এনসিপির আপসহীনতার ফসল এই রূপরেখা: হাসনাত আবদুল্লাহ

প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম
আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ২০: ২৩
হাসনাত আব্দুল্লাহ। ফাইল ছবি

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর দক্ষিণাঞ্চলের মূখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সরকারের কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের যে রূপরেখা সুপারিশ করেছে, তা এনসিপির ‘আপোষহীন অবস্থানের’ কারণেই সম্ভব হয়েছে।

বুধবার (২৯ অক্টোবর ২০২৫) এক ফেসবুক পোস্টে তিনি জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করেন।

হাসনাত আবদুল্লাহ তার পোস্টে উল্লেখ করেন, এনসিপি বরাবরই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করার দাবিতে সোচ্চার ছিল এবং এই সুনির্দিষ্ট কারণেই দলটি সনদে স্বাক্ষর থেকে বিরত থেকেছে।

তিনি লেখেন, “আমরা বরাবর বলেছি জুলাই সনদ স্রেফ রাজনৈতিক সমঝোতার ফাঁকা বুলি ও দলিল নয়; অবশ্যই এর আইনি ভিত্তি থাকতে হবে৷”

তিনি আরও বলেন, “আমরা লক্ষ করেছি, এনসিপির আপসহীন অবস্থানের ধারাবাহিকতায় গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সরকারের কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা সুপারিশ করেছে। আমরা মনে করি, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এনসিপির অনড় অবস্থানের ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে।”

প্রস্তাব-১ ও প্রস্তাব-২ নিয়ে এনসিপির অবস্থান : পোস্টটিতে হাসনাত আবদুল্লাহ সংবিধান সম্পর্কিত সংস্কার বাস্তবায়নে কমিশনের দেওয়া দুটি স্বতন্ত্র খসড়া নিয়ে দলের অবস্থানও স্পষ্ট করেন।

তিনি উল্লেখ করেন, এনসিপি মনে করে সরকারকে অবশ্যই ‘প্রস্তাব-১’ বাস্তবায়নের পথে যেতে হবে। এর কারণ হিসেবে তিনি ‘প্রস্তাব-১’-এর ৮(ঙ) ধারার কথা তুলে ধরেন, যেখানে বলা হয়েছে—

“নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংবিধান সংস্কার পরিষদ কার্য সম্পন্ন করতে না পারলে সংবিধান সংস্কার বিল পরিষদ কর্তৃক গৃহীত হয়েছে বলে ধরে নেয়া হবে এবং সংবিধান সংস্কার আইনরূপে কার্যকর হবে।”

এনসিপির মতে, গণভোটের ম্যান্ডেট বাস্তবায়নে বাধ্যবাধকতা তৈরির জন্য এটি একটি ‘অত্যাবশ্যকীয় সুপারিশ’।

বিপরীতে, ‘প্রস্তাব-২’-এর বিষয়ে দলটি মনে করে— “এ ব্যাপারে কোনো স্পষ্ট বক্তব্য নেই, যার দরুন গোটা সংস্কার কার্যক্রমই ভণ্ডুল হয়ে যেতে পারে।”

এনসিপি ‘প্রস্তাব-১’ গ্রহণের দাবি জানালেও এর কিছু ‘ভাষিক অস্পষ্টতা’ নিরসনেরও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। যেমন, ৮(ক) ধারায় “করিতে পারিবে” এর বদলে “করিবে” এবং ৮(ঘ) ধারায় “বিবেচনা করিবে” শব্দের অস্পষ্টতা দূর করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

পোস্টের শেষে, হাসনাত আবদুল্লাহ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি দুটি সুনির্দিষ্ট আহ্বান জানান— ১. ঐকমত্য কমিশন কর্তৃক সুপারিশকৃত জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের প্রথম খসড়াটি (প্রস্তাব-১) গ্রহণ করার মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করতে হবে। ২. সংবিধান সংস্কার বিল খসড়া প্রণয়ন ও উন্মুক্তকরণের উদ্যোগ নিতে হবে৷

হাসনাত আবদুল্লাহর ফেসবুক পোস্টটি নিচে হুবহু দেওয়া হলো:

প্রিয় দেশবাসী ও সাংবাদিকবৃন্দ, জাতীয় নাগরিক পার্টি, এনসিপির পক্ষ থেকে সালাম ও শুভেচ্ছা জানাই। আপনারা অবগত আছেন জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করার দাবিতে এনসিপি জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা থেকে বিরত থেকেছে। আমরা বরাবর বলেছি জুলাই সনদ স্রেফ রাজনৈতিক সমঝোতার ফাঁকা বুলি ও দলিল নয়; অবশ্যই এর আইনি ভিত্তি থাকতে হবে৷ জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া দেখেই এনসিপি স্বাক্ষরের বিবেচনা করবে— এই ছিল আমাদের বক্তব্য। আমরা লক্ষ করেছি, এনসিপির আপোষহীন অবস্থানের ধারাবাহিকতায় গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সরকারের কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা সুপারিশ করেছে। আমরা মনে করি, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এনসিপির অনড় অবস্থানের ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি আমরা ঐকমত্য কমিশনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই। দুই ধরনের সংস্কারের জন্য স্বতন্ত্র বাস্তবায়ন রূপরেখা কমিশন পেশ করেছে। সংবিধান সম্পর্কিত নয় এমন সংস্কার সাধনের লক্ষ্যে প্রজ্ঞাপন ও অধ্যাদেশের খসড়া কমিশন সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে। আমরা মনে করি, কালবিলম্ব না করে অতি সত্বর এই সংস্কার প্রস্তাবসমূহ বাস্তবায়নের উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকারকে নিতে হবে৷ তবে অন্তত ৪৮টি সংস্কার প্রস্তাব সংবিধান সম্পর্কিত। এই সংস্কারসমূহের বাস্তবায়ন রূপরেখা নিয়েই এতদিন আলাপ-আলোচনা চলছিল। সংবিধান সম্পর্কিত এ সকল সংস্কার বাস্তবায়নের নিমিত্তে কমিশন দুটি স্বতন্ত্র খসড়া সুপারিশ দিয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মনে করে, প্রথম খসড়া তথা প্রস্তাব-১ বাস্তবায়নের পথে সরকারকে যেতে হবে। কারণ এখানে ৮(ঙ) ধারায় বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংবিধান সংস্কার পরিষদ কার্য সম্পন্ন করতে না পারলে সংবিধান সংস্কার বিল পরিষদ কর্তৃক গৃহীত হয়েছে বলে ধরে নেয়া হবে এবং সংবিধান সংস্কার আইনরূপে কার্যকর হবে। সনদের ওপর গণভোটের ম্যান্ডেট বাস্তবায়নে বাধ্যবাধকতা তৈরির লক্ষ্যে এটি একটি অত্যাবশকীয় সুপারিশ, যার নজির বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে। অন্যদিকে, কমিশন প্রস্তাবিত প্রস্তাব-২ এ ব্যাপারে কোনো স্পষ্ট বক্তব্য নেই, যার দরুন গোটা সংস্কার কার্যক্রমই ভণ্ডুল হয়ে যেতে পারে৷ অর্থাৎ, প্রস্তাব-২ নয়; সরকারকে কমিশন প্রস্তাবিত প্রস্তাব-১ কে বাস্তবায়ন রূপরেখা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি প্রস্তাব-১ এর বেশ কিছু জায়গায় ভাষিক অস্পষ্টতা বিদ্যমান যা নিরসন করতে হবে। যেমন, ৮(ক) ধারায় বর্ণিত “আগামী নির্বাচিত সভা সংবিধান সংস্কার বিষয়ে গাঠনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করিতে পারিবে” নয়, “করিবে” — এভাবে উল্লেখ থাকা প্রয়োজন। ৮(ঘ) ধারায় সংবিধান সংস্কার বিলের বিষয়াদি “বিবেচনা করিবে” এক ধরনের অস্পষ্টতা তৈরি করে যা দূর করা প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, গণভোটে প্রদত্ত “সং সংবিধান সংস্কার বিল” এর খসড়া দ্রুত প্রণয়ন এবং জনগণের নিকট উন্মুক্ত করতে হবে। জাতীয় নাগরিক পার্টি, এনসিপি সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছে— ১. ঐকমত্য কমিশন কর্তৃক সুপারিশকৃত জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের প্রথম খসড়াটি (প্রস্তাব-১) গ্রহণ করার মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করতে হবে। ২. সংবিধান সংস্কার বিল খসড়া প্রণয়ন ও উন্মুক্তকরণের উদ্যোগ নিতে হবে৷ ৩. জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তিসম্পন্ন আদেশের খসড়া সরকার গ্রহণ করলে সনদ স্বাক্ষরের ব্যাপারে অগ্রগতি তৈরি হবে বলে এনসিপি মনে করে। হাসনাত আবদুল্লাহ তার ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে মূলত একটি চূড়ান্ত শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, জুলাই সনদে এনসিপির স্বাক্ষরের বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করছে সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর। অন্তর্বর্তী সরকার যদি কমিশন প্রস্তাবিত ‘প্রস্তাব-১’ গ্রহণ করে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করে, তবেই কেবল জাতীয় নাগরিক পার্টি এই সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে ইতিবাচকভাবে এগিয়ে যাবে।

অর্থাৎ, বল এখন পুরোপুরি সরকারের কোর্টে।

ad
ad

রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

নতুন বছরের প্রথম মাসেই নির্বাচন হওয়া উচিত: নুর

ফেব্রুয়ারির জন্য অপেক্ষা করার দরকার নেই। নির্বাচন যত দেরি হবে তত বিচার আর সংস্কার নিয়ে গোলমাল বাড়বে। তাই নতুন বছরের প্রথম মাসেই নির্বাচন হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।

৪ ঘণ্টা আগে

নভেম্বরে গণভোটের দাবিতে কর্মসূচি দিলো জামায়াতসহ ৮ দল

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন ও নভেম্বরে গণভোটের দাবিসহ পাঁচ দফা দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জামায়াত ইসলামীসহ আন্দোলনরত আটটি রাজনৈতিক দল। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

৬ ঘণ্টা আগে

'গণভোটের তারিখ যত দেরি হবে নির্বাচন নিয়ে সংকট ততই ঘনীভূত হবে'

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর করতে দ্রুত গণভোটের তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে আটটি রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, গণভোটের তারিখ ঘোষণায় সরকার যত দেরি করবে, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সংকট ততই ঘনীভূত হবে।

৭ ঘণ্টা আগে

নির্বাচন নাও হতে পারে, আগে জুলাই সনদ হতে হবে: তাহের

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন কোনো কারণে নাও হতে পারে। কিন্তু জুলাই সনদ একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল, এটা সবার আগে হতে হবে।

৮ ঘণ্টা আগে