
শাহরিয়ার শরীফ

বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে নিজ আসন ভোলার বদলে ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশান থেকে ভোটে লড়তে চান। এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক সমীকরণ বলছে, বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের হয়েই এ আসনে লড়বেন পার্থ। এরই মধ্যে নিজ দলের প্রতীক ‘গরুর গাড়ি’ দিয়ে পোস্টারিং করা হয়েছে পুরো এলাকায়। তবে গরুর গাড়ি নিয়ে প্রচার চালালেও ভোটের মাঠে জিতে আসতে পার্থ বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক চান পার্থ।
পার্থ একা নন, নির্বাচন ঘিরে বিএনপির মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর বেশির ভাগ নেতাই নিজেদের প্রতীকে যেন ভরসা রাখতে পারছেন না। বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করার সুযোগ যারা পাবেন, তাদের সবারই প্রতীক হিসেব প্রথম পছন্দ ধানের শীষ। এসব নেতারা বলছেন, ধানের শীষ প্রতীকে ভোট করলেই জয়ের সম্ভাবনা বেশি।
বিএনপির সম্ভাব্য জোটসঙ্গীদের এমন চাওয়ায় কোনো অসুবিধা ছিল না একদিন আগ পর্যন্তও। কিন্তু ‘গোলমাল’ বেঁধেছে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর)। এ দিন নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে তাতে অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। সংশোধনীতে বলা হয়েছে, জোট হোক বা না হোক, কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীকে তার নিজ দলের প্রতীকই ব্যবহার করতে হবে নির্বাচনে।
আরপিওর এ সংশোধনী নিয়ে এরই মধ্যে আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি। তবে এসব আপত্তি উপেক্ষিত হয়ে বৃহস্পতিবার অনুমোদন পাওয়া আরপিও সংশোধনী অধ্যাদেশ আকারে জারি হয়ে গেলে তখন জোটসঙ্গী দলের প্রার্থীরা আর ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবেন না। সেটি করতে চাইলে তাদের বিএনপির প্রার্থী হয়ে ভোট করতে হবে।
বিএনপির সমমনা দলগুলোর নেতারাও ক্ষোভ জানিয়েছেন আরপিও সংশোধনী নিয়ে। বলছেন, এর বদলে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে মনোযোগী হওয়া বেশি প্রয়োজন। আইনি বাধ্যবাধকতায় পড়লে অবশ্য বিএনপির সমমনা কয়েকটি দলের নেতাদের সরাসরি বিএনপির প্রার্থী হয়ে ভোট করতেও আপত্তি নেই।
নির্বাচন সংক্রান্ত আইন ‘রিপ্রেজেন্টেশন অব পিপলস অর্ডার’ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনীতে বলা হয়েছে, এখন থেকে কোনো প্রার্থীর নিজের রাজনৈতিক দল নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক জোটের অংশ হলেও ওই প্রার্থীকে নিজ দলের প্রতীকেই ভোট করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই সংশোধনীতে নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈঠকের পর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন।
ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা জানান, জাতীয় নির্বাচনে জোটের হয়ে নির্বাচনের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগে একাধিক দল জোট গঠন করে নির্বাচন করলে ওই জোটের যেকোনো প্রার্থী জোটের নেতৃত্বাধীন দলের নির্বাচনি প্রতীকে ভোট করতে পারত। এখন আর সেই সুযোগ থাকবে না। এখন জোটবদ্ধ হলেও প্রার্থীকে নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য জেসমিন টুলী রাজনীতি ডটকমকে বলেন, বিষয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ছিল। নির্বাচন কমিশন সেটা গ্রহণ করেছে। তবে আরপিও সংশোধনী পাঠানোর আগে নির্বাচন কমিশন দলগুলোকে ডাকেনি।
জোটের প্রার্থী হলেও ভোটে লড়তে হবে নিজ দলের প্রতীকে— আরপিওর এমন সংশোধনীর সঙ্গে বিএনপি একমত নয় বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। এতে ছোট দলগুলো জোটবদ্ধ হতে নিরুৎসাহিত হবে বলেও মনে করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় এই নেতা।
শুক্রবার গুলশানে নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আরপিওর এ সংশোধনীর সঙ্গে বিএনপি একমত নয়। এতে ছোট দলগুলো জোটবদ্ধ হতে নিরুৎসাহিত হবে। আগে জোটভুক্ত হলে দলগুলো অন্য রাজনৈতিক দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে পারত। এ বিধিতে অধিকাংশ দলের সম্মতি ছিল। আমরাও আশ্বস্ত ছিলাম। কিন্তু যেভাবে আরপিও (উপদেষ্টা পরিষদে) অনুমোদন পেল, তাতে আকারে ছোট দলগুলো জোটবদ্ধ হতে উৎসাহ পাবে না।
বিএনপির সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনি জোট নিয়ে আলোচনা এগিয়েছে, এসব দলের নেতাদের বেশির ভাগই নিজেদের প্রতীকের তুলনায় ধানের শীষ প্রতীককে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য মনে করছেন। তারা বলছেন, ধানের শীষ প্রতীক পেলে বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সমর্থন ও সহযোগিতা পাওয়া সহজ হয়। এলাকার জনসংযোগে কাজ করতে গিয়ে অনেক প্রার্থী দেখছেন, ধানের শীষের বিকল্প নেই।
সম্প্রতি নিবন্ধন পাওয়া লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ‘আনারস’ প্রতীকে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন দিচ্ছেন। নিজের এলাকা পিরোজপুরে প্রচারে গিয়ে ধানের শীষ প্রতীকের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরেছেন তিনি।
রাজনীতি ডটকমকে মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন-কর্মসূচি করছি। নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে কাজ করার সুযোগ হলে বিএনপির নেতাকর্মীরাও সক্রিয়ভাবে মাঠে থাকবে।’
ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে নির্বাচন করতে বিএনপির সিগন্যাল পেয়েছেন জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) প্রধান ববি হাজ্জাজ। সম্প্রতি এক নির্বাচনি সভায় বিএনপি ও তার দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে নিজেই ধানের শীষের পক্ষে স্লোগান দেন, ভোটও চান।
ববি হাজ্জাজ বলেন বলেন, ‘জোটের প্রতীক ধানের শীষে নির্বাচন করতে চাই। এরই মধ্যে নির্বাচনি এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছি। বিএনপির নেতাকর্মীরাও আমাদের সঙ্গে আছেন।‘
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘নিবন্ধিত দলগুলোর ক্ষেত্রে প্রতীক নিয়ে সমস্যা হলেও অনিবন্ধিত দলের প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এটা সমস্যা হবে না। আমি ২০১৮ সালে লক্ষ্মীপুর-১ আসন থেকে ধানের শীষের প্রার্থী ছিলাম। এবারও ধানের শীষে নির্বাচন করতে চাই। সেভাবেই কাজ করছি। বিএনপির সমমনা দলগুলোর বেশিরভাগ নেতা ধানের শীষে নির্বাচন করতে চান। এতে তাদের কোনো সমস্যা নেই।‘
সবাই এমন চাইলেও আরপিও সংশোধনী হলে সে সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় ক্ষোভ জানিয়েছেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। রাজনীতি ডটকমকে তিনি বলেন, ‘সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কাজ সুষ্ঠু নির্বাচন করা। সেখানে কে কোন প্রতীকে নির্বাচন করলো সেটা দেখা তাদের কাজ না। এতে দেশের অনেক ক্ষতি কিংবা লাভও নেই। কিন্তু জোট করলেও নিজ প্রতীকে নির্বাচনের শর্ত দিয়ে এক ধরণের প্রতিবন্ধকতা তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে। আমার ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করতে সমস্যা নেই। বিএনপি যদি নিজেদের থেকে না দিয়ে মিত্রদের প্রার্থী করে তাতেও সমস্য দেখছি না।‘
জানা গেছে, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলসহ (জেএসডি) বিএনপির সম্ভাব্য নির্বাচনি জোটের বেশির ভাগ দলের নেতারা ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছেন।
বিএনপির সমমনা দলগুলোর বেশির ভাগ ধানের শীষ প্রতীকে লড়তে চাইলেও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক দলীয় প্রতীক কোদাল নিয়ে নির্বাচন করবেন। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকিও দলীয় প্রতীক মাথাল নিয়ে ভোট করার কথা জানিয়েছেন।
জোনায়েদ সাকির ভাষ্য, ‘অনেক সীমাবদ্ধতা থাকলেও নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করার মর্যাদা আলাদা।‘
এদিকে বিএনপি ও সমমনাদের আপত্তি থাকলেও বিপরীত অবস্থান জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির)(এনসিপি)। তারা আরপিও সংশোধন করে এমন বিধান যুক্ত করার পক্ষে, যেখানে জোট করলেও কোনো প্রার্থী যেন নিজ দলের প্রতীকই ব্যবহার করতে বাধ্য হয়।
আবার আরপিও সংশোধনীর ক্ষেত্রে কারও মতামত নেওয়া হয়নি— এমন অভিযোগও করছেন কোনো কোনো রাজনীতিক।
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স) রাজনীতি ডটকমকে বলেন, খবরে দেখছি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। কাদের সঙ্গে কথা বলে, কাদের পরামর্শে এই সংশোধনী আনা হলো? সংশোধনীগুলো কী কী? এই সংশোধনী অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য কতটুকু কার্যকর হবে?
প্রিন্স বলেন, এসব প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানা নেই। আমাদের সঙ্গে কোনো কথা বলা হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোসহ অন্যদের সঙ্গে আলোচনা পরামর্শ ছাড়া এ ধরনের সংশোধন কি গ্রহণযোগ্য হবে?
আরপিওর এ সংশোধনীর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য জেসমিন টুলী রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ছোট ছোট দলগুলোকে তো নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে হবে। তারা তো বড় দলের মধ্যে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তারা মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। এ সিদ্ধান্তের ফলে এসব দলের নেতারা ভোটারদের কাছে তাদের পরিচয় ও এজেন্ডা তুলে ধরার সুযোগ পাবেন।
অধ্যাদেশের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে আপত্তি এলে এটি বাদ দেওয়া যেতে পারে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনের সাবেক এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের ওপর নির্ভর করবে।’
আওয়ামী লীগের আমল থেকে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করা রাজনৈতিক দলগুলো আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরই মধ্যে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজ নিজ এলাকায় কাজ করছেন। তবে দলীয় প্রতীকের বাইরে ধানের শীষ পেতে তাদের আগ্রহের কথা বিএনপির নীতিনির্ধারকরাও অবহিত আছেন।
নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের কাছ থেকে আসনের তালিকাও সংগ্রহ করেছে। গণতন্ত্র মঞ্চের শরিকরা প্রায় ৫০টি আসন চেয়েছে বিএনপির কাছে।
এছাড়া ১২ দলীয় জোট ২১টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) ৯টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ৪০টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) ৫টি, গণফোরাম ১৫টি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি ৬টি ও এনডিএম ১০টি আসনে মনোনয়ন চেয়েছে বলে জানা গেছে।
এর আগে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি শরিকদের ৫৮ আসনে ছাড় দিয়েছিল। এর মধ্যে অবশ্য বেশির ভাগ আসনই দেওয়া হয় জামায়াতকে। এবারের নির্বাচনে জামায়াতই বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। তাই মিত্র ও সমমনা দলগুলোর জন্য আসন বরাদ্দ ও প্রতীক বিষয়ে কৌশল নির্ধারণ নিয়ে কাজ করছে বিএনপি। এখনো এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়নি দলটির হাইকমান্ড।

বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে নিজ আসন ভোলার বদলে ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশান থেকে ভোটে লড়তে চান। এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক সমীকরণ বলছে, বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের হয়েই এ আসনে লড়বেন পার্থ। এরই মধ্যে নিজ দলের প্রতীক ‘গরুর গাড়ি’ দিয়ে পোস্টারিং করা হয়েছে পুরো এলাকায়। তবে গরুর গাড়ি নিয়ে প্রচার চালালেও ভোটের মাঠে জিতে আসতে পার্থ বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক চান পার্থ।
পার্থ একা নন, নির্বাচন ঘিরে বিএনপির মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর বেশির ভাগ নেতাই নিজেদের প্রতীকে যেন ভরসা রাখতে পারছেন না। বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করার সুযোগ যারা পাবেন, তাদের সবারই প্রতীক হিসেব প্রথম পছন্দ ধানের শীষ। এসব নেতারা বলছেন, ধানের শীষ প্রতীকে ভোট করলেই জয়ের সম্ভাবনা বেশি।
বিএনপির সম্ভাব্য জোটসঙ্গীদের এমন চাওয়ায় কোনো অসুবিধা ছিল না একদিন আগ পর্যন্তও। কিন্তু ‘গোলমাল’ বেঁধেছে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর)। এ দিন নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে তাতে অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। সংশোধনীতে বলা হয়েছে, জোট হোক বা না হোক, কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীকে তার নিজ দলের প্রতীকই ব্যবহার করতে হবে নির্বাচনে।
আরপিওর এ সংশোধনী নিয়ে এরই মধ্যে আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি। তবে এসব আপত্তি উপেক্ষিত হয়ে বৃহস্পতিবার অনুমোদন পাওয়া আরপিও সংশোধনী অধ্যাদেশ আকারে জারি হয়ে গেলে তখন জোটসঙ্গী দলের প্রার্থীরা আর ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবেন না। সেটি করতে চাইলে তাদের বিএনপির প্রার্থী হয়ে ভোট করতে হবে।
বিএনপির সমমনা দলগুলোর নেতারাও ক্ষোভ জানিয়েছেন আরপিও সংশোধনী নিয়ে। বলছেন, এর বদলে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে মনোযোগী হওয়া বেশি প্রয়োজন। আইনি বাধ্যবাধকতায় পড়লে অবশ্য বিএনপির সমমনা কয়েকটি দলের নেতাদের সরাসরি বিএনপির প্রার্থী হয়ে ভোট করতেও আপত্তি নেই।
নির্বাচন সংক্রান্ত আইন ‘রিপ্রেজেন্টেশন অব পিপলস অর্ডার’ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনীতে বলা হয়েছে, এখন থেকে কোনো প্রার্থীর নিজের রাজনৈতিক দল নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক জোটের অংশ হলেও ওই প্রার্থীকে নিজ দলের প্রতীকেই ভোট করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই সংশোধনীতে নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈঠকের পর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন।
ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা জানান, জাতীয় নির্বাচনে জোটের হয়ে নির্বাচনের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগে একাধিক দল জোট গঠন করে নির্বাচন করলে ওই জোটের যেকোনো প্রার্থী জোটের নেতৃত্বাধীন দলের নির্বাচনি প্রতীকে ভোট করতে পারত। এখন আর সেই সুযোগ থাকবে না। এখন জোটবদ্ধ হলেও প্রার্থীকে নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য জেসমিন টুলী রাজনীতি ডটকমকে বলেন, বিষয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ছিল। নির্বাচন কমিশন সেটা গ্রহণ করেছে। তবে আরপিও সংশোধনী পাঠানোর আগে নির্বাচন কমিশন দলগুলোকে ডাকেনি।
জোটের প্রার্থী হলেও ভোটে লড়তে হবে নিজ দলের প্রতীকে— আরপিওর এমন সংশোধনীর সঙ্গে বিএনপি একমত নয় বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। এতে ছোট দলগুলো জোটবদ্ধ হতে নিরুৎসাহিত হবে বলেও মনে করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় এই নেতা।
শুক্রবার গুলশানে নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আরপিওর এ সংশোধনীর সঙ্গে বিএনপি একমত নয়। এতে ছোট দলগুলো জোটবদ্ধ হতে নিরুৎসাহিত হবে। আগে জোটভুক্ত হলে দলগুলো অন্য রাজনৈতিক দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে পারত। এ বিধিতে অধিকাংশ দলের সম্মতি ছিল। আমরাও আশ্বস্ত ছিলাম। কিন্তু যেভাবে আরপিও (উপদেষ্টা পরিষদে) অনুমোদন পেল, তাতে আকারে ছোট দলগুলো জোটবদ্ধ হতে উৎসাহ পাবে না।
বিএনপির সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনি জোট নিয়ে আলোচনা এগিয়েছে, এসব দলের নেতাদের বেশির ভাগই নিজেদের প্রতীকের তুলনায় ধানের শীষ প্রতীককে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য মনে করছেন। তারা বলছেন, ধানের শীষ প্রতীক পেলে বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সমর্থন ও সহযোগিতা পাওয়া সহজ হয়। এলাকার জনসংযোগে কাজ করতে গিয়ে অনেক প্রার্থী দেখছেন, ধানের শীষের বিকল্প নেই।
সম্প্রতি নিবন্ধন পাওয়া লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ‘আনারস’ প্রতীকে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন দিচ্ছেন। নিজের এলাকা পিরোজপুরে প্রচারে গিয়ে ধানের শীষ প্রতীকের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরেছেন তিনি।
রাজনীতি ডটকমকে মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন-কর্মসূচি করছি। নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে কাজ করার সুযোগ হলে বিএনপির নেতাকর্মীরাও সক্রিয়ভাবে মাঠে থাকবে।’
ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে নির্বাচন করতে বিএনপির সিগন্যাল পেয়েছেন জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) প্রধান ববি হাজ্জাজ। সম্প্রতি এক নির্বাচনি সভায় বিএনপি ও তার দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে নিজেই ধানের শীষের পক্ষে স্লোগান দেন, ভোটও চান।
ববি হাজ্জাজ বলেন বলেন, ‘জোটের প্রতীক ধানের শীষে নির্বাচন করতে চাই। এরই মধ্যে নির্বাচনি এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছি। বিএনপির নেতাকর্মীরাও আমাদের সঙ্গে আছেন।‘
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘নিবন্ধিত দলগুলোর ক্ষেত্রে প্রতীক নিয়ে সমস্যা হলেও অনিবন্ধিত দলের প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এটা সমস্যা হবে না। আমি ২০১৮ সালে লক্ষ্মীপুর-১ আসন থেকে ধানের শীষের প্রার্থী ছিলাম। এবারও ধানের শীষে নির্বাচন করতে চাই। সেভাবেই কাজ করছি। বিএনপির সমমনা দলগুলোর বেশিরভাগ নেতা ধানের শীষে নির্বাচন করতে চান। এতে তাদের কোনো সমস্যা নেই।‘
সবাই এমন চাইলেও আরপিও সংশোধনী হলে সে সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় ক্ষোভ জানিয়েছেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। রাজনীতি ডটকমকে তিনি বলেন, ‘সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কাজ সুষ্ঠু নির্বাচন করা। সেখানে কে কোন প্রতীকে নির্বাচন করলো সেটা দেখা তাদের কাজ না। এতে দেশের অনেক ক্ষতি কিংবা লাভও নেই। কিন্তু জোট করলেও নিজ প্রতীকে নির্বাচনের শর্ত দিয়ে এক ধরণের প্রতিবন্ধকতা তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে। আমার ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করতে সমস্যা নেই। বিএনপি যদি নিজেদের থেকে না দিয়ে মিত্রদের প্রার্থী করে তাতেও সমস্য দেখছি না।‘
জানা গেছে, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলসহ (জেএসডি) বিএনপির সম্ভাব্য নির্বাচনি জোটের বেশির ভাগ দলের নেতারা ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছেন।
বিএনপির সমমনা দলগুলোর বেশির ভাগ ধানের শীষ প্রতীকে লড়তে চাইলেও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক দলীয় প্রতীক কোদাল নিয়ে নির্বাচন করবেন। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকিও দলীয় প্রতীক মাথাল নিয়ে ভোট করার কথা জানিয়েছেন।
জোনায়েদ সাকির ভাষ্য, ‘অনেক সীমাবদ্ধতা থাকলেও নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করার মর্যাদা আলাদা।‘
এদিকে বিএনপি ও সমমনাদের আপত্তি থাকলেও বিপরীত অবস্থান জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির)(এনসিপি)। তারা আরপিও সংশোধন করে এমন বিধান যুক্ত করার পক্ষে, যেখানে জোট করলেও কোনো প্রার্থী যেন নিজ দলের প্রতীকই ব্যবহার করতে বাধ্য হয়।
আবার আরপিও সংশোধনীর ক্ষেত্রে কারও মতামত নেওয়া হয়নি— এমন অভিযোগও করছেন কোনো কোনো রাজনীতিক।
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স) রাজনীতি ডটকমকে বলেন, খবরে দেখছি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। কাদের সঙ্গে কথা বলে, কাদের পরামর্শে এই সংশোধনী আনা হলো? সংশোধনীগুলো কী কী? এই সংশোধনী অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য কতটুকু কার্যকর হবে?
প্রিন্স বলেন, এসব প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানা নেই। আমাদের সঙ্গে কোনো কথা বলা হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোসহ অন্যদের সঙ্গে আলোচনা পরামর্শ ছাড়া এ ধরনের সংশোধন কি গ্রহণযোগ্য হবে?
আরপিওর এ সংশোধনীর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য জেসমিন টুলী রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ছোট ছোট দলগুলোকে তো নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে হবে। তারা তো বড় দলের মধ্যে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তারা মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। এ সিদ্ধান্তের ফলে এসব দলের নেতারা ভোটারদের কাছে তাদের পরিচয় ও এজেন্ডা তুলে ধরার সুযোগ পাবেন।
অধ্যাদেশের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে আপত্তি এলে এটি বাদ দেওয়া যেতে পারে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনের সাবেক এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের ওপর নির্ভর করবে।’
আওয়ামী লীগের আমল থেকে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করা রাজনৈতিক দলগুলো আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরই মধ্যে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজ নিজ এলাকায় কাজ করছেন। তবে দলীয় প্রতীকের বাইরে ধানের শীষ পেতে তাদের আগ্রহের কথা বিএনপির নীতিনির্ধারকরাও অবহিত আছেন।
নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের কাছ থেকে আসনের তালিকাও সংগ্রহ করেছে। গণতন্ত্র মঞ্চের শরিকরা প্রায় ৫০টি আসন চেয়েছে বিএনপির কাছে।
এছাড়া ১২ দলীয় জোট ২১টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) ৯টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ৪০টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) ৫টি, গণফোরাম ১৫টি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি ৬টি ও এনডিএম ১০টি আসনে মনোনয়ন চেয়েছে বলে জানা গেছে।
এর আগে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি শরিকদের ৫৮ আসনে ছাড় দিয়েছিল। এর মধ্যে অবশ্য বেশির ভাগ আসনই দেওয়া হয় জামায়াতকে। এবারের নির্বাচনে জামায়াতই বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। তাই মিত্র ও সমমনা দলগুলোর জন্য আসন বরাদ্দ ও প্রতীক বিষয়ে কৌশল নির্ধারণ নিয়ে কাজ করছে বিএনপি। এখনো এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়নি দলটির হাইকমান্ড।

নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহের কথা আগেই জানিয়েছিলেন আসিফ মাহমুদ। তবে কোনো দলের প্রার্থী হবেন না কি স্বতন্ত্র পদে দাঁড়াবেন, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছিলেন তিনি।
১৭ ঘণ্টা আগে
সারজিস আলম জানান, দু-এক দিনের মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের আহ্বায়ক কমিটি হবে। নভেম্বরের মধ্যে জেলা আহ্বায়ক কমিটি হবে। থানা ও জেলা কমিটি বাংলামোটর থেকে হবে না। সংশ্লিষ্ট শাখায় সভা করেই কমিটি গঠন করতে হবে।
১৭ ঘণ্টা আগে
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এনসিপির সঙ্গে রাজনৈতিক আলোচনা হচ্ছে। তবে বিএনপি আর এনসিপি জোটভুক্ত হবে কি না, সেটা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে। যদিও জোটভুক্ত হওয়ার বিষয়ে এনসিপির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি বলেও জানান তিনি।
১৭ ঘণ্টা আগে
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের অনেক বিষয়ে বিএনপি সম্মত ছিল। তবে ২০/১ উপধারায় বলা হয়েছিল, জোটবদ্ধ হলে দলগুলো অন্য রাজনৈতিক দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে। বিএনপি সেটিতেই আশ্বস্ত ছিল, কিন্তু যেভাবে আরপিও পাস হয়েছে, তাতে ছোট দলগুলো জোটে যুক্ত হতে নির
১৮ ঘণ্টা আগে