সজীব রহমান
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা পেয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের (জাকসু) ভোট গণনা করা হবে কি না— এমন দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছিল নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যেই সরকারের উচ্চ পর্যায়ে থেকে ‘পরামর্শ’ আসে— দ্রুত গণনা শেষ করে ফল প্রকাশ করতে হবে।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এমন ‘পরামর্শ’ পেয়ে জাকসু নির্বাচনের ভোট গণনায় অন্তত ২০ জন কর্মকর্তাকে যুক্ত করেছে জাবি প্রশাসন।
এরপর হল সংসদের ভোট গণনা শেষে রাত সাড়ে ৮টার দিকে শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের ভোট গণনা। বিরতিহীনভাবে ভোট গণনা শেষ করে যত দ্রুতসম্ভব জাকসু নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করতে চায় নির্বাচন কমিশন।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় জাবির ২১টি আবাসিক হলে একযোগে জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। পরিকল্পনা ছিল, বিকেল ৫টার মধ্যে ভোট গ্রহণ শেষে সব কেন্দ্র থেকে ব্যালট বাক্স সিনেটে নিয়ে সন্ধ্যা ৭টা থেকে ভোট গণনা করা হবে। রাতের মধ্যেই ঘোষণা করা হবে ফলাফল।
তবে শেষ পর্যন্ত পরিকল্পনামাফিক কিছুই হয়নি। শিক্ষার্থীরা পদে পদে অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলেছেন। প্রার্থীরা তুলেছেন ভোটে কারচুপি-জালিয়াতির অভিযোগ। একে একে পাঁচটি প্যানেল ও তিনজন শিক্ষক ভোট বর্জনও করেন। এসবের মধ্যে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কয়েকটি হলে এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত একটি হলে ভোট নেওয়া হয়।
এদিকে শিক্ষার্থীদের চাপে ওএমআর মেশিন দিয়ে ভোট গণনার পরিকল্পনা থেকেও সরে আসতে হয় জাবি প্রশাসনকে। তারা হাতে গুনতে শুরু করেন ব্যালট। বৃহস্পতিবার সারা রাত পেরিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা হল সংসদের ভোট গণনাই শেষ করতে পারেননি।
শুরু থেকেই এ নির্বাচনের কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের কাজে না লাগানোর সিদ্ধান্ত ছিল। তবে বৃহস্পতিবার রাতভর ভোট গণনার গতি দেখার পর শুক্রবার সকালে তাদের সবাইকে ডেকে নেওয়া হয় সিনেটে। তবে তাদের ভোট গণনায় কাজে আর লাগানো হয়নি।
এদিকে সময় যত গড়াতে থাকে ততই ভোটের ফল নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ-অনিশ্চয়তা বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে তাদের ধৈর্যচ্যুতিও ঘটে। এর মধ্যে এক জাবি শিক্ষক প্রাণ হারালে অন্য শিক্ষকরাও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে থাকেন। আবার তিন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পরে পাঁচজনের মধ্যে একজন নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগের ঘটনায় ধূম্রজাল তৈরি হয়।
শিক্ষার্থীরা উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়েই ভোট দিতে শুরু করেছিলেন জাকসু নির্বাচনে। পরে বিশৃঙ্খলা-অব্যবস্থাপনায় সে আনন্দমুখর পরিবেশ ম্লান হয়ে গেছে। ছবি: ফোকাস বাংলা
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই নির্বাচন বর্জন করা পাঁচ প্যানেলের পক্ষ থেকে নির্বাচন বাতিল করে নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবি জানানো হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শুক্রবার শিক্ষকদের একটি বড় অংশ নির্বাচন বাতিলের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপর চাপ তৈরি করেন।
এ পরিস্থিতিতে উপাচার্যসহ নীতি নির্ধারণী কর্মকর্তারা বেকায়দায় পড়েন। হল সংসদের ভোট গণনাই তখনো শেষ হয়নি। এ অবস্থায় ডাকসুর ভোট গণনা শুরু করা ঠিক হবে কি না— এমন প্রশ্নে দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয় শিক্ষকসহ জাবি প্রশাসনের মধ্যে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জাকসু নির্বাচনের ফল ঘোষণা নিয়ে যখন এমন অনিশ্চয়তা ঘিরে ধরেছে, এমন সময় সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে ফোন আসে। জাবি উপাচার্যের কাছ থেকে সার্বিক পরিস্থিতি অবগত হয়ে ভোট গণনা শুরু করার পরামর্শ দেওয়া হয় সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে।
নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত একজন রাজনীতি ডটকমে জানান, ওই ফোনের পর উপাচার্য নির্বাচন কমিশন ও তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে নিয়ে বৈঠক করেন। সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত হয়, ভোট গণনা শুরু করতে হবে এবং যত দ্রুতসম্ভব ভোট গণনা শেষ করে ফল ঘোষণা করতে হবে।
উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠকের পর নির্বাচন কমিশন দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের নিয়ে ভোট গণনা শুরু করেন। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্তরা জানিয়েছেন, শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ হল সংসদের ভোট গণনা শেষ হয়েছে। পরে রাত সাড়ে ৮টায় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের ভোট গণনা শুরু হয়েছে।
প্রথম দফায় ১২টি হলের জাকসুর ভোট গণনা চলছে। এই ১২টি হলের কেন্দ্রীয় সংসদের ভোট গণনা শেষ হলে তারপর বাকি ৯টি হলের কেন্দ্রীয় সংসদের ভোট গণনা করা হবে।
ভোটের উচ্ছ্বাসের পুরোটাই উপস্থিত ছিল জাবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে। কিন্তু ভোট দিয়ে কাদের জয়ী করলেন, সে প্রশ্নের উত্তর পেতে তাদের অপেক্ষা ক্রমেই বাড়ছে। ছবি: রাজনীতি ডটকম
জাবি প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তার মাধ্যমে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে প্রতি ঘণ্টায় ভোট গণনার আপডেট নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে যে পরিস্থিতি, তাতে শনিবার সকাল নাগাদ ফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আমাদের এখানে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা আছে। তবে ভোট গণনা অব্যাহত আছে। গতি বাড়াতে আরও বেশি জনবল যুক্ত করা হয়েছে। টেবিল সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। তারপরও ভোট গণনা শেষ হতে আজকের (শুক্রবার) রাতটাও লেগে যেতে পারে।
শুরুর পর ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও ভোট গণনা শেষ না হওয়া নিয়ে জাকসু নির্বাচন আলোচনা ছড়িয়েছে সারা দেশে। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যা হাজির করার চেষ্টা করেছেন। একাধিক কর্মকর্তা ও শিক্ষকের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছে রাজনীতি ডটকম। তাদের বক্তব্যে ভোট গণনায় এত বেশি সময় লাগার পেছনে অন্তত চারটি কারণ উঠে এসেছে।
প্রথমত, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা নির্বাচন কমিশন শুধু শিক্ষকদের দিয়েই ভোট গণনা করতে চেয়েছিলেন, যাদের অনেকেই ক্লাস ও পরীক্ষা সম্পর্কে অভিজ্ঞ হলেও ভোট গ্রহণ ও গণনার মতো কার্যক্রমে তাদের সম্পৃক্ততার অভিজ্ঞতা নেই। ফলে শিক্ষকদের অনেকেই এ পরিস্থিতিতে হিমশিম খাচ্ছিলেন।
দ্বিতীয়ত, ছাত্রদলের দাবির মুখে জাকসু নির্বাচন কমিশনকে মেশিনে ভোট গণনার পরিবর্তে ম্যানুয়ালি ভোট গণনার সিদ্ধান্ত নিতে হয়। স্বাভাবিকভাবেই হাতে ভোট গণনার কোনো প্রস্তুতি শিক্ষকদের ছিল না। ফলে সময়ও লাগে বেশি। পরে অবশ্য ছাত্রদলসহ পাঁচটি প্যানেল নির্বাচন বর্জনই করেছে।
জাবির অনেক শিক্ষার্থীই রয়েছেন যারা জাকসুতে ভোট দেওয়ার মাধ্যমে জীবনে প্রথম কোনো ভোট দিয়েছেন। ছবি: রাজনীতি ডটকম
তৃতীয়ত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলটি বেশ ছোট। সেখানে অর্ধেকেরও বেশি জায়গা সাংবাদিক ও এজেন্টরা ব্যবহার করেন। অর্ধশতাধিক টেলিভিশন ক্যামেরার উপস্থিতির কারণেও স্বল্প জায়গায় সেখানে ভোট গণনার মতো পরিস্থিতি ছিল না।
চতুর্থত, একজন শিক্ষকের মৃত্যু, তিনজন রিটার্নিং কর্মকর্তার পদত্যাগ, একজন নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ, একেকজন শিক্ষকের ৪০ থেকে ৫০ ঘণ্টা টানা নির্বাচনের ডিউটিতে থাকা, অনেকের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ও অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনাগুলো জাবি প্রশাসনকে হতবাক করে দেয়।
জাবি প্রশাসনের একাধিক সূত্র বলছে, বিশেষ করে জাবি উপাচার্য বিএনপি সমর্থক শিক্ষক সমিতির নেতা হওয়া সত্ত্বেও ওই দলের শিক্ষকরাই তার ওপর নানামুখী চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। এতে উপাচার্য কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন বলে তার ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র জানিয়েছে। সার্বিকভাবে ভোট গণনা প্রক্রিয়া নিয়েই তৈরি হয় অনিশ্চয়তা।
তবে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ওই ফোন ও ‘পরামর্শ’ পাওয়ার পর আপাতত ভোট গণনা নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটেছে। নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেছেন শিক্ষক-কর্মকর্তারা। এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা।
এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান সন্ধ্যায় সিনেটে হাজির হন। চলমান ভোট গণনা কার্যক্রম পরিদর্শন করে তিনি বলেন, ‘অমানবিক পরিশ্রম করে আপনাদের কাজটি করতে হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের যেকোনো প্রয়োজন আমি পূরণ করব। আপনাদের কষ্টের কথা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস হয়ে থাকবে।’
জাকসুতে ১২টি হলের ভোট গণনার কাজ এখন এগিয়ে চলেছে। একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র রাজনীতি ডটকমকে নিশ্চিত করেছে, শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় কেন্দ্রীয় সংসদের সবগুলো পদেই ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রার্থীরা এগিয়ে ছিলেন।
দুদিন আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (ডাকসু) ভূমিধস জয় পেয়ে চমকে দিয়েছিল শিবির। সূত্র বলছে, প্রথম দুই ঘণ্টার ভোট গণনায় যে ফল এসেছে তা অব্যাহত থাকলেও জাকসুতেও পুনরাবৃত্তি হতে পারে ডাকসুর ফলাফলের।
জাবির একজন শিক্ষক ও একাধিক শিক্ষার্থী অবশ্য শিবিরের এগিয়ে থাকা বা জয়ের পথে থাকাকে অস্বাভাবিক মনে করছেন না। তারা বলছেন, শিবিরের নিজস্ব সাংগঠনিক প্রস্তুতি ছিল। তবে দুপুর থেকেই অন্যান্য প্যানেলের প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে ভোট বর্জনের আলোচনা ছড়িয়ে পড়ে। ফলে অনেক ভোটারই আর ভোট দিতে যাননি। এর প্রভাবও পড়তে পারে ফলাফলে।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা পেয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের (জাকসু) ভোট গণনা করা হবে কি না— এমন দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছিল নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যেই সরকারের উচ্চ পর্যায়ে থেকে ‘পরামর্শ’ আসে— দ্রুত গণনা শেষ করে ফল প্রকাশ করতে হবে।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এমন ‘পরামর্শ’ পেয়ে জাকসু নির্বাচনের ভোট গণনায় অন্তত ২০ জন কর্মকর্তাকে যুক্ত করেছে জাবি প্রশাসন।
এরপর হল সংসদের ভোট গণনা শেষে রাত সাড়ে ৮টার দিকে শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের ভোট গণনা। বিরতিহীনভাবে ভোট গণনা শেষ করে যত দ্রুতসম্ভব জাকসু নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করতে চায় নির্বাচন কমিশন।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় জাবির ২১টি আবাসিক হলে একযোগে জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। পরিকল্পনা ছিল, বিকেল ৫টার মধ্যে ভোট গ্রহণ শেষে সব কেন্দ্র থেকে ব্যালট বাক্স সিনেটে নিয়ে সন্ধ্যা ৭টা থেকে ভোট গণনা করা হবে। রাতের মধ্যেই ঘোষণা করা হবে ফলাফল।
তবে শেষ পর্যন্ত পরিকল্পনামাফিক কিছুই হয়নি। শিক্ষার্থীরা পদে পদে অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলেছেন। প্রার্থীরা তুলেছেন ভোটে কারচুপি-জালিয়াতির অভিযোগ। একে একে পাঁচটি প্যানেল ও তিনজন শিক্ষক ভোট বর্জনও করেন। এসবের মধ্যে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কয়েকটি হলে এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত একটি হলে ভোট নেওয়া হয়।
এদিকে শিক্ষার্থীদের চাপে ওএমআর মেশিন দিয়ে ভোট গণনার পরিকল্পনা থেকেও সরে আসতে হয় জাবি প্রশাসনকে। তারা হাতে গুনতে শুরু করেন ব্যালট। বৃহস্পতিবার সারা রাত পেরিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা হল সংসদের ভোট গণনাই শেষ করতে পারেননি।
শুরু থেকেই এ নির্বাচনের কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের কাজে না লাগানোর সিদ্ধান্ত ছিল। তবে বৃহস্পতিবার রাতভর ভোট গণনার গতি দেখার পর শুক্রবার সকালে তাদের সবাইকে ডেকে নেওয়া হয় সিনেটে। তবে তাদের ভোট গণনায় কাজে আর লাগানো হয়নি।
এদিকে সময় যত গড়াতে থাকে ততই ভোটের ফল নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ-অনিশ্চয়তা বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে তাদের ধৈর্যচ্যুতিও ঘটে। এর মধ্যে এক জাবি শিক্ষক প্রাণ হারালে অন্য শিক্ষকরাও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে থাকেন। আবার তিন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পরে পাঁচজনের মধ্যে একজন নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগের ঘটনায় ধূম্রজাল তৈরি হয়।
শিক্ষার্থীরা উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়েই ভোট দিতে শুরু করেছিলেন জাকসু নির্বাচনে। পরে বিশৃঙ্খলা-অব্যবস্থাপনায় সে আনন্দমুখর পরিবেশ ম্লান হয়ে গেছে। ছবি: ফোকাস বাংলা
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই নির্বাচন বর্জন করা পাঁচ প্যানেলের পক্ষ থেকে নির্বাচন বাতিল করে নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবি জানানো হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শুক্রবার শিক্ষকদের একটি বড় অংশ নির্বাচন বাতিলের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপর চাপ তৈরি করেন।
এ পরিস্থিতিতে উপাচার্যসহ নীতি নির্ধারণী কর্মকর্তারা বেকায়দায় পড়েন। হল সংসদের ভোট গণনাই তখনো শেষ হয়নি। এ অবস্থায় ডাকসুর ভোট গণনা শুরু করা ঠিক হবে কি না— এমন প্রশ্নে দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয় শিক্ষকসহ জাবি প্রশাসনের মধ্যে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জাকসু নির্বাচনের ফল ঘোষণা নিয়ে যখন এমন অনিশ্চয়তা ঘিরে ধরেছে, এমন সময় সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে ফোন আসে। জাবি উপাচার্যের কাছ থেকে সার্বিক পরিস্থিতি অবগত হয়ে ভোট গণনা শুরু করার পরামর্শ দেওয়া হয় সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে।
নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত একজন রাজনীতি ডটকমে জানান, ওই ফোনের পর উপাচার্য নির্বাচন কমিশন ও তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে নিয়ে বৈঠক করেন। সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত হয়, ভোট গণনা শুরু করতে হবে এবং যত দ্রুতসম্ভব ভোট গণনা শেষ করে ফল ঘোষণা করতে হবে।
উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠকের পর নির্বাচন কমিশন দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের নিয়ে ভোট গণনা শুরু করেন। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্তরা জানিয়েছেন, শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ হল সংসদের ভোট গণনা শেষ হয়েছে। পরে রাত সাড়ে ৮টায় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের ভোট গণনা শুরু হয়েছে।
প্রথম দফায় ১২টি হলের জাকসুর ভোট গণনা চলছে। এই ১২টি হলের কেন্দ্রীয় সংসদের ভোট গণনা শেষ হলে তারপর বাকি ৯টি হলের কেন্দ্রীয় সংসদের ভোট গণনা করা হবে।
ভোটের উচ্ছ্বাসের পুরোটাই উপস্থিত ছিল জাবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে। কিন্তু ভোট দিয়ে কাদের জয়ী করলেন, সে প্রশ্নের উত্তর পেতে তাদের অপেক্ষা ক্রমেই বাড়ছে। ছবি: রাজনীতি ডটকম
জাবি প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তার মাধ্যমে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে প্রতি ঘণ্টায় ভোট গণনার আপডেট নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে যে পরিস্থিতি, তাতে শনিবার সকাল নাগাদ ফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আমাদের এখানে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা আছে। তবে ভোট গণনা অব্যাহত আছে। গতি বাড়াতে আরও বেশি জনবল যুক্ত করা হয়েছে। টেবিল সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। তারপরও ভোট গণনা শেষ হতে আজকের (শুক্রবার) রাতটাও লেগে যেতে পারে।
শুরুর পর ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও ভোট গণনা শেষ না হওয়া নিয়ে জাকসু নির্বাচন আলোচনা ছড়িয়েছে সারা দেশে। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যা হাজির করার চেষ্টা করেছেন। একাধিক কর্মকর্তা ও শিক্ষকের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছে রাজনীতি ডটকম। তাদের বক্তব্যে ভোট গণনায় এত বেশি সময় লাগার পেছনে অন্তত চারটি কারণ উঠে এসেছে।
প্রথমত, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা নির্বাচন কমিশন শুধু শিক্ষকদের দিয়েই ভোট গণনা করতে চেয়েছিলেন, যাদের অনেকেই ক্লাস ও পরীক্ষা সম্পর্কে অভিজ্ঞ হলেও ভোট গ্রহণ ও গণনার মতো কার্যক্রমে তাদের সম্পৃক্ততার অভিজ্ঞতা নেই। ফলে শিক্ষকদের অনেকেই এ পরিস্থিতিতে হিমশিম খাচ্ছিলেন।
দ্বিতীয়ত, ছাত্রদলের দাবির মুখে জাকসু নির্বাচন কমিশনকে মেশিনে ভোট গণনার পরিবর্তে ম্যানুয়ালি ভোট গণনার সিদ্ধান্ত নিতে হয়। স্বাভাবিকভাবেই হাতে ভোট গণনার কোনো প্রস্তুতি শিক্ষকদের ছিল না। ফলে সময়ও লাগে বেশি। পরে অবশ্য ছাত্রদলসহ পাঁচটি প্যানেল নির্বাচন বর্জনই করেছে।
জাবির অনেক শিক্ষার্থীই রয়েছেন যারা জাকসুতে ভোট দেওয়ার মাধ্যমে জীবনে প্রথম কোনো ভোট দিয়েছেন। ছবি: রাজনীতি ডটকম
তৃতীয়ত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলটি বেশ ছোট। সেখানে অর্ধেকেরও বেশি জায়গা সাংবাদিক ও এজেন্টরা ব্যবহার করেন। অর্ধশতাধিক টেলিভিশন ক্যামেরার উপস্থিতির কারণেও স্বল্প জায়গায় সেখানে ভোট গণনার মতো পরিস্থিতি ছিল না।
চতুর্থত, একজন শিক্ষকের মৃত্যু, তিনজন রিটার্নিং কর্মকর্তার পদত্যাগ, একজন নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ, একেকজন শিক্ষকের ৪০ থেকে ৫০ ঘণ্টা টানা নির্বাচনের ডিউটিতে থাকা, অনেকের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ও অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনাগুলো জাবি প্রশাসনকে হতবাক করে দেয়।
জাবি প্রশাসনের একাধিক সূত্র বলছে, বিশেষ করে জাবি উপাচার্য বিএনপি সমর্থক শিক্ষক সমিতির নেতা হওয়া সত্ত্বেও ওই দলের শিক্ষকরাই তার ওপর নানামুখী চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। এতে উপাচার্য কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন বলে তার ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র জানিয়েছে। সার্বিকভাবে ভোট গণনা প্রক্রিয়া নিয়েই তৈরি হয় অনিশ্চয়তা।
তবে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ওই ফোন ও ‘পরামর্শ’ পাওয়ার পর আপাতত ভোট গণনা নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটেছে। নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেছেন শিক্ষক-কর্মকর্তারা। এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা।
এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান সন্ধ্যায় সিনেটে হাজির হন। চলমান ভোট গণনা কার্যক্রম পরিদর্শন করে তিনি বলেন, ‘অমানবিক পরিশ্রম করে আপনাদের কাজটি করতে হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের যেকোনো প্রয়োজন আমি পূরণ করব। আপনাদের কষ্টের কথা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস হয়ে থাকবে।’
জাকসুতে ১২টি হলের ভোট গণনার কাজ এখন এগিয়ে চলেছে। একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র রাজনীতি ডটকমকে নিশ্চিত করেছে, শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় কেন্দ্রীয় সংসদের সবগুলো পদেই ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রার্থীরা এগিয়ে ছিলেন।
দুদিন আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (ডাকসু) ভূমিধস জয় পেয়ে চমকে দিয়েছিল শিবির। সূত্র বলছে, প্রথম দুই ঘণ্টার ভোট গণনায় যে ফল এসেছে তা অব্যাহত থাকলেও জাকসুতেও পুনরাবৃত্তি হতে পারে ডাকসুর ফলাফলের।
জাবির একজন শিক্ষক ও একাধিক শিক্ষার্থী অবশ্য শিবিরের এগিয়ে থাকা বা জয়ের পথে থাকাকে অস্বাভাবিক মনে করছেন না। তারা বলছেন, শিবিরের নিজস্ব সাংগঠনিক প্রস্তুতি ছিল। তবে দুপুর থেকেই অন্যান্য প্যানেলের প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে ভোট বর্জনের আলোচনা ছড়িয়ে পড়ে। ফলে অনেক ভোটারই আর ভোট দিতে যাননি। এর প্রভাবও পড়তে পারে ফলাফলে।
জাকসুর নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, আগামীকাল শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুর নাগাদ হয়তো জাহাঙ্গীরনগর কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদগুলোর নির্বাচনের ফল পাওয়া যেতে পারে।
১ দিন আগেপোলিং এজেন্টরা অভিযোগে বলেন, নির্বাচনের কালি হিসেবে ভোটারদের আঙুলে যে কালি ব্যবহার করা হয়েছে, তা কোনোভাবেই অমোচনীয় ছিল না। এ কালি সামান্য ঘষাতেই উঠে যাচ্ছিল। এমনকি নির্বাচনের দিন জামায়াতে ইসলামীর সংসদ সদস্য পদ প্রার্থীর মতো অসংখ্য মানুষ অবৈধভাবে ভুয়া প্রেস-পাস ব্যবহারসহ নানা উপায়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান
১ দিন আগে