ডয়চে ভেলে
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। সম্পর্কের টানাপোড়েনে দুই দেশের হাইকমিশনারকে তলবের ঘটনা ঘটে একাধিকবার। সীমান্তে উত্তেজনা ছড়ায়। দুই দেশের বাণিজ্য নেমে আসে শূন্যের কোটায়। ভিসা বন্ধ করে দিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভারতে প্রবেশের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
অভ্যুত্থানের ছয় মাস যখন পেরিয়ে গেছে, তখন ফের দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্কে ফের এসেছে পরিবর্তন। এর মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক একেবারেই স্বাভাবিকের পর্যায়ে চলে আসছে। সীমান্তে উত্তেজনা অনেকটাই প্রশমিত হয়েছে, মহাপরিচালক পর্যায়ের সম্মেলনও করছে। ধীরে ধীরে কূটনৈতিক সম্পর্কে যে শীতলতা ছিল তাও কাটতে শুরু করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতির আভাস মিলছে। এর কারণ হিসেবে তারা মনে করছেন, ভারত ধীরে ধীরে বাংলাদেশের বাস্তবতা বুঝতে পারছে। তবে সম্পর্কের এই পরিবর্তনের ধারাতেও শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতের অবস্থান কতটুকু বদলাবে, তা নিয়ে সংশয় কাটেনি বিশ্লেষকদের। শেখ হাসিনাকে এখনকার মতো অবস্থায় রেখেই দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতি ঘটতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
এর মধ্যে ওমানের মাসকটে অষ্টম ভারত মহাসাগর সম্মেলনের সাইড লাইনে বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের এ বৈঠককে বিশ্লেষকরা ইতিবাচকভাবে দেখছেন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে যৌথ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার আহ্বানও তাদের কাছে ইতিবাচক মনে হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এই অর্থনৈতিক কূটনীতি এগিয়ে নিতে পারলে শুধু বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রেই নয়, সুফল পাওয়া যাবে আরও অনেক বিষয়েই। বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতির সূচনা হয় ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং একই দিন দেশত্যাগ করে শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর। এর মধ্যে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়ার প্রত্যুত্তরে ভারতের অনড় অবস্থান সম্পর্কে অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় দুই দেশই রাষ্ট্রদূতকে তলব করে। সীমান্তহত্যার বিষয়টি তো আছেই। এ ছাড়া বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভারতের ভিসাও বলতে গেলে বন্ধ আছে।
৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর অধ্যাপক ইউনূস আগস্টেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সময় নিউইয়র্কে তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে জয় শঙ্করের বৈঠক হয়। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে তখন দুই দেশ পারস্পরিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে সম্মত হয়।
অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর গত ডিসেম্বরে সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকা আসেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। ১২ ঘণ্টার ওই সফরে তিনি বাংলাদেশের পরারাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও সেনা প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এদিকে নয়া দিল্লিতে চার দিনের ৫৫তম বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠক এখন চলছে।
সবশেষ রোববার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠক হয়। বৈঠকের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়।
বৈঠকে তৌহিদ হোসেন গঙ্গা নদীর পানি চুক্তির নবায়নের বিষয়ে আলোচনা শুরুর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) এর স্থায়ী কমিটির বৈঠক আহ্বানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং এ বিষয়ে ভারতের সমর্থন চান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে সীমান্ত সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় সমাধানের ব্যাপারে উভয়পক্ষ আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। তারা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্যান্য দ্বিপক্ষিক বিষয় নিয়েও মতবিনিময় করেন বলে জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এদিকে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তৌহিদ হোসেন বলেন, বিমসটেকে অধ্যাপক ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদি একই অনুষ্ঠানস্থলে থাকবেন। অন্যান্য দেশের সরকারপ্রধানরাও থাকবেন। যদি তারা সেখানে থাকেন, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই পরস্পরের সঙ্গে কথা বলবেন। কারণ একটি, এটি একটি ছোট গ্রুপ।
উদাহরণ তুলে ধরে বলা হয়, সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে সাত দেশের প্রত্যেক রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান পরস্পরের সঙ্গে কথা বলেন। তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমার মনে হয়, বিমসটেকেও এ রকম কিছু ঘটতে পারে।’ তবে এই বৈঠকের সম্ভাবনা এখনো যোগাযোগের পর্যায়েই রয়েছে। ৪ এপ্রিল ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনে অধ্যাপক ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদি দুইজনই যোগ দিচ্ছেন।
অধ্যাপক ইউনূস রোববার ঢাকায় বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সম্মেলনে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটান— এই চার দেশ মিলে একটি যৌথ অর্থনীতি গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি মনে করেন, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে যৌথ অর্থনীতি গড়ে তুলতে পারলে এই চার দেশ লাভবান হবে। এরই মধ্যে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।
এসব বিষয় নিয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রগতি হচ্ছে। ভারত মনে হচ্ছে বাংলাদেশের বাস্তবতা কিছুটা হলেও বুঝতে চেষ্টা করছে। তবে ওরা ওদের স্বার্থের কথা চিন্তা করেই কাজ করবে। ওদের ইন্টারন্যাল পলিটিক্স আছে, ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্স আছে।
শেখ হাসিনা ইস্যুতে হুমায়ুন কবির বলেন, এখন দুই দেশই যার যার অবস্থানে আছে। তারপরও সম্পর্ক যতদূর বাড়ানো যায়, ততই ভালো। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সার্কের কথা বলেছেন। জয়শঙ্কর বিমসটেকের কথা বলেছেন। ফলে অঞ্চলিক সম্পর্কের অগ্রগতির জায়গা আপতত দেখছি না। দ্বিপাক্ষিক অগ্রগতি হয়তো একটু হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রস্তাবনায় থাকা চার দেশের অর্থনীতির জোট নতুন কিছু নয়। সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন বলেন, ২০১৫ সালে তো বিবিআইএন (বাংলাদেশ, ভুটান, ইন্ডিয়া, নেপাল ইনিশিয়েটিভ) সই হলো। তার তো কোনো বাস্তবায়ন দেখছি না। অধ্যাপক ইউনূসের আইডিয়াটা ভালো। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করে কাজে লাগানো কতটা সম্ভব সেটাই আসল কথা।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম মনে করেন, সাংস্কৃতিক-ভৌগলিক ও পরিবেশগত বিভিন্ন মিল ও ঐক্যের কারণেই অধ্যাপক ইউনূস চারটি দেশের কথা বলেছেন। ওইসব দেশে বাংলাদেশের পণ্যের চাহিদা আছে। আবার ওই সব দেশের পণ্যের চাহিদা রয়েছে বাংলাদেশে। তাই ‘অর্থনৈতিক হাব’ করে বিনিয়োগ করলে সবাই লাভবান হবে।
ড. আইনুল বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এখন সম্পর্কের যে টানাপোড়েন চলছে, তাতে এই উদ্যোগ নিয়ে এগোলে সম্পর্কের উন্নতি হতেও পারে। অর্থনৈতিক কূটনীতির এই দিকটি আঞ্চলিক সম্পর্কেরও উন্নয়ন ঘটাতে পারে। আমরা মনে হয়, এখন অর্থনীতি নিয়ে এগোনোই ভালো।
ওমানের মাসকটে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের মধ্যেকার বৈঠকে দুজনের শারীরি ভাষাকে ইতিবাচক মনে করছেন আরেক সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) মো. শহীদুল হক।
তিনি বলেন, আবার ভারতীয় বিশ্লেষকরা ও জরিপের তথ্য বলছে, ৫০ শতাংশের বেশি ভারতীয় চায় না, শেখ হাসিনা সেখানে থাকুক। আর ট্রাম্পের সঙ্গে মোদির বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে তাদের কোনো আউটকাম আছে বলে আমার মনে হয় না। এগুলো ভারতকে বাংলাদেশের বাস্তবতা বুঝতে সহায়তা করছে বলে আমার মনে হচ্ছে। এর ফলে সম্পর্কের ইতিবাচক দিক তৈরি হতে পারে।
শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতের রাজনীতি আছে উল্লেখ করে শহীদুল হক বলেন, তারা শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত দেবে বলে আমি মনে করি না। তবে ভারতের বাস্তবতায় একপর্যায়ে হয়তো তাকে তৃতীয় কোনো দেশে তারা পাঠাতে পারে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত শহীদুল আরও বলেন, অধ্যাপক ইউনূস যে চার দেশের অর্থনীতির কথা বলছেন, সেটা বাস্তবায়ন করতে ভারতের বড় সমর্থন লাগবে। কারণ এখানে ভারতই বড় বাধা, আর কোনো দেশ নয়। ব্যাংককে ইউনূসের সঙ্গে মোদির বৈঠক হবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। হলে এসব বিষয়ে আলোচনা করলে ভালো করবেন।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। সম্পর্কের টানাপোড়েনে দুই দেশের হাইকমিশনারকে তলবের ঘটনা ঘটে একাধিকবার। সীমান্তে উত্তেজনা ছড়ায়। দুই দেশের বাণিজ্য নেমে আসে শূন্যের কোটায়। ভিসা বন্ধ করে দিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভারতে প্রবেশের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
অভ্যুত্থানের ছয় মাস যখন পেরিয়ে গেছে, তখন ফের দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্কে ফের এসেছে পরিবর্তন। এর মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক একেবারেই স্বাভাবিকের পর্যায়ে চলে আসছে। সীমান্তে উত্তেজনা অনেকটাই প্রশমিত হয়েছে, মহাপরিচালক পর্যায়ের সম্মেলনও করছে। ধীরে ধীরে কূটনৈতিক সম্পর্কে যে শীতলতা ছিল তাও কাটতে শুরু করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতির আভাস মিলছে। এর কারণ হিসেবে তারা মনে করছেন, ভারত ধীরে ধীরে বাংলাদেশের বাস্তবতা বুঝতে পারছে। তবে সম্পর্কের এই পরিবর্তনের ধারাতেও শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতের অবস্থান কতটুকু বদলাবে, তা নিয়ে সংশয় কাটেনি বিশ্লেষকদের। শেখ হাসিনাকে এখনকার মতো অবস্থায় রেখেই দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতি ঘটতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
এর মধ্যে ওমানের মাসকটে অষ্টম ভারত মহাসাগর সম্মেলনের সাইড লাইনে বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের এ বৈঠককে বিশ্লেষকরা ইতিবাচকভাবে দেখছেন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে যৌথ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার আহ্বানও তাদের কাছে ইতিবাচক মনে হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এই অর্থনৈতিক কূটনীতি এগিয়ে নিতে পারলে শুধু বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রেই নয়, সুফল পাওয়া যাবে আরও অনেক বিষয়েই। বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতির সূচনা হয় ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং একই দিন দেশত্যাগ করে শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর। এর মধ্যে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়ার প্রত্যুত্তরে ভারতের অনড় অবস্থান সম্পর্কে অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় দুই দেশই রাষ্ট্রদূতকে তলব করে। সীমান্তহত্যার বিষয়টি তো আছেই। এ ছাড়া বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভারতের ভিসাও বলতে গেলে বন্ধ আছে।
৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর অধ্যাপক ইউনূস আগস্টেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সময় নিউইয়র্কে তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে জয় শঙ্করের বৈঠক হয়। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে তখন দুই দেশ পারস্পরিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে সম্মত হয়।
অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর গত ডিসেম্বরে সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকা আসেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। ১২ ঘণ্টার ওই সফরে তিনি বাংলাদেশের পরারাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও সেনা প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এদিকে নয়া দিল্লিতে চার দিনের ৫৫তম বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠক এখন চলছে।
সবশেষ রোববার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠক হয়। বৈঠকের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়।
বৈঠকে তৌহিদ হোসেন গঙ্গা নদীর পানি চুক্তির নবায়নের বিষয়ে আলোচনা শুরুর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) এর স্থায়ী কমিটির বৈঠক আহ্বানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং এ বিষয়ে ভারতের সমর্থন চান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে সীমান্ত সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় সমাধানের ব্যাপারে উভয়পক্ষ আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। তারা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্যান্য দ্বিপক্ষিক বিষয় নিয়েও মতবিনিময় করেন বলে জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এদিকে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তৌহিদ হোসেন বলেন, বিমসটেকে অধ্যাপক ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদি একই অনুষ্ঠানস্থলে থাকবেন। অন্যান্য দেশের সরকারপ্রধানরাও থাকবেন। যদি তারা সেখানে থাকেন, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই পরস্পরের সঙ্গে কথা বলবেন। কারণ একটি, এটি একটি ছোট গ্রুপ।
উদাহরণ তুলে ধরে বলা হয়, সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে সাত দেশের প্রত্যেক রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান পরস্পরের সঙ্গে কথা বলেন। তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমার মনে হয়, বিমসটেকেও এ রকম কিছু ঘটতে পারে।’ তবে এই বৈঠকের সম্ভাবনা এখনো যোগাযোগের পর্যায়েই রয়েছে। ৪ এপ্রিল ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনে অধ্যাপক ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদি দুইজনই যোগ দিচ্ছেন।
অধ্যাপক ইউনূস রোববার ঢাকায় বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সম্মেলনে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটান— এই চার দেশ মিলে একটি যৌথ অর্থনীতি গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি মনে করেন, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে যৌথ অর্থনীতি গড়ে তুলতে পারলে এই চার দেশ লাভবান হবে। এরই মধ্যে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।
এসব বিষয় নিয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রগতি হচ্ছে। ভারত মনে হচ্ছে বাংলাদেশের বাস্তবতা কিছুটা হলেও বুঝতে চেষ্টা করছে। তবে ওরা ওদের স্বার্থের কথা চিন্তা করেই কাজ করবে। ওদের ইন্টারন্যাল পলিটিক্স আছে, ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্স আছে।
শেখ হাসিনা ইস্যুতে হুমায়ুন কবির বলেন, এখন দুই দেশই যার যার অবস্থানে আছে। তারপরও সম্পর্ক যতদূর বাড়ানো যায়, ততই ভালো। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সার্কের কথা বলেছেন। জয়শঙ্কর বিমসটেকের কথা বলেছেন। ফলে অঞ্চলিক সম্পর্কের অগ্রগতির জায়গা আপতত দেখছি না। দ্বিপাক্ষিক অগ্রগতি হয়তো একটু হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রস্তাবনায় থাকা চার দেশের অর্থনীতির জোট নতুন কিছু নয়। সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন বলেন, ২০১৫ সালে তো বিবিআইএন (বাংলাদেশ, ভুটান, ইন্ডিয়া, নেপাল ইনিশিয়েটিভ) সই হলো। তার তো কোনো বাস্তবায়ন দেখছি না। অধ্যাপক ইউনূসের আইডিয়াটা ভালো। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করে কাজে লাগানো কতটা সম্ভব সেটাই আসল কথা।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম মনে করেন, সাংস্কৃতিক-ভৌগলিক ও পরিবেশগত বিভিন্ন মিল ও ঐক্যের কারণেই অধ্যাপক ইউনূস চারটি দেশের কথা বলেছেন। ওইসব দেশে বাংলাদেশের পণ্যের চাহিদা আছে। আবার ওই সব দেশের পণ্যের চাহিদা রয়েছে বাংলাদেশে। তাই ‘অর্থনৈতিক হাব’ করে বিনিয়োগ করলে সবাই লাভবান হবে।
ড. আইনুল বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এখন সম্পর্কের যে টানাপোড়েন চলছে, তাতে এই উদ্যোগ নিয়ে এগোলে সম্পর্কের উন্নতি হতেও পারে। অর্থনৈতিক কূটনীতির এই দিকটি আঞ্চলিক সম্পর্কেরও উন্নয়ন ঘটাতে পারে। আমরা মনে হয়, এখন অর্থনীতি নিয়ে এগোনোই ভালো।
ওমানের মাসকটে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের মধ্যেকার বৈঠকে দুজনের শারীরি ভাষাকে ইতিবাচক মনে করছেন আরেক সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) মো. শহীদুল হক।
তিনি বলেন, আবার ভারতীয় বিশ্লেষকরা ও জরিপের তথ্য বলছে, ৫০ শতাংশের বেশি ভারতীয় চায় না, শেখ হাসিনা সেখানে থাকুক। আর ট্রাম্পের সঙ্গে মোদির বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে তাদের কোনো আউটকাম আছে বলে আমার মনে হয় না। এগুলো ভারতকে বাংলাদেশের বাস্তবতা বুঝতে সহায়তা করছে বলে আমার মনে হচ্ছে। এর ফলে সম্পর্কের ইতিবাচক দিক তৈরি হতে পারে।
শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতের রাজনীতি আছে উল্লেখ করে শহীদুল হক বলেন, তারা শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত দেবে বলে আমি মনে করি না। তবে ভারতের বাস্তবতায় একপর্যায়ে হয়তো তাকে তৃতীয় কোনো দেশে তারা পাঠাতে পারে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত শহীদুল আরও বলেন, অধ্যাপক ইউনূস যে চার দেশের অর্থনীতির কথা বলছেন, সেটা বাস্তবায়ন করতে ভারতের বড় সমর্থন লাগবে। কারণ এখানে ভারতই বড় বাধা, আর কোনো দেশ নয়। ব্যাংককে ইউনূসের সঙ্গে মোদির বৈঠক হবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। হলে এসব বিষয়ে আলোচনা করলে ভালো করবেন।
জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিআর তথা সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির বিষয়ে অনড় অবস্থান নিলেও বিএনপি তা সমর্থন করছে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেছেন, বিএনপি পিআর পদ্ধতির পক্ষে নেই।
১ দিন আগেসহসভাপতি (ভিপি) ও সাধারণ সম্পাদকসহ (জিএস) কোন পদে কতজন মনোনয়ন নিয়েছেন, সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানানো হয়নি।
১ দিন আগেজুলিয়াস সিজার নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ছাত্র ইউনিয়ন বলছে, শিক্ষার্থীদের নিপীড়ন করতেন তিনি। অন্যদিকে ছাত্রশিবিরকে যুদ্ধাপরাধী, একাত্তরের গণহত্যার দোসর ইসলামী ছাত্র সংঘের সরাসরি উত্তরাধিকার বলে অভিহিত করেছে সংগ
১ দিন আগেনির্বাচন নিয়ে বিএনপির কোনো সংশয় নেই উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
১ দিন আগে