বেক্সিমকোকে শেষ সুবিধা দিয়ে বিদায় এসইসির রুবাইয়াত

প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম
আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২৪, ০২: ২৭

নানাভাবে বির্তকিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত–উল–ইসলাম পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান পদ থেকে শনিবার বিদায় নিয়েছেন।

অপসারণের আগাম বার্তা পেয়ে তিনি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পদত্যাগ করেন। যদিও পদত্যাগপত্রে তিনি ব্যক্তিগত অসুবিধার কথা উল্লেখ করেছেন। আজ রোববার নিয়ম অনুযায়ী এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

শনিবার রাত ১১টার দিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আবদুর রহমান খানের কাছে শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম পদত্যাগপত্র পাঠান।

প্রথম মেয়াদে বিভিন্ন অপরাধ করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত বেপরোয়া ছিলেন তিনি। এমনকি পদত্যাগের আগে বৃহস্পতিবার তিনি সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো লিমিটেডের ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের আদেশশে সই করেন।

বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সালমান এফ রহমানকে শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুলে নেওয়ার সুবিধা করে দিতে এ সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সেজন্য এসইসি কার্যালয়ে না গিয়ে বাসায় বসেই তিনি এই শেষ আদেশ জারি করেন।

অধ্যাপক রুবাইয়াতের সময়ে বেক্সিমকো গ্রুপ এবং সালমান এফ রহমান সুকুক ও বন্ড ইস্যুসহ নানা অন্যায় সুবিধা পান বলে অভিযোগ রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর সব শেয়ারের দাম বাড়লেও কমছে বেক্সিমকো গ্রুপের শেয়ারের দাম। দাম আটকে থাকছে ফ্লোর প্রাইসে। এছাড়া ১০০ টাকা ফেসভ্যালুর বেক্সিমকো সুকুকের দাম ৬৬.৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে গত বৃহস্পতিবার।

শেয়ারবাজারে কারসাজিসহ বিভিন্ন ধরনের সুবিধা নিয়ে দেশে ও দেশের বাইরে সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগ রয়েছে শিবলী রুবাইয়াতের বিরুদ্ধে।

অপরাধের জন্য প্রভাবশালীদের নিয়ে অসাধু সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। অভিযোগ রয়েছে শেয়ারবাজারে কারসাজিকারকদের নানাভাবে তিনি সহায়তা করতেন শেয়ারের দাম বাড়াতে।

দুর্নীতি ও অনিয়মের অসংখ্য অভিযোগ থাকলেও শিবলী রুবাইয়াত গত ২৮ এপ্রিল ২০২৪ দ্বিতীয় মেয়াদে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে চার বছরের জন্য পুনর্নিয়োগ পান।

গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে তিনি কর্মস্থলে যোগ দেননি। গত ৩ আগস্ট তিনি সরকারি সফর শেষে দেশে ফেরেন।

শিবলী রুবাইয়াতের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে নানা অনিয়মের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। বিনিয়োগ আকর্ষণের নামে বিপুল টাকা অপচয় করে বিদেশি রোড শো করায় তিনি ব্যাপকভাবে সমালোচিত ছিলেন।

২০২০ সালের মে মাসে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানের পদ থেকে বিদায় নিয়েছিলেন বিতর্কিত অধ্যাপক খায়রুল হোসেন। ওই মাসেই তার উত্তরসূরি হিসেবে নিয়োগ পান শিবলী রুবাইয়াত। দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা থেকে দীর্ঘ মেয়াদে ছুটি নিয়ে নেতৃত্বে আসেন শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার। সমালোচনার বোঝা মাথায় নিয়ে দুজনই চলে গেলেন।

খায়রুল হোসেন একটানা ৯ বছর দায়িত্ব পালন শেষে যখন বিদায় নেন, করোনার কারণে তখন বন্ধ ছিল শেয়ারবাজারের লেনদেন। তত দিনে টানা দরপতনে তলানিতে নেমে এসেছিল শেয়ারবাজারের সূচক।

চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনের প্রতি ছিল না সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা। তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভের প্রধান কারণ ছিল আইপিও বা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের শেয়ারের ব্যাপক জালিয়াতি। একের পর এক দুর্বল ও খারাপ কোম্পানিকে বাজারে আসার সুযোগ করে দেওয়ায় আইপিওবাজার ধ্বংস হয়ে গেছে—এমন অভিযোগ ছিল সংশ্লিষ্টদের মুখে মুখে।

খায়রুল হোসেনের বিদায়ের পর আশায় বুক বেঁধেছিলেন বিনিয়োগকারীরা।

শুরুতে তাই শিবলী রুবাইয়াত যেসব উদ্যোগ নিয়েছেন, বিনিয়োগকারীরা তাতে সমর্থন দিয়েছেন।

শিবলী কমিশনের প্রথম দেড় বছরের নানা উদ্যোগের ফলে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর ৭ হাজার ৩৬৮ পয়েন্টের রেকর্ড উচ্চতায় উঠে যায়। এ সময়ের মধ্যে ঢাকার বাজারের লেনদেনও তিন হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছে যায়। এরপর দফায় দফায় ধস নামে। তিনি নিজেই শেয়ার কারসাজি চক্রের খপ্পরে পড়েন বলে অভিযোগ আছে।

একাধিক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করে হলে তারা রাজনীতি ডটকমকে জানান, পদত্যাগ করেই শিবলী রুবাইয়াত যেনো পার না পেয়ে যান। তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো সুষ্ঠু তদন্ত করে তাকে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের।

ad
ad

অর্থের রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত

সভায় এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ খুরশীদ ওয়াহাব, অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মোঃ আবদুস সালাম, এফসিএ, এফসিএস, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম মাসুদ রহমান ও স্বতন্ত্র পরিচালক

৫ দিন আগে

বাড়ল সয়াবিন তেলের দাম

দেশের বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৬ টাকা ও খোলা সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৩ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি লিটার পাম ওয়েলের দাম বাড়ানো হয়েছে ১৩ টাকা করে।

৫ দিন আগে

বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয় সরকার এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি

পাঁচ ইসলামী ব্যাংক একীভূত করার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয় এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করেনি বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বরং এটাকে সম্পূর্ণ গুজব ও ভিত্তিহীন ব‌লে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করা হ‌য়ে‌ছে।

৫ দিন আগে

পুঁজিবাজার— অসময়ে ডিজিটালাইজেশনের আওয়াজে আতঙ্ক

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারে প্রয়োজন ছিল সাহসী নেতৃত্ব— যিনি বা যারা সময়ের চাহিদা অনুযায়ী বাজারচিত্রে আমূল পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম। বর্তমান নেতৃত্ব পুঁজিবাজারবান্ধব নয়। সরকারও পুঁজিবাজার বিষয়ে উদাসীন। অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত বিএসইসি চেয়ারম্যানের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ।

৭ দিন আগে