রওশনের নেতৃত্বে আরেক জাতীয় পার্টি

প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম
আপডেট : ১১ মার্চ ২০২৪, ১০: ৫০
রওশন এরশাদ।

আবারও ভেঙে গেল সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিষ্ঠা করা দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। গত শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় কাউন্সিলে জাতীয় সংসদের সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের নেতৃত্বে পৃথক কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টির এ ভাঙন স্পষ্ট হলো।

কাউন্সিলে রওশন এরশাদকে জাতীয় পার্টির নতুন চেয়ারম্যান, কাজী ফিরোজ রশীদকে নির্বাহী চেয়ারম্যান এবং কাজী মামুনুর রশীদকে মহাসচিব নির্বাচন করা হয়। এর আগেও জাতীয় পার্টি ছয়বার ভেঙেছে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর থেকেই পার্টির নেতৃত্ব নিয়ে তার স্ত্রী রওশন এরশাদ এবং ছোটভাই জি এম কাদেরের মধ্যে বিরোধ চলছিল।

জাতীয় সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জাপার কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ। নাম ঘোষণার আগে দলের আগের চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি নেন রওশন এরশাদ। নতুন কমিটিতে সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান এবং সাহিদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ, গোলাম সারোয়ার মিলন ও সুনীল শুভ রায়কে কো-চেয়ারম্যান করা হয়েছে। দলের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর কমিটির নেতাদের নাম ঘোষণা করেন। পরে মহাসচিব হিসেবে কাজী মামুনুর রশীদের নাম ঘোষণা করেন গোলাম সারোয়ার মিলন। এতে উপস্থিত সবাই সমর্থন জানান। সম্মেলনে ৭১টি সাংগঠনিক জেলা থেকে প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন বলে জানানো হয়।

অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষক শ্রমিক জনতা পার্টির সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, সাবেক মন্ত্রী ও জাপার একাংশের মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এম এ মতিন, বিএলডিপির চেয়ারম্যান এম নাজিম উদ্দীন আল আজাদ, বাংলাদেশ হিউম্যান পার্টির চেয়ারম্যান, চীনের সহকারী রাষ্ট্রদূত ফেং জিজিয়া প্রমুখ। জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দুপুর ১২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলন শুরু হয়। শুরুতে শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান জিয়াউল হক মৃধা। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ থেকে সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও উত্তর থেকে সফিকুল ইসলাম সেন্টু সম্মেলনে ব্যাপক নেতা-কর্মী নিয়ে শোডাউন করেন। সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করেন রওশন অনুসারী জাতীয় পার্টির মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ।

সম্মেলনে গোলাম সারোয়ার মিলন, কারি হাবিবুল্লাহ বেলালী, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, নুরুল ইসলাম নুরু, রফিকুল হক হাফিজ, এম এ গোফরান, ইয়াহিয়া চৌধুরী, শেখ আলমগীর হোসেন, ফখরুল আহসান শাহাজাদা, মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, মাসুকুর রহমান, মাহমুদুর রহমান মুন্নিসহ কেন্দ্রীয় নেতা ও জেলা উপজেলার কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।

রওশনপন্থি জাতীয় পার্টির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বর্ণিল সাজে সাজানো হয় পুরো ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিউশনসহ মৎস্য ভবন এবং শাহবাগ এলাকা। নানা রঙের পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানারে ছেয়ে যায় সম্মেলনস্থল। ঢাকা মহানগর সড়কদ্বীপগুলোতে লাগানো হয় এরশাদ শাসনামলের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ছবি সংবলিত ফেস্টুন। নির্মাণ করা হয় দ্বিতল মঞ্চ। জাতীয় পার্টির একাংশের এ জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে রাজধানী রমনা এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ। শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয় কাউন্সিল।

নেতা-কর্মীরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের মৌসুমে জাতীয় পার্টিতে ভাঙনের যেন অলিখিত সম্পর্ক। নব্বই দশক থেকে প্রায় প্রতিটি সংসদ নির্বাচনের আগে দলটি ভেঙেছে। জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা হয় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাত ধরে। ১৯৮৬ সালে তিনি যখন দলটি প্রতিষ্ঠা করেন, তখন চলছিল সামরিক শাসন। সেনাপ্রধান হিসেবে তিনি ক্ষমতা দখল করে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। মোটাদাগে জাতীয় পার্টিতে চারটি ধারা স্পষ্ট। এইচএম এরশাদ যেখানে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন, সেখানে আছেন তার ভাই জি এম কাদের ও আরেক অংশে তার স্ত্রী রওশন এরশাদ। এর বাইরে তিনটি অংশ- জেপির নেতৃত্বে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু; বিজেপির নেতৃত্বে আন্দালিব রহমান পার্থ; জাতীয় পার্টির (জাফর) নেতৃত্বে মোস্তফা জামাল হায়দার। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের জাতীয় ঐকমত্যের সরকারে যোগ দেয় জাতীয় পার্টি। ওই সময় যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন জাতীয় পার্টির নেতা আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। পরে এরশাদ যখন বিএনপি-জামায়াত জোটে যোগ দেন; আনোয়ার হোসেন মঞ্জু তাতে যোগ দেননি। তিনি দল ভেঙে গঠন করেন জাতীয় পার্টি-জেপি।

২০০১ সালের নির্বাচনের আগে আগে এইচ এম এরশাদ বিএনপি-জামায়াতের চারদলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যান। সে সময় জাতীয় পার্টির দুই প্রভাবশালী নেতা নাজিউর রহমান মঞ্জু এবং এম এ মতিন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি গঠন করে ওই জোটে থেকে যান। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোট করেন এরশাদ। তবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এরশাদ একবার ঘোষণা দেন ভোটে যাবেন। আবার বলেন, ভোটে যাবেন না। এরশাদের অবস্থান বদলের খেলায় ক্ষুব্ধ হয়ে দল থেকে বেরিয়ে যান কাজী জাফর আহমদ। তিনি ব্রাকেটবন্দি জাতীয় পার্টি গঠন করেন।

২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে এরশাদ ভোট বর্জনের ঘোষণা দিলে জাতীয় পার্টির একাংশ তার স্ত্রী রওশন এরশাদকে চেয়ারম্যান ঘোষণা দিয়ে ভোটে যায়। পরে দলে বিভক্তি তৈরি না হলেও ২০১৯ সালে এরশাদের মৃত্যুর পর দলটিতে দেবর-ভাবির বিরোধ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, যখনই দলটি ভাঙনের মুখে পড়েছে বা ভেঙেছে, তখনই এর ভোট কমতে শুরু করেছে। ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি যত ভোট পেয়েছিল; পরবর্তী সময়ে তা ক্রমাগত কমেছে।

ad
ad

রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

ডাকসুর মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমার সময় বাড়ল

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এই নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহীরা মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) বিকেল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে পারবেন। মনোনয়ন ফরম জমা দিতে পারবেন বুধবার (২০ আগস্ট) বিকেল ৫টা পর্যন্ত।

১৯ ঘণ্টা আগে

ডাকসু নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হয়নি : ছাত্রদল

তিনি বলেন, ‘আজকে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সংসদ এবং কেন্দ্রীয় ডাকসুর মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের শেষ দিন। তারই ধারাবাহিকতায় ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের ছাত্রদলের কিছু শিক্ষার্থী এবং কিছু সাধারণ শিক্ষার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে যায় বিকাল সাড়ে ৩টার পরে। ঠিক সেই সময় ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের একদল উগ্র শ

২০ ঘণ্টা আগে

ডাকসু নির্বাচন— কোন প্যানেলে ভিপি-জিএস প্রার্থী কারা

এর বাইরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরিচিতমুখ উমামা ফাতেমার নেতৃত্বে রয়েছে একটি স্বতন্ত্র প্যানেল। ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’ স্লোগান নিয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদ সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা লড়বেন আরেকটি প্যানেল নিয়ে। রয়েছে আরও কিছু স্বতন্ত্র প্যানেল, যেগুলো এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

১ দিন আগে

শেষ দিনে ৪৪২-সহ ডাকসুর মনোনয়ন সংগ্রহ ৫৬৫ প্রার্থীর

ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক জসীম উদ্দিন বলেন, সপ্তম দিনে ডাকসুর বিভিন্ন পদে জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছে ৪৪২ জন। এখন পর্যন্ত সাত দিনে ডাকসুতে মোট মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ৫৬৫ জন এবং ১৮টি হল সংসদের জন্য মোট মনোনয়ন সংগ্রহ করেছে এক হাজার ২২৬ জন।

১ দিন আগে