
শাহরিয়ার শরীফ

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে বিএনপিতে। প্রার্থী মনোনয়ন ঘিরে এখন পর্যন্ত অর্ধ শতাধিক আসনে তীব্র ক্ষোভ, বিক্ষোভ ও বিভক্তি দেখা দিয়েছে। রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, ফরিদপুর, দিনাজপুর, টাঙ্গাইল থেকে শুরু করে ঢাকার একাধিক আসনে ঘোষিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ, মশালমিছিল, রেল-অবরোধ, এমনকি কাফনের কাপড় পরে প্রতীকী প্রতিবাদ হচ্ছে। ঘটেছে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা। এসব নিয়ে উদ্বেগ আছে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মধ্যেও।
গত ৩ নভেম্বর ২৩৭ আসনে (পরে এক আসনে স্থগিত) প্রার্থী ঘোষণার পরপরই দলের ভেতরের এমন অস্থির অবস্থা দেখা দিতে শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এরই মধ্যে মনোনয়নবঞ্চিতদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দলীয় উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্র বলছে, এখন পর্যন্ত ৫০টির বেশি আসনে অসন্তোষ প্রকাশ পেয়েছে। এর বাইরেও নীরব প্রতিবাদ হচ্ছে অনেক আসনে। কয়েকটি এলাকায় উত্তেজনা এতটাই তীব্র যে পরিস্থিতি সামাল দিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সরাসরি ফোনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও নিয়মিত বৈঠক করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন।
এদিকে যেসব আসনে বেশি সমস্যা হচ্ছে কিংবা বেশি জনপ্রিয় প্রার্থী বাদ পড়েছেন, সেসব জায়গায় পরিবর্তন আসতে পারে— এমন আলোচনাও আছে। তবে দলের সূত্রগুলো বলছে, এ সংখ্যা খুব বেশি হবে না।
অন্তবর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে আগামী ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে হবে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তারা নির্বাচন আয়োজনের সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছে।
রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের সব এলাকাতেই বিএনপি ঘোষিত প্রার্থী তালিকা নিয়ে রয়েছে অসন্তোষ। বেশির ভাগ আসনে স্বাভাবিকভাবেই মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন একাধিক। অনেক আসনেই মনোনয়নের তালিকায় স্থান না পাওয়া নেতার অনুসারীরা নেমেছেন বিক্ষোভে।
ঢাকার ৫ আসনে অসন্তোষ
ঢাকা-১২ আসনে ঘোষিত প্রার্থী সাইফুল আলম নীরব। এ আসনে প্রার্থী ঘোষণার পরই অভ্যন্তরীণ ক্ষোভ-অসন্তোষে সামাজিকমাধ্যম উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। আসনটিতে বিএনপি নেতা আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ারসহ আরও একাধিক নেতা আগ্রহী ছিলেন। অবশ্য প্রার্থী হওয়ার পরই আনোয়ারুজ্জামানের বাসায় গিয়ে সাক্ষাৎ করে সহযোগিতা চেয়েছেন সাইফুল আলম নীরব।
ঢাকা-১৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী মানবাধিকার সংগঠন ‘মায়ের ডাকে’র সানজিদা ইসলাম তুলি। এ নিয়ে খুব আলোচনা হলেও বিএনপির সাবেক এমপি এস এ খালেকের ছেলে এস এ সিদ্দিক সাজুকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে প্রতিদিন বিক্ষোভ কর্মসূচি হচ্ছে। এ কারণে তাকে দল কারণ দর্শানোর নোটিশও দিয়েছে।
ঢাকা–১৫ আসনে ঘোষিত প্রার্থী শফিকুল ইসলাম খান মিল্টন। এ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন যুবদলের শীর্ষ নেতা মামুন হাসান। তাকে মনোনয়ন না দেওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে অনেকেই লেখালেখি করছেন। এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী দলটির আমির ডা. শফিকুল ইসলাম।
দ্বিতীয় দফায় ঢাকা-৯ আসনের জন্য প্রার্থী হিসেবে সাবেক ছাত্রদল নেতা হাবিবুর রশিদ হাবিবের নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের সহধর্মিণী আফরোজা আব্বাস এ আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তাকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তার অনুসারী নেতাকর্মীদের অনেকেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
ঢাকা-১০ আসন নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে বিএনপিতে। এ আসনে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলমকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিচিতমুখ বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম। রাজপথে বিক্ষোভ না করলেও তার অনুসারী নেতাকর্মীরা অনলাইনে যথেষ্টই অসন্তোষ দেখিয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জে ৩ আসনে বিক্ষোভ
নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে বিএনপি ঘোষিত প্রার্থী দীপু ভুঁইয়ার মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে রূপগঞ্জের তারাবো এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। রূপগঞ্জের সর্বস্তরের জনগণ ও জুলাই যোদ্ধা শহিদ পরিবারের ব্যানারে এ কর্মসূচিতে শত শত মানুষ অংশ নেন।
নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী বিএনপির (ঢাকা-বিভাগীয়) সহসাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে তিন মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীর নেতাকর্মী ও সমর্থকরা বিক্ষোভ করেছেন। আজাদ ছাড়াও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহঅর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, সাবেক তিনবারের সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খান আঙ্গুর ও মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পারভীন আক্তার দল থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আজহারুল ইসলাম মান্নানের প্রার্থিতা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। এ আসনে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউল করিম, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ইমতিয়াজ আহমেদ বকুল মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
কুমিল্লার ২ আসন নিয়ে জটিলতা
কুমিল্লা-৬ (সদর-সদর দক্ষিণ-সিটি করপোরেশন-সেনানিবাস) আসনে ঘোষিত প্রার্থী চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী। এ আসনে আরেক উপদেষ্টা আমিন-উর-রশিদের (ইয়াসিন) লোকজন শুরু থেকেই কঠোর কর্মসূচি পালন করছেন।
কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসনে ঘোষিত প্রার্থী মো. আবুল কালাম (চৈতি কালাম)। এ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য কর্নেল (অব.) আনোয়ার উল আজিমের অনুসারীরা বিক্ষোভ করেছেন, হয়েছে সংঘর্ষও। তার মেয়ে সামিরা আজিম দোলার গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, তারেক রহমানের হস্তক্ষেপে আপাতত পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে। দোলাকে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলেও একাধিক সূত্র দাবি করেছে।
মুন্সীগঞ্জের ২ আসনে বিক্ষোভ-সংঘর্ষ
মুন্সীগঞ্জ-১ (সিরাজদিখান-শ্রীনগর) আসনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সিরাজদিখান উপজেলা বিএনপির সভাপতি শেখ মো. আবদুল্লাহকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী ও শ্রীনগর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. মমীন আলী। মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের অনুসারীরা গত কয়েক দিনে একাধিকবার কর্মসূচি পালন করেছেন।
মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে মিজানুর রহমান সিনহাকে। তার বিরোধীরা বলছেন, সিনহা দল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেছিলেন। তিনি বার্ধক্যেও পৌঁছে গেছেন। ফলে তাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা সুচিন্তিত নয়। এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ। গত কয়েকদিনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে একাধিকবার কর্মসূচি পালন করেন তারা। দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
ময়মনসিংহে ২ চাচাতো ভাই মুখোমুখি
ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়ীয়া) আসনে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আখতারুল আলম ফারুককে ধান শীষের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে দল। এ আসনে বিএনপির সাবেক এমপি প্রয়াত শামছ উদ্দিন আহমদের ছেলে তানভির আহমেদ রানা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আখতারুল আলম ফারুক ও তানভির আহমেদ সম্পর্কে চাচাতো ভাই। দুই ভাইয়ের মুখোমুখি অবস্থান ময়মনসিংহের এ আসনটিকে আলোচনায় নিয়ে এসেছে।

প্রথম বিক্ষোভ মাদারীপুরে
মাদারীপুর-১ (শিবচর) আসনে কামাল জামান নুরুদ্দিন মোল্লাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এর পরপরই মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থী জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন ওরফে লাভলু সিদ্দিকীর অনুসারীরা ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। সড়ক অবরোধ, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে।
বিএনপির প্রার্থীর তালিকা ঘোষণার পর প্রথম বড় আকারে বিক্ষোভ-সংঘর্ষ ঘটে এ আসনেই। পরদিনই অবশ্য এ আসনের জন্য প্রার্থী হিসেবে নুরুদ্দিন মোল্লার নাম স্থগিত করে বিএনপি। সবশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফায় ৩৬ প্রার্থীর নাম ঘোষণার সময় এ আসনের জন্য নাদিরা আক্তারকে প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি।
ফরিদপুরের ২ আসনে বিক্ষোভ
ফরিদপুর-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে এ আসনের একাধিকবারের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের মেয়ে চৌধুরী নায়াব ইউসুফকে। এ আসনে সৈয়দ মোদাররেছ আলীকে প্রার্থী করার দাবি জানিয়ে কর্মসূচি পালন করছেন নেতাকর্মীরা।
ফরিদপুর–১ আসনে প্রথম দফায় দলীয় মনোনয়ন দেওয়া না হলেও মনোনয়নপ্রত্যাশী দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে কোন্দল শুরু হয়। কৃষক দলের সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ও বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শামসুদ্দীন মিয়া ঝুনুর পক্ষে পালটাপালটি মিছিল-সমাবেশ তো হয়েছেই, দুপক্ষের মধ্যে হামলা-ভাঙচুর-সংঘর্ষ পেরিয়ে অগ্নিসংযোগ পর্যন্ত ঘটে। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় এ আসনে খন্দকার নাসিরুল ইসলামকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি।
রাজবাড়ী-১ আসনে কোন্দল
রাজবাড়ী-১ আসনে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি, রাজবাড়ী জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. আসলাম মিয়া মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়মকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। এতে আসলাম মিয়ার অনুসারীরা মাঠে নেমেছেন।
টাঙ্গাইলের ৩ আসনে অন্তর্কোন্দল
টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফকির মাহবুব আনাম স্বপনের নাম ঘোষণা করেছে। নির্বাহী কমিটির আরেক সদস্য মোহাম্মদ আলীও দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তার অনুসারীরা প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে কর্মসূচি পালন করছেন।
টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এস এম ওবায়দুল হক (নাসির) দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। বিষয়টি সহজভাবে নেননি সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফর রহমান খান (আজাদ) ও তার অনুসারীরা। বিএনপির নির্বাহী কমিটির আরেক সদস্য মাইনুল ইসলামও এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী।
মনোনয়ন না পাওয়া দুই নেতার কর্মী-সমর্থকেরা প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে এক হয়ে নানা কর্মসূচি পালন করছেন। এরই মধ্যে এ আসনে নেতাকর্মীরা দল থেকে পদত্যাগও করেছেন। বঞ্চিতদের দাবি, ওবায়দুল হক ঘাটাইলের সন্তান নন। তাই ঘাটাইল বিএনপির নেতাকর্মীরা তার মনোনয়ন মেনে নিতে পারছেন না। মনোনয়ন পরিবর্তন করা না হলে বঞ্চিতরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন।
টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ আযম খান দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। এ আসনে আরও দুই মনোনয়নপ্রত্যাশী সখীপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শেখ হাবিবুর রহমান ও শিল্পপতি সালাউদ্দিন রাসেল এক হয়ে সভা-সমাবেশ করে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন। সালাউদ্দিন রাসেল বলেছেন, সাধারণ মানুষ চায় আমি নির্বাচন করি। ওনাদের ইচ্ছাই আমার ইচ্ছা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুটি আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) থেকে মনোনয়ন পান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য মুশফিকুর রহমান। তার মনোনয়ন বাতিল করে জেলা বিএনপির সদস্য কবীর আহমেদ ভূঁইয়াকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে মশাল মিছিল করেছেন আখাউড়া উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এ আসনের মনোনীত প্রার্থী বার্ধক্যে পৌঁছে যাওয়ায় ভোটের মাঠে চলাফেরাও করতে সক্ষম না বলে অভিযোগ স্থানীয় বিএনপির একাংশের। ফলে নির্বাচনে ফলাফল বিপর্যয়ের আশঙ্কাও করছেন তারা।

কবীর আহমেদ ভূঁইয়া রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘যাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তিনি আমাদের শ্রদ্ধার মানুষ। দলে তার অবদান অস্বীকার করছি না। কিন্তু দীর্ঘ ১৭ বছর মামলা-হামলার মুখেও মাঠ ছেড়ে যাইনি। নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম। সে কারণে নেতাকর্মীরা মাঠে নেমেছে। আশা করি দল নেতাকর্মীদের চাওয়া যাচাই করে সিদ্ধান্ত বদল করবে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আবদুল মান্নান। মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জেলা বিএনপির অর্থনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক কাজী নাজমুল হোসেন। তিনি ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তার বাবা প্রয়াত কাজী আনোয়ার হোসেন এই আসনের চার মেয়াদের সাবেক সংসদ সদস্য।
ফেনী-২: ভোটের মাঠে ক্রিকেটের রিভিউ
ফেনী-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে ধান ক্ষেতে দাঁড়িয়ে ক্রিকেটারের ভঙ্গিতে ‘রিভিউ আবেদন’ করে আলোচনায় এসেছেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল। ক্রিকেট মাঠে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে ক্রিকেটাররা রিভিউ নিয়ে থাকেন। আলালও বাড়ির পাশে একটি ধান ক্ষেতে গিয়ে রিভিউ নেওয়ার একই ভঙ্গিতে হাত উঁচিয়ে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন। সে ছবি ভাইরাল হয়ে যায়। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী জয়নুল আবদীন।
নোয়াখালীর এক আসনে বিক্ষোভ
নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট-সদরের আংশিক) আসনে দল ঘোষিত প্রার্থী ফখরুল ইসলাম। তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নানা সমালোচনা হচ্ছে। এ আসনের আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা বজলুল করিম চৌধুরীর অনুসারীরা প্রতিনিয়ত বিক্ষোভ করছেন।
প্রার্থী না দিতেই বিক্ষোভ লক্ষ্মীপুরে
লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শরাফ উদ্দিন নিজান মনোনয়ন পাবেন বলে নিশ্চিত ছিলেন তার কর্মী-সমর্থকরা। কিন্তু প্রার্থী তালিকায় তার তো বটেই, কোনো নেতারই নাম নেই। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এ আসনে নির্বাচন করতে পারেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রবের স্ত্রী তানিয়া রব। সমঝোতার ভিত্তিতেই তাকে ছাড় দিয়ে বিএনপি এ আসনে প্রার্থী দেয়নি বলে গুঞ্জন রয়েছে।
এ ছাড়াও এ আসনে বিএনপি থেকে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেন বিথীকা বিনতে হোসাইন, যিনি প্রয়াত স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি শফিউল বারী বাবুর স্ত্রী। প্রার্থীতা তালিকায় নাম না থাকলেও আশরাফ উদ্দিন নিজান স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা করেছেন।
চাঁদপুরের ২ আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি
চাঁদপুর-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে মোটরসাইকেল র্যালি ও বিক্ষোভ হয়েছে। এ আসন থেকে দলীয় প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া মোহাম্মদ জালাল উদ্দিনের পরিবর্তে চাঁদপুর জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম শুক্কুর পাটোয়ারীকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে তার অনুসারীরা এসব কর্মসূচি পালন করেছেন।
চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হারুনুর রশিদকে পরিবর্তনের দাবিতে তিন দিন ধরে বিক্ষোভ করছেন দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এম এ হান্নানের অনুসারী নেতাকর্মীরা। টানা কয়েকদিন ধরে হান্নানের অনুসারীরা সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন।
চট্টগ্রামেও ১ আসনে বিক্ষোভ
চট্টগ্রাম-৪ আসনে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের নাম ঘোষণা করেছে। ঘোষণার দিনেই বিক্ষোভ করেন এ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের মনোনয়নপ্রত্যাশী লায়ন আসলাম চৌধুরীর সমর্থকরা। বিক্ষোভকারীরা টায়ার জ্বালিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে রাখেন। এ ঘটনায় স্থানীয় চার নেতাকে বহিষ্কারও করেছে বিএনপি।
নাটোর-১ আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে কর্মসূচি
নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনে দল থেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয় ফারজানা শারমিন পুতুলের নাম। সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত ফজলুর রহমান পটলের মেয়ে। তার পরিবর্তে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুকে প্রার্থী চেয়ে কর্মী-সমর্থকরা ব্যাপক শোডাউন করেছেন। এদিকে ফারজানা শারমিন পুতুলের ভাই ইয়াছির আরশাদও (রাজন) এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। টিপু ও আরশাদের অনুসারী কর্মী-সমর্থকরা বেশ শক্ত কর্মসূচি পালন করেছেন।
তাইফুল ইসলাম টিপু রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘জেল-জুলুম-মামলার মুখে আন্দোলন করেছি। নেতাকর্মীরাও চান তাদের পাশে থাকি। দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু মাঠের লোকজন তা মানছে না। এখন দল সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে কি না জানি না। তবে সহজে মাঠ ছাড়তে রাজি না।’
সুনামগঞ্জের ২ আসনে অসন্তোষ
সুনামগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে কয়ছর এম আহমদের নাম ঘোষণার দুদিন পর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ব্যারিস্টার মো. আনোয়ার হোসেন।
সুনামগঞ্জ-৫ আসনে (ছাতক ও দোয়ারাবাজার) দলীয় প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ছাতক উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী ও তার সমর্থকেরা। এ আসনে দলের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন।
সিলেটে প্রবাসী নেতার মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি
সিলেট-৩ আসনে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিকের নাম ঘোষণা করেছে। এ আসনে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী মনোনয়প্রত্যাশী। তাকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে সিলেট বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা দাবি তুলছেন।
মাগুরার এক আসনে কর্মসূচি
মাগুরা-২ আসনে বিএনপিঘোষিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিল এবং সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামালকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে দুই উপজেলায় বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন নেতাকর্মীরা।
সাতক্ষীরার দুটি আসনে বিক্ষোভ
সাতক্ষীরা-২ আসনে বহিষ্কৃত নেতা আব্দুর রউফকে বিএনপি মনোনয়ন দেওয়ার প্রতিবাদে ও ত্যাগী নেতা আব্দুল আলিমকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে মশাল মিছিল করেছে বিএনপির একাংশ।
সাতক্ষীরা-৩ আসনে ‘গরীবের বন্ধু’ নামে পরিচিত ডা. শহিদুল আলমকে বিএনপি মনোনয়ন না দিয়ে সাবেক সাংসদ কাজী আলাউদ্দীনকে মনোনয়ন দেওয়ার প্রতিবাদে কালিগঞ্জে বিএনপির একাংশ বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
কুষ্টিয়ায় সব আসনেই প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি
কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত আহসানুল হক পচা মোল্লার ছেলে সাবেক সংসদ সদ্য রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা। তার মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে আছেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের আহ্বায়ক শরিফ উদ্দিন জুয়েলের সমর্থকরা। তাদের দাবি, দীর্ঘ ১৬ বছর দলের দুঃসময়ে রাজপথে সক্রিয় থাকার কারণে জুয়েলের বিরুদ্ধে ৩১৭টি মামলা হয়েছে।
কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তরুণ ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী প্রথমবারের মতো মনোনয়ন পেয়েছেন। তার মনোনয়ন প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক শহীদুল ইসলামের সমর্থকরা। তাদের অভিযোগ, রাগীব রাজধানীতে থাকেন। গত ১৬ বছরে আন্দোলনে মাঠে দেখা যায়নি। এ আসনটি জামায়াতের হাতে চলে যাবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা।

কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে বিএনপির স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন তার অনুসারী নেতাকর্মীরা। এ আসনে বিএনপি জাকির হোসেন সরকারকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে।
কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমীর মনোনয়ন বাতিল করে কুমারখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি নুরুল ইসলাম আনছার প্রামাণিককে ধানের শীষের প্রার্থী করার দাবিতে কাফনের কাপড় পরে ও মাথায় বেঁধে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা।
গাইবান্ধা-৪ আসনে মশাল মিছিল
গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী শামীম কায়সার লিংকনের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে ‘আমরা ধানের শীষ পরিবার’ ব্যানারে মশাল মিছিল করেছেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। বিক্ষোভকারীদের দাবি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি ফারুক কবির আহমেদ এ আসনের যোগ্য প্রার্থী।
রাজশাহীর অর্ধেক আসনে আন্দোলন-সংঘর্ষ
রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শরীফ উদ্দিনকে দলের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। একই আসনে মনোনয়নবঞ্চিত গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপির সদস্য সুলতানুল ইসলাম। এ আসনে দলঘোষিত প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে তানোর উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল ঘিরে দুপক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হন।
রাজশাহী-৩ আসনে শফিকুল হককে (মিলন) মনোনয়ন দেওয়ায় জেলা বিএনপির সদস্য রায়হানুল আলম ও সাবেক ভূমি প্রতিমন্ত্রী কবির হোসেনের ছেলে নাসির হোসেনের সমর্থকেরা রাজপথে আন্দোলন করছেন।
রাজশাহী-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলামকে বদলের দাবিতে মনোনয়নপ্রত্যাশী আবু বকর সিদ্দিক, ইশফাক খায়রুল হক ও প্রয়াত নেতা নাদিম মোস্তফার ছেলে জুলফার নাঈম মোস্তফার সমর্থকেরা নানা কর্মসূচি পালন করছেন।
পাবনার ২ আসনে প্রার্থী পরিবর্তন দাবি
পাবনা-৩ আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন পাওয়া কৃষক দল সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের প্রার্থিতা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে। মনোনয়ন বাতিল না হলে সাবেক সংসদ সদস্য চাটমোহর উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক কে এম আনোয়ারুল ইসলাম এবং সাবেক সদস্য সচিব ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাসাদুল ইসলাম হীরা স্বতন্ত্র নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন।
পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনে হাবিবুর রহমান হাবিবের মনোনয়ন বাতিল করে ঈশ্বরদী জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুকে ধানের শীষের প্রার্থী করার দাবিতে মশাল মিছিল করেছেন নেতাকর্মীরা।
জয়পুরহাটের ২ আসনেই বিক্ষোভ
জয়পুরহাট-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে শহরে মোবাইল ফোনের আলো জ্বালিয়ে এক ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিবাদ মিছিল করেছেন জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফয়সল আলিমের সমর্থকেরা। এ আসনে প্রার্থী করা হয়েছে মাসুদ রানা প্রধানকে।
জয়পুরহাট-২ আসনে সাবেক জেলা প্রশাসক আব্দুল বারীকে বিএনপি প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েছে। প্রার্থী পরিবর্তন চেয়ে সেখানে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফার কর্মী-সমর্থকরা।
নওগাঁর ৬ আসনের ৪টিতেই ক্ষোভ
নওগাঁ-১ (সাপাহার-পোরশা-নিয়ামতপুর) আসনের সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে ডা. ছালেক চৌধুরীর সমর্থিত তিন উপজেলার নেতাকর্মীরা। এই আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে মোস্তাফিজুর রহমানকে।
নওগাঁ-২ আসনে বিএনপির ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থী সামসুজ্জোহা খানের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন দলটির একাংশের নেতাকর্মীরা। উপজেলা বিএনপির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি নাজিবুল্লাহ চৌধুরীকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান তারা।
নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী) আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থী জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য প্রয়াত আখতার হামিদ সিদ্দিকীর ছেলে পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনির সমর্থকরা। এই আসনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফজলে হুদা বাবুলকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে।
নওগাঁ-৪ (মান্দা) আসনে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ায় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন নেতাকর্মীরা। এ আসন থেকে স্থানীয় বিএনপি নেতা ডা. ইকরামুল বারী টিপুকে দল থেকে প্রাথমিকভাবে মনোনীত করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য ও মান্দা উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মতিনকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি করেন।
দিনাজপুরেও ৩ আসনে বিক্ষোভ
দিনাজপুর-১ আসনে (বীরগঞ্জ-কাহারোল) বিএনপিঘোষিত প্রার্থী মনজুরুল ইসলামকে পরির্তন করে ‘ত্যাগী নেতা’ জাকির হোসেন ধলুকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে বীরগঞ্জ শহরে বিক্ষোভসহ মশাল মিছিল করেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
দিনাজপুর-২ (বিরল-বীরগঞ্জ) বিএনপি প্রার্থী হিসেবে সাদিক রিয়াজ চৌধুরী পিনাকের নাম ঘোষণার প্রতিবাদে এবং ঘোষিত প্রার্থী পরিবর্তনের মশাল মিছিল হয়েছে। এখানে মনোনয়নপ্রত্যাশী মোজাহারুল ইসলাম, বজলুর রশিদ কালু, মনজুরুল আলমের অনুসারীরা কাফনের কাপড় গায়ে বিক্ষোভ করেন।
দিনাজপুর-৪ আসন থেকে আখতারুজ্জামান মিয়ার নাম ঘোষণা করা হয়। নাম ঘোষণার পর থেকেই নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। পরে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল হালিম ও কর্নেল মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি জানান।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রার্থিতা নিয়ে যে বিরোধ দেখা দিয়েছে তা নিয়ে চিন্তিত বিএনপির হাইকমান্ড। কারণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিরোধ বাড়ছে। সংঘর্ষে নেতাকর্মী আহত হচ্ছে। এতে দলের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে।
অন্যদিকে নির্বাচন সামনে রেখে অন্য দলের প্রার্থীরা নির্বিঘ্নে মাঠ গোছাচ্ছেন। সেখানে প্রার্থিতা নিয়ে সমস্যার কারণে বিএনপি পিছিয়ে পড়ছে। এর প্রভাব নির্বাচনে পড়বে বলেও আশঙ্কা রয়েছে নেতাদের মধ্যে।
দলীয় সূত্র বলছে, সবশেষ স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্তরা বিরোধপূর্ণ আসনের দুপক্ষকে ডেকে কথা বলছেন। দলের সিদ্ধান্তের কথা মেনে নিয়ে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করার বার্তা দিচ্ছেন, সুসময়ে বঞ্চিতদের মূল্যায়নেরও আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘বিএনপি অনেক বড় দল। এখানে প্রতিযোগিতা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। আবার সবাইকে একভাবে মূল্যায়ন করা যাবে না, এটাও ঠিক। যাদের মনোনয়ন দেওয়া যাচ্ছে না, দল অবশ্যই তাদের অন্যভাবে মূল্যায়ন করবে।’
দলের হাইকমান্ডের পদক্ষেপে বিক্ষোভ পরিস্থিতির অবসান ঘটবে বলে আশাবাদী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি পালটে যাবে। সেভাবেই সবার সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।’
বিরোধ নিষ্পত্তি করতে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্তে অটল থাকার পাশাপাশি শক্ত হাতে বিশৃঙ্খলা থামানো উচিত বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শামসুল আলম।
রাজনীতি ডটকমকে তিনি বলেন, ‘বিএনপি বিশাল রাজনৈতিক দল। দলের মধ্যে নানা শ্রেণিপেশার মানুষের সংযুক্তি আছে। তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দলের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে অবশ্যই চেইন অব কমান্ড ঠিক রাখতে হবে। চেইন অব কমান্ড ধরে রাখতে নীতিনির্ধারকদেরও কঠোর হতে হবে।’
অধ্যাপক শামসুল বলেন, যারা বিক্ষোভ করছেন, তাদের উচিত দলের মনোনীত প্রার্থীকে মেনে নেওয়া। সেটা না করে সভা-সমাবেশ, রাস্তা ঘেরাও করার অর্থ তো হাইকমান্ডকে চ্যালেঞ্জ করা। এভাবে চলতে থাকলে নির্বাচনে প্রভাব পড়বে।
প্রার্থী হতে না পেরে অনেকে স্বতন্ত্র ভোট করার চিন্তা করছেন— এর প্রভাব নিয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অধ্যাপক বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও নির্বাচনে ধানের শীষের প্রতীক যারা পাবেন তাদের দিকেই নেতাকর্মীরা বেশি ঝুঁকবেন। অতীতেও এমনটা হয়েছে। তাই এটা খুব একটা প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না।

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে বিএনপিতে। প্রার্থী মনোনয়ন ঘিরে এখন পর্যন্ত অর্ধ শতাধিক আসনে তীব্র ক্ষোভ, বিক্ষোভ ও বিভক্তি দেখা দিয়েছে। রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, ফরিদপুর, দিনাজপুর, টাঙ্গাইল থেকে শুরু করে ঢাকার একাধিক আসনে ঘোষিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ, মশালমিছিল, রেল-অবরোধ, এমনকি কাফনের কাপড় পরে প্রতীকী প্রতিবাদ হচ্ছে। ঘটেছে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা। এসব নিয়ে উদ্বেগ আছে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মধ্যেও।
গত ৩ নভেম্বর ২৩৭ আসনে (পরে এক আসনে স্থগিত) প্রার্থী ঘোষণার পরপরই দলের ভেতরের এমন অস্থির অবস্থা দেখা দিতে শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এরই মধ্যে মনোনয়নবঞ্চিতদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দলীয় উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্র বলছে, এখন পর্যন্ত ৫০টির বেশি আসনে অসন্তোষ প্রকাশ পেয়েছে। এর বাইরেও নীরব প্রতিবাদ হচ্ছে অনেক আসনে। কয়েকটি এলাকায় উত্তেজনা এতটাই তীব্র যে পরিস্থিতি সামাল দিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সরাসরি ফোনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও নিয়মিত বৈঠক করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন।
এদিকে যেসব আসনে বেশি সমস্যা হচ্ছে কিংবা বেশি জনপ্রিয় প্রার্থী বাদ পড়েছেন, সেসব জায়গায় পরিবর্তন আসতে পারে— এমন আলোচনাও আছে। তবে দলের সূত্রগুলো বলছে, এ সংখ্যা খুব বেশি হবে না।
অন্তবর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে আগামী ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে হবে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তারা নির্বাচন আয়োজনের সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছে।
রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের সব এলাকাতেই বিএনপি ঘোষিত প্রার্থী তালিকা নিয়ে রয়েছে অসন্তোষ। বেশির ভাগ আসনে স্বাভাবিকভাবেই মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন একাধিক। অনেক আসনেই মনোনয়নের তালিকায় স্থান না পাওয়া নেতার অনুসারীরা নেমেছেন বিক্ষোভে।
ঢাকার ৫ আসনে অসন্তোষ
ঢাকা-১২ আসনে ঘোষিত প্রার্থী সাইফুল আলম নীরব। এ আসনে প্রার্থী ঘোষণার পরই অভ্যন্তরীণ ক্ষোভ-অসন্তোষে সামাজিকমাধ্যম উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। আসনটিতে বিএনপি নেতা আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ারসহ আরও একাধিক নেতা আগ্রহী ছিলেন। অবশ্য প্রার্থী হওয়ার পরই আনোয়ারুজ্জামানের বাসায় গিয়ে সাক্ষাৎ করে সহযোগিতা চেয়েছেন সাইফুল আলম নীরব।
ঢাকা-১৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী মানবাধিকার সংগঠন ‘মায়ের ডাকে’র সানজিদা ইসলাম তুলি। এ নিয়ে খুব আলোচনা হলেও বিএনপির সাবেক এমপি এস এ খালেকের ছেলে এস এ সিদ্দিক সাজুকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে প্রতিদিন বিক্ষোভ কর্মসূচি হচ্ছে। এ কারণে তাকে দল কারণ দর্শানোর নোটিশও দিয়েছে।
ঢাকা–১৫ আসনে ঘোষিত প্রার্থী শফিকুল ইসলাম খান মিল্টন। এ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন যুবদলের শীর্ষ নেতা মামুন হাসান। তাকে মনোনয়ন না দেওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে অনেকেই লেখালেখি করছেন। এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী দলটির আমির ডা. শফিকুল ইসলাম।
দ্বিতীয় দফায় ঢাকা-৯ আসনের জন্য প্রার্থী হিসেবে সাবেক ছাত্রদল নেতা হাবিবুর রশিদ হাবিবের নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের সহধর্মিণী আফরোজা আব্বাস এ আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তাকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তার অনুসারী নেতাকর্মীদের অনেকেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
ঢাকা-১০ আসন নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে বিএনপিতে। এ আসনে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলমকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিচিতমুখ বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম। রাজপথে বিক্ষোভ না করলেও তার অনুসারী নেতাকর্মীরা অনলাইনে যথেষ্টই অসন্তোষ দেখিয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জে ৩ আসনে বিক্ষোভ
নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে বিএনপি ঘোষিত প্রার্থী দীপু ভুঁইয়ার মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে রূপগঞ্জের তারাবো এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। রূপগঞ্জের সর্বস্তরের জনগণ ও জুলাই যোদ্ধা শহিদ পরিবারের ব্যানারে এ কর্মসূচিতে শত শত মানুষ অংশ নেন।
নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী বিএনপির (ঢাকা-বিভাগীয়) সহসাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে তিন মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীর নেতাকর্মী ও সমর্থকরা বিক্ষোভ করেছেন। আজাদ ছাড়াও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহঅর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, সাবেক তিনবারের সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খান আঙ্গুর ও মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পারভীন আক্তার দল থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আজহারুল ইসলাম মান্নানের প্রার্থিতা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। এ আসনে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউল করিম, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ইমতিয়াজ আহমেদ বকুল মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
কুমিল্লার ২ আসন নিয়ে জটিলতা
কুমিল্লা-৬ (সদর-সদর দক্ষিণ-সিটি করপোরেশন-সেনানিবাস) আসনে ঘোষিত প্রার্থী চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী। এ আসনে আরেক উপদেষ্টা আমিন-উর-রশিদের (ইয়াসিন) লোকজন শুরু থেকেই কঠোর কর্মসূচি পালন করছেন।
কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসনে ঘোষিত প্রার্থী মো. আবুল কালাম (চৈতি কালাম)। এ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য কর্নেল (অব.) আনোয়ার উল আজিমের অনুসারীরা বিক্ষোভ করেছেন, হয়েছে সংঘর্ষও। তার মেয়ে সামিরা আজিম দোলার গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, তারেক রহমানের হস্তক্ষেপে আপাতত পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে। দোলাকে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলেও একাধিক সূত্র দাবি করেছে।
মুন্সীগঞ্জের ২ আসনে বিক্ষোভ-সংঘর্ষ
মুন্সীগঞ্জ-১ (সিরাজদিখান-শ্রীনগর) আসনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সিরাজদিখান উপজেলা বিএনপির সভাপতি শেখ মো. আবদুল্লাহকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী ও শ্রীনগর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. মমীন আলী। মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের অনুসারীরা গত কয়েক দিনে একাধিকবার কর্মসূচি পালন করেছেন।
মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে মিজানুর রহমান সিনহাকে। তার বিরোধীরা বলছেন, সিনহা দল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেছিলেন। তিনি বার্ধক্যেও পৌঁছে গেছেন। ফলে তাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা সুচিন্তিত নয়। এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ। গত কয়েকদিনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে একাধিকবার কর্মসূচি পালন করেন তারা। দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
ময়মনসিংহে ২ চাচাতো ভাই মুখোমুখি
ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়ীয়া) আসনে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আখতারুল আলম ফারুককে ধান শীষের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে দল। এ আসনে বিএনপির সাবেক এমপি প্রয়াত শামছ উদ্দিন আহমদের ছেলে তানভির আহমেদ রানা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আখতারুল আলম ফারুক ও তানভির আহমেদ সম্পর্কে চাচাতো ভাই। দুই ভাইয়ের মুখোমুখি অবস্থান ময়মনসিংহের এ আসনটিকে আলোচনায় নিয়ে এসেছে।

প্রথম বিক্ষোভ মাদারীপুরে
মাদারীপুর-১ (শিবচর) আসনে কামাল জামান নুরুদ্দিন মোল্লাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এর পরপরই মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থী জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন ওরফে লাভলু সিদ্দিকীর অনুসারীরা ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। সড়ক অবরোধ, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে।
বিএনপির প্রার্থীর তালিকা ঘোষণার পর প্রথম বড় আকারে বিক্ষোভ-সংঘর্ষ ঘটে এ আসনেই। পরদিনই অবশ্য এ আসনের জন্য প্রার্থী হিসেবে নুরুদ্দিন মোল্লার নাম স্থগিত করে বিএনপি। সবশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফায় ৩৬ প্রার্থীর নাম ঘোষণার সময় এ আসনের জন্য নাদিরা আক্তারকে প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি।
ফরিদপুরের ২ আসনে বিক্ষোভ
ফরিদপুর-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে এ আসনের একাধিকবারের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের মেয়ে চৌধুরী নায়াব ইউসুফকে। এ আসনে সৈয়দ মোদাররেছ আলীকে প্রার্থী করার দাবি জানিয়ে কর্মসূচি পালন করছেন নেতাকর্মীরা।
ফরিদপুর–১ আসনে প্রথম দফায় দলীয় মনোনয়ন দেওয়া না হলেও মনোনয়নপ্রত্যাশী দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে কোন্দল শুরু হয়। কৃষক দলের সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ও বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শামসুদ্দীন মিয়া ঝুনুর পক্ষে পালটাপালটি মিছিল-সমাবেশ তো হয়েছেই, দুপক্ষের মধ্যে হামলা-ভাঙচুর-সংঘর্ষ পেরিয়ে অগ্নিসংযোগ পর্যন্ত ঘটে। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় এ আসনে খন্দকার নাসিরুল ইসলামকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি।
রাজবাড়ী-১ আসনে কোন্দল
রাজবাড়ী-১ আসনে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি, রাজবাড়ী জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. আসলাম মিয়া মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়মকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। এতে আসলাম মিয়ার অনুসারীরা মাঠে নেমেছেন।
টাঙ্গাইলের ৩ আসনে অন্তর্কোন্দল
টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফকির মাহবুব আনাম স্বপনের নাম ঘোষণা করেছে। নির্বাহী কমিটির আরেক সদস্য মোহাম্মদ আলীও দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তার অনুসারীরা প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে কর্মসূচি পালন করছেন।
টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এস এম ওবায়দুল হক (নাসির) দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। বিষয়টি সহজভাবে নেননি সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফর রহমান খান (আজাদ) ও তার অনুসারীরা। বিএনপির নির্বাহী কমিটির আরেক সদস্য মাইনুল ইসলামও এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী।
মনোনয়ন না পাওয়া দুই নেতার কর্মী-সমর্থকেরা প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে এক হয়ে নানা কর্মসূচি পালন করছেন। এরই মধ্যে এ আসনে নেতাকর্মীরা দল থেকে পদত্যাগও করেছেন। বঞ্চিতদের দাবি, ওবায়দুল হক ঘাটাইলের সন্তান নন। তাই ঘাটাইল বিএনপির নেতাকর্মীরা তার মনোনয়ন মেনে নিতে পারছেন না। মনোনয়ন পরিবর্তন করা না হলে বঞ্চিতরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন।
টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ আযম খান দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। এ আসনে আরও দুই মনোনয়নপ্রত্যাশী সখীপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শেখ হাবিবুর রহমান ও শিল্পপতি সালাউদ্দিন রাসেল এক হয়ে সভা-সমাবেশ করে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন। সালাউদ্দিন রাসেল বলেছেন, সাধারণ মানুষ চায় আমি নির্বাচন করি। ওনাদের ইচ্ছাই আমার ইচ্ছা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুটি আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) থেকে মনোনয়ন পান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য মুশফিকুর রহমান। তার মনোনয়ন বাতিল করে জেলা বিএনপির সদস্য কবীর আহমেদ ভূঁইয়াকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে মশাল মিছিল করেছেন আখাউড়া উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এ আসনের মনোনীত প্রার্থী বার্ধক্যে পৌঁছে যাওয়ায় ভোটের মাঠে চলাফেরাও করতে সক্ষম না বলে অভিযোগ স্থানীয় বিএনপির একাংশের। ফলে নির্বাচনে ফলাফল বিপর্যয়ের আশঙ্কাও করছেন তারা।

কবীর আহমেদ ভূঁইয়া রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘যাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তিনি আমাদের শ্রদ্ধার মানুষ। দলে তার অবদান অস্বীকার করছি না। কিন্তু দীর্ঘ ১৭ বছর মামলা-হামলার মুখেও মাঠ ছেড়ে যাইনি। নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম। সে কারণে নেতাকর্মীরা মাঠে নেমেছে। আশা করি দল নেতাকর্মীদের চাওয়া যাচাই করে সিদ্ধান্ত বদল করবে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আবদুল মান্নান। মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জেলা বিএনপির অর্থনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক কাজী নাজমুল হোসেন। তিনি ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তার বাবা প্রয়াত কাজী আনোয়ার হোসেন এই আসনের চার মেয়াদের সাবেক সংসদ সদস্য।
ফেনী-২: ভোটের মাঠে ক্রিকেটের রিভিউ
ফেনী-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে ধান ক্ষেতে দাঁড়িয়ে ক্রিকেটারের ভঙ্গিতে ‘রিভিউ আবেদন’ করে আলোচনায় এসেছেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল। ক্রিকেট মাঠে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে ক্রিকেটাররা রিভিউ নিয়ে থাকেন। আলালও বাড়ির পাশে একটি ধান ক্ষেতে গিয়ে রিভিউ নেওয়ার একই ভঙ্গিতে হাত উঁচিয়ে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন। সে ছবি ভাইরাল হয়ে যায়। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী জয়নুল আবদীন।
নোয়াখালীর এক আসনে বিক্ষোভ
নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট-সদরের আংশিক) আসনে দল ঘোষিত প্রার্থী ফখরুল ইসলাম। তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নানা সমালোচনা হচ্ছে। এ আসনের আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা বজলুল করিম চৌধুরীর অনুসারীরা প্রতিনিয়ত বিক্ষোভ করছেন।
প্রার্থী না দিতেই বিক্ষোভ লক্ষ্মীপুরে
লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শরাফ উদ্দিন নিজান মনোনয়ন পাবেন বলে নিশ্চিত ছিলেন তার কর্মী-সমর্থকরা। কিন্তু প্রার্থী তালিকায় তার তো বটেই, কোনো নেতারই নাম নেই। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এ আসনে নির্বাচন করতে পারেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রবের স্ত্রী তানিয়া রব। সমঝোতার ভিত্তিতেই তাকে ছাড় দিয়ে বিএনপি এ আসনে প্রার্থী দেয়নি বলে গুঞ্জন রয়েছে।
এ ছাড়াও এ আসনে বিএনপি থেকে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেন বিথীকা বিনতে হোসাইন, যিনি প্রয়াত স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি শফিউল বারী বাবুর স্ত্রী। প্রার্থীতা তালিকায় নাম না থাকলেও আশরাফ উদ্দিন নিজান স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা করেছেন।
চাঁদপুরের ২ আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি
চাঁদপুর-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে মোটরসাইকেল র্যালি ও বিক্ষোভ হয়েছে। এ আসন থেকে দলীয় প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া মোহাম্মদ জালাল উদ্দিনের পরিবর্তে চাঁদপুর জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম শুক্কুর পাটোয়ারীকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে তার অনুসারীরা এসব কর্মসূচি পালন করেছেন।
চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হারুনুর রশিদকে পরিবর্তনের দাবিতে তিন দিন ধরে বিক্ষোভ করছেন দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এম এ হান্নানের অনুসারী নেতাকর্মীরা। টানা কয়েকদিন ধরে হান্নানের অনুসারীরা সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন।
চট্টগ্রামেও ১ আসনে বিক্ষোভ
চট্টগ্রাম-৪ আসনে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের নাম ঘোষণা করেছে। ঘোষণার দিনেই বিক্ষোভ করেন এ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের মনোনয়নপ্রত্যাশী লায়ন আসলাম চৌধুরীর সমর্থকরা। বিক্ষোভকারীরা টায়ার জ্বালিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে রাখেন। এ ঘটনায় স্থানীয় চার নেতাকে বহিষ্কারও করেছে বিএনপি।
নাটোর-১ আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে কর্মসূচি
নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনে দল থেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয় ফারজানা শারমিন পুতুলের নাম। সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত ফজলুর রহমান পটলের মেয়ে। তার পরিবর্তে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুকে প্রার্থী চেয়ে কর্মী-সমর্থকরা ব্যাপক শোডাউন করেছেন। এদিকে ফারজানা শারমিন পুতুলের ভাই ইয়াছির আরশাদও (রাজন) এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। টিপু ও আরশাদের অনুসারী কর্মী-সমর্থকরা বেশ শক্ত কর্মসূচি পালন করেছেন।
তাইফুল ইসলাম টিপু রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘জেল-জুলুম-মামলার মুখে আন্দোলন করেছি। নেতাকর্মীরাও চান তাদের পাশে থাকি। দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু মাঠের লোকজন তা মানছে না। এখন দল সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে কি না জানি না। তবে সহজে মাঠ ছাড়তে রাজি না।’
সুনামগঞ্জের ২ আসনে অসন্তোষ
সুনামগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে কয়ছর এম আহমদের নাম ঘোষণার দুদিন পর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ব্যারিস্টার মো. আনোয়ার হোসেন।
সুনামগঞ্জ-৫ আসনে (ছাতক ও দোয়ারাবাজার) দলীয় প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ছাতক উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী ও তার সমর্থকেরা। এ আসনে দলের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন।
সিলেটে প্রবাসী নেতার মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি
সিলেট-৩ আসনে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিকের নাম ঘোষণা করেছে। এ আসনে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী মনোনয়প্রত্যাশী। তাকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে সিলেট বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা দাবি তুলছেন।
মাগুরার এক আসনে কর্মসূচি
মাগুরা-২ আসনে বিএনপিঘোষিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিল এবং সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামালকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে দুই উপজেলায় বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন নেতাকর্মীরা।
সাতক্ষীরার দুটি আসনে বিক্ষোভ
সাতক্ষীরা-২ আসনে বহিষ্কৃত নেতা আব্দুর রউফকে বিএনপি মনোনয়ন দেওয়ার প্রতিবাদে ও ত্যাগী নেতা আব্দুল আলিমকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে মশাল মিছিল করেছে বিএনপির একাংশ।
সাতক্ষীরা-৩ আসনে ‘গরীবের বন্ধু’ নামে পরিচিত ডা. শহিদুল আলমকে বিএনপি মনোনয়ন না দিয়ে সাবেক সাংসদ কাজী আলাউদ্দীনকে মনোনয়ন দেওয়ার প্রতিবাদে কালিগঞ্জে বিএনপির একাংশ বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
কুষ্টিয়ায় সব আসনেই প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি
কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত আহসানুল হক পচা মোল্লার ছেলে সাবেক সংসদ সদ্য রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা। তার মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে আছেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের আহ্বায়ক শরিফ উদ্দিন জুয়েলের সমর্থকরা। তাদের দাবি, দীর্ঘ ১৬ বছর দলের দুঃসময়ে রাজপথে সক্রিয় থাকার কারণে জুয়েলের বিরুদ্ধে ৩১৭টি মামলা হয়েছে।
কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তরুণ ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী প্রথমবারের মতো মনোনয়ন পেয়েছেন। তার মনোনয়ন প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক শহীদুল ইসলামের সমর্থকরা। তাদের অভিযোগ, রাগীব রাজধানীতে থাকেন। গত ১৬ বছরে আন্দোলনে মাঠে দেখা যায়নি। এ আসনটি জামায়াতের হাতে চলে যাবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা।

কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে বিএনপির স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন তার অনুসারী নেতাকর্মীরা। এ আসনে বিএনপি জাকির হোসেন সরকারকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে।
কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমীর মনোনয়ন বাতিল করে কুমারখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি নুরুল ইসলাম আনছার প্রামাণিককে ধানের শীষের প্রার্থী করার দাবিতে কাফনের কাপড় পরে ও মাথায় বেঁধে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা।
গাইবান্ধা-৪ আসনে মশাল মিছিল
গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী শামীম কায়সার লিংকনের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে ‘আমরা ধানের শীষ পরিবার’ ব্যানারে মশাল মিছিল করেছেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। বিক্ষোভকারীদের দাবি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি ফারুক কবির আহমেদ এ আসনের যোগ্য প্রার্থী।
রাজশাহীর অর্ধেক আসনে আন্দোলন-সংঘর্ষ
রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শরীফ উদ্দিনকে দলের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। একই আসনে মনোনয়নবঞ্চিত গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপির সদস্য সুলতানুল ইসলাম। এ আসনে দলঘোষিত প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে তানোর উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল ঘিরে দুপক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হন।
রাজশাহী-৩ আসনে শফিকুল হককে (মিলন) মনোনয়ন দেওয়ায় জেলা বিএনপির সদস্য রায়হানুল আলম ও সাবেক ভূমি প্রতিমন্ত্রী কবির হোসেনের ছেলে নাসির হোসেনের সমর্থকেরা রাজপথে আন্দোলন করছেন।
রাজশাহী-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলামকে বদলের দাবিতে মনোনয়নপ্রত্যাশী আবু বকর সিদ্দিক, ইশফাক খায়রুল হক ও প্রয়াত নেতা নাদিম মোস্তফার ছেলে জুলফার নাঈম মোস্তফার সমর্থকেরা নানা কর্মসূচি পালন করছেন।
পাবনার ২ আসনে প্রার্থী পরিবর্তন দাবি
পাবনা-৩ আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন পাওয়া কৃষক দল সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের প্রার্থিতা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে। মনোনয়ন বাতিল না হলে সাবেক সংসদ সদস্য চাটমোহর উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক কে এম আনোয়ারুল ইসলাম এবং সাবেক সদস্য সচিব ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাসাদুল ইসলাম হীরা স্বতন্ত্র নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন।
পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনে হাবিবুর রহমান হাবিবের মনোনয়ন বাতিল করে ঈশ্বরদী জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুকে ধানের শীষের প্রার্থী করার দাবিতে মশাল মিছিল করেছেন নেতাকর্মীরা।
জয়পুরহাটের ২ আসনেই বিক্ষোভ
জয়পুরহাট-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে শহরে মোবাইল ফোনের আলো জ্বালিয়ে এক ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিবাদ মিছিল করেছেন জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফয়সল আলিমের সমর্থকেরা। এ আসনে প্রার্থী করা হয়েছে মাসুদ রানা প্রধানকে।
জয়পুরহাট-২ আসনে সাবেক জেলা প্রশাসক আব্দুল বারীকে বিএনপি প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েছে। প্রার্থী পরিবর্তন চেয়ে সেখানে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফার কর্মী-সমর্থকরা।
নওগাঁর ৬ আসনের ৪টিতেই ক্ষোভ
নওগাঁ-১ (সাপাহার-পোরশা-নিয়ামতপুর) আসনের সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে ডা. ছালেক চৌধুরীর সমর্থিত তিন উপজেলার নেতাকর্মীরা। এই আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে মোস্তাফিজুর রহমানকে।
নওগাঁ-২ আসনে বিএনপির ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থী সামসুজ্জোহা খানের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন দলটির একাংশের নেতাকর্মীরা। উপজেলা বিএনপির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি নাজিবুল্লাহ চৌধুরীকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান তারা।
নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী) আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থী জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য প্রয়াত আখতার হামিদ সিদ্দিকীর ছেলে পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনির সমর্থকরা। এই আসনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফজলে হুদা বাবুলকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে।
নওগাঁ-৪ (মান্দা) আসনে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ায় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন নেতাকর্মীরা। এ আসন থেকে স্থানীয় বিএনপি নেতা ডা. ইকরামুল বারী টিপুকে দল থেকে প্রাথমিকভাবে মনোনীত করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য ও মান্দা উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মতিনকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি করেন।
দিনাজপুরেও ৩ আসনে বিক্ষোভ
দিনাজপুর-১ আসনে (বীরগঞ্জ-কাহারোল) বিএনপিঘোষিত প্রার্থী মনজুরুল ইসলামকে পরির্তন করে ‘ত্যাগী নেতা’ জাকির হোসেন ধলুকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে বীরগঞ্জ শহরে বিক্ষোভসহ মশাল মিছিল করেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
দিনাজপুর-২ (বিরল-বীরগঞ্জ) বিএনপি প্রার্থী হিসেবে সাদিক রিয়াজ চৌধুরী পিনাকের নাম ঘোষণার প্রতিবাদে এবং ঘোষিত প্রার্থী পরিবর্তনের মশাল মিছিল হয়েছে। এখানে মনোনয়নপ্রত্যাশী মোজাহারুল ইসলাম, বজলুর রশিদ কালু, মনজুরুল আলমের অনুসারীরা কাফনের কাপড় গায়ে বিক্ষোভ করেন।
দিনাজপুর-৪ আসন থেকে আখতারুজ্জামান মিয়ার নাম ঘোষণা করা হয়। নাম ঘোষণার পর থেকেই নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। পরে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল হালিম ও কর্নেল মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি জানান।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রার্থিতা নিয়ে যে বিরোধ দেখা দিয়েছে তা নিয়ে চিন্তিত বিএনপির হাইকমান্ড। কারণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিরোধ বাড়ছে। সংঘর্ষে নেতাকর্মী আহত হচ্ছে। এতে দলের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে।
অন্যদিকে নির্বাচন সামনে রেখে অন্য দলের প্রার্থীরা নির্বিঘ্নে মাঠ গোছাচ্ছেন। সেখানে প্রার্থিতা নিয়ে সমস্যার কারণে বিএনপি পিছিয়ে পড়ছে। এর প্রভাব নির্বাচনে পড়বে বলেও আশঙ্কা রয়েছে নেতাদের মধ্যে।
দলীয় সূত্র বলছে, সবশেষ স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্তরা বিরোধপূর্ণ আসনের দুপক্ষকে ডেকে কথা বলছেন। দলের সিদ্ধান্তের কথা মেনে নিয়ে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করার বার্তা দিচ্ছেন, সুসময়ে বঞ্চিতদের মূল্যায়নেরও আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘বিএনপি অনেক বড় দল। এখানে প্রতিযোগিতা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। আবার সবাইকে একভাবে মূল্যায়ন করা যাবে না, এটাও ঠিক। যাদের মনোনয়ন দেওয়া যাচ্ছে না, দল অবশ্যই তাদের অন্যভাবে মূল্যায়ন করবে।’
দলের হাইকমান্ডের পদক্ষেপে বিক্ষোভ পরিস্থিতির অবসান ঘটবে বলে আশাবাদী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি পালটে যাবে। সেভাবেই সবার সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।’
বিরোধ নিষ্পত্তি করতে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্তে অটল থাকার পাশাপাশি শক্ত হাতে বিশৃঙ্খলা থামানো উচিত বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শামসুল আলম।
রাজনীতি ডটকমকে তিনি বলেন, ‘বিএনপি বিশাল রাজনৈতিক দল। দলের মধ্যে নানা শ্রেণিপেশার মানুষের সংযুক্তি আছে। তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দলের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে অবশ্যই চেইন অব কমান্ড ঠিক রাখতে হবে। চেইন অব কমান্ড ধরে রাখতে নীতিনির্ধারকদেরও কঠোর হতে হবে।’
অধ্যাপক শামসুল বলেন, যারা বিক্ষোভ করছেন, তাদের উচিত দলের মনোনীত প্রার্থীকে মেনে নেওয়া। সেটা না করে সভা-সমাবেশ, রাস্তা ঘেরাও করার অর্থ তো হাইকমান্ডকে চ্যালেঞ্জ করা। এভাবে চলতে থাকলে নির্বাচনে প্রভাব পড়বে।
প্রার্থী হতে না পেরে অনেকে স্বতন্ত্র ভোট করার চিন্তা করছেন— এর প্রভাব নিয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অধ্যাপক বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও নির্বাচনে ধানের শীষের প্রতীক যারা পাবেন তাদের দিকেই নেতাকর্মীরা বেশি ঝুঁকবেন। অতীতেও এমনটা হয়েছে। তাই এটা খুব একটা প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না।

তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো বিশেষ দলের বিজয় চাচ্ছি না, আট দলের বিজয়ও চাচ্ছি না। আমরা বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের আকাঙ্ক্ষার বিজয় চাই। সেই আকাঙ্ক্ষার বিজয় হবে কোরআনের আইনের মাধ্যমে ইনশাআল্লাহ। গ্রাম থেকে বিজয়ের বাঁশি বাজানো হবে। আগামীর বাংলাদেশ হবে কোরআনের বাংলাদেশ।
১৬ ঘণ্টা আগে
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া কয়েক সপ্তাহ ধরে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে রয়েছেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অত্যন্ত উচ্চমানের চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা করছেন। কিন্তু এই চিকিৎসা আরও উন্নত হাসপাতালে করা প্রয়োজন বলে তাকে ইংল্যান্ডের হাসপাতালে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
২০ ঘণ্টা আগে
ফলে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিয়ে ঠিক কী বার্তা দিতে চাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী? দলটির রাজনৈতিক স্ট্রাটেজিতে কোনো ধরনের পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে কি না বা আর কোনো আসনে ভিন্নধর্মের কাউকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হবে কি না এসব প্রশ্নও সামনে আসছে।
২১ ঘণ্টা আগে
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, যারা ‘মাইনাস ফোর’ ফর্মুলা দিচ্ছে তারা স্বৈরাচারের দোসর।
১ দিন আগে