শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবন কি এখানেই শেষ?

বিবিসি বাংলা
সর্বোচ্চ সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পর শেখ হাসিনা আর রাজনীতিতে ফিরতে পারবেন কি-না, সেই প্রশ্ন উঠছে

জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর থেকেই তার রাজনৈতিক ভবিষ্যত এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সর্বোচ্চ সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পর তিনি এখন আর বাংলাদেশের রাজনীতিতে আর ফিরতে পারবেন কি-না, সেই প্রশ্নও উঠতে দেখা যাচ্ছে।

"সি ইজ ফিনিশড (সে শেষ)। আমার মনে হয়ে না এটা আর আগের অবস্থায় ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা আছে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক সাব্বীর আহমেদ।

"যদিও অনেকে বলবে- রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নাই। কিন্তু আমি মনে করি, নেতৃত্ব যদি ব্লান্ডার (বিপর্যয়) করে, সেটার শেষ আছে," বলেন অধ্যাপক আহমেদ।

এদিকে, ট্রাইব্যুনালকে 'ক্যাঙ্গারুকোর্ট' আখ্যা দিয়ে রায়কে 'পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' বলে বর্ণনা করেছেন শেখ হাসিনা।

রায় প্রত্যাখ্যান করে বক্তব্য দিয়েছেন বাংলাদেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও। কিন্তু এই রায়কে আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা কীভাবে দেখছেন?

"যুদ্বাপরাধীদের যখন বিচার চলে তখন যারা আসামি ছিলেন, তাদের পক্ষের আইনজীবী এখন এই ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী...তো সেইভাবে মানুষের এটা বুঝতে বাকি নেই যে এটা সম্পূর্ণ একটা ফরমায়েসি রায়। এই রায় নিয়ে আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী বিচলিত নয়," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন আওয়ামী লীগের উপজেলা পর্যায়ের একজন নেতা।

নিরাপত্তার স্বার্থে তিনি তার পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি।

কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রায় মানতে না চাইলেও বাস্তবতা হচ্ছে, তাদের দলের সভাপতির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাজা ঘোষণা করেছে আদালত।

"আমরা শুরু থেকেই জানি এরকম করবে। জনগণ এটা মানে না এবং মাঠপর্যায়ে জনগণের মধ্যে এর কোনো রকম ইফেক্ট (প্রভাব) পড়বে বলে আমরা মনে করি না," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের আরেক নেতা।

অতীতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় বলা হয়েছে যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বের বিষয়ে দলটির মধ্যে কোনো বিতর্ক নেই। দলীয় সভাপতির বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করার পরও সেই অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানাচ্ছেন নেতারা।

"উনার নেতৃত্ব নিয়ে কারো কোনো প্রশ্ন নেই। যতদিন উনি বেঁচে থাকবেন, ততদিন আমরা তার নেতৃত্বেই সামনের দিকে এগিয়ে যাবো," বলছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

২০২৪ সালের পাঁচই অগাস্টের পর আওয়ামী লীগে যে ধরনের নেতৃত্ব-শূন্যতা দেখা যাচ্ছিল, গত এক বছরে সেটি অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছেন বলে দাবি করেছেন দলটির নেতারা।

ভারতে বসে শেখ হাসিনাকে দলীয় বিভিন্ন বিষয়ে নানান দিক-নির্দেশনাও দিতে দেখা যাচ্ছে।

"নেত্রী আমাদের বলেছেন, দলকে চাঙ্গা করার জন্য যে যেই এলাকায় কা্জ করবে, সে সেখানকার নেতা। এরপর থেকে আমরা সবাই সক্রিয় হয়ে উঠেছি। এখন দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন, প্রতিটি ওয়ার্ডে আমাদের শক্ত নেটওয়ার্ক রয়েছে বলেই মাত্র এক বছরের মধ্যে আমার ঘুরে দাঁড়াতে যাচ্ছি," বলছিলেন নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতা।

আদালতে দণ্ডিত হওয়ার পর এখন আওয়ামী লীগ সভাপতিকে দেশে ফেরত পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার।

শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারত সরকারের কাছে শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেওয়া হচ্ছে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।

কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের এই আহ্বানে ভারতের সরকার সাড়া দেবে, তেমন কোনো সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না।

"এই কারণে আমরা মনে করি, সাজা ঘোষণা করা হলেও আমাদের নেত্রীকে দেশে ফিরিয়ে এনে সেটি কার্যকর করা এই সরকারের পক্ষে সম্ভব না," বলছিলেন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের এক নেতা।

এদিকে, শীর্ষ নেতারা দেশে না থাকলেও দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম থেমে নেই বলে জানাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

"কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় আমরা প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ করতে পারছি না। এর অর্থ এই নয় যে, আমাদের দলীয় কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বরং আমরা আগের চেয়ে বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছি। তবে সঙ্গত কারণেই কাজের প্যাটার্ন কিছুটা পরিববর্তন করতে হয়েছে," বলেন তৃণমূলের আওয়ামী লীগ নেতা।

এদিকে, সময় যত কঠিন হচ্ছে, আওয়ামী লীগ ততই সংগঠিত হচ্ছে বলে দাবি করেছেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

"আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ আছে, ঐক্যবদ্ধ থাকবে। এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ থেকে কেউ বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্য দলে যায়নি। তবে নানান চেষ্টা-অপচেষ্টা ও অপতৎপরতা আছে। এত সবকিছুর পরেই আমি মনে করি, শেখ হাসিনাকে ঘিরেই বাংলাদেশ আবার ঘুরে দাঁড়াবে," বিবিসি বাংলাকে বলেন মি. নাছিম।

যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় আওয়ামী লীগের পক্ষে সহসাই ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না।

"তাদের সেন্ট্রাল লিডার (কেন্দ্রীয় নেতা) তো মোটামুটি গোটা পঞ্চাশেক। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা তাদের কারো পক্ষেই আগামী পাঁচ-দশ বছরের মধ্যে সম্ভব হবে কি-না, আই রিয়েলি ডাউট (আমার সত্যিই সন্দেহ হয়)," বলছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক সাব্বীর আহমেদ।

"আর সেটা যদি সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে দলের রিগ্রুপিং (সংগঠিত) করা অনেক কঠিন কাজ হয়ে যাবে," বলেন অধ্যাপক আহমেদ।

সেইসঙ্গে, ভাবমূর্তির যে সংকটে আওয়ামী লীগ পড়েছে সেটিও কাটিয়ে ওঠা দলটির জন্য সহজ হবে না বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক।

বিশেষ করে, ২০২৪ সালে আন্দোলনের সময় প্রাণহানির ঘটনায় অনুশোচনা প্রকাশ করে ক্ষমা চাওয়ার পরিবর্তে দলটির নেতারা এখনো জুলাই গণঅভ্যুত্থান যেভাবে 'দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র' হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছেন, সেটি শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের রাজনীতির মাঠে ফেরাকে আরও কঠিন করে তুলছে বলে মনে করেন তিনি।

"শেখ হাসিনার রাজনৈতিক মৃত্যু হলেও তিনি দলকে অন্তত বাঁচাতে পারতেন যদি জুলাই আন্দোলনের প্রাণহানির দায় নিজে স্বীকার করে নিয়ে দলের সভাপতির পদ থেকে নিজেই সরে যেতেন," বলছিলেন অধ্যাপক আহমেদ।

"গত একটা বছর তার সামনে এটা করার সুবর্ণ সুযোগ ছিল। কিন্তু তিনি সেটা না করে উল্টোটাই করে যাচ্ছেন। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে তিনি নিজেই আরও বেশি বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন," বিবিসি বাংলাকে বলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাব্বীর আহমেদ।

ad
ad

রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

নির্দেশনায় বলা হয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার ঘটনায় সৃষ্ট জনমনের উদ্বেগ ও আতঙ্ক সম্পর্কে সরকার অবগত। পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরকে অবিলম্বে মাঠপর্যায়ে নেমে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

১৮ ঘণ্টা আগে

সেনাকুঞ্জে সংবর্ধনায় খালেদা জিয়া

মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী সশস্ত্র বাহিনীর দিবস উপলক্ষে সেনাকুঞ্জে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

১৮ ঘণ্টা আগে

স্বৈরাচার সরকার দেশের অর্থনীতি খালি করে দিয়েছে: জাহিদ হোসেন

ক্তব্যে ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, “৭ নভেম্বর যে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল, আজ সেই ঐক্যের পুনর্গঠন জরুরি। আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্য সময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অথচ স্বৈরাচার ও কর্তৃত্ববাদী সরকার দেশের অর্থনীতিকে খালি করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, দেশের সার্বভৌমত্বকে প্রায় আরেক দেশের হাতে তুলে দেওয়ার

১৯ ঘণ্টা আগে

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানদের সাক্ষাৎ

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, আজ সকালে ঢাকা সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার‑উজ‑জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন।

১৯ ঘণ্টা আগে