
শাহরিয়ার শরীফ

দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকার গঠনের প্রত্যয়ে ঘোষণা করেছে সংসদীয় আসনে দলীয় প্রার্থীর প্রাথমিক তালিকা। ৩০০ আসনের মধ্যে ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণার পর একটি আসনে একজনের মনোনয়ন স্থগিতও করেছে দলটি। তবে অনেক আসনেই দল ঘোষিত প্রার্থীকে নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ‘আপত্তি’ দেখা গেছে।
নেতাকর্মীদের অনেকে বলছেন, দলঘোষিত প্রার্থীর চেয়েও যোগ্য প্রার্থী মাঠে রয়ে গেছে। এসব প্রার্থীর পক্ষে অনেক আসনেই মিছিল, সমাবেশ করে চলেছেন কর্মী-সমর্থকরা। সড়ক-মহাসড়ক অবরোধও এখনো চলছেই। কোথাও কোথাও দল মনোনীত প্রার্থীর প্রচার ঘিরে মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্য নেতার কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ পর্যন্ত হচ্ছে।
পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, ভোটে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আগে নিজেদের মধ্যেই লড়তে হচ্ছে বিএনপিকে। কেন্দ্র বলছে, দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করার সময় তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ‘আপত্তি’ আমলে নেওয়া হবে। প্রার্থী চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে বিএনপিকে সতর্ক থাকতে বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও।
গত ৩ নভেম্বর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সভায় প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। পরে সংবাদ সম্মেলন করে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় তিনি বলেন, এটি প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা। সে হিসাবে এটি চূড়ান্ত না হলেও ‘অ্যাপ্রোপ্রিয়েট’ একটি তালিকা। অর্থাৎ এ তালিকায় কিছু রদবদলের সুযোগ থাকলেও তা পরিমাণে হয়তো খুব বেশি হবে না।
সে দিন রাতেই একাধিক জেলায় বিএনপির প্রার্থী তালিকায় না থাকা নেতাদের অনুসারীরা বিক্ষোভ করেন। এরপর থেকে মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের কর্মীদের ক্ষোভ তৃণমূলে উত্তাপ ছড়িয়ে চলেছে, ঘটছে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটেই চলেছে। ফরিদপুর থেকে কুমিল্লা হয়ে চট্টগ্রাম, জয়পুরহাট, মেহেরপুর, মাদারীপুর, রাজশাহী, নেত্রকোনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ— এমন আরও অনেক জেলাতেই প্রার্থী পরিবর্তনের আওয়াজ জোরালো হয়ে উঠেছে।
বিএনপি প্রার্থী ঘোষণার পর গত ১০ দিনে প্রায় অন্তত ২০ জেলায় জেলায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পালটা ধাওয়া, সড়ক ও রেল অবরোধ, এমনকি অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। অনেক আসনে ক্ষোভ থাকলেও দলের বিরাগভাজন হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে প্রকাশ্যে বিক্ষোভ করছেন না— এমন তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, বিগত সময়ে মাঠে ছিলেন না— এমন নেতাদের প্রার্থী করা হয়েছে। কোথাও আবার বহিরাগত, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করা নেতাদের প্রার্থী করা হয়েছে। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা দলের হাইকমান্ডের কাছে প্রার্থী তালিকা পুনর্বিবেচনার দাবি তুলছেন।
নির্বাচন সামনে রেখে এমন পরিস্থিতিতে বিব্রত বিএনপির হাইকমান্ড। শুরুতে এসব ঘটনায় জড়িত একাধিক জেলার নেতাকর্মীদের বহিষ্কার করা হয়েছে। দলীয় সূত্র বলছে, আপাতত আর তেমন হার্ডলাইনে না গিয়ে আলোচনায় সমাধান করার চেষ্টা চলছে।
খুলনা-৬ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন ছাত্রদলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক রফিকুল ইসলাম। রাজনীতি ডটকমকে তিনি বলেন, ‘খুলনার বাকি আসনগুলোতে উপযুক্ত প্রার্থী দেওয়া হলেও আমার আসনে বহিরাগত একজনকে প্রার্থী করা হয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার কয়েক হাজার ভোটার ও নেতাকর্মী এর প্রতিবাদে গণস্বাক্ষর করে তার দলীয় প্রার্থিতা বাতিল করতে কেন্দ্রে আবেদন পাঠাবে।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রার্থিতা নিয়ে এমন বিরোধিতা ও প্রতিবাদের মুখে মুখে কোথাও কোথাও পরিবর্তন আসতে পারে। প্রার্থী ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব সামান্য দুয়েকটি আসনে এমন পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিলেও অনেক আসনে এমন পরিস্থিতির তৈরি হওয়ায় পরিবর্তনের সংখ্যা বাড়তে পারে।
বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে মাদারীপুর-১ (শিবচর), মেহেরপুর-২ (গাংনী), কুষ্টিয়া-৩ (সদর), চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি), চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড), চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী), কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর), কুষ্টিয়া-৪, কুমিল্লা-৬ (সদর ও সেনানিবাস), কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট ও লালমাই উপজেলা), চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ), বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী), ঠাকুরগাঁও-২, জয়পুরহাট-২, জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনে মনোনয়ন পাওয়া নেতার বিরোধিতাসহ মনোনয়ন না পাওয়া নেতাদের পক্ষে আন্দোলন-সংঘাত দেখা গেছে।
এ তালিকায় আরও রয়েছে ঢাকা-১২, টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল), ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা উপজেলা), সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর), দিনাজপুর-২ (বিরল-বোচাগঞ্জ), রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর), রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর), চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (ভোলাহাট, গোমস্তাপুর ও নাচোল), কুমিল্লা-২ (হোমনা-তিতাস), কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ), নাটোর-১ (লালপুর ও বাগাতিপাড়া), ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর), গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি), খুলনা-২ (সোনাডাঙ্গা ও খুলনা সদর) আসন।
এসব আসনে বিদ্রোহ, বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, ঘটছে এখনো। এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা, বান্দরবানসহ বেশ কয়েক স্থানে বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরপরই মাদারীপুর-১ (শিবচর) আসনে সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকী লাবলুর অনুসারীরা ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এতে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ওই আসনের প্রার্থী কামাল জামান মোল্লার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠায় পরে স্থগিত করে দেয়া হয় প্রার্থিতা। অবশ্য পরে তিনিও মাঠে নেমেছেন। স্থগিতাদেশ না তুললে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জামান মোল্লা।
চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনে মনোনয়নবঞ্চিত এম এ হান্নানের অনুসারীরাও একইভাবে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি জানান।
সাতক্ষীরা-৩ (আশাশুনি–কালিগঞ্জ) আসনে ‘গরিবের ডাক্তার’ হিসেবে পরিচিত ডা. শহিদুল আলমকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তার সমর্থকেরা মহাসড়ক অবরোধ করেন।
ময়মনসিংহ-৬ (গৌরীপুর-ফুলবাড়িয়া) আসনে ঘোষিত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন ও আখতারুল আলম ফারুকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়। দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হন, মঞ্চ ও দোকানপাট ভাঙচুর হয়।
কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট-লালমাই) আসনে মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়াকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তার কর্মীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ অবরোধ করে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে।
কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসনে মনোনয়নবঞ্চিত সামিরা আজিম দোলার গণসংযোগে হামলার ঘটনায় আরও ২০ জন আহত হন। ভাঙচুর করা হয় গাড়ি।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসন থেকে প্রার্থী তালিকায় নাম না থাকা বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরীর সমর্থকেরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাঁচ স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করেন। এ ঘটনায় উপজেলা যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের একাধিক নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আসলাম চৌধুরীর আশা, দল তাকেই শেষ পর্যন্ত প্রার্থী হিসেবে বেছে নেবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো. আবদুল মান্নানের বিরুদ্ধে সাবেক প্রার্থী কাজী নাজমুল হোসেনের সমর্থকেরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন।
হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীর বিরুদ্ধেও উপজেলা ও পৌর বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন।
মুন্সীগঞ্জ-২ (টঙ্গীবাড়ী–লৌহজং) আসনে মনোনয়ন নিয়ে দ্বন্দ্বে সাবেক সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান সিনহা ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদের অনুসারীদের সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হন।
ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল ফেনী-২ (সদর) আসনে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে কেন্দ্রের কাছে ‘রিভিউ আবেদন’ করে আলোচনায় এসেছেন, যা রাজনৈতিক মহলে নতুন ইঙ্গিত তৈরি করেছে।
ঢাকা-১৮ আসনেও আলোচনায় এসেছে সম্ভাব্য নতুন মুখ মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ, যিনি আন্দোলনে নিহত মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর ভাই। তাকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানিয়ে এস এম জাহাঙ্গীরের অনুসারীরা বিশাল মিছিল করেন।
এদিকে ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী-মধুখালী-আলফাডাঙ্গা) আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। সেখানে বোয়ালমারী উপজেলা সদরে মনোনয়নপ্রত্যাশী দুই নেতা সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ও উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর নেতৃত্বাধীন দুপক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়, চলে ঘণ্টাব্যাপী ধ্বংসযজ্ঞ। ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও বিক্ষুব্ধদের বাধার মুখে ফেরত যেতে হয়।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে জয়পুরহাট-২ (কালাই-ক্ষেতলাল-আক্কেলপুর) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আব্দুল বারী ও সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফার সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়ায় দুজন আহত হন।
নওগাঁ-৪ (মান্দা) আসনে মনোনয়নবঞ্চিত এম এ মতিনের সমর্থকেরা ডা. ইকরামুল বারী টিপুর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের দাবিতে নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের ফেরিঘাট এলাকায় সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন করেন।
নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনেও তাইফুল ইসলাম টিপুর অনুসারীরা ফারজানা শারমিন পুতুলের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দাবিতে রেল অবরোধ করেন।
রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের প্রার্থী শফিকুল হক মিলনের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন মনোনয়নবঞ্চিত রায়হানুল হক ও নাসির হোসেনের অনুসারীরা। টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করায় সড়কে এক ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে নজরুল ইসলাম মণ্ডলের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন মনোনয়নবঞ্চিত বাকি চার প্রার্থীর অনুসারীরা। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা শিবপুরে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করলে দুপাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনে কেন্দ্রঘোষিত অধ্যাপক শাজাহান মিয়ার পরিবর্তে বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকতকে প্রার্থী করার দাবিতে কানসাটে সড়ক অবরোধ, কয়লাবাড়ীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ স্থলবন্দর সড়ক অবরোধ ও মশাল মিছিল করেন নেতাকর্মীরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাট) আসনে আমিনুল ইসলামের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে নাচোল ডাকবাংলা প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন বঞ্চিত ইঞ্জিনিয়ার ইমদাদুল হক মাসুদের সমর্থকরা।
নেত্রকোনা-২ (নেত্রকোণা সদর-বারহাট্টা) আসনে দলঘোষিত প্রার্থীর বদলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক এ টি এম আব্দুল বারী ড্যানীকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে গণমিছিল ও সমাবেশ করেন তার কর্মী-সমর্থকরা।
এমন ক্ষোভ-বিক্ষোভ নিয়ে দল কী ভাবছে— জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘প্রার্থী ঘোষণার সময় বলা হয়েছে, এটি প্রাথমিক তালিকা। প্রার্থিতা ঘোষণার পর যা হচ্ছে তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। যদি কোথাও সমস্যা থাকে, নিশ্চয়ই সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে দেখা হবে।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও মনে করছেন, বিএনপির প্রার্থী তালিকায় দীর্ঘদিন মাঠে থাকা ত্যাগী অনেকে বাদ পড়েছেন। ফলে তৃণমূলের ক্ষোভকে আমলে নিতে হবে। তা না হলে নির্বাচন সামনে রেখে বিভেদ বাড়বে। এক আসনে দুই বা ততোধিক প্রভাবশালী নেতা শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকলে দ্বন্দ্ব আরও বাড়বে। তাতে উলটো প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলো সুবিধা পেয়ে যেতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বিএনপিকে সতর্কভাবে পা ফেলতে হবে। দলের ত্যাগীদের বাদ দিয়ে নির্বাচনের পথে হাঁটলে ফলাফল সুখকর নাও হতে পারে। তবে বিক্ষোভের বদলে আলোচনার ভিত্তিতে সমাধানে পৌঁছাতে পারলে ভালো। এমনটা নির্বাচন পর্যন্ত অব্যাহত থাকলে ভোটের রাজনীতিতে অবশ্যই প্রভাব পড়বে।’

দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকার গঠনের প্রত্যয়ে ঘোষণা করেছে সংসদীয় আসনে দলীয় প্রার্থীর প্রাথমিক তালিকা। ৩০০ আসনের মধ্যে ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণার পর একটি আসনে একজনের মনোনয়ন স্থগিতও করেছে দলটি। তবে অনেক আসনেই দল ঘোষিত প্রার্থীকে নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ‘আপত্তি’ দেখা গেছে।
নেতাকর্মীদের অনেকে বলছেন, দলঘোষিত প্রার্থীর চেয়েও যোগ্য প্রার্থী মাঠে রয়ে গেছে। এসব প্রার্থীর পক্ষে অনেক আসনেই মিছিল, সমাবেশ করে চলেছেন কর্মী-সমর্থকরা। সড়ক-মহাসড়ক অবরোধও এখনো চলছেই। কোথাও কোথাও দল মনোনীত প্রার্থীর প্রচার ঘিরে মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্য নেতার কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ পর্যন্ত হচ্ছে।
পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, ভোটে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আগে নিজেদের মধ্যেই লড়তে হচ্ছে বিএনপিকে। কেন্দ্র বলছে, দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করার সময় তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ‘আপত্তি’ আমলে নেওয়া হবে। প্রার্থী চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে বিএনপিকে সতর্ক থাকতে বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও।
গত ৩ নভেম্বর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সভায় প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। পরে সংবাদ সম্মেলন করে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় তিনি বলেন, এটি প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা। সে হিসাবে এটি চূড়ান্ত না হলেও ‘অ্যাপ্রোপ্রিয়েট’ একটি তালিকা। অর্থাৎ এ তালিকায় কিছু রদবদলের সুযোগ থাকলেও তা পরিমাণে হয়তো খুব বেশি হবে না।
সে দিন রাতেই একাধিক জেলায় বিএনপির প্রার্থী তালিকায় না থাকা নেতাদের অনুসারীরা বিক্ষোভ করেন। এরপর থেকে মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের কর্মীদের ক্ষোভ তৃণমূলে উত্তাপ ছড়িয়ে চলেছে, ঘটছে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটেই চলেছে। ফরিদপুর থেকে কুমিল্লা হয়ে চট্টগ্রাম, জয়পুরহাট, মেহেরপুর, মাদারীপুর, রাজশাহী, নেত্রকোনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ— এমন আরও অনেক জেলাতেই প্রার্থী পরিবর্তনের আওয়াজ জোরালো হয়ে উঠেছে।
বিএনপি প্রার্থী ঘোষণার পর গত ১০ দিনে প্রায় অন্তত ২০ জেলায় জেলায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পালটা ধাওয়া, সড়ক ও রেল অবরোধ, এমনকি অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। অনেক আসনে ক্ষোভ থাকলেও দলের বিরাগভাজন হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে প্রকাশ্যে বিক্ষোভ করছেন না— এমন তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, বিগত সময়ে মাঠে ছিলেন না— এমন নেতাদের প্রার্থী করা হয়েছে। কোথাও আবার বহিরাগত, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করা নেতাদের প্রার্থী করা হয়েছে। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা দলের হাইকমান্ডের কাছে প্রার্থী তালিকা পুনর্বিবেচনার দাবি তুলছেন।
নির্বাচন সামনে রেখে এমন পরিস্থিতিতে বিব্রত বিএনপির হাইকমান্ড। শুরুতে এসব ঘটনায় জড়িত একাধিক জেলার নেতাকর্মীদের বহিষ্কার করা হয়েছে। দলীয় সূত্র বলছে, আপাতত আর তেমন হার্ডলাইনে না গিয়ে আলোচনায় সমাধান করার চেষ্টা চলছে।
খুলনা-৬ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন ছাত্রদলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক রফিকুল ইসলাম। রাজনীতি ডটকমকে তিনি বলেন, ‘খুলনার বাকি আসনগুলোতে উপযুক্ত প্রার্থী দেওয়া হলেও আমার আসনে বহিরাগত একজনকে প্রার্থী করা হয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার কয়েক হাজার ভোটার ও নেতাকর্মী এর প্রতিবাদে গণস্বাক্ষর করে তার দলীয় প্রার্থিতা বাতিল করতে কেন্দ্রে আবেদন পাঠাবে।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রার্থিতা নিয়ে এমন বিরোধিতা ও প্রতিবাদের মুখে মুখে কোথাও কোথাও পরিবর্তন আসতে পারে। প্রার্থী ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব সামান্য দুয়েকটি আসনে এমন পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিলেও অনেক আসনে এমন পরিস্থিতির তৈরি হওয়ায় পরিবর্তনের সংখ্যা বাড়তে পারে।
বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে মাদারীপুর-১ (শিবচর), মেহেরপুর-২ (গাংনী), কুষ্টিয়া-৩ (সদর), চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি), চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড), চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী), কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর), কুষ্টিয়া-৪, কুমিল্লা-৬ (সদর ও সেনানিবাস), কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট ও লালমাই উপজেলা), চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ), বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী), ঠাকুরগাঁও-২, জয়পুরহাট-২, জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনে মনোনয়ন পাওয়া নেতার বিরোধিতাসহ মনোনয়ন না পাওয়া নেতাদের পক্ষে আন্দোলন-সংঘাত দেখা গেছে।
এ তালিকায় আরও রয়েছে ঢাকা-১২, টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল), ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা উপজেলা), সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর), দিনাজপুর-২ (বিরল-বোচাগঞ্জ), রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর), রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর), চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (ভোলাহাট, গোমস্তাপুর ও নাচোল), কুমিল্লা-২ (হোমনা-তিতাস), কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ), নাটোর-১ (লালপুর ও বাগাতিপাড়া), ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর), গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি), খুলনা-২ (সোনাডাঙ্গা ও খুলনা সদর) আসন।
এসব আসনে বিদ্রোহ, বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, ঘটছে এখনো। এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা, বান্দরবানসহ বেশ কয়েক স্থানে বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরপরই মাদারীপুর-১ (শিবচর) আসনে সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকী লাবলুর অনুসারীরা ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এতে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ওই আসনের প্রার্থী কামাল জামান মোল্লার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠায় পরে স্থগিত করে দেয়া হয় প্রার্থিতা। অবশ্য পরে তিনিও মাঠে নেমেছেন। স্থগিতাদেশ না তুললে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জামান মোল্লা।
চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনে মনোনয়নবঞ্চিত এম এ হান্নানের অনুসারীরাও একইভাবে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি জানান।
সাতক্ষীরা-৩ (আশাশুনি–কালিগঞ্জ) আসনে ‘গরিবের ডাক্তার’ হিসেবে পরিচিত ডা. শহিদুল আলমকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তার সমর্থকেরা মহাসড়ক অবরোধ করেন।
ময়মনসিংহ-৬ (গৌরীপুর-ফুলবাড়িয়া) আসনে ঘোষিত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন ও আখতারুল আলম ফারুকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়। দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হন, মঞ্চ ও দোকানপাট ভাঙচুর হয়।
কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট-লালমাই) আসনে মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়াকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তার কর্মীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ অবরোধ করে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে।
কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসনে মনোনয়নবঞ্চিত সামিরা আজিম দোলার গণসংযোগে হামলার ঘটনায় আরও ২০ জন আহত হন। ভাঙচুর করা হয় গাড়ি।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসন থেকে প্রার্থী তালিকায় নাম না থাকা বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরীর সমর্থকেরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাঁচ স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করেন। এ ঘটনায় উপজেলা যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের একাধিক নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আসলাম চৌধুরীর আশা, দল তাকেই শেষ পর্যন্ত প্রার্থী হিসেবে বেছে নেবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো. আবদুল মান্নানের বিরুদ্ধে সাবেক প্রার্থী কাজী নাজমুল হোসেনের সমর্থকেরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন।
হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীর বিরুদ্ধেও উপজেলা ও পৌর বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন।
মুন্সীগঞ্জ-২ (টঙ্গীবাড়ী–লৌহজং) আসনে মনোনয়ন নিয়ে দ্বন্দ্বে সাবেক সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান সিনহা ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদের অনুসারীদের সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হন।
ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল ফেনী-২ (সদর) আসনে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে কেন্দ্রের কাছে ‘রিভিউ আবেদন’ করে আলোচনায় এসেছেন, যা রাজনৈতিক মহলে নতুন ইঙ্গিত তৈরি করেছে।
ঢাকা-১৮ আসনেও আলোচনায় এসেছে সম্ভাব্য নতুন মুখ মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ, যিনি আন্দোলনে নিহত মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর ভাই। তাকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানিয়ে এস এম জাহাঙ্গীরের অনুসারীরা বিশাল মিছিল করেন।
এদিকে ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী-মধুখালী-আলফাডাঙ্গা) আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। সেখানে বোয়ালমারী উপজেলা সদরে মনোনয়নপ্রত্যাশী দুই নেতা সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ও উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর নেতৃত্বাধীন দুপক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়, চলে ঘণ্টাব্যাপী ধ্বংসযজ্ঞ। ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও বিক্ষুব্ধদের বাধার মুখে ফেরত যেতে হয়।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে জয়পুরহাট-২ (কালাই-ক্ষেতলাল-আক্কেলপুর) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আব্দুল বারী ও সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফার সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়ায় দুজন আহত হন।
নওগাঁ-৪ (মান্দা) আসনে মনোনয়নবঞ্চিত এম এ মতিনের সমর্থকেরা ডা. ইকরামুল বারী টিপুর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের দাবিতে নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের ফেরিঘাট এলাকায় সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন করেন।
নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনেও তাইফুল ইসলাম টিপুর অনুসারীরা ফারজানা শারমিন পুতুলের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দাবিতে রেল অবরোধ করেন।
রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের প্রার্থী শফিকুল হক মিলনের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন মনোনয়নবঞ্চিত রায়হানুল হক ও নাসির হোসেনের অনুসারীরা। টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করায় সড়কে এক ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে নজরুল ইসলাম মণ্ডলের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন মনোনয়নবঞ্চিত বাকি চার প্রার্থীর অনুসারীরা। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা শিবপুরে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করলে দুপাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনে কেন্দ্রঘোষিত অধ্যাপক শাজাহান মিয়ার পরিবর্তে বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকতকে প্রার্থী করার দাবিতে কানসাটে সড়ক অবরোধ, কয়লাবাড়ীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ স্থলবন্দর সড়ক অবরোধ ও মশাল মিছিল করেন নেতাকর্মীরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাট) আসনে আমিনুল ইসলামের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে নাচোল ডাকবাংলা প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন বঞ্চিত ইঞ্জিনিয়ার ইমদাদুল হক মাসুদের সমর্থকরা।
নেত্রকোনা-২ (নেত্রকোণা সদর-বারহাট্টা) আসনে দলঘোষিত প্রার্থীর বদলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক এ টি এম আব্দুল বারী ড্যানীকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে গণমিছিল ও সমাবেশ করেন তার কর্মী-সমর্থকরা।
এমন ক্ষোভ-বিক্ষোভ নিয়ে দল কী ভাবছে— জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘প্রার্থী ঘোষণার সময় বলা হয়েছে, এটি প্রাথমিক তালিকা। প্রার্থিতা ঘোষণার পর যা হচ্ছে তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। যদি কোথাও সমস্যা থাকে, নিশ্চয়ই সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে দেখা হবে।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও মনে করছেন, বিএনপির প্রার্থী তালিকায় দীর্ঘদিন মাঠে থাকা ত্যাগী অনেকে বাদ পড়েছেন। ফলে তৃণমূলের ক্ষোভকে আমলে নিতে হবে। তা না হলে নির্বাচন সামনে রেখে বিভেদ বাড়বে। এক আসনে দুই বা ততোধিক প্রভাবশালী নেতা শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকলে দ্বন্দ্ব আরও বাড়বে। তাতে উলটো প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলো সুবিধা পেয়ে যেতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বিএনপিকে সতর্কভাবে পা ফেলতে হবে। দলের ত্যাগীদের বাদ দিয়ে নির্বাচনের পথে হাঁটলে ফলাফল সুখকর নাও হতে পারে। তবে বিক্ষোভের বদলে আলোচনার ভিত্তিতে সমাধানে পৌঁছাতে পারলে ভালো। এমনটা নির্বাচন পর্যন্ত অব্যাহত থাকলে ভোটের রাজনীতিতে অবশ্যই প্রভাব পড়বে।’

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ বারবার স্বৈরাচারী শাসনের কবলে পড়েছে। দেশের মানুষ বুকের রক্ত দিয়ে স্বৈরাচারদের উৎখাত করেছে। নতুন কোনো ফ্যাসিবাদী, কর্তৃত্ববাদী, স্বৈরাচারী শাসন আমরা দেখতে চাই না। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার বারবার নানা আশঙ্কার জন্ম দিচ্ছে।
৬ ঘণ্টা আগে
আমির খসরু বলেন, আপনারা জানেন নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি গোষ্ঠী নির্বাচন বানচাল করার জন্য ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ নির্বাচনে তাদের জেতার কোনো সুযোগ নেই। তারা বিগত দিনেও পরাজিত শক্তি ছিল, এখনো পরাজিত শক্তি, ভবিষ্যতেও তারা পরাজিত শক্তি থাকবে। সুতরাং তারা নির্বাচন চায় না, তারা নির্বাচনকে বাধাগ্রস
৭ ঘণ্টা আগে
৫ আগস্টের পরে নারীরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে সেই প্রত্যাশা থাকলেও আজকে বাংলাদেশের নারী সমাজ আবার অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে। উন্নয়নের কথা বলে গ্রামের নারীদের বিভ্রান্ত করার জন্য ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে।
৯ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহীদের জন্য মনোনয়ন আবেদন ফরম সংগ্রহের সময় বাড়িয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আগ্রহীরা আগামী ২০ নভেম্বর পর্যন্ত এই দলের মনোনয়ন আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে পারবেন।
৯ ঘণ্টা আগে