৩৬ বছরের অপেক্ষা শেষে চাকসুতে ভোট আজ

চবি প্রতিনিধি
চাকসু ভবন। ফাইল ছবি

দীর্ঘ ৩৬ বছরের ব্যবধানে প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ পাচ্ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীরা। সাড়ে তিন দশক পর যে দেশের অন্যতম বৃহৎ এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে হতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন।

রাত পোহালেই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা চলবে সেই ভোট গ্রহণ। এই ভোটের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের জন্য ২৬ জন ও হল সংসদের জন্য ১৪ জনসহ মোট ৪০ জন প্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন চবি শিক্ষার্থীরা।

চবির ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ এবং কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের দুটি ভবন মিলিয়ে মোট পাঁচটি ভবনের ১৫টি কেন্দ্রে নেওয়া হবে চাকসুর ভোট। এর মধ্যে ১৪টি কেন্দ্রে হল সংসদ ও একটি কেন্দ্রে হোস্টেল সংসদ নির্বাচন হবে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য চাকসু ভবনে আলাদা রাখা হয়েছে ভোটকেন্দ্র।

চাকসু নির্বাচন ঘিরে সোমবার রাতেই শেষ হয়েছে নির্বাচনি প্রচার। এরপর থেকে কেবলই ভোটের অপেক্ষা, যার অবসান ঘটবে আর কয়েক ঘণ্টা পরই। ৩৬ বছর পর হতে যাওয়া এই ভোট ঘিরে পুরো ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের হাওয়া।

প্রচার শেষে প্রার্থীরা এখন ভোটকেন্দ্রে এজেন্ট দেওয়াসহ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে ব্যস্ত। প্রশাসন ব্যস্ত ভোটের শেষ সময়ের প্রস্তুতিতে। সঙ্গে রয়েছে ক্যাম্পাস জুড়ে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। ভোটাররা হিসাব মেলাচ্ছেন কেন্দ্র আর হল সংসদের কোন পদে কাকে ভোট দেবেন। ক্যাম্পাসের প্রতিটি কোনায় এখন আলোচনার বিষয়বস্তু একটিই— চাকসু নির্বাচন।

এই নির্বাচনের নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন জানিয়েছেন, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট সম্পন্ন করতে চবি প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে। সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ নিশ্চিত করতে সব ব্যবস্থা নিয়েছেন তারা। ভোট ঘিরে চবি ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশে থাকবে কড়া নজরদারি।

এদিকে চাকসু নির্বাচনের দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পাঁচটি অনুষদের প্রতিটিতে একজন করে মোট পাঁচজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। কেন্দ্রগুলোর বাইরে আরও চারজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে থাকবে ভ্রাম্যমাণ আদালত। নিরাপত্তার জন্য থাকছে পুলিশ, র‍্যাব, এপিবিএন, বিজিবিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বাহিনী। রোভার স্কাউট আর বিএনসিসি সদস্যরাও থাকছেন শৃঙ্খলার জন্য।

চাকসুতে কোন পদে প্রার্থী কতজন

চাকসু নির্বাচনে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৯০৮। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৬টি পদে লড়ছেন ৪১৫ জন প্রার্থী। আর ১৪টি হল সংসদের বিভিন্ন পদে লড়ছেন ৪৭৩ জন প্রার্থী। এর মধ্যে আবার মধ্যে ছাত্রদের ১০টি আবাসিক ইউনিটে ৩৫০ জন ও ছাত্রীদের পাঁচটি হলে ১২৩ জন প্রার্থী হয়েছেন।

কেন্দ্রীয় সংসদের শীর্ষ পদ ভিপি হওয়ার জন্য এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন ২৪ জন। এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে প্রার্থীর সংখ্যা ২২। ২১ জন প্রার্থী হয়েছেন সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদের বিপরীতে।

এ ছাড়া খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১২ জন, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক পদে ১৭ জন, দপ্তর সম্পাদক পদে ১৭ জন, ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক পদে ১৩ জন, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক পদে ১১ জন, গবেষণা সম্পাদক পদে ১২ জন, সমাজসেবা সম্পাদক পদে ২০ জন, স্বাস্থ্য সম্পাদক পদে ১৫ জন, মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক পদে ১৭ জন, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক পদে ১৬ জন, যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক পদে ১৭ জন, আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক পদে ৯ জন, পাঠাগার সম্পাদক পদে ২০ ও নির্বাহী সদস্য পদে ৮৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এদিকে সহ-ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক পদে ১০ জন, সহ-দপ্তর সম্পাদক পদে ১৪ জন, সহ-খেলাধুলা সম্পাদক পদে ১৪ জন, সহ-সাহিত্য সম্পাদক পদে ১৫ জন ও সহ-যোগাযোগ সম্পাদক পদে ১৪ জন লড়াই করছেন।

চবি প্রশাসন জানিয়েছে, নির্বাচন উপলক্ষ্যে বুধ ও বৃহস্পতিবার স্থগিত থাকবে ক্লাস ও পরীক্ষা। ভোট গ্রহণ থেকে শুরু করে গণনা পর্যন্ত কার্যক্রম ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে ১৪টি এলইডি স্ক্রিনে লাইভ সম্প্রচার করা হবে।

শিক্ষার্থীরা যেন ক্যাম্পাসে এসে ভোট দিতে পারে তার জন্য বাড়ানো হয়েছে শাটলের দুটি ট্রিপ, দেওয়া হয়েছে ১৫টি বাস।

কোন কেন্দ্রে কত ভোটার

চাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার রয়েছেন ২৭ হাজার ৫১৮ জন। ছাত্রদের মধ্যে ভোটার ১৬ হাজার ১৮৯ জন, ছাত্রীদের মধ্যে ১১ হাজার ৩২৯ জন। ভোটগ্রহণ হবে পাঁচটি অনুষদ ভবনের ১৫টি কেন্দ্রে এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য চাকসু ভবনে একটি বিশেষ কেন্দ্রে।

কেন্দ্রগুলোর মধ্যে প্রকৌশল অনুষদে চার হাজার ৩৬ জন, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের শহিদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়া ভবনে পাঁচ হাজার ২৬৩ জন, বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে চার হাজার ৫৩৮ জন, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভবনে ছয় হাজার ৬০৬ জন এবং ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবনে সাত হাজার ৭৩ জন শিক্ষার্থী ভোট দেবেন।

শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা ও নেতৃত্ব বিকাশের লক্ষ্যে চাকসু গঠিত হয় ১৯৬৬ সালে। ১৯৯০ সালে সর্বশেষ এই ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়। ৩৬ বছর পর আবার এই নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

ad
ad

রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

যেভাবে আলোচনায় ‘সেফ এক্সিট’, যা বলছেন উপদেষ্টারা

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘সেফ এক্সিট’ নিয়ে যে কথাবার্তাগুলো চলছে, সেটি রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর এক ধরনের চাপ তৈরির চেষ্টা। আদৌ বর্তমান প্রেক্ষাপটে ‘সেফ এক্সিট’ বিষয়টির বাস্তবতা রয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন তারা।

১ দিন আগে

'জোটে গেলেও শাপলা প্রতীকেই নির্বাচন করবে এনসিপি'

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, ‘`বাংলাদেশের স্বার্থে এনসিপি এককভাবেও আগামী নির্বাচনে যেতে পারে। আবার কোনো অ্যালায়েন্সের মধ্য দিয়েও নির্বাচনে যেতে পারে। তবে, যদি সেটা অ্যালায়েন্স হয়; তাহলে এনসিপি নামেই নির্বাচন করবে। আমরা প্রত্যাশা করছি, শাপলা প্রতীকেই নির্ব

২ দিন আগে

ইসির কাছে নভেম্বরে গণভোট চায় জামায়াত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, আমরা আগামী নভেম্বরে গণভোট চাই। এ ছাড়া পিআর পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচনের জন্যও নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) প্রস্তুতি রাখতে বলেছি।

২ দিন আগে

ইসির সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতের প্রতিনিধি দল

বৈঠকে উপস্থিতে হয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে চারজন নির্বাচন কমিশনার এবং ইসি সচিব। অন্যদিকে, জামায়াতের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দিয়েছেন নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, সহ সদস্য হিসেবে ছিলেন এএইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার এবং মতিউর

২ দিন আগে