বাজেটে আশাহত ডিসিসিআই-ফিকি, বিজিএমইএ বলছে ইতিবাচক

প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম

অর্থ উপদেষ্টা প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে আশাবাদী হতে পারছে না ব্যবসায়ীদের সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। উদ্বেগ জানিয়েছে ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিও (ফিকি)। তবে বিজিএমইর পক্ষ থেকে বাজেটকে ইতিবাচক অভিহিত করা হয়েছে।

ডিসিসিআই বলছে, প্রস্তাবিত বাজেট সার্বিক ব্যবসা ও বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে খুব একটা সহায়ক হবে না।

বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা জানিয়ে ফিকি বলছে, বাজেটে যেসব প্রস্তাব এসেছে তার কোনো কোনোটি ব্যবসায়িক সম্প্রসারণকে প্রতিকূলভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

অন্যদিকে বিজিএমইএ বলছে. বাজেটে মূল্যস্ফীতি নামিয়ে আনার লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা গেলে পোশাক কর্মীসহ দেশের স্বল্প আয়ের মানুষ উপকৃত হবে।

সোমবার (২ জুন) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট উত্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। প্রস্তাবিত এ বাজেট চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় সাত হাজার কোটি টাকা কম। এবারই প্রথম আগের অর্থবছরের তুলনায় বাজেট আকারে ছোট হয়েছে।

বাজেট আশাব্যঞ্জক নয়: ডিসিসিআই সভাপতি

প্রস্তাবিত বাজেটে বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, সহজে ব্যবসা পরিচালনার পরিবেশ উন্নয়ন, সিএমএসএমই বা ব্যাংকিং খাত সংস্কারের কোনোটিতেই ‘সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা’ নেই বলে মনে করছেন ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ। তার মতে, এ বাজেট সার্বিক ব্যবসা ও বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে ততটা সহায়ক নয়।

বাজেট ঘোষণার পর ডিসিসিআই মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ডিসিসিআই।

প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ন্যূনতম করের সমন্বয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনুমোদনযোগ্য বিয়োজনের আওতা বৃদ্ধি, করজাল সম্প্রসারণ ও অটোমেটেড রিটার্ন ব্যবস্থা চালুকে ইতিবাচক পদক্ষেপ মনে করছেন ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন। তবে বাজেটে অনেকক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের অনুপস্থিতির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যিক কার্যক্রম বেশ চাপের মধ্যে থাকতে পারে বলে অভিমত তার।

তাসকীন বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা বেশ বড়, যা অর্জন বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে। ব্যক্তি পর্যায়ের করের সীমা অপরিবর্তিত রাখা এবং স্ল্যাব উঠিয়ে নেওয়ায় মধ্যবিত্ত ও বিশেষ করে চাকরিজীবীদের করের বোঝা আগামী অর্থবছর থেকে আরো বেশি বহন করতে হবে।

ডিসিসিআিই সভাপতি বলেন, অটোমোবাইল খাতে খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানির ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করায় এ খাতের স্থানীয় উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। টার্নওভার কর শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করার সিদ্ধান্তকেও পুনর্বিবেচনার দাবি জানান তিনি।

তাসকীন বলেন, ইন্টারনেট ব্যবহারে খরচ কমলেও স্থানীয়ভাবে মোবাইল ফোন উৎপাদনে ভ্যাট বাড়ানোয় এ শিল্পের বিকাশ ব্যাহত হবে। বাজেটে মূল্যস্ফীতি হ্রাসে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালন ব্যয় বাড়বে, যা সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির গতিকে মন্থর করবে।

ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়ার খরচ ৬-৭ শতাংশে নামিয়ে আনার জন্য উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তাসকীন আহমেদ। বলেন, আর্থিক খাত থেকে সরকারের বেশি হারে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যার মধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ হ্রাস হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। এসএমই খাতের উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট কোনো রোডম্যাপও এ বাজেটে দেখছেন না তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে ডিসিসিআইয়ের ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহসভাপতি মো. সালিম সোলায়মানসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে: ফিকি

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থ অধ্যাদেশে অগ্রগতির প্রশংসা করেছে ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি)। তবে বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে শঙ্কাও প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।

সোমবার বাজেট ঘোষণার পর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ফিকি। সংগঠনটি বলছে, কিছু ইতিবাচক দিক চিহ্নিত করলেও কয়েকটি বিষয়ে তাদের উদ্বেগ রয়েছে, যা ব্যবসায়িক সম্প্রসারণকে প্রতিকূলভাবে প্রভাবিত করতে পারে এবং অনুগত করদাতাদের ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ করতে পারে।

বাজেটের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরে ফিকি বলছে, অর্থ অধ্যাদেশ-২০২৫ এ নির্দিষ্ট খাতের ওপর চাপ কমানো এবং আরও নির্ভরযোগ্য কর ব্যবস্থা তৈরির প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করেছে। নির্মাণ কোম্পানি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ওপর উৎসে কর হ্রাস একটি বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ।

এসব পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ শিল্পগুলোকে স্বস্তি দেবে বলে মনে করছে ফিকি। যৌথ উদ্যোগ থেকে পাওয়া লভ্যাংশের ওপর উৎস কর আরোপ না করা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী কোম্পানিগুলোর জন্য সুসংবাদ বলেও মনে করছে সংগঠনটি।

আন্তর্জাতিক কর ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দ্বৈতকর পরিহার চুক্তিকে আয়কর আইন ২০২৩-এর ওপর প্রাধান্য দেওয়ার উদ্যোগকেও সাধুবাদ জানিয়েছে ফিকি। তবে অর্থ অধ্যাদেশের বেশ কিছু ‘বিতর্কিত’ বিষয় রয়েছে বলেও মনে করছে সংগঠনটি।

ফিকি বলছে, পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানিগুলোর মধ্যে যাদের শেয়ারের ১০ শতাংশের কম আইপিওর মাধ্যমে ইস্যু করা হয়েছে, তাদের জন্য অতিরিক্ত সাড়ে সাত শতাংশ কর আরোপের প্রস্তাব উদ্বেগজনক। বর্ধিত হারে এই করের প্রভাব বৈষম্যমূলক।

ব্যাংকিং মাধ্যমে লেনদেন নিশ্চিত করার জন্য হ্রাসকৃত করহার পাওয়ার সুবিধা বাদ দেওয়া হয়েছে বাজেটে। ফিকি বলছে, এর ফলে করের হার সাড়ে ২৭ শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব আনুষ্ঠানিক অর্থনীতি গড়ে তোলার জাতীয় প্রচেষ্টার বিপরীত। সেই সঙ্গে এর ফলে ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার মতো অর্থনীতির তুলনায় বাংলাদেশকে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দেবে।

আয়কর স্ল্যাবে পরিবর্তন আনায় বেতনভোগী করদাতাদের ওপর প্রভাব পড়বে বলে হতাশা প্রকাশ করেছে ফিকি। সংগঠনটি বলছে, যদিও প্রাথমিক স্তরে করমুক্ত আয়ের সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে, কিন্তু সামগ্রিক পরিবর্তন বিবেচনায় মধ্য আয়ের করদাতাদের ওপরে এটি অতিরিক্ত করের বোঝা তৈরি করবে।

অনলাইন বিক্রির ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে, যা দেশের অনলাইন ব্যবসার কোম্পানিগুলোকে হুমকির মুখে ফেলবে বলে মনে করছে ফিকি। তবে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে বিনিয়োগ প্রকল্প উৎসাহিত করার জন্য বাজেটে পিপিপি তহবিলে পাঁচ হাজার ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করে সংগঠনটি।

বাজেট ইতিবাচক: বিজিএমইএ

বাজেট নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রশাসক আনোয়ার হোসেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট লক্ষ্যবিলাষী ধারণা থেকে সরে এসে সামগ্রিক উন্নয়ন, বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুশাসন, নাগরিক সুবিধা, কর্মসংস্থান তৈরি, পাশাপাশি চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ প্রভৃতির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। বিজিএমইএ মনে করে, এগুলো বাজেটের অনন্য দিক।

বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে পোশাক কর্মীসহ দেশের স্বল্প আয়ের মানুষরা উপকৃত হবেন বলে মনে করছেন বিজিএমইএ প্রশাসক। সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতায় কিছু কর্মসূচিতে ভাতার পরিমাণ ও উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানোকেও ইতিবাচক বলে তিনি মনে করেন।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে কমানোর লক্ষ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সার্বিক ব্যয় ১০ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। আগামীতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়টি শিল্পের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন বিজিএমইএর প্রশাসক।

আনোয়ার হোসেন বলেন, এলএনজির আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি পেট্রোলিয়াম ও ডিজেলের আমদানি শুল্কও উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো হয়েছে। আমরা মনে করি, ভোক্তা পর্যায়ে এর সুফল পৌঁছাবে এবং প্রত্যক্ষভাবে শিল্পের উৎপাদন ব্যয় কমবে। সর্বোপরি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

ad
ad

অর্থের রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

সোনার দাম ভরিতে কমল সাড়ে ৫ হাজার টাকা

এতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবী (পিওর গোল্ড) সোনার মূল্য হ্রাস পেয়েছে। সে কারণে সোনার দাম সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাজুস। নতুন মূল্য অনুযায়ী, ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম এক লাখ ৯৮ হাজার ৮০১ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম এক লাখ ৭০ হাজার ৩৯৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম এক লাখ ৪১

৪ দিন আগে

পুঁজিবাজারে মহামারি—শেয়ারমূল্য তলানিতে

অন্যদিকে অনুরুদ্ধ কুমারা দিশানায়েকে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে দেউলিয়া শ্রীলঙ্কার অর্থ–সামাজিক–রাজনৈতিক সূচককে সম্মানজনক উচ্চতায় তুলেছেন। দিশানায়েক নোবেলপ্রাপ্ত নন; আন্তর্জাতিক বাজারের ভাষ্যকারও নন। তবু তিনি নিজ দেশে দৃশ্যমান উন্নয়ন ঘটিয়েছেন।

৫ দিন আগে

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা হবে দুই পর্বে

এ বছর গ্লোবাল সোর্সিং এক্সপো হবে ১ থেকে ৩ ডিসেম্বর। আর ডিটিএফ শুরু হবে আগামী ১ জানুয়ারি। উভয় মেলাই পূর্বাচলের বাংলাদেশ–চীন ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টা

৫ দিন আগে

ফের সোনার দামে লাফ, ভরিতে বাড়ছে ৫ হাজার টাকার বেশি

নতুন দাম অনুযায়ী, দেশের বাজারে প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেট সোনার দাম পড়বে দুই লাখ ১৩ হাজার ৭১৯ টাকা। এ ছাড়া ২১ ক্যারেট সোনার দাম প্রতি ভরি দুই লাখ ৪ হাজার ৩ টাকা, ১৮ ক্যারেট সোনার দাম প্রতি ভরি এক লাখ ৭৪ হাজার ৮৫৫ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম এক লাখ ৪৫ হাজার ৫২০ টাকা।

৬ দিন আগে