ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
শপথ না নিয়েই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন সভায় অংশ নিয়ে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার মতো ‘ক্রিমিনাল অফেন্স’ বা ফৌজদারি অপরাধ করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।
এই উপদেষ্টার অভিযোগ, ইশরাক নগর ভবনের মিলনায়তন ও অফিস দখল করে নাগরিক সেবাদানে বাধা দিচ্ছেন। কিন্তু প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার কোনো সুযোগ তার নেই। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে নাগরিক সেবা শতভাগ বিঘ্নিত হতে পারে বলে আশঙ্কা উপদেষ্টার।
আসিফ মাহমুদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘উনি (ইশরাক হোসেন) অফিশিয়ালি কোনো দায়িত্ব নেননি। উনি উনার নেতাকর্মীদেরকে নিয়ে গিয়ে নগর ভবনের মিলনায়তন, অফিস দখল করেছেন। তবে নাগরিক সেবা বিঘ্নিত করা আরও বাড়লে অবশ্যই আমাদেরকে বাধ্য হয়ে কোনো কঠোর ব্যবস্থায় যেতে হতে পারে।
গত দুই ডিএসসিসি কার্যালয় নগর ভবনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন সভায় অংশ নিচ্ছেন ইশরাক। এসব সভার ব্যানারে তাকে ‘মাননীয় মেয়র’ হিসেবে সম্বোধন করা হচ্ছে। এসব সভা আবার সিটি করপোরেশনের কার্যালয় নগর ভবনের ভেতরে অবস্থিত মিলনায়তনেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
আইন অনুযায়ী শপথ না নিয়ে এই বিএনপি নেতা মেয়রের হিসেবে এমন দায়িত্ব পালন করতে পারেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন যেভাবে শপথ ছাড়াই নগর ভবনে মেয়রের ভূমিকায় বিভিন্ন সভা-সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন, আইনিভাবে তা তিনি পারেন না।
সাবেক স্থানীয় সরকার সচিব আবু আলম শহীদ খান বলেন, এরকম পরিস্থিতি চলতে থাকলে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমে অচলাবস্থা তৈরি হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও ইশরাক হোসেনের মধ্যে এ ইস্যুতে আইনিভাবে সমঝোতা হতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ডিএসসিসি নির্বাচনে ইশরাককে পৌনে দুই লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস। গত আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে।
একমাস পর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু আইনি জটিলতার কথা বলে ইশরাকের শপথের আয়োজন থেকে বিরত থাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এ পরিস্থিতিতে ইশরাকের সমর্থকরা আন্দোলনে নামেন।
গত ১৪ মে নগর ভবনের সামনে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন ইশরাক সমর্থক ও বিএনপি নেতাকর্মীরা। পরে ডিএসসিসি কর্মচারী ইউনিয়নও তাতে যোগ দেয়। ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে তারা নগর ভবনে তালা দেন, অবস্থান নেন নগর ভবনের সামনে। এতে কার্যত নগর ভবন অচল হয়ে পড়ে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বলছিল, ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে জারি করা প্রজ্ঞাপন ও শপথ না পড়াতে রিট হওয়ায় সেটি বিচারাধীন বলেই তারা শপথ পড়াতে পারছে না।
গত ২২ মে বিচারপতি আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সেই রিট খারিজ করে দেন। আইনজীবীরা সে সময় বলেন, এর ফলে ইশরাককে শপথ পড়াতে আর কোনো বাধা নেই। তবে এখনো ইশরাককে শপথ পড়ায়নি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
ইশরাকের শপথ ইস্যুতে অচলাবস্থা ঈদুল আজহার পরেও কাটেনি। ঈদের পর রোববার প্রথম কর্মদিবসের পর সোমবার দ্বিতীয় কার্যদিবসেই ফের ইশরাকের সমর্থকরা নগর ভবন অবরোধ করেন। আজ মঙ্গলবারও তারা সেখানে অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই ইশরাক হোসেনের সমর্থক বিএনপির নেতাকর্মীরা নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করেন ও স্লোগান দেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগর ভবন মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভায় অংশ নেন ইশরাক। প্রায় দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা ওই সভায় সিটি করপোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডের সচিবদের অংশ নেওয়ার কথা ছিল।
অন্তত ৭০ জন ওয়ার্ড সচিব এ সভায় অংশ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। সভার ব্যানারে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ওয়ার্ড পর্যায়ে নাগরিক সেবা নিশ্চিতকল্পে প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ওয়ার্ড সচিবদের মতবিনিময় সভা’। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ইশরাকের নামের পরে লেখা হয়েছে ‘মাননীয় মেয়র, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন’।
মঙ্গলবারও ডিএসসিসি নগর ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ইশরাকের অনুসারীরা। ছবি: ফোকাস বাংলা
সভায় ওয়ার্ড সচিবদের ক্রেস্ট দিয়েছেন ইশরাক হোসেন। একই সঙ্গে জনসেবা ত্বরান্বিত করার বিষয়েও তাদের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
এদিকে নগর ভবনের সামনে সমাবেশে তার নেতাকর্মীরা স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে ‘স্বৈরাচার’ অভিহিত করে স্লোগান দেন। ‘হাসিনা গেছে যে পথে, আসিফ যাবে সে পথে— এমন স্লোগানও দেন তারা। বিক্ষোভকারীরা স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার পদত্যাগও দাবি করেন।
ওয়ার্ড সচিবদের সঙ্গে সভার পর ওই সমাবেশে অংশ নিয়ে ইশরাক প্রশ্ন তোলেন— কেন শপথ পড়াতে সময় ক্ষেপণ করা হচ্ছে এবং কার প্ররোচনায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
ইশরাক অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা অন্যায়ভাবে রাজনৈতিক ও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য তার পছন্দের একজন ব্যক্তিকে প্রশাসক নিয়োগ করেছেন।
সিটি করপোরেশনের বেশির ভাগ কাজই মূলত জনসেবাকেন্দ্রিক। গত এক মাস ধরে ইশরাককে মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোকে কেন্দ্র করে তার নেতাকর্মীদের নগর ভবন অবরুদ্ধ করে রাখার ফলে সেবা কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
গত একমাসে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ নাগরিক সেবা বিঘ্নিত হয়েছে অভিযোগ করে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, নাগরিক সেবা বিঘ্নিত করে এই আন্দোলন চলমান থাকলে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাজে একটা ‘ডেডলক সিচুয়েশন’ তৈরি হবে বলে আমি আশঙ্কা করছি।
ইশরাক হোসেন আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো দায়িত্ব নেননি উল্লেখ করে এই উপদেষ্টা বলেন, প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার কোনো সুযোগ নেই। কারণ সাইনিং অথোরিটি ছাড়া প্রশাসনিক কার্যক্রম কীভাবে পরিচালনা করা যায়. আমি জানি না।
মঙ্গলবার কিছু কিছু ওয়ার্ড সচিবদের বৈঠকে যাওয়ার জন্য ভয়-ভীতি দেখানোর অভিযোগ পেয়েছেন বলে জানান উপদেষ্টা আসিফ। বলেন, কিছু কিছু ওয়ার্ডের সচিবরা আমাদের জানাচ্ছেন, মিটিংয়ে যাওয়ার জন্য স্থানীয় বিএনপির নেতারা তাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। অনেক সচিবকে প্রাণ ভয় দেখানো হচ্ছে, হুমকি দিয়ে সেখানে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পরও কেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে কেন শপথ পড়ানো হয়নি— এমন প্রশ্নে শপথ গ্রহণের বিষয়টি বিচারাধীন ছিল বলে উল্লেখ করেন আসিফ মাহমুদ।
আসিফ মাহমুদ জানান, ইশরাকের শপথ গ্রহণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে করা রিট আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি হয় ২৯ এপ্রিল। কিন্তু ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন যে গেজেট দিয়েছিল, সেটির মেয়াদ শেষ হয় ২৭ এপ্রিল।
উপদেষ্টা আসিফ বলেন, সাবজুডিস (বিচারাধীন) থাকা অবস্থায় শপথ দেওয়ার সুযোগ আমাদের ছিল না। একই সঙ্গে ১ জুন করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। সুতরাং মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে শপথ দেওয়ার কোনো সুযোগও আমাদের নেই। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আইন ভঙ্গ করলে ইশরাক হোসেন আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন বলে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
ইশরাক হোসেন নগর ভবন দখল করে প্রশাসনিক কাজে বাধা দিয়ে ‘ক্রিমিনাল অফেন্স’ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা। তিনি বলেন, তারা যেটা করছে এটা দেশের আইনের প্রতি অবমাননা। একই সঙ্গে ক্রিমিনাল অফেন্স, সরকারি কাজে বাধা ও নাগরিক সেবায় বাধা সৃষ্টি করা।
এ ক্ষেত্রে এমন ‘ক্রিমিনাল অফেন্সে’র বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার আইনি কোনো পদক্ষেপ নেবে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আসিফ বলেন, যেহেতু বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকার সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে সদিচ্ছা পোষণ করে, ফলে সরকার সেখানে সদিচ্ছাটা দেখাচ্ছে ও ধৈর্য ধরছে। তাই নাগরিক সেবা যে বিঘ্নিত হচ্ছে এটা আরও বাড়লে বাধ্য হয়েই আমাদের কোনো কঠোর অবস্থায় যেতে হতে পারে।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নতুন মেয়র হিসেবে গত ২৭ এপ্রিল ইশরাক হোসেনের নাম ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের গেজেট প্রকাশের পরই গত এক মাস তাকে শপথ পড়ানোর দাবিতে নগর ভবন অবরুদ্ধ করে চলছে আন্দোলন। এ আন্দোলন থেকে পদত্যাগও দাবি করা হয় কয়েকজন উপদেষ্টার। একপর্যায়ে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির দ্বন্দ্ব দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।
নাগরিক সেবা চরমভাবে বিঘ্ন হওয়ার পাশাপাশি সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনের ফলে দুর্ভোগের শিকার হয় সাধারণ মানুষও। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে অচলাবস্থা তৈরি হবে।
ইশরাকের দেখাদেখি এর আগে যেসব মেয়র বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের বাতিল করা হয়েছে, তারাও আন্দোলন করতে পারে বলে শঙ্কা জানিয়েছেন সাবেক স্থানীয় সরকার সচিব আবু আলম শহীদ খান। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, আদালতের রায়, নির্বাচন কমিশনের গেজেট নোটিফিকেশন ও শপথ না পড়ানো নিয়ে এক ধরনের জটিলতা রয়েছে। ইশরাক সাহেব এখন যেভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করে সিটি করপোরেশন পরিচালনা করছেন, এ রকম যদি অনেকেই করতে থাকেন তবে একটা অচলাবস্থা তৈরি হবে।
শপথ না নিয়ে এভাবে ইশরাক মেয়রের দায়িত্ব পালন আইনি দিক থেকে সিদ্ধ নয় বলেও মনে করছেন সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান। বলেন, এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও ইশরাক হোসেনের মধ্যে আইনি সমঝোতা হতে হবে। উনি কাজ করতে পারেন, তবে ভবিষ্যতে জটিলতা তৈরি হবে।
শপথ না নিয়েই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন সভায় অংশ নিয়ে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার মতো ‘ক্রিমিনাল অফেন্স’ বা ফৌজদারি অপরাধ করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।
এই উপদেষ্টার অভিযোগ, ইশরাক নগর ভবনের মিলনায়তন ও অফিস দখল করে নাগরিক সেবাদানে বাধা দিচ্ছেন। কিন্তু প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার কোনো সুযোগ তার নেই। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে নাগরিক সেবা শতভাগ বিঘ্নিত হতে পারে বলে আশঙ্কা উপদেষ্টার।
আসিফ মাহমুদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘উনি (ইশরাক হোসেন) অফিশিয়ালি কোনো দায়িত্ব নেননি। উনি উনার নেতাকর্মীদেরকে নিয়ে গিয়ে নগর ভবনের মিলনায়তন, অফিস দখল করেছেন। তবে নাগরিক সেবা বিঘ্নিত করা আরও বাড়লে অবশ্যই আমাদেরকে বাধ্য হয়ে কোনো কঠোর ব্যবস্থায় যেতে হতে পারে।
গত দুই ডিএসসিসি কার্যালয় নগর ভবনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন সভায় অংশ নিচ্ছেন ইশরাক। এসব সভার ব্যানারে তাকে ‘মাননীয় মেয়র’ হিসেবে সম্বোধন করা হচ্ছে। এসব সভা আবার সিটি করপোরেশনের কার্যালয় নগর ভবনের ভেতরে অবস্থিত মিলনায়তনেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
আইন অনুযায়ী শপথ না নিয়ে এই বিএনপি নেতা মেয়রের হিসেবে এমন দায়িত্ব পালন করতে পারেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন যেভাবে শপথ ছাড়াই নগর ভবনে মেয়রের ভূমিকায় বিভিন্ন সভা-সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন, আইনিভাবে তা তিনি পারেন না।
সাবেক স্থানীয় সরকার সচিব আবু আলম শহীদ খান বলেন, এরকম পরিস্থিতি চলতে থাকলে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমে অচলাবস্থা তৈরি হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও ইশরাক হোসেনের মধ্যে এ ইস্যুতে আইনিভাবে সমঝোতা হতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ডিএসসিসি নির্বাচনে ইশরাককে পৌনে দুই লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস। গত আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে।
একমাস পর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু আইনি জটিলতার কথা বলে ইশরাকের শপথের আয়োজন থেকে বিরত থাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এ পরিস্থিতিতে ইশরাকের সমর্থকরা আন্দোলনে নামেন।
গত ১৪ মে নগর ভবনের সামনে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন ইশরাক সমর্থক ও বিএনপি নেতাকর্মীরা। পরে ডিএসসিসি কর্মচারী ইউনিয়নও তাতে যোগ দেয়। ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে তারা নগর ভবনে তালা দেন, অবস্থান নেন নগর ভবনের সামনে। এতে কার্যত নগর ভবন অচল হয়ে পড়ে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বলছিল, ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে জারি করা প্রজ্ঞাপন ও শপথ না পড়াতে রিট হওয়ায় সেটি বিচারাধীন বলেই তারা শপথ পড়াতে পারছে না।
গত ২২ মে বিচারপতি আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সেই রিট খারিজ করে দেন। আইনজীবীরা সে সময় বলেন, এর ফলে ইশরাককে শপথ পড়াতে আর কোনো বাধা নেই। তবে এখনো ইশরাককে শপথ পড়ায়নি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
ইশরাকের শপথ ইস্যুতে অচলাবস্থা ঈদুল আজহার পরেও কাটেনি। ঈদের পর রোববার প্রথম কর্মদিবসের পর সোমবার দ্বিতীয় কার্যদিবসেই ফের ইশরাকের সমর্থকরা নগর ভবন অবরোধ করেন। আজ মঙ্গলবারও তারা সেখানে অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই ইশরাক হোসেনের সমর্থক বিএনপির নেতাকর্মীরা নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করেন ও স্লোগান দেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগর ভবন মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভায় অংশ নেন ইশরাক। প্রায় দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা ওই সভায় সিটি করপোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডের সচিবদের অংশ নেওয়ার কথা ছিল।
অন্তত ৭০ জন ওয়ার্ড সচিব এ সভায় অংশ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। সভার ব্যানারে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ওয়ার্ড পর্যায়ে নাগরিক সেবা নিশ্চিতকল্পে প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ওয়ার্ড সচিবদের মতবিনিময় সভা’। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ইশরাকের নামের পরে লেখা হয়েছে ‘মাননীয় মেয়র, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন’।
মঙ্গলবারও ডিএসসিসি নগর ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ইশরাকের অনুসারীরা। ছবি: ফোকাস বাংলা
সভায় ওয়ার্ড সচিবদের ক্রেস্ট দিয়েছেন ইশরাক হোসেন। একই সঙ্গে জনসেবা ত্বরান্বিত করার বিষয়েও তাদের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
এদিকে নগর ভবনের সামনে সমাবেশে তার নেতাকর্মীরা স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে ‘স্বৈরাচার’ অভিহিত করে স্লোগান দেন। ‘হাসিনা গেছে যে পথে, আসিফ যাবে সে পথে— এমন স্লোগানও দেন তারা। বিক্ষোভকারীরা স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার পদত্যাগও দাবি করেন।
ওয়ার্ড সচিবদের সঙ্গে সভার পর ওই সমাবেশে অংশ নিয়ে ইশরাক প্রশ্ন তোলেন— কেন শপথ পড়াতে সময় ক্ষেপণ করা হচ্ছে এবং কার প্ররোচনায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
ইশরাক অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা অন্যায়ভাবে রাজনৈতিক ও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য তার পছন্দের একজন ব্যক্তিকে প্রশাসক নিয়োগ করেছেন।
সিটি করপোরেশনের বেশির ভাগ কাজই মূলত জনসেবাকেন্দ্রিক। গত এক মাস ধরে ইশরাককে মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোকে কেন্দ্র করে তার নেতাকর্মীদের নগর ভবন অবরুদ্ধ করে রাখার ফলে সেবা কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
গত একমাসে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ নাগরিক সেবা বিঘ্নিত হয়েছে অভিযোগ করে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, নাগরিক সেবা বিঘ্নিত করে এই আন্দোলন চলমান থাকলে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাজে একটা ‘ডেডলক সিচুয়েশন’ তৈরি হবে বলে আমি আশঙ্কা করছি।
ইশরাক হোসেন আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো দায়িত্ব নেননি উল্লেখ করে এই উপদেষ্টা বলেন, প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার কোনো সুযোগ নেই। কারণ সাইনিং অথোরিটি ছাড়া প্রশাসনিক কার্যক্রম কীভাবে পরিচালনা করা যায়. আমি জানি না।
মঙ্গলবার কিছু কিছু ওয়ার্ড সচিবদের বৈঠকে যাওয়ার জন্য ভয়-ভীতি দেখানোর অভিযোগ পেয়েছেন বলে জানান উপদেষ্টা আসিফ। বলেন, কিছু কিছু ওয়ার্ডের সচিবরা আমাদের জানাচ্ছেন, মিটিংয়ে যাওয়ার জন্য স্থানীয় বিএনপির নেতারা তাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। অনেক সচিবকে প্রাণ ভয় দেখানো হচ্ছে, হুমকি দিয়ে সেখানে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পরও কেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে কেন শপথ পড়ানো হয়নি— এমন প্রশ্নে শপথ গ্রহণের বিষয়টি বিচারাধীন ছিল বলে উল্লেখ করেন আসিফ মাহমুদ।
আসিফ মাহমুদ জানান, ইশরাকের শপথ গ্রহণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে করা রিট আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি হয় ২৯ এপ্রিল। কিন্তু ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন যে গেজেট দিয়েছিল, সেটির মেয়াদ শেষ হয় ২৭ এপ্রিল।
উপদেষ্টা আসিফ বলেন, সাবজুডিস (বিচারাধীন) থাকা অবস্থায় শপথ দেওয়ার সুযোগ আমাদের ছিল না। একই সঙ্গে ১ জুন করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। সুতরাং মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে শপথ দেওয়ার কোনো সুযোগও আমাদের নেই। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আইন ভঙ্গ করলে ইশরাক হোসেন আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন বলে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
ইশরাক হোসেন নগর ভবন দখল করে প্রশাসনিক কাজে বাধা দিয়ে ‘ক্রিমিনাল অফেন্স’ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা। তিনি বলেন, তারা যেটা করছে এটা দেশের আইনের প্রতি অবমাননা। একই সঙ্গে ক্রিমিনাল অফেন্স, সরকারি কাজে বাধা ও নাগরিক সেবায় বাধা সৃষ্টি করা।
এ ক্ষেত্রে এমন ‘ক্রিমিনাল অফেন্সে’র বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার আইনি কোনো পদক্ষেপ নেবে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আসিফ বলেন, যেহেতু বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকার সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে সদিচ্ছা পোষণ করে, ফলে সরকার সেখানে সদিচ্ছাটা দেখাচ্ছে ও ধৈর্য ধরছে। তাই নাগরিক সেবা যে বিঘ্নিত হচ্ছে এটা আরও বাড়লে বাধ্য হয়েই আমাদের কোনো কঠোর অবস্থায় যেতে হতে পারে।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নতুন মেয়র হিসেবে গত ২৭ এপ্রিল ইশরাক হোসেনের নাম ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের গেজেট প্রকাশের পরই গত এক মাস তাকে শপথ পড়ানোর দাবিতে নগর ভবন অবরুদ্ধ করে চলছে আন্দোলন। এ আন্দোলন থেকে পদত্যাগও দাবি করা হয় কয়েকজন উপদেষ্টার। একপর্যায়ে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির দ্বন্দ্ব দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।
নাগরিক সেবা চরমভাবে বিঘ্ন হওয়ার পাশাপাশি সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনের ফলে দুর্ভোগের শিকার হয় সাধারণ মানুষও। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে অচলাবস্থা তৈরি হবে।
ইশরাকের দেখাদেখি এর আগে যেসব মেয়র বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের বাতিল করা হয়েছে, তারাও আন্দোলন করতে পারে বলে শঙ্কা জানিয়েছেন সাবেক স্থানীয় সরকার সচিব আবু আলম শহীদ খান। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, আদালতের রায়, নির্বাচন কমিশনের গেজেট নোটিফিকেশন ও শপথ না পড়ানো নিয়ে এক ধরনের জটিলতা রয়েছে। ইশরাক সাহেব এখন যেভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করে সিটি করপোরেশন পরিচালনা করছেন, এ রকম যদি অনেকেই করতে থাকেন তবে একটা অচলাবস্থা তৈরি হবে।
শপথ না নিয়ে এভাবে ইশরাক মেয়রের দায়িত্ব পালন আইনি দিক থেকে সিদ্ধ নয় বলেও মনে করছেন সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান। বলেন, এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও ইশরাক হোসেনের মধ্যে আইনি সমঝোতা হতে হবে। উনি কাজ করতে পারেন, তবে ভবিষ্যতে জটিলতা তৈরি হবে।
ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের সিদ্ধান্ত দ্রুত নির্বাচন কমিশনকে জানানোর জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ।
১ দিন আগেবিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন সরকার তাকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর আয়োজন না করলে নিজেই তার কর্মী সমর্থক ও দক্ষিণ সিটির বাসিন্দাদের নিয়ে শপথ আয়োজন করবেন।
২ দিন আগেবিএনপি গণতান্ত্রিক পথে এগিয়ে যাবে উল্লেখ করে দলের স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, যেহেতু দেশের মানুষ প্রায় ২০ বছর তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি, তাই যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে আলোচনায়। আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল ঐকমত্যের, যেখানে আমরা পৌঁছাতে পেরেছি।
২ দিন আগেঢাকা দক্ষিণ সিটির (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে নগর ভবনের সামনে ফের অবস্থান নিয়েছেন তার সমর্থকরা। এদিকে ইশরাক নিজে নগর ভবনে উপস্থিত হয়ে ডিএসসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন।
২ দিন আগে