প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম
গত শতকের ষাটের দশকে প্রবর্তিত রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা আদলে প্রতিষ্ঠিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পূর্ণ বদলে সংসদীয় পদ্ধতির আদলে পুনর্বিন্যস্ত করার সুপারিশ করেছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার সুপারিশও করেছে। নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে স্থানীয় পরিষদ নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দিতে বলা হয়েছে।
দেশে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের জন্য আলাদা আলাদা আইন থাকলেও এগুলোকে দুটি আইনের অধীনে নিয়ে আসার সুপারিশ করেছে কমিশন। বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকারের স্তর কমিয়ে ও গ্রাম ও নগরের পার্থক্য দূর করে সবখানে একই ধরনের স্থানীয় সরকার কাঠামো প্রবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণা করতে হবে।
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রাথমিক সুপারিশমালায় উঠে এসেছে সুপারিশ। গত বছরের ১৮ নভেম্বর গঠিত কমিশনটি এখনো তার সংস্কার প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেয়নি। তবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যাত্রা শুরু করায় জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন প্রাথমিক সুপারিশমালা তৈরি করেছে।
কমিশন বলছে, গণতান্ত্রিক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক নতুন পদ্ধতির স্থানীয় সরকারের জন্য পাকিস্তান আমলে জেনারেল আইয়ুব খানের প্রবর্তন করা রাষ্ট্রপতিব্যবস্থার আদলের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংসদীয় পদ্ধতির আদলে পুনর্বিন্যস্ত করা হবে।
সুপারিশ অনুযায়ী, তিনটি গ্রামীণ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জেলা পরিষদ হবে একটি বিক্রেন্দ্রীকৃত পরিকল্পনা ইউনিট। ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয় পৃথকভাবে জাতীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব করবে ও ভূমি ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত থাকবে। জেলা পরিষদে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে জেলার সকল উন্নয়ন সংক্রান্ত দপ্তরগুলো জেলা পরিষদে ন্যস্ত হবে। যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে পদায়িত হবেন।
একইভাবে উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদে বিভিন্ন দপ্তরগুলোতে কর্মরত সব কর্মকর্তা-কর্মচারী, তাদের কার্যক্রম ও অর্থ-সম্পদ পরিষদে ন্যাস্ত করার সুপারিশ করেছে কমিশন। নগরায়নের ফলে ১০ বছরের মধ্যে স্থানীয় সরকারের স্তর কমিয়ে গ্রাম-নগরের বিভাজন দূর করে সমজাতীয় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান কীভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায়, তা নিয়ে ব্যাপক গবেষণার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে হবে।
কমিশন প্রাথমিক সুপারিশমালায় বলে, জাতীয় সংসদে যেমন নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা থাকেন সংসদীয় কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু, গ্রাম ও নগর নির্বিশেষে সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানেও সদস্য বা কাউন্সিলররা হবেন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সব সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রধান নিয়ামক। গ্রাম-নগর নির্বিশেষে প্রতিটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সংগঠন কাঠামো দুটি প্রধান অংশে বিভক্ত থাকবে— বিধানিক অংশ (লেজিসলেটিভ) ও নির্বাহী অংশ (এক্সিকিউটি)।
সুপারিশ অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের স্পিকারের আদলে ‘সভাধ্যক্ষ’ হবেন স্থানীয় সরকারের বিধানিক অংশের প্রধান। আর নির্বাহী অংশের প্রধান হবেন ‘চেয়ারম্যান’ বা ‘মেয়র’, তিনিই হবেন পরিষদ বা কাউন্সিল নেতা। সংসদের স্পিকার ও সংসদ নেতার কার্যক্রমের মতাই সভাধ্যক্ষ ও চেয়ারম্যান বা মেয়র দায়িত্ব পালন করবেন।
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সুপারিশ, সাধারণ নির্বাচনের পর গেজেট প্রকাশ হলে সদস্যরা শপথ নেবেন। এরপর পরিষদের প্রথম সভায় সাধারণ সদস্যের ভোটে সভাধ্যক্ষ নির্বাচিত হবেন। সভাধ্যক্ষ তার সভাপতিত্বে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে সদস্যদের মধ্য থেকে পরিষদের চেয়ারম্যান বা কাউন্সিলের মেয়র নির্বাচন করবেন, যিনি ‘পরিষদ নেতা’ হিসেবে জাতীয় সংসদের সংসদ নেতার মতো ভূমিকা পালন করবেন।
সুপারিশমালায় বলা হয়েছে, পরিষদ নেতা আইন অনুযায়ী তিন বা পাঁচ সদস্যের চেয়ারম্যান বা মেয়রের ‘নির্বাহী কাউন্সিল’ গঠন করবেন, যেখানে এক-তৃতীয়াংশ সদস্য থাকবেন নারী। এই নির্বাহী কাউন্সিল গঠনের পর এর বাইরে থাকা বাকি সদস্যদের মধ্য থেকে সভাধ্যক্ষ একজন ‘ছায়া পরিষদ’ নেতা নির্বাচন করবেন, যিনি সংসদের বিরোধী দলীয় নেতার মতো দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া জাতীয় সংসদের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির মতো স্থানীয় সরকারেও স্থায়ী কমিটি গঠন করা হবে।
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রাথমিক সুপারিশমালার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেখুন এখানে—
সুপারিশমালায় স্থানীয় সরকারের এই কাঠামো গঠন, এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন, নির্বাচিতদের মর্যাদাক্রমসহ অন্য বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে কার্যপদ্ধতি, বৈঠকের ধরন, সাচিবিক কার্যক্রম ইত্যাদি নিয়েও সুস্পষ্ট নির্দেশনা তুলে ধরা হয়েছে। সভার কার্যপ্রণালী, কার্যপ্রণালী সংশোধন, পরিষদ নেতা বা কাউন্সিলের কেউ আস্থা হারালে সে পদে ফের নির্বাচন, বরখাস্ত করার বিধান— এসব বিষয়ও উঠে এসেছে সুপারিশে। বলা হয়েছে, সভার সব সিদ্ধান্ত সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে হবে। তবে কোনো নীতিমালা বা উপবিধির সংশোধনীতে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন হবে।
সংস্কার কমিশন বলছে, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদ— এ তিনটি প্রতিষ্ঠানের আইন কাঠামো, সংগঠনিক কাঠামো ও নির্বাচন ব্যবস্থা অসম পদ্ধতিতে বিন্যস্ত। এগুলোকে সমজাতীয় পদ্ধতিতে পুনর্স্থাপন করতে হবে। জাতীয় সরকারের আদলে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানও সংসদীয় পদ্ধতির আদলে পুনর্গঠন, নির্বাচন ও কার্যপদ্ধতিতে পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজন হবে। এসব পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা গেলে নির্বাচনব্যবস্থা সহজ, ব্যয়সাশ্রয়ী, সুস্থ ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ, তৃণমূলে গণতান্ত্রিক ও গঠনমূলক নীতিবিতর্কের ইতিবাচক একটি ব্যবস্থার বিকাশ হতে পারে।
সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পরিচালিত ‘গ্রাম আদালত’ বিলোপ করে উপজেলায় দেওয়ানি, ফৌজদারি ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি এবং বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য নিয়োজিত বিচারকের সঙ্গে ওয়ার্ড ও কমিউনিটি পর্যায়ের একটি সালিশি ব্যবস্থাকে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সুপারিশে বলা হয়েছে, পাঁচটি স্থানীয় সরকার সংস্থার যেকোনো সার্বক্ষণিক কর্মী— সভাধ্যক্ষ, চেয়ারম্যান, মেয়র ও ছায়া পরিষদ নেতা তাদের নিজ নিজ পরিষদ বা কাউন্সিলে আস্থা হারালে পদ শূন্য হবে। চেয়ারম্যান বা মেয়রের ওপর অনাস্থা প্রস্তাব পাস হলে চেয়ারম্যান ও মেয়র কাউন্সিলকেও পদত্যাগ করতে হবে। অনাস্থা প্রস্তাবের পদ্ধতি আইন ও বিধি দ্বারা নির্দিষ্ট করা হবে।
স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন ইউনিটের কার্যক্রম ও কার্যপদ্ধতিতে সুস্পষ্ট বিভাজন থাকবে উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন বলছে, জেলা পরিষদ হবে স্পষ্টত পরিকল্পনা ইউনিট বা একক, যেখানে জেলার সব সেবা ও উন্নয়ন পরিকল্পনা করা হবে। উপজেলা নিজ উপজেলার সেবা ও উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে। এ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান যেমন— স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ভৌত অবকাঠামো, কৃষি, প্রাণিসম্পদ, পানিসম্পদ প্রভৃতি দপ্তরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।
সংস্কার কমিশন বলছে, ১৮ নভেম্বর কমিশন গঠনের গেজেট প্রকাশ হলেও প্রকৃতপক্ষে কমিশন কাজ শুরু করতে পেরেছে ১৫ ডিসেম্বর। দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরুতে দেরি হওয়ায় স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রণয়নে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বাড়তি সময় লাগতে পারে।
কমিশন বলছে, এর মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদন হাতে পেয়ে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের কার্যক্রম শুরু করেছেন। এ অবস্থায়, জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের আলোচনার সুবিধার্থে প্রাথমিক সুপারিশমালা জরুরিভিত্তিতে পেশ করার সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছেন। পরে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পেশ করবেন তারা।
গত শতকের ষাটের দশকে প্রবর্তিত রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা আদলে প্রতিষ্ঠিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পূর্ণ বদলে সংসদীয় পদ্ধতির আদলে পুনর্বিন্যস্ত করার সুপারিশ করেছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার সুপারিশও করেছে। নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে স্থানীয় পরিষদ নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দিতে বলা হয়েছে।
দেশে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের জন্য আলাদা আলাদা আইন থাকলেও এগুলোকে দুটি আইনের অধীনে নিয়ে আসার সুপারিশ করেছে কমিশন। বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকারের স্তর কমিয়ে ও গ্রাম ও নগরের পার্থক্য দূর করে সবখানে একই ধরনের স্থানীয় সরকার কাঠামো প্রবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণা করতে হবে।
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রাথমিক সুপারিশমালায় উঠে এসেছে সুপারিশ। গত বছরের ১৮ নভেম্বর গঠিত কমিশনটি এখনো তার সংস্কার প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেয়নি। তবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যাত্রা শুরু করায় জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন প্রাথমিক সুপারিশমালা তৈরি করেছে।
কমিশন বলছে, গণতান্ত্রিক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক নতুন পদ্ধতির স্থানীয় সরকারের জন্য পাকিস্তান আমলে জেনারেল আইয়ুব খানের প্রবর্তন করা রাষ্ট্রপতিব্যবস্থার আদলের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংসদীয় পদ্ধতির আদলে পুনর্বিন্যস্ত করা হবে।
সুপারিশ অনুযায়ী, তিনটি গ্রামীণ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জেলা পরিষদ হবে একটি বিক্রেন্দ্রীকৃত পরিকল্পনা ইউনিট। ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয় পৃথকভাবে জাতীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব করবে ও ভূমি ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত থাকবে। জেলা পরিষদে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে জেলার সকল উন্নয়ন সংক্রান্ত দপ্তরগুলো জেলা পরিষদে ন্যস্ত হবে। যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে পদায়িত হবেন।
একইভাবে উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদে বিভিন্ন দপ্তরগুলোতে কর্মরত সব কর্মকর্তা-কর্মচারী, তাদের কার্যক্রম ও অর্থ-সম্পদ পরিষদে ন্যাস্ত করার সুপারিশ করেছে কমিশন। নগরায়নের ফলে ১০ বছরের মধ্যে স্থানীয় সরকারের স্তর কমিয়ে গ্রাম-নগরের বিভাজন দূর করে সমজাতীয় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান কীভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায়, তা নিয়ে ব্যাপক গবেষণার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে হবে।
কমিশন প্রাথমিক সুপারিশমালায় বলে, জাতীয় সংসদে যেমন নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা থাকেন সংসদীয় কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু, গ্রাম ও নগর নির্বিশেষে সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানেও সদস্য বা কাউন্সিলররা হবেন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সব সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রধান নিয়ামক। গ্রাম-নগর নির্বিশেষে প্রতিটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সংগঠন কাঠামো দুটি প্রধান অংশে বিভক্ত থাকবে— বিধানিক অংশ (লেজিসলেটিভ) ও নির্বাহী অংশ (এক্সিকিউটি)।
সুপারিশ অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের স্পিকারের আদলে ‘সভাধ্যক্ষ’ হবেন স্থানীয় সরকারের বিধানিক অংশের প্রধান। আর নির্বাহী অংশের প্রধান হবেন ‘চেয়ারম্যান’ বা ‘মেয়র’, তিনিই হবেন পরিষদ বা কাউন্সিল নেতা। সংসদের স্পিকার ও সংসদ নেতার কার্যক্রমের মতাই সভাধ্যক্ষ ও চেয়ারম্যান বা মেয়র দায়িত্ব পালন করবেন।
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সুপারিশ, সাধারণ নির্বাচনের পর গেজেট প্রকাশ হলে সদস্যরা শপথ নেবেন। এরপর পরিষদের প্রথম সভায় সাধারণ সদস্যের ভোটে সভাধ্যক্ষ নির্বাচিত হবেন। সভাধ্যক্ষ তার সভাপতিত্বে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে সদস্যদের মধ্য থেকে পরিষদের চেয়ারম্যান বা কাউন্সিলের মেয়র নির্বাচন করবেন, যিনি ‘পরিষদ নেতা’ হিসেবে জাতীয় সংসদের সংসদ নেতার মতো ভূমিকা পালন করবেন।
সুপারিশমালায় বলা হয়েছে, পরিষদ নেতা আইন অনুযায়ী তিন বা পাঁচ সদস্যের চেয়ারম্যান বা মেয়রের ‘নির্বাহী কাউন্সিল’ গঠন করবেন, যেখানে এক-তৃতীয়াংশ সদস্য থাকবেন নারী। এই নির্বাহী কাউন্সিল গঠনের পর এর বাইরে থাকা বাকি সদস্যদের মধ্য থেকে সভাধ্যক্ষ একজন ‘ছায়া পরিষদ’ নেতা নির্বাচন করবেন, যিনি সংসদের বিরোধী দলীয় নেতার মতো দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া জাতীয় সংসদের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির মতো স্থানীয় সরকারেও স্থায়ী কমিটি গঠন করা হবে।
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রাথমিক সুপারিশমালার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেখুন এখানে—
সুপারিশমালায় স্থানীয় সরকারের এই কাঠামো গঠন, এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন, নির্বাচিতদের মর্যাদাক্রমসহ অন্য বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে কার্যপদ্ধতি, বৈঠকের ধরন, সাচিবিক কার্যক্রম ইত্যাদি নিয়েও সুস্পষ্ট নির্দেশনা তুলে ধরা হয়েছে। সভার কার্যপ্রণালী, কার্যপ্রণালী সংশোধন, পরিষদ নেতা বা কাউন্সিলের কেউ আস্থা হারালে সে পদে ফের নির্বাচন, বরখাস্ত করার বিধান— এসব বিষয়ও উঠে এসেছে সুপারিশে। বলা হয়েছে, সভার সব সিদ্ধান্ত সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে হবে। তবে কোনো নীতিমালা বা উপবিধির সংশোধনীতে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন হবে।
সংস্কার কমিশন বলছে, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদ— এ তিনটি প্রতিষ্ঠানের আইন কাঠামো, সংগঠনিক কাঠামো ও নির্বাচন ব্যবস্থা অসম পদ্ধতিতে বিন্যস্ত। এগুলোকে সমজাতীয় পদ্ধতিতে পুনর্স্থাপন করতে হবে। জাতীয় সরকারের আদলে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানও সংসদীয় পদ্ধতির আদলে পুনর্গঠন, নির্বাচন ও কার্যপদ্ধতিতে পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজন হবে। এসব পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা গেলে নির্বাচনব্যবস্থা সহজ, ব্যয়সাশ্রয়ী, সুস্থ ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ, তৃণমূলে গণতান্ত্রিক ও গঠনমূলক নীতিবিতর্কের ইতিবাচক একটি ব্যবস্থার বিকাশ হতে পারে।
সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পরিচালিত ‘গ্রাম আদালত’ বিলোপ করে উপজেলায় দেওয়ানি, ফৌজদারি ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি এবং বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য নিয়োজিত বিচারকের সঙ্গে ওয়ার্ড ও কমিউনিটি পর্যায়ের একটি সালিশি ব্যবস্থাকে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সুপারিশে বলা হয়েছে, পাঁচটি স্থানীয় সরকার সংস্থার যেকোনো সার্বক্ষণিক কর্মী— সভাধ্যক্ষ, চেয়ারম্যান, মেয়র ও ছায়া পরিষদ নেতা তাদের নিজ নিজ পরিষদ বা কাউন্সিলে আস্থা হারালে পদ শূন্য হবে। চেয়ারম্যান বা মেয়রের ওপর অনাস্থা প্রস্তাব পাস হলে চেয়ারম্যান ও মেয়র কাউন্সিলকেও পদত্যাগ করতে হবে। অনাস্থা প্রস্তাবের পদ্ধতি আইন ও বিধি দ্বারা নির্দিষ্ট করা হবে।
স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন ইউনিটের কার্যক্রম ও কার্যপদ্ধতিতে সুস্পষ্ট বিভাজন থাকবে উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন বলছে, জেলা পরিষদ হবে স্পষ্টত পরিকল্পনা ইউনিট বা একক, যেখানে জেলার সব সেবা ও উন্নয়ন পরিকল্পনা করা হবে। উপজেলা নিজ উপজেলার সেবা ও উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে। এ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান যেমন— স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ভৌত অবকাঠামো, কৃষি, প্রাণিসম্পদ, পানিসম্পদ প্রভৃতি দপ্তরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।
সংস্কার কমিশন বলছে, ১৮ নভেম্বর কমিশন গঠনের গেজেট প্রকাশ হলেও প্রকৃতপক্ষে কমিশন কাজ শুরু করতে পেরেছে ১৫ ডিসেম্বর। দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরুতে দেরি হওয়ায় স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রণয়নে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বাড়তি সময় লাগতে পারে।
কমিশন বলছে, এর মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদন হাতে পেয়ে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের কার্যক্রম শুরু করেছেন। এ অবস্থায়, জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের আলোচনার সুবিধার্থে প্রাথমিক সুপারিশমালা জরুরিভিত্তিতে পেশ করার সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছেন। পরে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পেশ করবেন তারা।
তিনি বলেন, ‘অপশক্তি জনতার প্রতিরোধে এক বছর আগে পালিয়ে গেছে। মনে হচ্ছে এখন আমরা স্বাধীন। হাসিনার শাসনামলে আমরা বাড়িতে থাকতে পারিনি, ঘরে ঘুমাতে পারিনি। দেশে একটা বিভীষিকাময় পরিবেশ ছিল। হাসিনার পলায়নের মাধ্যমে মনে হচ্ছে আমরা নতুন করে স্বাধীনতা পেয়েছি। ড. ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠি
১ দিন আগেরাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ডাকা কর্মী সমাবেশ ঘিরে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করছে পুলিশ। এ সময় সমাবেশস্থলে সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ পাওয়া যায়। এছাড়াও পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
১ দিন আগেউত্তর কোরিয়ার সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, হোয়াসং-২০ আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম। তবে ক্ষেপণাস্ত্রটির সক্ষমতা নিয়ে এখনো কোনো পরীক্ষা করা হয়নি।
১ দিন আগেআমীর খসরু বলেন, যারা পিআর পদ্ধতির পক্ষে তাদের উচিত হবে জনগণের কাছে গিয়ে ম্যান্ডেট আনা। কিছু রাজনৈতিক দল নিয়ে আলোচনা করে আগামীর বাংলাদেশে কী হবে- তা ঠিক করতে মানুষ দায়িত্ব দেয় নাই। তাই সনদেরও ম্যান্ডেট লাগবে।
১ দিন আগে