প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম
জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ের কার্যক্রম বিবেচনায় নিয়ে দেশে বর্তমান সক্রিয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির কঠোর সমালোচনা করেছেন সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া। দলটিতে তিনি অভিহিত করেছেন ‘প্রতিবিপ্লবী শক্তি’ হিসেবে।
শুধু বিএনপি নয়, সাবেক এই সেনাপ্রধান জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থী ও তাদের গড়া রাজনৈতিক দলেরও সমালোচনা করেছেন। তিনি মনে করেন, অনভিজ্ঞতার কারণেই তারা সম্ভাবনা নিয়েও রাজনৈতিকভাবে পরিপক্ক শক্তি হয়ে উঠতে পারেনি।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশংসা করলেও সামগ্রিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন ইকবাল করিম ভূঁইয়া। বলেছেন, জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশ পুনর্গঠন করার সুযোগ পেলেও বিভিন্ন মহলের স্বার্থের সংঘাতে শেষ পর্যন্ত পুরনো ব্যবস্থাই বহাল রয়েছে, কেবল বদলেছে সেই ব্যবস্থার সুবিধাভোগী মুখগুলো।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে দেওয়া এক পোস্টে দেশের রাজনৈতিক শক্তিগুলোর এমন মূল্যায়ন করেছেন সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া, যিনি সংক্ষেপে আইকেবি নামে পরিচিত। ফোর স্টার এই জেনারেল ২০১২ সালের ২৫ জুন থেকে শুরু করে ২০১৫ সালের ২৫ জুন পর্যন্ত সেনাপ্রধান ছিলেন।
‘আগামী পাঁচ বছরে আমরা কোথায় যাচ্ছি?’— এ শিরোনামে সাবেক এই সেনাপ্রধানের একটি লেখার প্রথম অংশে এমন মূল্যায়ন উঠে এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে, দীর্ঘ বিশ্লেষণটি কয়েকটি অংশে ভাগ করে তিনি ফেসবুক প্রোফাইলেই প্রকাশ করবেন।
বিএনপিকে নিয়ে আইকেবি লিখেছেন, ‘দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের দ্বারা নিপীড়িত বিএনপি এখন এক প্রতি-বিপ্লবী শক্তি। তারা ফ্যাসিবাদী শাসকদল ও তার ছাত্রসংগঠন নিষিদ্ধকরণ, প্রেসিডেন্ট পরিবর্তন, সংবিধান বাতিল, গভীর কাঠামোগত সংস্কার— এসব বিপ্লবী পদক্ষেপের ক্রমাগত বিরোধিতা করে যাচ্ছে।’
চলমান ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে চাওয়ার মাধ্যমে বিএনপি ক্ষমতার চর্চা অব্যাহত রাখতে চায় বলে মনে করেন ইকবাল করিম ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘বিএনপি স্থিতাবস্থার (status quo) পক্ষপাতী। কেননা দ্বি-দলীয় রাজনীতিতে তাদের পুরনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রায় অনুপস্থিত যা, তাদের সহজেই নির্বাচনি বৈতরণী পার হওয়ার পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে।’
ছাত্রশক্তি বিএনপির কাছে একটি বিরাট ধাঁধা— এমন মন্তব্য করে সাবেক এই সেনাপ্রধান বলেন, “এ কারণে আওয়ামী লীগকে বিলুপ্ত করে ছাত্রশক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি নতুন গণতান্ত্রিক কাঠামো তৈরি করতে তারা অনাগ্রহী। তাদের ধারণা, এই নতুন রাজনৈতিক কাঠামো তৈরি হলে নতুন নতুন মাত্রা সৃষ্টি করবে, যা তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগকে নষ্ট করে দেবে। বরং ছাত্রশক্তিকে পুরনো রাজনৈতিক কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করা গেলে তা একসময় ‘নাগরিক ঐক্য’র মতোই ক্ষয়ে যাবে।”
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনেও বিএনপি সবচেয়ে বেশি প্রভাব রেখে পুলিশ-প্রশাসনসহ বিভিন্ন খাতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ পোক্ত করেছে বলে মনে করেন ইকবাল করিম ভূঁইয়া।
তিনি লিখেছেন, ‘উপদেষ্টা নিয়োগে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয় বিএনপি। তারা পছন্দের উপদেষ্টাদের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী (উপদেষ্টা) পদে বসাতে এবং আলী ইমাম মজুমদারকে ড. ইউনুসের বিশেষ সহকারী হিসাবে নিয়োগ দিতে সমর্থ হয়। এ সেতুবন্ধ দিয়ে তারা পুলিশ, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিজেদের পছন্দের লোক নিয়োগ করে।’
এর মধ্য দিয়ে দেশে চারটি পৃথক ক্ষমতাকেন্দ্র তৈরি হয় উল্লেখ করে আইকেবি লিখেছেন, ‘ক্ষমতাকেন্দ্র চারটি হলো— একটি ড. ইউনুসের অধীনে অন্তর্বর্তী সরকার, একটি বিএনপির অধীনে, একটি সেনাবাহিনীর অধীনে ও একটি ছাত্রদের অধীনে। বর্তমানে এই চারটি ক্ষমতাকেন্দ্র চারটি সমান্তরাল প্রশাসন চালাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই এদের স্বার্থগুলো প্রায়ই সাংঘর্ষিক হয় এবং সরকারের কার্যক্রমে বাধা তৈরি করে।’
সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়ার দীর্ঘ লেখার শুরুটা জুলাই আন্দোলনের বিজয় মুহূর্ত থেকে। তার মূল্যায়ন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শুধু ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনই হয়নি, বরং পুরো রাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে পড়েছিল। এ সময়ের বাংলাদেশ তার দৃষ্টিতে ছিল একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রেখে যাওয়া ধ্বংসস্তূপের মতোই।
এ অবস্থায় সব খাতকে নতুন করে ঢেলে সাজিয়ে সম্পূর্ণ নতুন করে বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছিল বলেও মনে করেন সাবেক এই সেনাপ্রধান। তবে সেই সুযোগ দেশ কাজে লাগাতে পারেনি বলেও অভিমত তার।
ইকবাল করিম ভূঁইয়া লিখেছেন, দ্রুত পরাজিত দলের রেখে যাওয়া শূন্যস্থান পূরণ করে পুরোনো কাঠামোকেই আবার জোড়া লাগানো হলো। পুলিশ, বিচার বিভাগ ও সিভিল প্রশাসন— সবই দলীয় নিয়ন্ত্রণে চলে গেল। গুরুত্বপূর্ণ পদ হঠাৎ করে দখল হলো। এবং জুলাই বিপ্লবের দোষীদেরকে শাস্তি দেওয়ার আগেই সরকারি নিয়ম ভেঙে দ্রুত পদোন্নতি ঘটতে থাকল।
তিনি আরও লিখেছেন, আগের শাসকগোষ্ঠীর সম্পদ ও ব্যবসা হাতবদল হলো এবং বেআইনি চাঁদাবাজি চলতে থাকল। দেশের সর্বত্র বিভিন্ন পোস্টারে শেখ মুজিব, শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবির বদলে নতুন মুখমণ্ডল শোভা পেতে লাগল। মহাসড়ক ও প্রধান সড়কে নির্মিত বিভিন্ন তোরণে বিএনপি নেতাদের ছবি আমাদের স্পষ্টতই বুঝিয়ে দিলো— পুরনো চর্চাই অব্যহত থাকবে। সার কথা, পুরাতন শিকারীর দলকে একটি নতুন শিকারীর দল প্রতিস্থাপন করল।
ইকবাল করিম ভূঁইয়া মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়া থেকেই জুলাই অভ্যুত্থানের যে চেতনা, তার অবক্ষয় শুরু। তিনি লিখেছেন, ‘বিপ্লবের অবক্ষয় শুরু হয় অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন থেকেই। প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধানের তত্ত্বাবধানে আসিফ নজরুল, ছাত্রনেতারা ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা সদস্য বাছাই করেন। নতুন দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা আছে কি না, সে বিচার না করেই সবাই নিজ দলের লোক ঢোকাতে তৎপর হন।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নিয়োগের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন ইকবাল করিম ভূঁইয়া। তবে অন্য উপদেষ্টাদের সরকার পরিচালনার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। বলেছেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়োগ দেওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত হলেও অন্য সদস্যদের রাষ্ট্র পরিচালনার প্রাজ্ঞতা কম ছিল। তারা তাদের পৃষ্ঠপোষক দলের নির্দেশমুখী ছিলেন। ফলে শুরু থেকেই সরকার দুর্বল হয়ে পড়ে।’
নতুন আশা নিয়ে হাজির হলেও পুরনো রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে প্রবেশ করে জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা শেষ পর্যন্ত নিজেদের সম্ভাবনার অপমৃত্যু ঘটিয়েছে বলে মনে করেন ইকবাল করিম ভূঁইয়া।
সাবেক এই সেনাপ্রধান লিখেছেন, ‘ছাত্রবিপ্লবীদের ভুল ছিল নতুন বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে সামনে এগোনোর বদলে বিদ্যমান রাজনৈতিক কাঠামোয় যোগ দিয়ে নিজেদের দল গঠন করা। জুলাই ঘোষণার বিষয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত— এ দুটিই তাদেরকে পুরনো রাজনৈতিক কাঠামোতে ঠেলে দেয়।’
এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা ঘাটতি ও সুস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গীর অভাবকে প্রধানত দায়ী করেছেন তিনি। লিখেছেন, ‘অভিজ্ঞতা ও সুস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে তারা বিএনপি ও অন্যান্য দলের প্রভাবে দল গঠন করে। ফলে তাদের বিপ্লব-পরবর্তী আধিপত্য ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। দেশকে ঢালাও পুনর্গঠনে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে পুরোপুরি সমর্থন দিতেও তারা ব্যর্থ হয়।’
শিক্ষার্থীদের এমন ব্যর্থতার কারণে দেশ পুনর্গঠনের সুযোগও হাতছাড়া হয় বলে মনে করেন আইকেবি। তিনি লিখেছেন, ‘যে পুরনো সিস্টেমকে ভেঙে তারা (শিক্ষার্থীরা) নতুন সিস্টেম গড়তে চেয়েছিল, শেষ পর্যন্ত তারই (পুরনো সিস্টেম) ফাঁদে তারা আটকা পড়ে। ফলে দুর্বল ও পর্যাপ্ত জনসমর্থনহীন অন্তর্বর্তী সরকারকে সেইসব গোষ্ঠী চাপে রাখে, যারা আন্দোলনের ফ্রন্টলাইনে কখনো ছিল না, কিন্তু বিপ্লবের ফসল কুড়াতে ও ক্ষমতায় আসার জন্য উন্মুখ ছিল। এভাবেই আমরা আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার বিরল সুযোগ হাতছাড়া করে ফেলি।’
জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ের কার্যক্রম বিবেচনায় নিয়ে দেশে বর্তমান সক্রিয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির কঠোর সমালোচনা করেছেন সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া। দলটিতে তিনি অভিহিত করেছেন ‘প্রতিবিপ্লবী শক্তি’ হিসেবে।
শুধু বিএনপি নয়, সাবেক এই সেনাপ্রধান জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থী ও তাদের গড়া রাজনৈতিক দলেরও সমালোচনা করেছেন। তিনি মনে করেন, অনভিজ্ঞতার কারণেই তারা সম্ভাবনা নিয়েও রাজনৈতিকভাবে পরিপক্ক শক্তি হয়ে উঠতে পারেনি।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশংসা করলেও সামগ্রিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন ইকবাল করিম ভূঁইয়া। বলেছেন, জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশ পুনর্গঠন করার সুযোগ পেলেও বিভিন্ন মহলের স্বার্থের সংঘাতে শেষ পর্যন্ত পুরনো ব্যবস্থাই বহাল রয়েছে, কেবল বদলেছে সেই ব্যবস্থার সুবিধাভোগী মুখগুলো।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে দেওয়া এক পোস্টে দেশের রাজনৈতিক শক্তিগুলোর এমন মূল্যায়ন করেছেন সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া, যিনি সংক্ষেপে আইকেবি নামে পরিচিত। ফোর স্টার এই জেনারেল ২০১২ সালের ২৫ জুন থেকে শুরু করে ২০১৫ সালের ২৫ জুন পর্যন্ত সেনাপ্রধান ছিলেন।
‘আগামী পাঁচ বছরে আমরা কোথায় যাচ্ছি?’— এ শিরোনামে সাবেক এই সেনাপ্রধানের একটি লেখার প্রথম অংশে এমন মূল্যায়ন উঠে এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে, দীর্ঘ বিশ্লেষণটি কয়েকটি অংশে ভাগ করে তিনি ফেসবুক প্রোফাইলেই প্রকাশ করবেন।
বিএনপিকে নিয়ে আইকেবি লিখেছেন, ‘দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের দ্বারা নিপীড়িত বিএনপি এখন এক প্রতি-বিপ্লবী শক্তি। তারা ফ্যাসিবাদী শাসকদল ও তার ছাত্রসংগঠন নিষিদ্ধকরণ, প্রেসিডেন্ট পরিবর্তন, সংবিধান বাতিল, গভীর কাঠামোগত সংস্কার— এসব বিপ্লবী পদক্ষেপের ক্রমাগত বিরোধিতা করে যাচ্ছে।’
চলমান ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে চাওয়ার মাধ্যমে বিএনপি ক্ষমতার চর্চা অব্যাহত রাখতে চায় বলে মনে করেন ইকবাল করিম ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘বিএনপি স্থিতাবস্থার (status quo) পক্ষপাতী। কেননা দ্বি-দলীয় রাজনীতিতে তাদের পুরনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রায় অনুপস্থিত যা, তাদের সহজেই নির্বাচনি বৈতরণী পার হওয়ার পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে।’
ছাত্রশক্তি বিএনপির কাছে একটি বিরাট ধাঁধা— এমন মন্তব্য করে সাবেক এই সেনাপ্রধান বলেন, “এ কারণে আওয়ামী লীগকে বিলুপ্ত করে ছাত্রশক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি নতুন গণতান্ত্রিক কাঠামো তৈরি করতে তারা অনাগ্রহী। তাদের ধারণা, এই নতুন রাজনৈতিক কাঠামো তৈরি হলে নতুন নতুন মাত্রা সৃষ্টি করবে, যা তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগকে নষ্ট করে দেবে। বরং ছাত্রশক্তিকে পুরনো রাজনৈতিক কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করা গেলে তা একসময় ‘নাগরিক ঐক্য’র মতোই ক্ষয়ে যাবে।”
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনেও বিএনপি সবচেয়ে বেশি প্রভাব রেখে পুলিশ-প্রশাসনসহ বিভিন্ন খাতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ পোক্ত করেছে বলে মনে করেন ইকবাল করিম ভূঁইয়া।
তিনি লিখেছেন, ‘উপদেষ্টা নিয়োগে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয় বিএনপি। তারা পছন্দের উপদেষ্টাদের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী (উপদেষ্টা) পদে বসাতে এবং আলী ইমাম মজুমদারকে ড. ইউনুসের বিশেষ সহকারী হিসাবে নিয়োগ দিতে সমর্থ হয়। এ সেতুবন্ধ দিয়ে তারা পুলিশ, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিজেদের পছন্দের লোক নিয়োগ করে।’
এর মধ্য দিয়ে দেশে চারটি পৃথক ক্ষমতাকেন্দ্র তৈরি হয় উল্লেখ করে আইকেবি লিখেছেন, ‘ক্ষমতাকেন্দ্র চারটি হলো— একটি ড. ইউনুসের অধীনে অন্তর্বর্তী সরকার, একটি বিএনপির অধীনে, একটি সেনাবাহিনীর অধীনে ও একটি ছাত্রদের অধীনে। বর্তমানে এই চারটি ক্ষমতাকেন্দ্র চারটি সমান্তরাল প্রশাসন চালাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই এদের স্বার্থগুলো প্রায়ই সাংঘর্ষিক হয় এবং সরকারের কার্যক্রমে বাধা তৈরি করে।’
সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়ার দীর্ঘ লেখার শুরুটা জুলাই আন্দোলনের বিজয় মুহূর্ত থেকে। তার মূল্যায়ন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শুধু ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনই হয়নি, বরং পুরো রাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে পড়েছিল। এ সময়ের বাংলাদেশ তার দৃষ্টিতে ছিল একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রেখে যাওয়া ধ্বংসস্তূপের মতোই।
এ অবস্থায় সব খাতকে নতুন করে ঢেলে সাজিয়ে সম্পূর্ণ নতুন করে বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছিল বলেও মনে করেন সাবেক এই সেনাপ্রধান। তবে সেই সুযোগ দেশ কাজে লাগাতে পারেনি বলেও অভিমত তার।
ইকবাল করিম ভূঁইয়া লিখেছেন, দ্রুত পরাজিত দলের রেখে যাওয়া শূন্যস্থান পূরণ করে পুরোনো কাঠামোকেই আবার জোড়া লাগানো হলো। পুলিশ, বিচার বিভাগ ও সিভিল প্রশাসন— সবই দলীয় নিয়ন্ত্রণে চলে গেল। গুরুত্বপূর্ণ পদ হঠাৎ করে দখল হলো। এবং জুলাই বিপ্লবের দোষীদেরকে শাস্তি দেওয়ার আগেই সরকারি নিয়ম ভেঙে দ্রুত পদোন্নতি ঘটতে থাকল।
তিনি আরও লিখেছেন, আগের শাসকগোষ্ঠীর সম্পদ ও ব্যবসা হাতবদল হলো এবং বেআইনি চাঁদাবাজি চলতে থাকল। দেশের সর্বত্র বিভিন্ন পোস্টারে শেখ মুজিব, শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবির বদলে নতুন মুখমণ্ডল শোভা পেতে লাগল। মহাসড়ক ও প্রধান সড়কে নির্মিত বিভিন্ন তোরণে বিএনপি নেতাদের ছবি আমাদের স্পষ্টতই বুঝিয়ে দিলো— পুরনো চর্চাই অব্যহত থাকবে। সার কথা, পুরাতন শিকারীর দলকে একটি নতুন শিকারীর দল প্রতিস্থাপন করল।
ইকবাল করিম ভূঁইয়া মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়া থেকেই জুলাই অভ্যুত্থানের যে চেতনা, তার অবক্ষয় শুরু। তিনি লিখেছেন, ‘বিপ্লবের অবক্ষয় শুরু হয় অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন থেকেই। প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধানের তত্ত্বাবধানে আসিফ নজরুল, ছাত্রনেতারা ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা সদস্য বাছাই করেন। নতুন দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা আছে কি না, সে বিচার না করেই সবাই নিজ দলের লোক ঢোকাতে তৎপর হন।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নিয়োগের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন ইকবাল করিম ভূঁইয়া। তবে অন্য উপদেষ্টাদের সরকার পরিচালনার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। বলেছেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়োগ দেওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত হলেও অন্য সদস্যদের রাষ্ট্র পরিচালনার প্রাজ্ঞতা কম ছিল। তারা তাদের পৃষ্ঠপোষক দলের নির্দেশমুখী ছিলেন। ফলে শুরু থেকেই সরকার দুর্বল হয়ে পড়ে।’
নতুন আশা নিয়ে হাজির হলেও পুরনো রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে প্রবেশ করে জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা শেষ পর্যন্ত নিজেদের সম্ভাবনার অপমৃত্যু ঘটিয়েছে বলে মনে করেন ইকবাল করিম ভূঁইয়া।
সাবেক এই সেনাপ্রধান লিখেছেন, ‘ছাত্রবিপ্লবীদের ভুল ছিল নতুন বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে সামনে এগোনোর বদলে বিদ্যমান রাজনৈতিক কাঠামোয় যোগ দিয়ে নিজেদের দল গঠন করা। জুলাই ঘোষণার বিষয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত— এ দুটিই তাদেরকে পুরনো রাজনৈতিক কাঠামোতে ঠেলে দেয়।’
এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা ঘাটতি ও সুস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গীর অভাবকে প্রধানত দায়ী করেছেন তিনি। লিখেছেন, ‘অভিজ্ঞতা ও সুস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে তারা বিএনপি ও অন্যান্য দলের প্রভাবে দল গঠন করে। ফলে তাদের বিপ্লব-পরবর্তী আধিপত্য ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। দেশকে ঢালাও পুনর্গঠনে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে পুরোপুরি সমর্থন দিতেও তারা ব্যর্থ হয়।’
শিক্ষার্থীদের এমন ব্যর্থতার কারণে দেশ পুনর্গঠনের সুযোগও হাতছাড়া হয় বলে মনে করেন আইকেবি। তিনি লিখেছেন, ‘যে পুরনো সিস্টেমকে ভেঙে তারা (শিক্ষার্থীরা) নতুন সিস্টেম গড়তে চেয়েছিল, শেষ পর্যন্ত তারই (পুরনো সিস্টেম) ফাঁদে তারা আটকা পড়ে। ফলে দুর্বল ও পর্যাপ্ত জনসমর্থনহীন অন্তর্বর্তী সরকারকে সেইসব গোষ্ঠী চাপে রাখে, যারা আন্দোলনের ফ্রন্টলাইনে কখনো ছিল না, কিন্তু বিপ্লবের ফসল কুড়াতে ও ক্ষমতায় আসার জন্য উন্মুখ ছিল। এভাবেই আমরা আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার বিরল সুযোগ হাতছাড়া করে ফেলি।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘সেফ এক্সিট’ নিয়ে যে কথাবার্তাগুলো চলছে, সেটি রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর এক ধরনের চাপ তৈরির চেষ্টা। আদৌ বর্তমান প্রেক্ষাপটে ‘সেফ এক্সিট’ বিষয়টির বাস্তবতা রয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন তারা।
১ দিন আগেজাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, ‘`বাংলাদেশের স্বার্থে এনসিপি এককভাবেও আগামী নির্বাচনে যেতে পারে। আবার কোনো অ্যালায়েন্সের মধ্য দিয়েও নির্বাচনে যেতে পারে। তবে, যদি সেটা অ্যালায়েন্স হয়; তাহলে এনসিপি নামেই নির্বাচন করবে। আমরা প্রত্যাশা করছি, শাপলা প্রতীকেই নির্ব
১ দিন আগেবাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, আমরা আগামী নভেম্বরে গণভোট চাই। এ ছাড়া পিআর পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচনের জন্যও নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) প্রস্তুতি রাখতে বলেছি।
২ দিন আগেবৈঠকে উপস্থিতে হয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে চারজন নির্বাচন কমিশনার এবং ইসি সচিব। অন্যদিকে, জামায়াতের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দিয়েছেন নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, সহ সদস্য হিসেবে ছিলেন এএইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার এবং মতিউর
২ দিন আগে