মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি শেখ হাসিনা: দ্য টেলিগ্রাফ

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ৪৫

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে মৃত্যুদণ্ডের সম্মুখীন হতে পারেন। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে এই আশঙ্কার কথা জানানো হয়।

তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের ওপর 'প্রাণঘাতী অস্ত্র' ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে, যেখানে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হন।

প্রসিকিউশন পক্ষ জানিয়েছে, তাদের কাছে থাকা প্রমাণে শেখ হাসিনা সরাসরি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত এবং তারা তার মৃত্যুদণ্ড দাবি করছেন। মামলার চূড়ান্ত রায় নভেম্বরের মাঝামাঝি আসতে পারে।

৭৮ বছর বয়সি শেখ হাসিনা বর্তমানে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’ ব্যবহার করার নির্দেশ দেন। যার ফলে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হন।

প্রসিকিউশন দাবি করেছে, শেখ হাসিনার আদেশেই দমন অভিযানের সময় নিহতদের লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয় এবং আহতদের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হয়। শেখ হাসিনা অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, তার ১৫ বছরের শাসন অবসানের সময় যে গণঅভ্যুত্থান হয়, তাতে আনুমানিক ১,৪০০ জন প্রাণ হারান।

এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ২০২৪ সালের জুলাই মাসে-মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের সন্তানদের জন্য সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ থেকে। অল্প সময়ের মধ্যেই তা শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলনে রূপ নেয়।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে করে দেশত্যাগ করেন, কিছুক্ষণ পরেই ঢাকায় বিক্ষোভকারীরা তার সরকারি বাসভবনে প্রবেশ করে। একই দিনে ঢাকার একটি ব্যস্ত এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৫২ জন নিহত হয়—যা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম রক্তক্ষয়ী ঘটনা হিসেবে বিবেচিত।

তার শাসনামলে ব্যাপক ভোট কারচুপি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচারে গ্রেফতার, নির্যাতন ও গুমের অভিযোগ উঠেছিল—যার মধ্যে শিশুদের গুমের ঘটনাও ছিল।

প্রসিকিউটর ময়নুল করিম জানান, তার দল ফোন রেকর্ড, অডিও-ভিডিও প্রমাণ এবং সাক্ষ্য সংগ্রহ করেছে যা শেখ হাসিনাকে সরাসরি ওই হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে যুক্ত করে।

তিনি বলেন, ‘আমরা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পারব যে তিনি মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য। তার সরাসরি নির্দেশেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।’

আদালত ইতোমধ্যেই শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে; ধারণা করা হচ্ছে তারা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন।

অন্যদিকে, সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনকে জুলাই মাসে গ্রেফতার করা হয় এবং তিনি দোষ স্বীকার করেছেন।

তিনি স্বীকারোক্তিতে বলেন, শেখ হাসিনার নির্দেশেই তিনি বিক্ষোভকারীদের ওপর হেলিকপ্টার ও ড্রোন হামলা চালিয়েছিলেন এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেছিলেন।

প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আদালতে বলেন, ‘শেখ হাসিনা ১,৪০০বার মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য। যেহেতু তা মানবিকভাবে সম্ভব নয়, তাই আমরা অন্তত একটি মৃত্যুদণ্ড দাবি করছি।’

‘তার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা, নিজের ও পরিবারের জন্য। তিনি এক কঠোর অপরাধীতে পরিণত হয়েছেন এবং তার বর্বরতার জন্য কোনো অনুশোচনাও প্রকাশ করেননি,’ যোগ করেন তিনি।

এদিকে রোববার (১৯ অক্টোবর) থেকে শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবীরা তাদের যুক্তি উপস্থাপন শুরু করবেন, যা আগামী সপ্তাহে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চূড়ান্ত রায় নভেম্বরের মধ্যভাগে ঘোষণা করা হতে পারে।

অভিযোগ প্রমাণিত হলে শেখ হাসিনার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও নিলামে বিক্রির প্রক্রিয়াও শুরু হতে পারে, যার অর্থ ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।

তার রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর দাবি, বিক্ষোভকারীদের সহিংস হামলার জবাবে বাধ্য হয়েই পুলিশ গুলি চালায়।

শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই আদালত অবমাননার দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এবং তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাও চলছে।

অন্যদিকে, ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক—যিনি এ বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্য সরকারের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন—তিনিও বাংলাদেশে অনুপস্থিত অবস্থায় বিচারাধীন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তার খালার প্রভাব ব্যবহার করে নিজের পরিবারের জন্য জমির প্লট বরাদ্দে প্রভাব খাটিয়েছেন। যদিও তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এদিকে বাংলাদেশে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, যেখানে শেখ হাসিনার প্রতিদ্বন্দ্বী দল বিএনপি এখন ফেভারিট হিসেবে বিবেচিত।

তবে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগকে সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ad
ad

রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

এনসিপি'র বর্জনে প্রশ্নবিদ্ধ ‘জুলাই সনদ’ নাকি ‘নতুন সূচনা’?

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই সনদ স্বাক্ষরকে 'নতুন বাংলাদেশের সূচনা' বলে উল্লেখ করেছেন এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এটিকে রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বশীল ভূমিকার 'নিদর্শন' বলছেন।

৫ ঘণ্টা আগে

সংখ্যালঘু বলতে কোনো শব্দ নেই, সবাই বাংলাদেশি নাগরিক : মঈন খান

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ফ্যাসিবাদ দূর হওয়ার পর এখন মানুষ একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে হারানো গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। যেই গণতন্ত্রের জন্য মুক্তিযুদ্ধে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছিল। আগামীতে ক্ষমতায় গেলে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনাসহ জনগণের মৌলিক অধিকার ও সুশাসন নিশ্চিত করবে বিএনপি।’

১৮ ঘণ্টা আগে

‘অমীমাংসিত দিকগুলো সমাধান না হলে জনগণকে নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত’

তিনি জানান, ঐক্যমত্য কমিশনের যে সময় বাড়ানো হয়েছে, এর মধ্যে সনদ বাস্তবায়নের পথ খোলাসা করা, বিরোধ থাকা বিষয়গুলোর সমাধান, আদেশের বিষয়ে পরিষ্কার খসড়া এবং ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দলগুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে রেফারেন্স পয়েন্ট হিসেবে ২০২৬ এর কথা উল্লেখ করবে—এ বিষয়গুলোয় সমাধান চায় এনসিপি।

১৯ ঘণ্টা আগে

ভেদাভেদ ভুলে মিলেমিশে একসঙ্গে নির্বাচনে কাজ করতে হবে: আমির খসরু

জুলাই আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের রাজনৈতিক প্লাটফর্ম জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের মতভেদের জেরে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আসিফ ও মাহফুজ অনুপস্থিত ছিলেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

১৯ ঘণ্টা আগে