অ্যাকাউন্টে ১৩৪ কোটি টাকা— ‘মিসলিডিং হেডিং’য়ে বিস্মিত মুন্নী সাহা

প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম
ব্যাংক অ্যাকাউন্টের খবর নিয়ে বিস্তারিত বক্তব্য তুলে ধরে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন মুন্নী সাহা। ছবি কোলাজ: রাজনীতি ডটকম

‘মুন্নী সাহার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১৩৪ কোটি টাকা’— বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমন খবরের পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিক মুন্নী সাহা নিজেই বক্তব্য দিয়েছেন। বক্তব্যে ওই অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন তিনি। গণমাধ্যমগুলো ‘মিসলিডিং হেডিং’ দিয়ে এ ঘটনায় সংবাদ পরিবেশন করেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বুধবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এ সংক্রান্ত পোস্ট দিয়েছেন মুন্নী সাহা। বলেন, দেশের অনেকগুলো নিউজ পোর্টাল এবং দৈনিকে আমার অ্যাকাউন্টে কত টাকা, তা নিয়ে কিছু মিসলিডিং হেডলাইন দেখে বিস্মিত হয়েছি।

মুন্নী সাহা লিখেছেন, অনেকেই আমার অ্যাকাউন্টে ১৩৪ কোটি টাকা— এমন ফটোকার্ড বানিয়ে ক্লিক নিচ্ছেন, যেখানে রিপোর্টে পরিষ্কার করেই লিখেছেন, মুন্নী সাহার স্বামীর বিজনেস অ্যাকাউন্ট এম এস প্রমোশনসের লেনদেনের কথা। ‘লেনদেন’ শব্দটি আমাদের বন্ধুরা নিশ্চয়ই বোঝেন।

অ্যাকাউন্টটির সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতা নেই উল্লেখ করে মুন্নী সাহা লিখেছেন, কবীর হোসেন তাপস একজন ব্যবসায়ী। ২০০২ সাল থেকে তার বিজ্ঞাপনী সংস্থা। ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্ট খুলতে গিয়ে শুধু নমিনি হিসেবে আমার নাম দিয়েছেন। তার কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমার কোনো পার্টনারশিপ নেই। আমি তার কোনো গ্যারান্টারও নই। ২০০৭ সালে তিনি প্রমোশন নামে আরেকটি কোম্পানি খোলেন। আবারও বলছি, ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্ট খুলতে গিয়ে শুধু নমিনি হিসেবেই আমার নাম দিয়েছেন। তার কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমার কোনো পার্টনারশিপ নেই।

ওই অ্যাকাউন্টের স্থিতি ও লেনদের তথ্যও পোস্টে তুলে ধরেছেন মুন্নী সাহা। লিখেছেন, তিনি (কবীর হোসেন তাপস) ওয়ান ব‍্যাংকের সঙ্গে যে টোটাল লেনদেন করেন, সেটি ১৩৪ কোটি। এটি মোট লেনদেনের পরিমাণ। এই টাকা কখনোই জমা ছিল না। বাংলাদেশের বাস্তবতায় একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার এই দীর্ঘ সময়ে লেনদেন, মানে ট্রানজেকশন মাত্র ১৩৪ কোটি টাকা! ব্যবসায়ী হিসেবেও খুব সফল বলা যায় না। কোনো কোনো রিপোর্টে কৌশলে লিখেছে যে ৫ আগস্টের আগে ১২০ কোটি টাকা তোলা হয়েছে। সেটাও যে লেনদেন, মানে ২২ বছরের বেতন, বিল, ভাড়া, খরচ সবকিছু বাবদ— ২২ বছরের প্রতি মাসে মাসে হিসেবে তোলা, সেটি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে, শুধুমাত্র ভুল বার্তা দেওয়ার জন্য করা হয়েছে— সেটা আশ্চর্য হয়ে লক্ষ করেছি।

ফেসবুক পোস্টে বলা হয়েছে, যেকোনো রাজনৈতিক পালাবদলে বাংলাদেশ ব্যাংক ফাইন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট যে কারও হিসাবই চাইতে পারে। সেই তালিকায় সাংবাদিক হিসেবে অনেকের সঙ্গে আমার নাম ছিল। এবং কর্তৃপক্ষ দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে অনুসন্ধান করেছে বলে আমার বিশ্বাস। একজন সংবাদকর্মী হিসেবে মনে করি, বাংলাদেশের যেকোনো ব্যবসায়ীর দীর্ঘ দিনের স্ট্যাবল ব্যবসায় লেনদেন ১৩৪ কোটি টাকা ও সঞ্চয় ১৪ কোটি টাকা কোনো গুরুত্বই বহন করে না। শুধু আমার নামটি নমিনিতে ব্যবহার করায় একজন ব্যক্তি ব্যবসায়ী সামাজিক হেনস্থার শিকার হয়েছেন, এখনো তার লেনদেন ব্যাহত হচ্ছে।

গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরের সমালোচনা করে পোস্টে মুন্নী লিখেছেন, আমি জানি, এ ঘটনায় আমি যত ব্যাখ্যাই দিই না কেন, আমার নামের পাশে মিথ্যা অপপ্রচার কিছু শুনতেই... বিশ্বাস করতেই একদল মরিয়া হয়ে আছেন। বিভিন্ন মিডিয়ার সংশ্লিষ্টরা মনে মনে হলেও স্বীকার করবেন যে এমন মিথ্যা শিরোনাম তারা করেছেন, কী আর্ন করার জন্য? আমি ঘটনাটিকে বা আমাকে নিয়ে যা যা ঘটছে, তা blessings in disguised হিসেবে গ্রহণ করছি। আমাকে স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে ট্যাগ দিয়ে মামলা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত ১৪/১৫ বছর ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাকে নিয়ে যে অপপ্রচার চালানো হয়েছে, তার পুরোটাই যে ভুল, তা অন্তত এ ধরনের ইনভেস্টিগেশনে প্রমাণিত হলো।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও নানাভাবে হয়রানি বা সুবিধাবঞ্চিত হতে হয়েছে উল্লেখ করে মুন্নী সাহা লিখেছেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর হিসেবে ট্যাগ দিলেও গত ১০ বছর আমি ও আমার মতো আরও দুয়েকজন সেলিব্রেটি সাংবাদিক সরকারি অনুষ্ঠান, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস কনফারেন্স কাভার করার তালিকায় নিষিদ্ধ ছিলাম। ‘এক টাকার খবর’ নামের অনলাইনের অনুমতিপত্রও সাবেক তথ্যমন্ত্রী দেননি। সাংবাদিক হিসেবে কোনো সরকারি পদপদবী, সুযোগও আমাকে নিতে হয়নি বলে আমি গর্বিত। প্রধানমন্ত্রীর ইন্টারভিউ বা সালমান এফ রহমানের মুখের ওপর কড়া প্রশ্ন করায় নানা সময় আমাকে যে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে, সেটা আমি সাংবাদিকতার শক্তিই মনে করি।

নিজে অবিচারের শিকার উল্লেখ করে মুন্নী আরও লিখেছেন, সাহা পরিবারে জন্ম বলে আমাকে ভারতের দালাল বলতে মুখিয়ে থাকা মানুষগুলো অন্তত এই সরকারের স্বচ্ছ অনুসন্ধান থেকে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন, কতটা অন্ধত্ব নিয়ে আমার ওপর অবিচার করা হয়েছে! সেটা গত ১৫/১৬ বছর ধরেই আমাকে সহ্য করতে হয়েছে। বিগত সরকারের সময় আমি বারবার এসব মিথ্যাচারের ব্যাপারে, সোশ্যাল মিডিয়ায় হ্যারাসমেন্টের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেও ফল পাইনি। বরং এ সরকারের স্বচ্ছতার প্রক্রিয়ায় বিষয়গুলো তদন্ত হওয়ায় আমি ব্যক্তিগতভাবে স্বস্তি বোধ করছি।

গণমাধ্যমগুলোর প্রতি নিয়মের সাংবাদিকতা চর্চার আহ্বান জানিয়ে মুন্নী সাহা বলেন, রিপোর্টে আমার সঙ্গে জড়িয়ে কবীর হোসেন তাপসের অ্যাকাউন্টে ১৪ কোটি টাকার স্থিতির খবর যারা দিয়েছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। যারা ভুল ফটোকার্ড করে ‘মুন্নী সাহার অ্যাকাউন্টে ১৩৪ কোটি টাকা’ লিখলেন, তাদের প্রতি দোয়া রইল, যেন তারা বিভ্রান্তিমূলক হেডলাইন সাংবাদিকতা থেকে নিয়মের সাংবাদিকতা সম্মানের সঙ্গে চর্চা করতে পারেন।

ad
ad

অর্থের রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

হেরিটেজ সুইটসের ৩য় শাখা বসুন্ধরা ‘ই’ ব্লকে

প্রিমিয়াম ব্র্যান্ড হেরিটেজ সুইটসের তৃতীয় শাখা যাত্রা শুরু করল রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। বসুন্ধরার ‘ই’ ব্লকের ঢালী কাঁচাবাজার ও আশপাশের বাসিন্দাদের জন্য এ শাখা হবে ঐতিহ্য, স্বাদ ও আনন্দের মিলনস্থল।

২ দিন আগে

জেট ফুয়েলের দাম আরো বাড়ল

রবিবার (৯ নভেম্বর) বিইআরসি সচিব মো. নজরুল ইসলাম সরকার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে নতুন দর নির্ধারণের বিষয়টি জানানো হয়েছে। যা কার্যকর হবে আগামীকাল ৯ নভেম্বর রাত ১২টা থেকে এবং পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

৩ দিন আগে

পে কমিশনের সিদ্ধান্ত আগামী সরকারের: অর্থ উপদেষ্টা

উপদেষ্টা বলেন, পে কমিশনের ব্যাপারটা আছে। এটা নিয়ে আমরা এখন কিছু বলতে পারি না। ওটা দেখা যাক কতদূর যায়। আমরা ইনিশিয়েট করে ফেলেছি। কিন্তু সেটা আগামী সরকার হয়তো করতে পারে।

৩ দিন আগে

৪-৫ দিনে দাম না কমলে পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন: বাণিজ্য উপদেষ্টা

বাণিজ্য উপদেষ্টা পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন চেয়ে অনেকেই আবেদন দিয়ে রেখেছেন। বর্তমানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে এমন আবেদন রয়েছে দুই হাজার ৮০০টি।

৩ দিন আগে