নাচ-গানের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকার অনৈতিক সমাজ গঠনে উৎসাহিত করছে: জামায়াত

প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম
বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামী

নতুন প্রজন্মের মধ্যে নৈতিক অবক্ষয় দেখা দিয়েছে দাবি করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও নৃত্য বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত জাতির জন্য আত্মঘাতী হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।

তার অভিমত, সংগীত-নৃত্যের শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে গান-বাজনা শেখানোর মাধ্যমে সরকার শিক্ষার্থীদের নৈতিকভাবে অবক্ষয় ও অনৈতিক সমাজ গঠনে উৎসাহিত করছে।

এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে ‘নতুন প্রজন্মকে সৎ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে’ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও নৃত্যের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল করে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এই নেতা।

রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ধর্মশিক্ষক নিয়োগের এ আহ্বান জানিয়েছেন মিয়া গোলাম পরওয়ার।

বিবৃতিতে ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে এই জামায়াত নেতা বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের কোনো বিশেষজ্ঞ শিক্ষক নেই। ফলে সমৃদ্ধ সিলেবাস থাকলেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ধর্মীয় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এতে দেশে সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসহিষ্ণুতা তৈরি হচ্ছে এবং তারা ধর্মীয় তাহজিব-তমুদ্দুন (ধর্মীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি) এবং সাংস্কৃতিক ইতিহাস-ঐতিহ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে সৎ নাগরিক ও সৎ নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না।

ধর্মীয় শিক্ষা মানুষের মধ্যে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ তৈরি করে, যা সৎ আচরণের ভিত্তি গড়ে তোলে এবং এটি একটি ন্যায়ভিত্তিক ও সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনের জন্য অপরিহার্য বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেন মিয়া গোলাম পরওয়ার। বলেন, ধর্মীয় মূল্যবোধের চর্চা না থাকলে সমাজে নৈতিক অবক্ষয় ঘটবে এবং সৎ নাগরিক ও নেতৃত্ব তৈরি হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

সংগীত ও নৃত্য শেখাকে শিক্ষার্থীদের জন্য আবশ্যক মনে করেন না মিয়া গোলাম পরওয়ার। বিপরীতে ধর্মশিক্ষাকে সবার জন্যই জরুরি মনে করেন তিনি।

জামায়াতের এই সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে সংগীত ও নৃত্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সংগীত বা নৃত্য শিক্ষার্থীর আবশ্যিক কোনো বিষয় হতে পারে না। কোনো পরিবারের একান্তই গান বা নৃত্যের প্রতি আগ্রহ থাকলে তারা ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষক রেখেও বিষয়টি শেখাতে পারে। কিন্তু ধর্মীয় বিষয়টি সব ধর্মের জন্যই অতি জরুরি বিষয়।

তিনি বলেন, তাই আমরা সরকার ও শিক্ষা উপদেষ্টাকে বলতে চাই— অবিলম্বে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা করুন, যেন শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ধর্ম শিক্ষা গ্রহণ করে জীবনকে আলোকিত করতে পারে।

সংগীত ও নৃত্যের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী বলে অভিহিত করেন মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, যে মুহূর্তে জাতির নতুন প্রজন্মের মধ্যে নৈতিক অবক্ষয় দেখা দিয়েছে, ঠিক সে মুহূর্তে সরকার প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের সংগীত ও নৃত্যের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা জাতির জন্য আত্মঘাতী।

এ অবস্থায় ধর্মশিক্ষার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে আলোকিত করে তোলা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি। বলেন, এ মুহূর্তে প্রয়োজন শিক্ষার্থীদের নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের আলোকে আদর্শ ও আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। অথচ তা না করে কোমলমতি প্রজন্মকে সংগীত ও নৃত্য শিক্ষা দেওয়ার জন্য শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকার মূলত শিক্ষার্থীদেরকে নৈতিকভাবে অবক্ষয় ও অনৈতিক সমাজ গঠনে উৎসাহিত করছে।

বিবৃতিতে মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানানো হলেও এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। বরং এর পরিবর্তে নৃত্য, গান, বাজনা শেখানোর জন্য শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা আমাদের কাছে অত্যন্ত দুঃখজনক ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। আমরা সরকারকে আরও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই— ধর্মীয় শিক্ষা শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, বরং দেশের সব ধর্মাবলম্বী শিশুর জন্য সমানভাবে প্রয়োজনীয় ও আবশ্যক বিষয়।

‘অথচ সরকারের এ নিয়োগ পরিকল্পনায় ধর্মীয় শিক্ষাকে পাশ কাটিয়ে সংগীত ও নৃত্য শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে নৈতিক অবক্ষয় ও চরিত্রহীন মানুষ তৈরি করবে বলে বিজ্ঞজনেরা মনে করেন,’— বলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।

ad
ad

রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

আ.লীগকে ফেরাতে জয়-পুতুলকে নেতৃত্বে আনার পরিকল্পনা শেখ হাসিনার

জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পর এসে জানা যাচ্ছে, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল– এই দুজনকে সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব দিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বে আনার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছেন শেখ হাসিনা। পাশাপাশি ভূমিকা থাকবে শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিরও।

৭ ঘণ্টা আগে

প্রচার শেষ, ডাকসুতে এখন ভোটের অপেক্ষা

ভোটাররা বলছেন, ছয় বছরের বিরতিতে এবার যে ডাকসু নির্বাচন হচ্ছে, তা অনেক বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। সবচেয়ে বেশি প্রার্থীর অংশ নিচ্ছেন এবারের নির্বাচনে। জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে মুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশে বাধাহীনভাবে সবাই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এমনকি নব্বইয়ের অভ্যুত্থানের পর ঢাবি ক্যাম্পাসে সব সংগঠন ম

১৭ ঘণ্টা আগে

এনসিপি অন্তর্বর্তী সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট: হারুনুর রশিদ

হারুনুর রশিদ বলেন, ‌‘এনসিপির যে কোনো স্থানে যে কোনো কার্যক্রম দেখেই বোঝা যাচ্ছে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট। সরকারের পক্ষ থেকে দলটিকে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এটি মোটেও কাম্য নয়।’

১ দিন আগে

হোন্ডা-গুন্ডার রাজনীতি আর চলবে না : হাসনাত

হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, এনসিপি হলো ইনসাফের পক্ষে। আপনি যদি ইনসাফের পক্ষে থাকেন, তাহলে ধরে নিবো আপনি এনসিপির পক্ষের লোক। এনসিপি করে বেইনসাফি কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। এনসিপির নেতা হয়ে বেইনসাফি কাজ করে প্রোগ্রামে হাজার হাজার লোক নিয়ে আসেন, সেটা আমাদের দরকার নেই।

১ দিন আগে