফলে শুধু টাঙ্গাইল অংশ নয়, সিরাজগঞ্জও ঈদযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এদিকে প্রতি বছরই ঈদ সামন রেখে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সড়কে লক্করঝক্কর ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি বের করে। এসব গাড়ি হঠাৎ করেই মহাসড়কে বিকল হয়ে যায়। এতে দুপাশের গাড়ি থেমে পড়ে। এক পর্যায়ে তীব্র যানজট তৈরি হয়। অনেক সময় চালকের অদক্ষতা, সড়ক দুর্ঘটনা ও গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণেও যানজট হয়।
ঈদ সামনে রেখে এই মহাসড়কের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। তবু যানজটের আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারছেন না চালকসহ পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। ছবি: রাজনীতি ডটকম
ঈদযাত্রার আগে এই মহাসড়কের কী অবস্থা, সেটি সরেজমিনে জানতে এই প্রতিবেদক মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখেন। দেখা যায়, এলেঙ্গার পর থেকে বিভিন্ন পয়েন্টে কাজ চলছে। ঈদ উপলক্ষ্যে অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। উত্তরবঙ্গগামী লেনে পুরোদমে কাজ চলছে। বিশেষ করে ব্রিজের কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। ঢাকাগামী লেন দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।
মহাসড়কের আনালিয়াবাড়ী এলাকায় ব্রিজের কাজ করছিলেন শ্রমিক সেলিম। জানতে চাইলে তিনি রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ১৮ তারিখের মধ্যে ব্রিজের কাজ শেষ করতে হবে। আমরা আটজন শ্রমিক মিলে এখানে সার্বক্ষণিক কাজ করছি। আশা করছি যথাসময়ে কাজ শেষ হবে।
ধলাটেঙ্গর এলাকায় কাজ করছিলেন শ্রমিক খলিলুর ও সজিব। তারা বলেন, কয়েকদিন দিন ধরে আমাদের কাজ করার জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। আমরা যত দ্রুত সম্ভব কাজ করছি।
উত্তরবঙ্গগামী এসএন পরিবহনের এক বাসচালক বলেন, এই রাস্তায় প্রতিবছরই আমাদের যানজটে পড়তে হয়। গত বছরও পড়েছি। এবার দেখলাম এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত কাজ করছে। ঈদের সপ্তাহখানেক আগে কাজ শেষ না হলে এবারও যানজট হবে। কাজ শেষ হলেও যানজট প্রতিরোধে পুলিশের সঠিক তদারকি প্রয়োজন।
আরেক বাসচালক বলেন, সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকার কারণে এবারও যানজট হবে। পুলিশকে আরও দায়িত্বশীল হয়ে কাজ করতে হবে। ৫ আগস্টের পর সারাদেশে পুলিশের ভূমিকা কম দেখা যাচ্ছে। ঈদযাত্রাতেও একই চিত্র থাকলে যানজট হবে।
আবদুল মোনেম লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার রবিউল আওয়াল রাজনীতি ডটকমকে বলেন, এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত মহাসড়কের ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তবে ঈদের আগেই মহাসড়কের এই অংশের উত্তরঙ্গগামী পুরো লেন চলাচলের জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে। আশা করছি, ২৫ মার্চ থেকে এই লেনে যানবাহন চলাচল করতে পারবে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে যেসব গাড়ি ঢুকবে, সেগুলো বের হবে এলেঙ্গা-হাটিকুমড়ুল-রংপুর মহাসড়ক অংশ দিয়ে। এই অংশের চার লেনের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় ২০১৬ সালে। তবে টেন্ডার জটিলতায় কাজ শুরু হয় ২০২১ সালে। মাটি ভরাটের কিছু সমস্যা থাকায় এই অংশে কোনো কোনো জায়গায় কাজ করতে সমস্যা হয়েছে।
এই অংশের চার লেন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ওয়ালিউর রহমান রাজনীতি ডটকমকে বলেন, সমস্যাগুলো কাটিয়ে কাজ চলছে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে আমরা আশা করছি, এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারব। তবে সার্ভিস লেনের কাজ ঈদের আগেই শেষ হয়ে যাবে। ফলে এবারের ঈদযাত্রাতেই চার লেনের সুবিধা পাবে সবাই।
টাঙ্গাইল জেলা বাস কোচ মিনিবাস মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেন বলেন, মহাসড়কে কমবেশি যানজট হবেই। তবে যানজট যেন সহনীয় পর্যায়ে থাকে, সেদিকে পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের নজর ও ভূমিকা রাখতে হবে। যানজট হলেই নিরসনের জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। পুলিশের সঙ্গে এবারও আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করবেন।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানসহ কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরাও বলছেন, তারা ঈদের আগে যত দ্রুতসম্ভব সড়কের কাজ শেষ করে ফেলতে চান। পুলিশও সড়ক যানজটমুক্ত রাখতে সচেষ্ট থাকবে বলে জানিয়েছে। ছবি: রাজনীতি ডটকম
যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল জানালেন, সাধারণরত প্রতিদিন যমুনা সেতু দিয়ে গড়ে ২০ থেকে ২১ হাজার যানবাহন পারাপার হয়। ঈদযাত্রায় সেই সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ কিংবা তারও বেশি হয়ে যায়।
আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, ঈদযাত্রায় যমুনা সেতু দিয়ে সার্বক্ষণিক টোল চালু রাখার চেষ্টা করা হবে। এবার সেতুর দুই প্রান্তে ৯টি করে বুথ দিয়ে যানবাহন পারাপার হবে। এর মধ্যে মোটরসাইকেলের জন্য দুটি করে আলাদা বুথ থাকবে। আশা করছি, যানবাহনগুলো নির্বিঘ্নে সেতু পার হবে।
জানতে চাইলে সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সিনথিয়া আজমিরী খান রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ঈদের ১০ দিন আগে থেকে মহাসড়কের মেরামতের কাজ বন্ধ থাকবে। এ ছাড়াও গোবিন্দাসী সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্যও প্রস্তত রাখা হবে। আশা করা যায়, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হবে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান রাজনীতি ডটকমকে বলেন, এরই মধ্যে আমরা যানজট নিরসনে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। যানজট নিরসনে টাঙ্গাইলের অংশে ৬৫ কিলোমিটারে জেলা পুলিশের ৭৫০ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। মহাসড়কে মোবাইল টিম ও প্রিকেট টিমও কাজ করবেন। এ ছাড়া মহাসড়কে চারটি সেক্টর ভাগ করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, ২৫ মার্চ থেকে মহাসড়কে পুলিশ ২৪ ঘণ্টা কাজ করবে। ঈদের পরও যানজট নিরসনে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। আশা করছি মহাসড়কে যানজট হবে না।
সরকারিভাবে ওষুধ সরবরাহ না থাকায় তৃণমূলের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে। প্রায় আট মাস ধরে কেন্দ্রগুলোতে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ থাকায় তৃণমূলে বসবাসকারী অবহেলিত মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে- এমনটাই আশঙ্কা করছে সচেতন মহল।
১৮ ঘণ্টা আগেযশোরের শার্শা উপজেলার সীমান্তবর্তী গোগা ও বেনাপোলের পুটখালী ইউনিয়নের বারোপোতা বাজারের ছয়টি করাত কল বন্ধ করে দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পরিবেশ আইনবিরোধী এসব করাত কলের কোনোটিরই বন বিভাগের অনুমোদন ছিল না।
১৯ ঘণ্টা আগেইমিগ্রেশন সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে ভারতে যাওয়ার সময় ইমিগ্রেশনের ডেস্কে পাসপোর্ট জমা দেন রিপন। তার পাসপোর্টে স্টপ লিস্ট থাকায় ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। পরে তার বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানার দুটি মামলার তথ্য পাওয়া গেলে তাকে বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ গ্রেপ্তার দেখায়। পরে তাকে বেন
১ দিন আগেমাদকাসক্ত সন্তানকে আসক্তি থেকে ফিরিয়ে ভালো পথে আনতে অনেক চেষ্টা করেছেন বাবা। কাজে আসেনি কোনো চেষ্টাই। বরং দিন দিন ছেলের অত্যাচার-নির্যাতন বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে নিজেই খবর দিয়ে পুলিশ ডেকে তাদের হাতে ছেলেকে তুলে দিয়েছেন বাবা।
১ দিন আগে