কখনো ভোটে হারেননি খালেদা জিয়া

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
২০০১ সালে রাজধানীর পল্টনে কৃষক দলের সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে হার না মানার রেকর্ড গড়েছিলেন খালেদা জিয়া। দীর্ঘ চার দশকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে তিনি যতবার, যত আসন থেকেই সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন, প্রতিবারই প্রতিটি আসনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন।

১৯৯১ সাল থেকে শুরু করে ২০০৮ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পাঁচটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন আসন থেকে মোট ২৩ বার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন খালেদা জিয়া। প্রতিটি আসনেই তিনি পরেছেন বিজয়ের মালা।

১৯৯১ সালের নির্বাচনি আইন অনুযায়ী একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ পাঁচটি আসনে লড়তে পারতেন। পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন আসন থেকে নির্বাচন করেন। আসনগুলো ছিল বগুড়া-৭, ঢাকা-৫, ঢাকা-৯, ফেনী-১ ও চট্টগ্রাম-৮। প্রথমবার নির্বাচন করে পাঁচ আসনেই তিনি বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করেন।

১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনেও তিনি একই সাফল্যের পুনরাবৃত্তি ঘটান। সেবার তিনি বগুড়া-৬, বগুড়া-৭, ফেনী-১, লক্ষ্মীপুর-২ ও চট্টগ্রাম-১ আসন থেকে নির্বাচন করে সবকটিতেই জয়ী হন।

পরে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়েনি খালেদা জিয়ার। এবারে তিনি তিনি বগুড়া-৬, বগুড়া-৭, খুলনা-২, লক্ষ্মীপুর-২ এবং ফেনী-১ আসনে প্রার্থী হয়ে সবগুলোতে জয়লাভ করেন।

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনি আইন সংশোধন করে একজন প্রার্থীর জন্য সর্বোচ্চ তিনটি আসনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ রাখা হয়। এবার খালেদা জিয়া তিন আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সে নির্বাচনে বিএনপি দল ও জোটগতভাবে বিপর্যয়ের মুখে পড়লেও ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তায় বগুড়া-৬, বগুড়া-৭ ও ফেনী-১ আসনের তিনটিতেই বিপুল ভোটে জয়ী হন খালেদা জিয়া।

২০০৮ সালের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও আইনি জটিলতায় খালেদা জিয়ার নির্বাচনি যাত্রা থমকে যায়। ২০১৪ সালে বিএনপি বর্জন করে। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়ার অংশ নেওয়ার পথ বন্ধ করে দেয় তৎকালীন আওয়ামী সরকার।

সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নৈতিক স্খলনজনিত কারণে দুই বছরের বেশি দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না— এ বিধান দেখিয়ে ওই সময় নির্বাচন কমিশন খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল করে। পরে ২০২৪ সালের নির্বাচনেও বিএনপি দলীয়ভাবে অংশ না নেওয়ায় আর ভোটে দাঁড়ানো হয়নি খালেদা জিয়ার।

গত বছরের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চিরচেনা আসন ফেনী-১ (পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ফুলগাজী উপজেলা) আসনের পাশাপাশি দিনাজপুর-৩ (দিনাজপুর সদর উপজেলা) ও বগুড়া-৭ (গাবতলী ও শাজাহানপুর উপজেলা) আসন থেকে নির্বাচন করার কথা ছিল দেশের নির্বাচনি ইতিহাসে সফলতম খালেদা জিয়ার। মৃত্যুর অমোঘ ডাকে সাড়া দেওয়ায় নিজের ভোটের রেকর্ডকে আর প্রলম্বিত করার সুযোগ পেলেন না তিনি।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় এ তিন আসনেই অবশ্য বিকল্প প্রার্থী প্রস্তুত রেখেছে বিএনপি। তারা দলের বিকল্প প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্রও দাখিল করে রেখেছেন। খালেদা জিয়ার প্রয়াণে তারাই এখন খালেদা জিয়ার আসনগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

ad
ad

রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

৯০-এর গণঅভ্যুত্থানে আপসহীন ভূমিকার জন্য খালেদা জিয়া চিরস্মরণীয়: জাসদ

মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে জাসদের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক শোকবার্তায় খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়।

৩ ঘণ্টা আগে

খালেদা জিয়ার প্রতি সমবেদনা জানাতে শোক বই, স্বাক্ষর ৩ দিন

গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই শোক বই থাকবে। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেল থেকে বৃহস্পতিবার (১ জানুয়ারি) পর্যন্ত এতে শোক প্রকাশ করে সমবেদনা জানানো যাবে।

৩ ঘণ্টা আগে

খালেদা জিয়া আমার কাছে মমতাময়ী মা— দোয়া চাইলেন তারেক রহমান

৪ ঘণ্টা আগে

গৃহবধূ থেকে আপসহীন নেত্রী— খালেদা জিয়ার একজীবন

দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি থেকে যাবেন ইতিহাসের পাতায়। দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামে নিজেকে যেভাবে তিনি ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন, সেই তকমাটিও ইতিহাসের পাতায় তার নামের পাশে রয়ে যাবে।

৪ ঘণ্টা আগে