সার্কিট ব্রেকার তুলে পুঁজিবাজারকে নিজস্ব গতিতে চলতে দেওয়ার দাবি

প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম

পুঁজিবাজারে আরোপিত ৩ শতাংশ সার্কিট ব্রেকার একটি কৃত্রিম পদ্ধতি। যত দ্রুত সম্ভব এই কৃত্রিম সার্কিট ব্রেকার তুলে পুঁজিবাজারকে নিজের গতিতে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) নেতারা।

বুধবার (১৫ মে) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মতিঝিল কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ডিবিএ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ডিএসইর বিশেষ বৈঠকে এসব দাবি তুলে ধরেন ডিবিএ নেতারা।

নিজস্ব গতিতে চলতে না দিলে পুঁজিবাজারের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন সম্ভব না বলেও মনে করে ডিবিএ।

তালিকাভুক্তি আইনে সংশোধন প্রসঙ্গে ডিবিএ নেতারা বলেছেন, লিস্টিং রেগুলেশনে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। ভালো ভালো কোম্পানিগুলোকে বাজারে তালিকাভুক্তকরণে নজর দিতে হবে। ভালো কোম্পানি আসলে বাজারে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে উৎসাহিত হবে। বাজারে যেন বাজে আইপিও না আসে। সেক্ষেত্রে আইপিওগুলো দেওয়ার আগে সুনিশ্চিতভাবে কোম্পানিগুলোর তথ্য জানতে হবে। পাশাপাশি সহযোগী প্রতিষ্ঠান এবং মেকারদের প্রয়োজনীয় সুবিধাগুলো দিতে হবে।

ডিবিএ আরও জানায়, সিসিবিএল একটি গুরুত্বপূর্ণ মার্কেট কম্পোনেন্ট। যত দ্রুত সম্ভব সিসিবিএলকে কার্যকর করে বিজনেস প্রমোট করতে হবে। সার্ভেলেন্স সিস্টেমে মাঝে মাঝে অনেক খারাপ দুর্ঘটনা ঘটে। সেক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোকে আরও কঠোর হতে হবে।

কালোটাকা সাদাকরার প্রসঙ্গে ডিবিএ নেতারা বলেন, প্রতিবছর বাজেটে কালো টাকা সাদা করার একটি সুযোগ দেয়া হয়। কালো টাকা গুলো সাদা করার মাধ্যম যদি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হয়, তবে এ সিদ্ধান্তের ফলে বাজারের মূলধন অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে।

ডিবিএ নেতৃবৃন্দ বলেন, এসএমই মার্কেটকে রিভিউ করতে হবে। এখন সময় এসেছে এসএমই মার্কেটকে নিয়ে কাজ করার। বাজারে যারা বিনিয়োগকারী আছে তাদের বিনিয়োগ শিক্ষা দিতে হবে। অনেকে না জেনে বুঝে বিনিয়োগ করে লোকসানে পরে মার্কেটকে দায়ী করেন। বিনিয়োগ শিক্ষা উদ্যোগ নিলে মার্কেটে বিনিয়োগকারীদের নিয়ে মার্কেট সুন্দরভাবে পরিচালনা করা যাবে। ক্যাটাগরি পরিবর্তনে আরও বিচক্ষণ হতে হবে। এ সময় ক্যাপিটাল গেইনের ওপর করারোপ না করার দাবিও জানান ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ।

ডিবিএর সঙ্গে বৈঠক শেষে ডিএসইর চেয়ারম্যান হাফিজ মো. হাসান বাবু সাংবাদিকদের বলেন, পুঁজিবাজারকে যদি অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করা না যায় তাহলে তা ভালো করবে না। সেই উদ্দেশ্যে আমরা বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসেছি। ওনাদের বিভিন্ন বিষয় আমাদের কাছে উপস্থাপন করেছে। মার্কেটে যেন অযাচিত হস্তক্ষেপ না করা হয়। মার্কেট যেন তার নিজস্ব গতিতে চলতে পারে এই আলোচনা হয়েছে। মার্কেট অপারেটদের কিছুটা জায়গা দিতে হবে। আমাদের সিস্টেমে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে যায়। সেক্ষেত্রে যদি আমাদের পানিশমেন্টগুলো ভালো ভাবে না নেওয়া হয় তাহলে অকারেন্স ঘটতে পারে।

তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের ফিনান্সিয়াল লিটারেচিটা দিতে হবে। তাহলে বিনিয়োগকারীরা মার্কেটটা সুন্দর পরিচালনা করতে পারবে। মার্কেটে যে ক্যাটাগরিগুলো রয়েছে, সেগুলো এই খারাপ সময়ে ম্যানেজ করতে যাই, তাহলে আরও ধস নামবে। ক্যাপিটাল গেইনের ওপর ট্যাক্সে ব্যাপারেও আমাদের আলোচনা হয়েছে। কালো টাকা যদি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে নিয়ে আসা যায়, তাহলে আমাদের তারল্য সংকট অনেকটা কেটে যাবে। এগুলোকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যায় সেটাকে নিয়ে কাজ করতে হবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, আইপিওর ক্ষেত্রে বিভিন্ন খারাপ কোম্পানি বাজারে কেন আসে ডিএসইর ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও এমন প্রশ্নে চেয়ারম্যান বলেন, আইপিওর ক্ষেত্রে যে রুলস রেগুলেশন আছে সেটা আমাদের অনেকটা পরিবর্তন করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় কমিশন ভালো মনে করেন আর আমরা খারাপ মনে করেন। কোনো কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের আইনের কোনো ফারাক বা আমাদের কোনো দোষ আছে কি না আমরা এটাও বের করব। যেহেতু এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ হচ্ছে তাহলে বলা যায় এটা ভালো লক্ষণ। ভালো করার জন্যই আমরা এসব আলোচনা করছি।

অনলাইনে এজিএম করার ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরাও অনলাইনে মিটিং করার ক্ষেত্রে বিএসইসির অনুমতি নিতে গিয়েছিলাম। তারা আমাদের এক তৃতীয়াংশ নিয়ে মিটিং করার অনুমতি দিয়েছিল।

ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ আনতে হবে। আমাদের বিদেশি বিনিয়োগ কমছে। কেন এই বিদেশি বিনিয়োগ কমছে এটা খুঁজে বের করতে আমরা কাজ করছি। এতে আইপিওতে আমাদের রিফাইন করা দরকার। মার্কেটে লিস্টেড আর নন লিস্টেড কোম্পানির মধ্যে ট্যাক্সের হার কিন্তু বেশি ব্যবধান না। তাই লিস্টেড আর নন লিস্টেড কোম্পানিগুলোর মধ্যে ট্যাক্সের ব্যবধানটা অনেক বেশি করা উচিত।

দেশের গার্মেন্টসগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির ব্যাপারে তিনি বলেন, গার্মেন্টসগুলো আমাদের দেশের পুঁজিবাজারে কেন তালিকাভুক্ত না এগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। বিজিএমইএ চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমরা ইতোমধ্যে আলোচনা করেছি টপ ২০টা কোম্পানিকে কীভাবে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা যায়। এরপর আমরা টপ ২০ ব্রোকারকে নিয়ে বসব। এরপর সবার দাবিগুলো নিয়ে আমরা বসে এগুলো নিয়ে আলোচনা করে তারপর আমরা সকল অংশীজনরা মিলে খুব শিগগিরই কমিশনের কাছে তুলে ধরব।

ডিবিএর সাবেক সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তালিকাভুক্ত হলে আমরাও অনেক খুশি হব। লিস্টেড করাটা গুরুত্বপূর্ণ না। লিস্টেড হওয়ার পর যদি কোনো কোম্পানিকে নিয়ে পলিসি পরিবর্তন হলে এতে পুরো মার্কেট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কোন ফরম্যাটে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আনলে পুঁজিবাজারে আরও ভালো করা যাবে সেটি নিয়েও ভাবতে হবে।

এসময় উক্ত বৈঠকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এটিএম তারিকুজ্জামান, ডিবিএ প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম, ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক রুবাবা দোলাসহ ডিএসই এবং ডিবিএর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ad
ad

অর্থের রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত

সভায় এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ খুরশীদ ওয়াহাব, অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মোঃ আবদুস সালাম, এফসিএ, এফসিএস, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম মাসুদ রহমান ও স্বতন্ত্র পরিচালক

৫ দিন আগে

বাড়ল সয়াবিন তেলের দাম

দেশের বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৬ টাকা ও খোলা সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৩ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি লিটার পাম ওয়েলের দাম বাড়ানো হয়েছে ১৩ টাকা করে।

৫ দিন আগে

বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয় সরকার এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি

পাঁচ ইসলামী ব্যাংক একীভূত করার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয় এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করেনি বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বরং এটাকে সম্পূর্ণ গুজব ও ভিত্তিহীন ব‌লে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করা হ‌য়ে‌ছে।

৫ দিন আগে

পুঁজিবাজার— অসময়ে ডিজিটালাইজেশনের আওয়াজে আতঙ্ক

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারে প্রয়োজন ছিল সাহসী নেতৃত্ব— যিনি বা যারা সময়ের চাহিদা অনুযায়ী বাজারচিত্রে আমূল পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম। বর্তমান নেতৃত্ব পুঁজিবাজারবান্ধব নয়। সরকারও পুঁজিবাজার বিষয়ে উদাসীন। অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত বিএসইসি চেয়ারম্যানের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ।

৭ দিন আগে